আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আটিবাজারের 'ল্যাংড়ার হালিম'

আটিবাজার যায়গাটা চিনেন কি? ঢাকার খুব কম লোকই চিনবেন, ভালো চিনবেন কেরানীগঞ্জের লোকেরা। তবে যোগাযোগের কথা বললে যায়গাটা মোহাম্মদপুরের খুবই কাছে। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের সাথেই বাঁশবাড়ী সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে মাত্র ১০ মিনিটের পথ। প্রতিজনের সিএনজি ভাড়া মাত্র ১২ টাকা। বসিলা ব্রিজ হবার পর ঢাকার অনেক যায়গা থেকেই মোহাম্মদপুরের অনেক কাছে এখন আটিবাজার।

আটিবাজারে যখন আমি প্রথম যখন আমি যাই, কার কাছে যেন ‘ভালো’ শুনে ঢুকে পড়ি ছোট্ট একটা হালিমের দোকানে, যা এলাকায় ‘ল্যাংড়ার হালিম’ নামেই পরিচিত। সেই যে একবার গিয়েছি, তা আজও বন্ধ হয়নি। দোকানের অবস্থা খুব ভালো নয়, বরং খুবই খারাপ বললেও ভুল বলা হবেনা। তবে যেই পণ্য নিয়ে এই দোকানটি, তা ব্যবসার গন্ডি পেরিয়ে যত্ন আর আন্তরিকতার ছোঁয়ায় এলাকায় সবার কাছে এক নামে পরিচিত। কমদামী হালিমের অভাব নেই আমাদের চারিপাশে, তবে এই হালিমটা এদের থেকে অনেক ব্যতিক্রম।

প্রধান ব্যতিক্রম হলো সবচেয়ে দামী অংশ মাংশটার ভেতরই। এখানে গরুর সেরা মাংশটাই নেয়া হয়, বট কিংবা কমদামী কোন অংশ নয়। হালিমের ডালটাও ঘন আর টেস্টটাও সকলের চেয়েই আলাদা এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। হালিমের উপরে ছড়িয়ে দেয়া হয় কারিগরের নিজের তৈরী করা মিক্স মশলা, ধনেপাতা-মরিচ কাটা, আর পেঁয়াজ বেরেস্তা। প্রায় সব যায়গার হালিমেই এগুলো আছে, তারপরও এটা যেন একটু আলাদা।

এর বাইরে ছোট টুলে রাখা আছে বিট লবন আর টকের ‘বোতল’। চাইলেই আপনি মিশিয়ে নিতে পারবেন। আর সবকিছুর পরেও বিক্রেতার আন্তরিকতা আপনাকে মুগ্ধ না করে পারবেনা। ছোট এক বাটি হালিম নিয়েও আমি যখন দু-তিনবার পেঁয়াজ চেয়ে নেই, হাসিমুখে তা দিয়ে ধন্য করেন লোকটি। এখানকার হালিমের দাম কম আর বেশী দুটোই আছে।

ছোট বাটি হালিম ১৫ টাকা, বড় বাটি ২৫ টাকা আর পায়া খেলে পড়বে ৬০ টাকা বাটি। পায়াটা আমার কাছে খুব স্পেশাল মনে হয়নি, বরং হালিমই স্পেশাল। তবে সাবধান, যারা চোখের সৌন্দের্যের হানিকর যায়গায় কিংবা সকল পরিবেশে খেতে অস্বস্তি বোধ করেন, তাদের জন্য এটা উপযুক্ত যায়গা নয়। বিকাল চারটার দিকে শুরু হয় এর বিকিকিনি চলে পাতিল শেষ না হওয়া পর্যন্ত, যা খুব বেশীক্ষণ নয়। যাবার উপায়টা বলে দেই এবার।

মহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে কিংবা বাঁশবাড়ি সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে আটিবাজারের সিএনজিতে উঠবেন। বসিলা ব্রিজ পার হয়ে আটিবাজারের কাছে আরেকটি ছোট্ট সেতু আছে, যেটা পার হয়ে একটু সামনে এগিয়ে এলে হাতের ডান পাশে পড়ে সাইনবোর্ড ছাড়া ছোট একটা দোকান, সামনে একটা পানির পিপা আর হালিমের একটা বড় পাতিল। ভেতরে দেয়াল ঘেঁষে বেঞ্চি পাতা, যা খালি পাওয়াটা কষ্টকর। দোকানের ভেতর ‘ফারজানা হালিম’ নামটি লেখা দেখেছি, তবে এলাকার লোকেরা বিক্রেতার পায়ের অসুবিধার জন্য একে ‘ল্যাংড়ার হালিমের দোকান’ নামেই চেনে। তবে সাবধান থাকবেন।

ওই দোকানের জনপ্রিয়তা পুঁজি করে আরো কয়েকটা হালিমের দোকান আশেপাশে গড়ে উঠেছে যার টেস্ট আপনাকে হতাশ করবে নির্ঘাত। ফেরার পথে সময় থাকলে বসিলা ব্রিজে নেমে বুড়িগঙ্গার উপর একটু দাঁড়াতে পারেন। এমন মুক্ত বাতাস ঢাকায় খুব একটা পাবেন না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.