আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাইয়াকথন:২:- ওয়ান্স আপন এ টাইম, আমারও একটা সাইয়া/ছাইয়া নিক ছিল !!!

বিষাদময় জীবন এগিয়ে যায় যুক্তিহীন মৃত্যুর দিকে !!! সাইয়া / ছাইয়া টার্মটি ব্লগে মোটামুটি সুপরিচিত। ব্লগ ভিজিট করেন অথচ এই শব্দ শোনেন নাই এমন মানুষ মনে হয় বেশি পাওয়া যাবে না। তবে দু:খের কথা হল এই টার্মের ব্যাপারে অনেকে জানলেও সাইয়া / ছাইয়া নিকের কাজ-কারবার অনেকেই ধরতে পারেন না। দুনিয়াতে লুলের অভাব নাই। মেয়ে নিক থেকে পোস্ট আসলেই এরা মোটামুটি ঝাপিয়ে পড়ে।

এদের লুলামী দেখে সাইয়া / ছাইয়া প্রজাতিসহ যারা কিছুটা সচেতন তারা সবাই বিনুদুন নিতে কোনোমতেই ভুল করে না !!! ব্লগে কিছুটা রাখ-ঢাক থাকলেও ফেবুতে যা দেখি তাতে অবাকই হতে হয়। যাই হোক, পোস্ট বড় না করে মূল কথায় আসি। এই পোস্টে মূলত আমার একটা সাইয়া/ ছাইয়া নিক নিয়ে কিছু মজার ঘটনা শেয়ার করব। এই নিকটা কোন ব্লগে খোলা হয় নাই, বরং শুধুমাত্র অনলাইন চ্যাটিং এর মাঝেই এর কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ। যারা আমার ফেবুতে অ্যাড আছেন তারা শেষ ২-৩ টা স্ট্যাটাসেই এই নিকটা কি হতে পারে তা সম্পর্কে আইডিয়া পেয়ে গেছেন।

সময়টা ২০০৮, নতুন নতুন সামাজিক হয়েছি। নতুন খোলা অ্যাকাউন্ট, ফ্রেন্ডলিস্টেও তেমন কেউ নাই। চ্যাটে কেউ নকও করে না। আমিও বিমর্ষ হয়ে দিন কাটাতে থাকি। এরই মাঝে মাথায় বুদ্ধি আসে আরেকটা অ্যাকাউন্ট খোলার।

যেমন ভাবা তেমন কাজ, খুলেই ফেললাম একটা অ্যাকাউন্ট। তবে মেয়েদের নামে। প্রথম প্রথম খুব লজ্জা লাগত মেয়ে নাম নিয়ে মেয়ে সেজে লগইন করতে। কিন্তু কিছুদিনের মাঝে এইটায় মজা পেয়ে গেলাম। বিশেষ করে ছেলেদের হ্যাংলামো দেখে।

তবে মেজাজও খারাপ হইত কিছু ফাউল পোলাপানের গালাগালি আর ডিস্টার্বের কারনে। তবে সব কিছুর উপর যে নির্মল বিনোদন ছিল তার সাথে আর কোন তুলনা চলে না। ১০০% পিওর বিনুদুন। মজার ব্যাপার কি, অনেকেই কিন্তু ভাল বিহ্যাভও করত, আমি ছেলে জেনেও। এই ব্যাপারটাও ভাল লাগত।

আবার অনেকে বোনও পাতাত, যাদের কাছে আমি আন্তরিক ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। অনেক মেয়ের সাথেও এইভাবে নতুন করে পরিচয় হয়েছে। স্থানভেদে তাদের রুপের ভিন্নতা দেখে মুগ্ধ, বিস্মিত এবং বিরক্ত হয়েছি। এবার ঘটনায় আসি, যে ঘটনাগুলো মূলত আমার ক্যাম্পাসের ফ্রেন্ডদের সাথেই ঘটানো হয়েছে সেগুলোই শেয়ার করছি। কারন তাদের রিয়াল লাইফ সম্পর্কে আমি অবগত।

সব ঘটনা বলতে গেলে পুরা ব্লগ ভরে যাবে। ঘটনা ১ : আমার এক চাল্লু বন্ধু, যে আবার তারই ডিপার্টমেন্টের একজন মেয়ের সাথে এনগেজড, আমাকে রাতে হঠাৎ করে নক করল, হাই হ্যালো শুরু করল। আমি উল্টা আরও ভাব নিচ্ছি, দশটা কথা বললে একটার উত্তর দিচ্ছি। হঠাৎ করেই সে বলে ওঠে - তুমি ভাইবো না আমি তোমার লগে প্রেম করুম। আমি অলরেডি এনগেজড।

আমি বললাম- সো হোয়াট ?!? আমিও এনগেজড !!! আমার বন্ধু উলটা টাসকি। এরপরে আর কোনদিন নক করে নাই। ঘটনা ২ : এই ঘটনা যার সাথে ঘটেছে তার সাথে এখন বেশ কথাবাত্রা হলেও যখনকার ঘটনা তখন তার সাথে পরিচয় ছিল না। এই ছেলেটা সামুতেই ব্লগিং করে। ভদ্র ছেলে, জাস্ট আমার নাম জানতে চেয়েছিল।

আমি ওকে ওর নাম, রোল, ব্যাচ জানাতে বললাম, সাথে সাথে পেয়ে গেলাম। পরে দেখলাম- এ অতীবও ভাল ছেলে, এরে পঁচাবো না। ঘটনা ৩ : আমার এক মেয়ে বন্ধুর কথা, পূর্বের কোন এক পোস্টেই যার কথা বলা হয়েছে। তাকে অনলাইনে কমই পেতাম, বেশি কথাবাত্রা হত মেসেজ দিয়ে। এই মেয়ের সাথে আমার সম্পর্কটা ছিল বেশ তিক্ত।

তবে অনলাইনে আমি খুব ভাল মানুষের মত কথা বলতাম। তবে আশ্চর্য ব্যাপার হল- এই মেয়ে নিজের সম্পর্কে সব যেভাবে সব তথ্য দিচ্ছিল তাতে আমি অবাকই হয়েছিলাম। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় কারও উপর এত ভরসা করা কোনভাবেই উচিৎ না। বিশেষত মেয়েদের জন্য তো এটার ব্যাপারে অনেক সাবধান থাকা উচিৎ। ঘটনা ৪ : এই ঘটনা ঘটিয়েছি আমার বাইরের ডিপার্টমেন্টের এক ছেলের সাথে।

দূর্ভাগ্যবশত এই ছেলেটাও এনগেজড। এই ছেলের সাথে যেদিন প্রথম মেসেজ চালাচালি হল সেইদিন এই ছেলে বলে সে আমার সাথে কথা বলতে চায়। আমি যতই বলি এইটা সম্ভব না ততই আরও ক্যাচাল শুরু করে। শেষ পর্যন্ত আমার এক মেয়ে বন্ধুকে রাজি করালাম। ঐ ছেলেকে আমার সেল নাম্বার দিলাম ( সাধারণত ব্যবহার করি না) , বললাম অমুক টাইমে ফোন দিও।

সময়মতন এর মাঝে আমি আমার মেয়ে বন্ধুটিকে কল করলাম, ঐ ছেলের ফোন আসার পরপরই রিসিভ করে কনফারেন্স চালু করলাম। আমি চুপ, আমার বন্ধু কথা বলছে। ঐ ছেলে হাই হ্যালো করছে, কোথায় থাকো, কি করো আজিব আজিব সব প্রশ্ন। হঠাৎ করেই পোলায় জিগায় - কনফারেন্সে আর কে কে আছে। আমি তখন জোরে হাসতে যেয়েও হাসতে পারছি না।

তবে আমার মেয়ে বন্ধুটি বুদ্ধিমতি। ও এমনভাবে ছেলেকে বুঝাইল তা শুনে আমিও বুঝলাম এই টাইপের ছেলে পৃথিবীতে বিরল। আমি যতদূর জানতাম কনফারেন্স অন করলে অপরদিক থেকে বুঝা যায়। কিছুক্ষন পর ছেলেটা বলল যে পরে ফোন করব। আমি ততক্ষনে আর কোনমতেই নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না, দম ফেটে হাসি আসছে।

ফোনটা শুধু রাখার অপেক্ষা, সাথে সাথে আকাশ বাতাস কাপিয়ে ১০ মিনিট শুধুই হাসছি দুইজন মিলে। এই ঘটনার পরের সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ঐ ছেলে আবার গুড মর্নিং লিখে এসএমএস ও করছে। আমি মনে মনে বলি - ওরে পাঁঠা আর মানুষ হইলি না। নাম্বারটা তখনই বন্ধ করে দেই। পরিশেষে বলি, সব মানুষেরই জীবনে অন্ত:ত পক্ষে একবার সাইয়া নিক ব্যবহারের এক্সপেরিয়েন্স থাকা উচিৎ।

আপনি কিভাবে ব্যাপারটা এনজয় করবেন এটা আপনি কতটুকু উপস্থিত বুদ্ধি খাটাচ্ছেন তার উপর ডিপেন্ড করে। তবে এটা শুধু মাত্র মজা করার জন্য হলে খুব আপত্তি নাই। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের নিক বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্যই ব্যবহার হয় যেটাকে আমি কোনভাবেই সাপোর্ট করি না।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।