আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আল কুরআনে শবে বরাত

আল্লাহ তা'লা বলেন, "নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমাসমূহ এবং ভাগ্য নির্ধারক শরকসমূহ অপবিত্র ও শয়তানের কাজ ছাড়া কিছুই না। অতএব, এগুলো থেকে বিরত থাক যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার। " সূরা আল মায়েদা - ৯০ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম শবে বরাত বা লাইলাতুল বারা'আত পরিভাষা কুরআন করীমে কোথাও ব্যবহৃত হয় নি। "লাইলাতুন নিসফি মিন শা'বান" বা "মধ্য-শাবানের রজনী" পরিভাষাটিও কুরআন কারীমে কোথাও ব্যবহৃত হয় নি। তবে কুরআন কারীমের একটি আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ "শবে বরাত" প্রসঙ্গ আলোচনা করেছেন।

মহান আল্লাহ বলেন: "আমি তো তা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক (বরকতময়) রজনীতে এবং আমি তো সতর্ককারী। এ রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। " সূরা দুখান : আয়াত ৩-৪ এবার এসুন একটু বিস্তারিত আলোচনা করি। মহান আল্লাহপাক বলেন "এ কোরআন যদি কোন গাইরুল্লাহ কর্তৃক রচিত হতো তাহলে এখানে অনেক অসংগতি থাকতো" আলহামদুল্লিাহ আমরা জানি আজঅব্দি কোন মানব সৃষ্ট আল কোরআনে একটা অসংগতি খুঁজে পায় নি। এখন কথা হলো আল্লাহ কোন রাতকে এতো বরকতময় করেছনে? ১) শবে বরাত ? নাকি ২) শবে ক্বদর যদি শবে বরাত হয় তাহলে আমরা ভাগ্যবান যে আল্লাহ আমাদের নির্দ্দিষ্ট করে একটা মাগফেরাতের রাথ ধার্য করে দিয়েছেন "সুবহানাল্লাহ" কিন্তু যদি দিনটি শবে ক্বদর হয় তাহলে তিনি রমজানের শেষ দশক এর যে কোন একটা বেজোড় রাতকে শবে ক্বদর বলেছেন কেন? ২৭ শে বা ২৯ শে- কে নির্দ্দিষ্ট করে দিলেন না কেন? শবে ক্বদর নিয়ে বিশ্ব মুসলিম উম্মার মধ্যে তো কোন মত বিরোধ নাই, তাহলে শবে বরাত নিয়ে এতো সমালোচনা কেন? আমরা জানি আল্লাহ পাক যে রাতে পবিত্র কোরআন নাযিল করেছেন সেই রাত্রিই মহিমান্বিত রজনী এবং সেই রজনীতেই আল্লাহ পাক তার সকল বান্দাদের বলেন "কে আছ এমন যে আমার কাছে চাই আর আমি তাকে দিব" এখন আমার প্রশ্ন সেই কোরআন নাযিলের রজনী কোনটি? শবে বরাত না-কি শবে ক্বদর? এখানে একটা সংঘর্ষ লক্ষ করা যাচ্ছে 'নাউ যুবিল্লাহ" "মুবারক রজনী'র ব্যাখ্যায় বিভিন্ন সাহাবী ও তাবিয়ী বলেছেন যে, এ রাতটি হলো "লাইলাতুল কাদর" বা "মহিমান্বিত রজনী"।

সাহাবীগণের মধ্য থেকে ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও ইবনু উমার (রাঃ) থেকে অনুরূপ ব্যাখ্যা বর্ণিত হয়েছে। তাবেয়ীগণের মধ্যে থেকে আবু আব্দুর রহমান আল-সুলামী (৭৪ হিঃ), মুজাহিদ বিন জাবর (১০২ হিঃ), হাসান বসরী (১১০ হিঃ), ক্বতাদা ইবনু দি'আমা (১১৭ হিঃ) ও আব্দুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম (১৮২ হিঃ) বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। তারা সকলেই বলেন যে, লাইলাতুল মুবারাকাহ অর্থ লাইলাতুল ক্বাদর। (তাবারী, জামিউল বায়ান (বৈরুত, দারুল ফিকর ১৯৮৮) ২৫/১০৭-১০৯; নাহহাস মা'আনিল কুরআনির কারিম (মক্কা মুকাররমা, উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, ১ম সংস্করণ, ১৯৮৮) যামাখুশরী, আল কাশশাফ (বৈরুত, দার আল মারেফা তা, বি), ইবনুল আরাবী, আহকাকুল কুরআন, ইবনু আতিয়্যাহ, আল-মুহারার আল ওয়াজীয, শাওকানী, ফাতহুল ক্বাদীর ইত্যদি) এসকল সাহাবী-তাবিয়ীর মতের বিপরীতে একজন তাবিয়ী মত প্রকাশ করেছেন যে, এ আয়াতে 'বরকতময় রাত্রি' বলতে শবে বরাত বুঝানো হয়েছে। সাহাবী ইবনু আব্বাস (মৃ. ৬৮ হিঃ) এর খাদেম তাবিয়ী ইকরিমাহ (মৃ. ১০৪ হিঃ) বলেন, এখানে 'মুবারক রজনী' বলতে মধ্য শা'বানের রাতকে বুঝানো হয়েছে।

ইকরিমাহ বলেন, এই রাতে গোটা বছরের সকল বিষয়ে ফয়সালা করা হয় । তাবারী, জামিউল বায়ান ২৫/১০৭-১০৯। অধিকাংশ বর্ণনাকারী এ বক্তব্যটি ইকরিমার বক্তব্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন। দ্বিতীয় হিজরী শতকের একজন বর্ণনাকারী বক্তব্যটি ইবনু আব্বাসের বক্তব্য বলে উল্লেখ করেছেন। আন-নাদর বিন ইসমাঈল (১৮২ হিঃ) নামক এক ব্যক্তি বলেন, তাকে মুহাম্মদ বিন সুক্কা বলেছেন, তাকে ইকরিমাহ বলেছেন ইবনু আব্বাস থেকে, তিনি উপরে উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন; মুবারক রজনী হলো মধ্য - শা"বানের রাত।

এতে মৃত্যু বরণকারীদের নাম বর্ননা করা হয়, হাজ্বীদের তালিকা তৈরী করা হয়, অতঃপর কোন বাড়তি-কমতি করা হয় না। (যাহাবী, মীযান-ইতিদাল ৭/২৬) এ সনদের রাবী 'আন-নাদর ইবনু ইসমাঈ (১৮২ হিঃ) কুফার একজন গল্পকার ওয়ায়েয ছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে সৎ হলেও হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তার ভুলের কারণে মুহাদ্দিসগণ তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। আবুল হাসান ইলি বলেছেন, এ ব্যক্তি বিশ্বস্ত। ইয়াহয়িয়া বিন আঈদ বরেছেন, সে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও মূল্যহীন।

ইমান নাসায়ী ও আবু যুর'আ বলেছেন, সে শক্তিশালী বা গ্রহণযোগ্য নয়। ইয়াহয়িয়া বিন মাঈন বলেছেন ; নাদর বিন ইসমাঈল সত্যবাদী তবে সে কি বর্ণনা করে তা নিজেই জানে না। ইমামা বুখারী ইমাম আহমদের বরাত দিয়ে বলেন, এ ব্যক্তি সনদ মুখস্থ রাখতে পারত না। ইবনু হিব্বান বলেন, তার ভুল খুব মারাত্মত, যে কারনে তিনি পরিত্যক্ত বলে গণ্য হয়েছেন। (ইবনু আদী, আল - কামিল ৮/২৬৬, ২৬৭, যাহাবী, মীযা আল - ইতিদাল ৭/২৬।

আন নাদর ইবনু ইসমাঈলের অবস্থা অবলোকন করলে আমরা বুঝতে পারি যে, তিনি ভুল বশত ইকরিমার বক্তব্যকে ইবনু আব্বাসের বক্তব্য হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি সম্ভবত মুহাম্মদ ইবনু ষূক্কাকে বলতে শুনেছে "ইকরিমা থেকে, ইবনু আব্বাসের মাওলা"। তিনি ভুলে বলেছেন "ইকরিমা থেকে, ইবনু আব্বাস থেকে,"। এভাবে মাকতু হাদীস বা তাবিয়ীর বক্তব্য মাওকুফ বা সাহাবীর বক্তব্যে পরিণত হয়েছে। বিশ্বস্ত অনেক রাবীই স্মৃতির দুর্বলতা, নিয়মিত চর্চা ও পান্ডুলিপি সংরক্ষনের অভাবে এভাবে অনেক সময় মাকতূ হাদীসকে মাওকূফ বা মাওকূফ হাদীসকে মারফূ রূপে বর্ণনা করেছেন।

অন্যান্য রাবীদের বর্ণার সাথে তুলনামূলক নিরীক্ষার মাধ্যমে মুহাদ্দিসণ এসকল ভুল নির্ধারণ করেছেন। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পরিযে, তাবিয়ী ইকরিমা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি সূরা দুখানে উল্লিখিত "মুবারক রজনী" বলতে "মধ্য শাবানের রজনী" বুঝাতেন। উল্লেখ্য যে, মুফাসসিরগণ ইকরিমার এ মত গ্রহণ করেন নি। প্রসিদ্ধ মুফাসসিরদের মধ্যে কেউই ইকরিমার এ মত গ্রহণ করেন নি। কোন কোন মুফাসসির দুটি মত উল্লেখ করেছেন এবং কোনোটিরই পক্ষে কিছু বলেন নি।

আর অধিকাংশ মুফাসসির ইকরিমার মতটি বাতিল বলে উল্লেখ করেছেন এবং অন্যান্য সাহাবী-তাবিয়ীর মতটিই সঠিক বলে গ্রহণ করেছেন। তাঁরা বরেন যে, সঠিক মত হলো, এখানে 'মুবারক রজনী' বলতে লাইলাতুল ক্বাদর' কে বুঝানো হয়েছে। মহান আল্লাহ যে রাত্রিতে কুরআন কারীম অবর্তর্ণ করেছেন সে রাত্রিকে এক স্থানে লইলাতুল ক্বাদর বা 'মহিমাম্বিত রজনী' বলে অভিহিত করেছেন। (সূরা ক্বাদর: আয়াত ১)। অন্যত্র এ রাত্রিকেই 'লাইলাতুল মুবারাকা' বা "বরকতময় রজনী" বলে অভিহিত করেছন।

এবং এ রাত্রিটি নিঃসন্দেহে রামাদান মাসের মধ্যে; কারণ অন্যত্র আল্লাহ ঘোষনা করেছেন যে, তিনি রামাদান মাসে কুরআন নাযিল করেছেন। " ( সূরা বাকারা আয়াত ১৮৫) এ থেকে প্রমানিত হয় যে, মুবারক রজনী রামাদান মাসে, শাবান মাসে নয়। তাঁদের মতে 'লাইলাতুম মুবারাকা' এবং 'লাইলাতুল ক্বাদর" একই রাতের দুটি উপাধি। এ সকল মুফাসসিরের মধ্যে রয়েছেন মুহাম্মাদ ইবনু জারীর তাবারী (মৃ. ৩১০ হিঃ), আবু জাফর ইবুনু মুহাম্মাদ আন নাহহাস (৩৩৮ হিঃ), আবুল কাসেম মাহমুদ ইবনু উমর আয-যামাখশারী (৫৩৮ হিঃ), ইবনুল আরাবী, আবু বকর মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ (৫৩৪ হিঃ), আবু মুহাম্মদ আব্দুল হক ইবনু আতিয়্যা (৫৪৬ হিঃ), আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনু আহমদ আল কুরতুবী (৬৭১ হিঃ), আবু হাইয়্যান মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ গারনাতী (৭৪৫ হিঃ, ইসমাঈল ইবনু উমার আবুল ফিদা, ইবনু কাসীর (৭৭৪ হিঃ), আবুস সাঊদ মুহাম্মদ ইবনু মুহাম্মদ আল ইমাদী (৯৫১ হিঃ), মুহাম্মদ ইবনু আলী আল শাওকানী (১২৫০ হিঃ), সাইয়্যেদ মাহমুদ আলুসী (১২৭০ হিঃ, আশরাফ আলী থানবী (১৩৬২ হিঃ), মুহাম্মদ আমীন আল শানক্বীতী (১৩৩৯ হিঃ), মুফতী মুহাম্মদ শফী, মুহাম্মদ আলী আল-সাবুনী প্রমূখ। (তারারী, জামিউল বায়ান ২৫/১০৭-১০৯, নাহহাস, মা'আনিল কুরআনির কারিম ৬/৩৯৫; যাশাখশরী, আল-কাশশাফ ৩/৪২৯, ইবনু কাছীর, তাফসীর আল কুরআন আল আযীম ৪/১৪০, শাওকানী, ফাতহুল ক্বাদীর ৪/৫৭০-৫৭২, শা'আরেফ আল-কুরআন ৭/৮৩৫-৮৩৬ ইত্যাদি) ইমাম মুহাম্মদ ইবনু জারীর তাবারী বিভিন্ন সনদে ইকরিমার এ ব্যাখ্যা উদ্ধৃত করার পরে তার প্রতিবাদ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন; "সঠিক মত হলো তাদের মত যারা বলেছেন যে, লাইলাতুম মুবারাকা বা বরকতময় রাত্রি হলো লাইলাতুল ক্বাদর বা মর্যাদার রাত্রি" । ( তাবারী, জামিউল বায়ান ২৫/১০৮) অতঃপর তিনি বলেন যে, বরকতময় রাত্রির ব্যাখ্যার ভিত্তিতে "প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফয়সালার বিষয়েও মতভেদ করেছেন। অনেকে বলেছেন এ হলো "লাইলাতুল ক্বাদর" এ রাত্রিতেই পরবর্তী বছরের জন্ম, মৃত্যু, উন্নতি, অবনতি ও অন্যান্য বিষয় নির্ধাণ করা হয়। হাসন বসরী, কাতদিা, মুজাহিদ, আবু আব্দুর রাহমান, আস-সুলামী, উমার মাওলা গাফরা, আবূ মালিক, হিলাল ইবনু ইয়াসাফ প্রমুখ তাবিয়ী-তাবি-তাবিয়ী থেকে উদ্ধৃত করেন যে, এদের সকলের মতেই লাইলাতুল ক্বাদরে এ সকল বিষয়ের ফয়সালা করা হয়। এরপর তিনি ইকরামা থেকে উদ্ধৃত করেন যে, তার মতে লাইলাতুন নিসফি মিন শা'বানে এ সকল বিষয়ের ফয়সালা করা হয়।

অতঃপর তিনি বলেন; "এতদুভয়ের মধ্যে সঠিকতর মত হলো যারা বলেছেন যে, লাইলাতুল ক্বাদরে এ সকল বিষয়ের ফয়সালা হয়; কারন আমরা বলেছি যে, এখানে লাইতুম মুবারাকা বলতে তো লাইলাতুল ক্বাদরকেই বুঝানো হয়েছে। (তাবারী, জামিউল বায়ান ২৫/১০৮-১০৯) এ বিষয়ে আল্লামা আবূ বাকর ইবনুল আরাবী (মৃত্যু ৫৪৩ হিঃ) বলেন; "অধিকাংশ আলিম বলেছেন যে, লাইলাতুল মুবারাকা বা বরকতময় রজনী হলো লাইলাতুল ক্বাদর। কেউ কেউ বলেছেন, তা হলো 'মধ্য শাবানের রজনী"। এ মতটি বাতিল; কারণ মহান আল্লাহ তাঁর সন্দেহাতীভাবে সত্য গ্রন্থে বলেছেন: "রামাদান মাস যার মধ্যে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। (সূরা বাকারা ১৮৫ আয়াত)।

এ কথাটি দ্ব্যর্থহীনভাবে জানাচ্ছে যে, কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় রামাদান মাস। অতঃপর এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় জানিয়ে বলা হয়েছে "বরকতময় রাত্রিতে"। কাজেই কেউ যদি মনে করে যে, এ বরকতময় রাত্রিটি রামাদান ছাড়া অন্য কোনো মাসে তাহলে সে আল্লাহর নামে মিথ্যা বানিয়ে বললো। (আবূ বাকর ইবনুল আরাবী, আহকামূল কুরআন (বৈরুত, দারু ইহইয়াউত তুরাস আল-আরাবী ৪/১৬৯০) আল্লামা কুরতুবী (৬৭১ হিঃ) বলেন; "লাইলাতুম মুবারাকা- বরকতময় রজনী- হলো লাইলাতুল ক্বাদর.....ইকরিমাহ বলেছেন, এখানে বরকতময় রজনী বলতে মধ্য শাবানের রজনী বুঝানো হয়েছে। প্রথম মতটিই সঠিকতর।

(তুরতুবী, আল-জামি'লি-আহকামিল কুরআন ১৬/১২৬) আল্লামা ইবনু কাসীর (৭৭৪ হিঃ) নিশ্চিত করেন যে, বরকতময় রজনী বলতে "লাইলাতুল ক্বাদর"-ই বুঝানো হয়েছে। অতঃপর তিনি বলেন: "ইকরিমাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, বরকতময় রাত্রিটি শাবানের মধ্যম রজনী। এমতটি একটি অসম্ভব ও অবাস্তব মত। কারন কুরআনে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা হয়েছে যে, এ রাত্রটি রামাদানের মধ্যে। (ইবনু কাসীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম ৪/১৪০) আল্লামা আশরাফ আলী থানবী (১৩৬২ হিঃ) বলেন: "অধিকাংশ তাফসিরকারকই 'লাইলাতুম মুবারাকা'- কে এখানে 'শবে ক্বদর" বলিয়া থফসীর করিয়াছেন এবং এ সম্মন্ধে হাদীসও যথেষ্ট রহিয়াছে।

.........আর কেহ কেহ 'লাইলাতুম মুবারাকা'-এর তাফসীর করিয়াছেন "শবে বরাত"। কেননা শবে বরাত সম্মন্ধেও বহু হাদীস বর্ণিত হইয়াচে যে, শবে বরাতে বৎসরের যাবতীয় কার্যের মীমাংসা হইয়া থাকে। কিন্তু যেহেতু শবে বরাতে কোরআন নাযিল হইয়াছে বলিয়া কোনো রেওয়ায়াত নাই এবং শবে ক্বদরে নাযিল হইয়াছে বলিয়া স্বং কোরআনের "নিশ্চই আমি তা লাইলাতুল ক্বাদরে অবতীর্ণ করেছি" আয়াতেই উল্লেখ রহিয়াছে; সেহেতু শবে বরাত বলিয়া লাইলাতুম মুবারাকা-এর তফসীর করা শদ্ধ নহে বলিয়া মনে হয়। (থানবী, আশরাফ আলী, তাফসীর-ই আশরাফী ৫/৬১৫-৬১৬) ইকরিমার মতটি প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে মুফাসসিরগণের এরূপ ঐকমত্যের কারন হলো, ইকরিমার এ মতটি কুরআনের স্পষ্ট বাণীর সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ কুরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, আল্লাহ রামাদান মাসে কুরআন নাযিল করেছেন।

অন্যত্র বলা হয়েছে যে, একটি মুবারক রাত্রিতে ও একটি মহিমাম্বিত রাত্রিতে তিনি কুরআন নাযিল করেছেন। এ সকল আয়াতের সমন্বিত স্পষ্ট অর্থ হলো, আল্লাহ পাক রামাদান মাসের এক রাত্রিতে কুরআন নাযিল করেছেন এবং সে রাত্রটি বরকতময় ও মহিমাম্বিত। বুবারক রজনীর ব্যাখ্যায় মধ্য শাবানের রজনীর উল্লেখ করার অর্থ হলো এই আয়াতগুলির স্পষ্ট অর্থ বিভিন্ন অপব্যাখ্যা ও ঘোরপ্যাঁচের মাধ্যমে বাতিল করা। এভাবে দেখা যায় কোরআনে "শবে বরাত" বা লাইলাতুন নিসফি মিন শা'বান" সম্পর্কে কোনোরূপ নির্দেশনা নেই। তবে এ বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

মধ্য শা'বানের রজনী বা শবে বরাত সম্পর্কে প্রচলিত হাদীসগুলিকে সেগুলির অর্থ ও নির্দেশনার আলোকে সাত ভাগে ভাগ করা যায়: ১) সাধারণ ফযীলতের হাদীস, যেগুলিতে কোন আমলের কথা উল্লেখ নেই। ২) এ রাতে দোয়া-মুনাজাত করতে উৎসাহজ্ঞাপক হাদীস। ৩) এ রাতে অনির্দ্ধারিত সালাত আদায়ে উৎসাহজ্ঞাপক হাদীস। ৪) এ রাতে হায়াত, মওত ও রিযিক নির্দ্ধারণ বিষয়ক হাদীস ৫) নির্দ্ধারিত রাক'আত নির্দ্ধারিত পদ্ধতিতে আদয়ে উৎসাহজ্ঞাপক হাদীস। ৬) সনদ বিহীন কিছু প্রচলিত প্রথা।

৭) উক্ত রাত সম্বন্ধে সাহাবা ও তাবেয়ীগণের পক্ষ থেকে কিপয় বক্তব্য ও আমল এগুলো নিয়ে আলোচনা আর দীর্ঘ করতে চাই না। শুধু এতোটুকু বুঝি ওলামায়েকরামগণ পারেন আমাদের সঠিক পথের সন্ধান দিতে। এতো বড় গুরুত্বপূর্ণ রাত শুধু আমাদের উপমহাদেশের ওলামায়েকরামগণের নিকটই ধরা দিল? যেখানে ইসলাম এসেছে, যেখানে গোমরাহী প্রবেশ করতে পারবেনা বলে আল্লাহর নাবী (সাঃ) হাদীস বর্ণনা করে গেছেন সেখানকার মুসলমানগন কিছুই জানতে পারলেন না? এ রাতে যা করনীয়ঃ ক) অন্য রাত্রির ন্যায় নফল নামায পড়া, মৃতের জন্য দোয়া করা খ) পটকা ফুটিয়ে আনন্দ উল্লাহ করা থেকে বিরত থাকা গ) আগরবাতি, মোমবাতি বা মসজিদ আলোকসজ্জা না করা ঘ) প্রমাণহীন বানোয়াট নিয়মে নামাজ না পড়া ঙ) শবে ক্বাদরকে সেই ভাগ্যের রজনী মনে করা এবং তার খোঁজে রামাদানের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিতে আল্লাহর অনুগ্রহ খোঁজ। আল্লাহ পাক বিশ্বের সকল মুসলিমকে তাঁর অনুগ্রহ দিবসের দাওয়াত স্পষ্ট করে পৌঁছে দিক এবং সকল ভেদাভেদ দুর করে সঠিক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।