আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধানমন্ডির শিশুশ্রমিক আকরাম ও আমার কয়েকটি কথা।

গালাগালি পাঠাতে srsnipun@gmail.com ফেসবুকে আমি http://www.facebook.com/mrlazy4200 প্রথমেই একটি ঘটনা দিয়ে শুরু করি। আমার এক ফ্রেন্ড মোটামুটি ভালোই দানশীল। দান খয়রাত করতে কাউকে বাদ দেয় না। কোন ভিক্ষুক এবং পথশিশু তার কাছে সাহায্য চেয়ে খালি হাতে ফিরে যায়না। একদিন উত্তরা থেকে সে এবং আমরা আরও দুইজন এক সাথে করে কোথাও যাওয়ার জন্য বের হলাম।

রিকশায় করে যাব তাই আমি রিকশা দাড়া করালাম। রিকশাওয়ালা ছেলেটি বয়সে অল্প। ১৪-১৫ বছর বয়স হবে হয়ত। রিকশার ভাড়া ঠিক করব এমন সময় আমার সেই দানশীল বন্ধুটি বাধা দিয়ে উঠল। তার সন্দেহ এই অল্প বয়সী ছেলে আমাদের নিয়ে ঠিকঠাক ভাবে চালাতে পারবে কিনা।

রিকশায় উঠে তার সাথে এই নিয়ে আরেকবার কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলাম। তার কাছ থেকে জানতে পারলাম সে নাকি কখনই পিচ্চি টাইপ কোন ছেলে বা বয়স্ক কোন লোকের রিকশায় চড়েনা। প্রতিবন্ধী টাইপ রিকশাওয়ালাদের রিকশায় তো ওঠেই না। এই বার ২ টা মিনিট সময় নিয়ে ভাবুন তো। আমি জানি, আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা বাচ্চা কাচ্চাদের বা বয়স্ক কোন লোক টাকা পয়সা চাইলে কখনও না করে না।

প্রতিবন্ধীদের কথা বাদই দিলাম। এই বার আপনি নিজে চিন্তা করে বলুনতো কত বার আপনার কাছে কোন পিচ্চি ছেলে বা পথ শিশু পেপার নিয়ে আসলে তা কিনেছেন? ঠিক কত বার আপনি জ্যামে থাকাকালীন সেই পিচ্চি ছেলে পানি বা পপকর্ণ নিয়ে আসলে আপনি তা কিনেছেন? হুম জানি। একান্তই নিজের প্রয়োজন পড়লে তখন হয়ত কিনেছেন। আপনিকি প্রতিবন্ধী বা বয়স্ক রিকশাওয়ালা দেখে কখনও রিকশায় উঠতে ইতস্তত বোধ করেন নি? আমি নিজেও অনেক করেছি। আপনারা ঠিক কি কারনে ইতস্তত বোধ করেন জানিনা তবে আমি নিজে ইতস্তত বোধ করতাম সময় নষ্ট হবে ভেবে বা ঠিক মত চালাতে পারবেন কিনা তাই ভেবে।

একটা শিশু বা একজন বৃদ্ধ লোক আমাদের কাছে ভিক্ষা চাইলে আমরা তাদেরকে নির্দ্বিধায় টাকা দিয়ে দিই। কিন্তু সেই শিশু বা বৃদ্ধ লোক যখন আমাদের জীবিকার তাগিদে খবরের কাগজ বিক্রি করে বা রিকশা চালায়, আমরা কি সেই খবরের কাগজ কিনি? বা বৃদ্ধ সেই লোকের রিকশায় উঠতে চাই? এটাকি ভিক্ষাবৃত্তিকে উৎসাহিত করা নয়? ধানমন্ডি লেকের পাড়ে কিছু বাচ্চা ছেলের সাথে একবার কথা বলেছিলাম। নাম ছিল আকরাম। তারা সংবাদপত্র বিক্রি করত। একটি সংস্থা নাম মাত্র মূল্যে তারা এই সব শিশুদের কাছে সংবাদপত্র দিত বিক্রি করার জন্য।

তাদের তাগিদেই এই সব শিশু ভিক্ষাবৃত্তি থেকে সরে এসে জীবিকার দিকে হাত বাড়ায়। সেই সংস্থাকে ধন্যবাদ জানানোর ক্ষমতা আমার নেই। তাই তাদের কথা বাদ দিলাম। আকরামের কাছে জানতে পারি, সংবাদপত্র বিক্রির চাইতে নাকি ভিক্ষায় আয় অনেক বেশি ছিল। তার কথা শুনে আরও একটা ভয়ানক জিনিষ বুঝতে পারি।

বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড এক সাথে থাকাকালীন নাকি তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া সব চাইতে সহজ। সেই পরিস্থিতিতে তারা ভাবের জন্যই হোক বা আপদ বিদায় করার জন্যই হোক টাকা দিয়ে দেয়। এমনকি খুচরা না থাকলে ১০ টাকা ২০ টাকাও দিয়ে দেয়!! অথচ আশ্চর্যের বিষয় সেই একই বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের সামনে এই সব বাচ্চারা সংবাদপত্র বা অন্য কোন জিনিষ নিয়ে ফেরি করতে যায়, তারাই বিশাল এক ধমক লাগায়। কেন বলুনতো? কারন একটা পিচ্চিকে ধমক লাগায় না সরাইতে পারলে কিসের মানুষ? আর একটু লক্ষ লরলে দেখবেন এই সব বাচ্চা গুলাও কখনও আপনাকে অতটা বিরক্ত করবেনা। একটা কাজ কামহীন পথশিশু যদি আপনার কাছে এক নাগাড়ে ১০ মিনিট বিরক্ত করে তাহলে এরা বিরক্ত করবে সর্বচ্চো ১ মিনিট।

অথচ এদেরই আয় রোজগার কম। একই ভাবে বৃদ্ধ ভিক্ষুক দেখলে ঠিকই আমরা তাকে টাকা দিই। কিন্তু তার রিকশায় চড়তে চাইনা। আমরা একবারও ভাবি না তার রিকশায় আমরা না চললে তার জীবিকা কিভাবে নির্বাহ হবে। এই গুলা কি ভিক্ষাবৃত্তিকে উৎসাহিত করা নয়? আমাদের মন মানসিকতাটাই আসলে এমন।

আমরা আসলে ভিক্ষা যদিও দিই, দিই দানের সওয়াব পাওয়ার জন্য। আল্লাহ তায়ালা যে আমাদের জীবে দয়াও করতে বলেছেন, এইটা আমরা ভুলেই যাই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.