আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিনেমায় মিউজিক এর গুরুত্ব - ফিল্মমেইকার হিসেবে আপনার করনীয়

স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা সিনেমার ভাষা নিয়ে কথা বলার ইচ্ছে থাকলেও আপাতত মিউজিক নিয়ে কাভার করছি। এক পর্বে শেষ হবে কিনা জানিনা। যতদুর লিখা যায়। এই লেখার সাথে কিছু ডাউনলোডের লিঙ্ক ও যুক্ত করে দিলাম যেনো আপনার ফিল্মের মিউজিক ও সাউন্ড ইফেক্ট খোঁজাখুজির জন্য মাথা ঘামাতে না হয়। একজন ডিরেক্টর হিসেবে আপনার দায়িত্ব হলো সিনেমার যাবতীয় ব্যাপারে জানা-শোনা রাখা।

আপনাকে সব সেক্টরে যে পারদর্শী হতে হবে তা নয়; কিন্তু কিছু কিছু সেক্টর আপনার নখদর্পনে থাকা উচিত। এর মাঝে মিউজিক ডিপার্টমেন্ট একটি। আপনার ফিল্ম এর মিউজিক কেমন হবে সেটা নির্ভর করবে আপনার রুচীর উপর; এবং নির্ভর করবে আপনার কমন সেন্স এর উপর ও। ধরুন, ভয়ের সিকোয়েন্সে আপনি কমেডি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করলেন, যদি আপনার লক্ষ্য থাকে ভয় দেখানো তাহলে ফানি বা কমেডি মিউজিক কোনই কাজে আসবেনা। তবে আপনার সিকোয়েন্সের উদ্দেশ্য যদি হয় কমেডি, তাহলে অবশ্যই ঠিক হবে।

আবার, হরর মুভিতে আসলে আপনি কেমন ভয়ের মিউজিক ব্যবহার করবেন সেটার উপর নির্ভর করবে আপনার সেই সিকোয়েন্সের সাথে আপনার ফিল্মের চরিত্রগুলর একাত্মতা হচ্ছে কিনা। একটা তথ্য দিচ্ছি - কোন কোন ফিল্মমেকার শুটিং এর সময় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করে থাকে যেনও অভিনেতা অভিনেত্রীরা তাদের এক্সপ্রেশন ভালোভাবে এক্সপ্রেস করতে পারে। মাঝে কিছু কথা বলে নেই। সিনেমা পিপলস এর বর্ষ্পূর্তি উপলক্ষে টিউটোরিয়াগুলো এখন আর বেসিক কাভার করবেনা। এখন থেকে ইন্টেরমেডিয়েট লেভেলে কথা হবে।

যারা ইতিমধ্যে কিছু কাজ করেছেন ঝাপিয়ে পড়ে তাদের কে অভিনন্দন। যারা করেননি, তারা কিছু একটা করে ফেলুন শুরুতেই। তাহলে আপনার অনেক কিছু বুঝতে সুবিধা হবে। শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞানে আপনি বেশিদুর এগুতে পারবেন না। কিছুদিন পর বিরক্তি এসে পড়বে।

আচ্ছা, আবার আগের জায়গায় ফিরে যাই। সিনেমায় মিউজিক কেনো দরকার? খেয়াল করুন - যখন সিনেমায় কোন ডায়ালগ ছিলোনা, তখন ফিল্মমেইকার রা সিনেমার ব্যাকগ্রাউইন্ডে (বিজি) মিউজিক ব্যবহার করতো তাদের সিনেমার ভাষা বুঝানোর জন্য। বিজি মিউজিক ব্যবহার করা হতো দর্শক কে সিকোয়েন্সের সাথে ধরে রাখার জন্য, চরিত্রগুলোর অভিনয় আরো ফুটিয়ে তোলার জন্য। চার্লি চ্যাপ্লিন তো দেখেছেন, তাই না? মিউজিক আপনার ব্রেইনে কিরকম ইফেক্ট ফেলে, সে ব্যাপারে ঝট করে একটি ভিডিও দেখে ফেলতে পারি আমরা। মিউজিক কিন্তু শুধু কপি পেস্ট করে বসালেই হবেনা, আপনাকে বুঝতে হবে সিকোয়েন্সের টেম্পো, সেই অনুপাতে আপনাকে আপনার ফিল্মের ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিকের টেম্পো ঠিক করতে হবে।

এজন্য দেখবেন একি মিউজিক এর ভিন্ন ভিন্ন টেম্পো পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া খেয়াল রাখা উচিত আপনার কোন সিকোয়েন্স কন মিউজিক ডিমান্ড করছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে - কিভাবে বুঝবো কোন সিকোয়েন্স কোন ধরনের মিউজিক ডিমান্ড করে? আপনাকে এক্ষেত্রে প্রচুর সিনেমা দেখতে হবে এবং একি সাথে সিনেমার মিউজিক খেয়াল করতে হবে, দেশী বিদেশী প্রচুর ইন্সট্রুমেন্টাল ও নন-ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক শুনতে হবে, মিউজিক এর ব্যাপারে আরেকটু ঘাটাঘাটি করতে হবে। মিউজিক পারে আপনাকে হাসাতে, আপনাকে কাঁদাতে, আপনাকে টেনশনে রাখতে, আপনার হাত মুষ্টিবদ্ধ করতে, আপনার গুঁজে থাকা পিঠ সোজা করতে। মিউজিক পারে আপনাকে বিদ্রোহী করতে, মিউজিক পারে আপনাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস জোগাতে।

একি সাথে মিউজিক আপনাকে ভালবাসতে শিখাবে, মিউজিক আপনাকে ভালোবাসা বিলি করতেও শিখাবে। আসুন মাঝে দিয়ে এই ভিডিও টি দেখে ফেলি। ডিরেক্টর তারান্তিনোর মতে মিউজিক হচ্ছে একটি 'Magical Object' যেটা কিনা ঘটনা এবং চরিত্রদের মাঝে একটি বন্ধন সৃষ্টি করে। তারান্তিনোর সিনেমা তে মিউজিক সবসময় ই প্রাধান্য পেয়ে আসছে। কিলবিল এর এই ক্লিপ টা দেখুন - একি সাথে কয়েক ধরনের মিউজিক এর দেখা পাবেন।

খেয়াল করুন, কোথায় মিউজিক স্টপ হিয়ে গেছে, আবার কোথা থেকে ফেড ইন দিয়ে শুরু হয়েছে, কোথায় পিচ উপরে উঠে গিয়েছে, কোথায় টেম্পো কম ছিলো বা বেশী। এক ক্লিপে এতো কিছু কোথায় পাবেন আর !! মার্টিন স্করসিসি নিজেকে পরিচিত করেছেন মিউজিক এর পরিপূর্ন সদ্বব্যবহারকারী হিসেবে। উনার কিন্তু মিউজিক ব্যান্ডের উপর কিছু ডকুমেন্টারী ও আছে - No Direction Home: Bob Dylan (2005), The Last Waltz (1978), এবং Shine a Light (2008)... The Departed (2006) এর কথা মনে আছে? এই সিনেমার ক্লাইমেক্স কিন্তু তার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এর জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। ড্রপকিক মরফির পাঙ্ক-রক “I’m Shipping Up to Boston” খুবই জোড়ে বাজানো হয়েছিল যেটা দর্শকদের ব্রেনের কোষে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিলো এবং দর্শকরা বুঝতে পারছিলো যে গুরুত্বপুর্ন কিছু একটা ঘটতে চলেছে। আমি যেটা খুজতেছিলাম সেটা পাইনি ইয়ুটিউবে, কিন্তু ট্র্যাক টা সহ পুরো মুভির স্ন্যাপ্স যুক্ত এই ক্লিপ টা পেয়েছিঃ এমনি ভাবে প্রতিটা গ্রেট সিনেমার গ্রেট হয়ে উঠার পেছনে ব্যাঙ্কগ্রাউন্ড স্কোর/সাউন্ডট্র্যাক এর গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে।

একজন ফিল্মমেকার হিসেবে আপনাকে মিউজিক বুঝতে হবে। প্রচুর মিউজিক ট্র্যাক ও গান শুনতে হবে। শুনতে হবে ফিল্ম এর মিউজিক স্কোর গুলো। বুঝতে হবে কোথায় কেমন মিউজিক যাওয়া উচিত। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ছাড়াও যেটা গুরুত্বপূর্ন সেটা হলো সাউন্ড ইফেক্ট।

যেমন ধরুন, আপনার ক্যারেক্টার যখন গুলি করবে, তখন আপনার দর্শক শুনতে চাইবে একটি রিয়েল গুলির আওয়াজ। আপনি যদি সেখানে বাশীর সুর দেন তাহলে কিন্তু হবেনা (হতেও পারে, যদি সঠিক শটে সঠিকভাবে এটার প্রয়োগ ঘটাতে পারেন) ... তেমনি ভাবে, আপনার হাতের আঙ্গুল ফুটানোর সাউন্ড ইফেক্ট ও ব্যবহার করা উচিত যদি সিকোয়েন্সে হাতের আঙ্গুল ফুটানো কোন অর্থবহ মেসেজ দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে একটি ফানি কিন্তু শিক্ষনীয় ক্লিপ দেখতে পারেন। তো, আর দেরী করছেন কেনো? কিনে ফেলুন একটি এমপিথ্রি বা আইপড যদি আপনার না থেকে থাকে, অথবা আপনার মোবাইল টাকেই ইউজ করুন গান শোনার ক্ষেত্রে। হাবীব-রুমি-আতিফ এর গান লাথি মেরে সরিয়ে দিন।

বেশী বেশী সাউন্ডট্র্যাক/ইন্সট্রুমেন্টাল শুনুন। শুনুন কিছু বাইরের দেশের ভিন্ন ভাষার মিউজিক। যেমন ধরুন, চাইনিজ মিউজিক শুনতে পারেন। চাইনিজ মিউজিক কিন্তু দুর্দান্ত ফিল ক্রিয়েট করতে পারে। শুনতে পারেন কিছু আফ্রিকান মিউজিক ও।

আর গান যে শুনবেন না তা নয়, গান ও শুনবেন। আর শুনুন বাংলা পুরোনো কিছু ক্লাসিক গান, যেখান থেকে পাবেন আবহমান বাংলার ফিল। ফিলে ফিলে ইস্রাফিল। সিনেমা পিলস এর টিম মেম্বার সুমন আমাকে এই ভিডিও টি দিলো। আপনাদের ও দেখা উচিত তাই এখানে আড করে দিলাম।

রবার্ট রড্রিগোয়েজ এর ব্যাপারে একটি তথ্য দেই। রবার্ট হলো সেইসব ট্যালেন্ট ডিরেক্টরদের একজন যে কিনা একটা ক্যামেরা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলো ফিল্ম বানাতে। নিজের ইচ্ছাশক্তির পরিপূর্ন ব্যবহার করে মাত্র ৭ হাজার ডলারে সে বানিয়ে ফেলে El Maricachi.তার এই ফিল্ম দিয়েই সে হলিউডে ঢুকে যায়। এবং পরবর্তীতে উপহার দেয় Desparado, Once Upon A Time In Mexico, Spy Kids এর মতো। নীচের ভিডিও টার লাস্টে রবার্ট এর কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে ফেলুন - Always think in your head. এবার আসুন কিছু পিডিএফ সহ কিছু ওয়বসাইটের লিঙ্ক দিচ্ছি।

পিডিএফঃ Music as a source of emotion in film পিডিএফঃ The role of music communication in cinema কপিরাইট আইনমুক্ত সাউন্ডক্লিপ নামানোর জন্য কিছু ওয়েবসাইট এর লিঙ্কঃ গুগল সার্চ তবে অনেক ওয়েবসাইটে পে করা লাগে মিউজিক নামাতে। সেক্ষেত্রে আমার নিজস্ব পছন্দ হলো এই সাইটটি ... আমি আমার ফিল্মে এই সাইট থেকে নামিয়ে বিজি স্কোর ইউজ করেছি এবং করছি। দুর্দান্ত একটি ওয়েবসাইট। এবার আসুন কিছু টরেন্ট লিঙ্ক দেই মিউজিক এর। ওয়ার্নার ব্রস সাউন্ড ইফেক্ট লাইব্রেরী - ১৪০০ ফাইল - ১৯৩ মেগাবাইট ১০০১ টা সাউন্ড ইফেক্ট - ২৪০ মেগাবাইট বিবিসি সাউন্ড ইফেক্ট লাইব্রেরী - ৪০টি অ্যাল্বাম - সাড়ে ৫ গিগা - ২৮ টা সিডির সাউন্ড ইফেক্ট লিঙ্কগুলো ভেরিফাইড।

সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ। মাহদী হাসান [শামীম] ফ্রীল্যান্স ফিল্মমেইকার সিনেমা পিপলস  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.