আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুঘল সম্রাট ও তাঁদের সাম্রাজ্য- পর্ব ২

ঃঃঃঃ চল বহুদূরে...নির্জনে আড়ালে লুকোই...ঃঃঃ প্রথম পর্ব Click This Link প্রথম মোঘল সম্রাট জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ বাবরের বড় ছেলে নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ুন সম্রাট বাবরের মৃত্যুর ৩ দিন পর ৮ই জানুয়ারী ১৫৩১ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট হয়ে সিংহাসন আরোহণ করেন (মতান্তরে ২৯শে ডিসেম্বর'১৫৩০)। তিনি ১৫০৮ সালের ৬ মার্চ কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার পিতা বাবরের মতই তার রাজত্ব হারিয়েছিলেন। সম্রাট হুমায়ুন ২ দফা মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাট হয়েছিলেন। প্রথম দফায় তিনি ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দ এবং ১৫৫৫ খ্রস্টাব্দ থেকে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ২য় দফায় আধুনিক আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ভারতের উত্তরাঞ্চ রাজত্ব করেছেন।

মাঝে ১৬ বছর তিনি ছিলেন সিংহাসনচ্যুত। ১৫৩৭ সালে মুঘল সম্রাট হুমায়ুন যখন অন্যত্র অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন, সেই সময় শের শাহ সুরি বাংলা জয় করে সুরি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজেকে নতুন সম্রাট ঘোষণা করেন। সিংহাসনচ্যুত অবস্থাতেই ১৫৪২ সালে আকবর দ্য গ্রেট জন্মগ্রহণ করেন। সম্রাট নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ুন কে এই শের শাহ্‌ সূরি! শের শাহ সুরি (১৪৮৬ – ২২ মে, ১৫৪৫) ছিলেন মধ্যযুগীয় দিল্লির একজন শক্তিশালী আফগান (পাশতুন) বীরযোদ্ধা। কথিত আছে, তিনি কোনো এক ভারতীয় জঙ্গলে একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘকে সম্পূর্ণ খালি হাতে হত্যা করেছিলেন।

একজন সাধারণ সেনাকর্মচারী হয়ে নিজের কর্মজীবন শুরু করে পরবর্তীকালে তিনি ১ম মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাবাহিনীর সেনানায়কের পদে উত্তীর্ণ হন। শেষপর্যন্ত তাঁকে বিহারের শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হয়। শের শাহ সুরি কেবলমাত্র একজন মেধাবী রণকৌশলবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক ও যোগ্য সেনানায়কও ছিলেন তাঁর সাম্রাজ্য পুনর্গঠনের মধ্যেই পরবর্তীকালের (বিশেষত হুমায়ুন-পুত্র আকবরের) মুঘল সাম্রাজ্যের মূলভিত্তিটি স্থাপিত ছিল। ১৫৪০ থেকে ১৫৪৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তাঁর পাঁচ বছরের স্বল্পকালীন রাজত্বে তিনি নাগরিক ও সামরিক প্রশাসনের এক নতুন ধারার সূচনা ঘটিয়েছিলেন। তিনি প্রথম রুপিয়া নামক মুদ্রার প্রচলন করেন, যা বিংশ শতাব্দী অবধি চালু ছিল।

তিনি মোহর নামে ১৬৯ গ্রেইন ওজনের স্বর্ণমুদ্রা ও দাম নামে তাম্রমুদ্রাও চালু করেন। তাছাড়া তিনি ডাক ব্যবস্থারও আমূল সংস্কার করেন। ভারতের গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড (সড়ক-এ-আজম) শের শাহ সুরির অমর কীর্তি। বিগত চার শতাব্দী ধরে এই সড়ক "বিশ্বে অদ্বিতীয় এক জীবননদীর মতো" দাঁড়িয়ে রয়েছে। আজও ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রে এই সড়ক অন্যতম প্রধান রাস্তা।

এর ভারতীয় অংশটি বর্তমানে স্বর্ণ চতুর্ভূজ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৫৪৫ সালে চান্দেল রাজপুতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় কালিঞ্জর দুর্গে বারুদের বিস্ফোরণে শের শাহ সুরির মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র জালাল খান ইসলাম শাহ সুরি নাম গ্রহণ করে সুরি সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। শের শাহ্‌ সূরি বাবার আজ্ঞাবহ আর স্নেহাশিস এই বীর সেনাপতির কাছেই হুমায়ূন তাঁর ক্ষমতা-রাজত্ব দুই হারান। ১৫৩৯সালের ২৬ জুন চৌসায় এবং পরের বছর কৌনজে যুদ্ধে শের শাহ সূরির কাছে হেরে সিংহাসন হারান।

অবশেষে ১৫৫৫ সালের ২২ জুন সেরহিন্দের যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে তিনি পুনরায় সিংহাসন লাভ করেন। বোন গুল বদন বেগম 'হুমায়ুন-নামা' নামক সম্রাট হুমায়ুনের জীবনী লিখেছিলেন। তাতে তিনি লিখেছে, 'হুমায়ূন ছিলেন মার্জিত আচরণের অধিকারী। দয়ালু হিসেবেও তার সুনাম ছিল। তার চরিত্রের একমাত্র ত্রুটি ছিল তিনি ছিলেন আফিমে আসক্ত।

এই আসক্তি তাকে সেনানায়ক ও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আপন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল। ' হুমায়ুন নামায় তিনি আর লিখেন, 'ছোট ভাই হিন্দাল মির্জা হুমায়ুনের এক বিশ্বস্থ উপদেষ্টা শেখকে হত্যা করলে হুমায়ূন খুব চিন্তিত হয়ে পারেন। হুমায়ুন সরাসরি তার মায়ের বাড়িতে যান, সেখানে গুল বদন বেগমও ছিলেন। তিনি ভাইয়ের প্রতি কোন বিদ্বেষ পোষণ না করে বরং তাঁকে শান্ত করে নিজের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যান। ' সম্রাট হুমায়ুনের প্রাসাদ সিংহাসন আরোহণেও হুমায়ুনের জন্য সহজ ছিলনা।

কারণ তাঁর ছোট সৎ ভাই কামরান মির্জার সাথে তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়ে ছিল। কিন্তু বাবা সম্রাট বাবরের ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর মৃত্যুর ৩ দিন পর হুমায়ূনের সম্রাট হিসেবে অভিষেক হয়। তখন সে সবে ২৩ বছরের যুবক। তিনি শের শাহ্‌ সূরির কাছে সাম্রাজ্য হারানর পর পারস্য সাম্রাজ্যের সহায়তায় কিছু রাজ্য উদ্ধার করতে পেয়েছিলেন। এ সময় তার অধিকৃত এলাকা ছিল সীমিত।

তবে তিনি যদি অংশ বিশেষ হলেও সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে না পারতেন, তবে মোঘল ইতিহাস সৃষ্টি হতো কিনা তা নিয়ে যথেস্ট সংশয় আছে। দ্বিতীয় দফায় সিংহাসন আরোহণের পরের বছরই তথা ১৫৫৬ সালের ২৪ জানুয়ারি মাগরিবের নামাজ আদায় করার জন্য তার ব্যাক্তিগত পাঠাগার থেকে দ্রুত নামতে গিয়ে আহত হন এবং সে অসুস্থতায় তিনি ২৭শে জানুয়ারী মাত্র ৪৭ বছর বয়সে দিল্লীতে ইন্তেকাল করেন (দৈবক্রমে তাঁর বাবা সম্রাট বাবরও মাত্র ৪৭ বছর বয়সে মারা যান)। দিল্লিতে সম্রাট হুমায়ূনের সমাধী সম্রাট হুমায়ূন ছিলেন যেমন মার্জিত আচরণের অধিকারী তেমনি দয়ালু হিসেবেও তার সুনাম ছিল। তার চরিত্রের একমাত্র ত্রুটি ছিল তিনি ছিলেন বাবার মতনই আফিমে আসক্ত। সম্রাট হুমায়ুনের বিবি হলেন হামিদা বানু বেগম (মতান্তরে আরো ৬ বেগমের নাম পাওয়া যায়, তারা হলেন- বেগা বেগম, বিগেহ বেগম, হাজি বেগম, মাহ-চুচাক, মিভে যান, শাহজাদি খানম)।

আর সন্তান- আকবর দ্য গ্রেট, মির্জা মোহাম্মদ হাকিম, মেয়ে বকসী বানু বেগম (যার নামে ঢাকায় বকসী বাজার), আকিকা বেগম। তাঁর শাসনামলে ঐতিহাসিক যুদ্ধ Battle of Gujrat (1535) Humayun & Bahadur Shah Battle of Chausa (1539) Sher Shah Suri & Humayun Battle of Kannauj (1540) Sher Shah Suri & Humayun এবং এই দুই যুদ্ধেই পরাজিত হয়েই কার্যত তিনি মসনদ হারান। The Zamburak (Camel gun) was introduced from Persia as a major weapon in the Mughal Empire by Humayun. সূত্রঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Humayun এবং অন্যান্য ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।