আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাইকো কেলেঙ্কারি: তৌফিক ইলাহি, তার ভাগ্নে কাশেম এবং ভায়রা ভাই মওদুদ সহ আওয়ামি-বিএনপির যৌথ প্রযোজনা

১৯৯৯ সাল। আওয়ামি লীগ সরকার ক্ষমতায়। তৎকালিন জ্বালানি সচিব তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী'র ভাগ্নে কাশেম শরীফ ছিলেন ঐ সময়ে নাইকোর ভাইস প্রেসিডেন্ট (দক্ষিণ এশিয়া)। ২১ জুন কানাডার কোম্পানি নাইকো ভারতে পরিত্যক্ত গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে পূর্ব-অভিজ্ঞতার দাবি করে প্রান্তিক ও পরিত্যক্ত গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়ন ও উৎপাদনের একটি প্রস্তাব তদানীন্তন জ্বালানিসচিব ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর কাছে পেশ করে। ১৯৯৯ সালের ১ জুলাই তৌফিক-ই-ইলাহীর সভাপতিত্বে এক সভায় নাইকোর প্রস্তাব গ্রহণ এবং ছাতক, কামতা ও ফেনী গ্যাসক্ষেত্রকে প্রান্তিক হিসেবে উন্নয়ন ও উৎপাদন এবং এ জন্য বাপেক্স ও নাইকোর মধ্যে যৌথ অংশীদারি চুক্তির (জেভিএ) সিদ্ধান্ত হয়।

ছাতক কামতা ও ফেনী গ্যাসক্ষেত্র কখনই প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র ছিলনা। এই সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রকে প্রান্তিক হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে যৌথ সমীক্ষা করানো হয়। ২০০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর 'প্রান্তিক/পরিত্যক্ত গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়ন নীতিমালা' প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয় এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির সুপারিশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালের ৬ জুন অনুমোদন করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের আট দিন পর ১৪ জুন এ নীতিমালায় যুক্ত ১০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়, ১৯৯৯ সাল থেকে নাইকোর সঙ্গে সম্পাদিত সব কার্যক্রম অনুমোদিত বলে বিবেচিত হবে। পরবর্তীকালে ঊর্ধ্বতন মহলের অভিপ্রায়ে তিনটি গ্যাসক্ষেত্রকে পরিত্যক্ত/প্রান্তিক ঘোষণা করা হয়।

পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে ছাতক গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে কেবল ছাতক(পশ্চিম)কে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করার কথা বলা হলেও নাইকো তা মানতে রাজী হয়নি এবং ২০০১ সালের ৩ জুলাই এক পত্রে নাইকো ছাতক (পূর্ব) গ্যাসক্ষেত্রকে জয়েন্ট ভেঞ্চারের অন্তর্ভুক্ত করা হলে ওই অংশের জন্য আকর্ষণীয় আর্থিক শর্ত প্রদানের ইঙ্গিত দেয়। এরপর ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে নতুন নতুন খেলোয়াররা যুক্ত হয় যার মধ্যে হাওয়া ভবনের গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, এবং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব কামাল সিদ্দিকীকে ম্যানেজ করা হলে বিএনপি সরকারের রথি মহারথিরাও ম্যানেজ হয়ে যায়। কানাডীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি ছাড়াও নাইকোর স্বার্থরক্ষায় কানাডীয় এক মন্ত্রী ঢাকা সফর করেন। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকায় কামাল সিদ্দিকীর নাইকোর পক্ষে জ্বালানি মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের ওপর দফায় দফায় চাপ প্রয়োগ সম্ভব হয় বলে জানা যায়। ২০০২ সালের ৮ জুলাই বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে লেখা পত্রে নাইকোর ভাইস প্রেসিডেন্ট তৌফিক ইলাহির ভাগনে কাশেম শরীফ ছাতককে (পূর্ব) অন্তর্ভুক্ত করা না হলে তাঁদের পক্ষে জয়েন্ট ভেঞ্চার করা সম্ভব হবে না বলে জানান।

বাপেক্স পেট্রোবাংলা জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তিতে ছাতক(পূর্ব) অংশকে পরিত্যাক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে রাজী না হলে তৎকালিন জ্বালানি সচিব খায়রুজ্জামান চৌধুরীকে বদলি করে প্রথমে খন্দকার শহীদুল ইসলাম ও পরে নজরুল ইসলামকে সচিব করা হয়। পেট্রোবাংলার ওপর প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ থেকে নাইকোর অনুকূলে মতামত দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। নাইকোর অনুকূলে মতামতদানের জন্য বারবার তাগিদ এবং চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা তথা বাপেক্স নাইকোর অভিপ্রায় অনুযায়ী ছাতককে (পূর্ব) ছাতক (পশ্চিম) পরিত্যক্ত গ্যাসক্ষেত্রের আওতাভুক্ত দেখাতে বাধ্য হয়। ২০০৩ সালের ১৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চুক্তির খসড়া অনুমোদন করে এবং এর পর মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টা মওদুদ দ্রুত তা অনুমোদন করেন। আইনমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি ছিলেন নাইকোর আইন উপদেষ্টা।

আর নাইকোর 'প্রধান পৃষ্ঠপোষক' ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী মওদুদ আহমদের ভায়রা। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী পেট্রোবাংলাকে যে নির্দেশ দেন তার নোটে প্রতিমন্ত্রী লেখেন, ১৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে এবং তিনি চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদন করেছেন। অবশেষে, ২০০৪ সালের ১৬ অক্টোবর বাপেক্স ও নাইকোর মধ্যে প্রান্তিক/পরিত্যক্ত গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তি হয় যার ফলাফলস্বরুপ নাইকোর অনভিজ্ঞতা ও অবহেলায় ২০০৫ সালের জানুয়ারি মাসে ছাত্রক গ্যাস ক্ষেত্রের টেংরাটিলায় অনুসন্ধান কূপ খনন করতে গিয়ে প্রথম বিষ্ফোরণ এবং এর পর রিলিফ কুপ খনন করতে গিয়ে জুলাই মাসে দ্বিতীয় বিষ্ফোরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের হাজার হাজার কোটি টাকার গ্যাস সহ পুরো এলাকার কৃষি ও পরিবেশ ধ্বংস হয়। সূত্র: Click This Link আরো পড়ুন: তৌফিক ইলাহি'র জ্বালানি অপরাধের পূর্ণ তালিকা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.