আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ন্যানোপ্রযুক্তি

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে. ন্যানোপ্রযুক্তি হচ্ছে এমন একটি প্রযুক্তি, যার সব যন্ত্রাংশ হবে খুবই সুক্ষ সুক্ষ। এখানে ন্যানো মানে হচ্ছে ন্যানোমিটার যা হচ্ছে দৈর্ঘ্যের একক। এখন দেখা যাক কতটুকু দৈর্ঘ্যকে ১ ন্যানোমিটার বলব। এক ন্যানোমিটার হচ্ছে এক মিটারের এক বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ। আমারা যদি ইঞ্চির কথা চিন্তা করি তাহলে, 25,400,000 ন্যানোমিটারে এক ইঞ্চি।

আরও কোন ছোট কোন বস্তুর সাথে তুলনা করার জন্য আমার চুলের সাথে তুলনা করতে পারি। আমাদের একটি চুল হচ্ছে এক লক্ষ্য ন্যানোমিটার প্রসস্থ অথবা আমারা যদি পৃথিবীর সবথেকে ছোট ব্যকটেরিয়ার কথা চিন্তা করি থাকে, সবথেকে ছোট ব্যকটেরিয়ার অকার হচ্ছে ২০০ ন্যানোমিটার। আরও ছোট কোন কিছুর সাথে তুলনা করার জন্য আমার ডিএনএর সাথে তুলনা করতে পারি, একটি ডিএনএ হচ্ছে ২ ন্যানোমিটার প্রসস্থ। আরও শুক্ষভাবে বলতে গেলে একটা স্বর্ণের পরমানুর আকার হচ্ছে ০.৩ ন্যানোমিটার। তাই ন্যানোপ্রযুক্তি এমন সব বস্তু নিয়ে কাজ করবে যা আমারা দেখতেও পারব না অথবা স্পর্শ করে অনুভব ও করতে পারব না।

যেকারণে ন্যানোপ্রযুক্তিতে বাবহিত হচ্ছে এমন সব যন্ত্র যার মাধ্যমে আমারা ছোট ছোট বস্তু কে দেখতে পারব অথবা তাদেরকে ইচ্ছে মত সাজিয়ে দরকারি যন্ত্র তৈরি করতে পারব। এখন দেখা যাক কিভাবে ন্যানোপ্রযুক্তির উৎপত্তি হল। বিজ্ঞানীরা ন্যানোবিজ্ঞান এবং ন্যানোপ্রযুক্তি সম্পর্কে প্রথম ধারনা পান নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ Richard Feynman এর ১৯৫৯ সালের American Physical Society এর একটি সম্মেলনে দেয়া “There’s Plenty of Room at the Bottom” নামের বক্তব্য থেকে। তারও এক দশক পরে Professor Norio Taniguchi ন্যানোপ্রযুক্তি শব্দটি উদ্ভাবন করেন। আর ১৯৮১ সালে Scanning Tunneling Microscope (STM) নামের একটি বিশেষ অনুবিক্ষন যন্ত্র আবিষ্কারের আগে আমরা একটি পরমানুকে দেখাও সম্ভব ছিল না।

আর এই অনুবিক্ষন যন্ত্র আবিষ্কারের সাথে সাথেই শুরু হয় ন্যানোপ্রযুক্তির যাত্রা। কিভাবে ন্যানোমিটার আকারের যন্ত্র দেখব এবং তৈরি করব সে বিষয়ে পরে আলোচনা করব এখন দেখা ন্যানো আঁকারের কোন বস্তুর কি এমন বৈশিষ্ট্য আছে যে কারনে এরা এত গুরুত্বপূর্ণ। বড় কোন বস্তুর ভৌত বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা হয়, পরীক্ষাগারে অনেক বেশি পরিমাণের বড় আঁকারের তস্তু থেকে। এক মোল পরিমান কোন বস্তুতে ৬.০২২ × ১০২৩ অনু থাকে, আর কোন পদার্থের আনবিক যত তত গ্রাম পদার্থকে এক মোল বলে। অর্থাৎ ১৮ গ্রাম পানিতে ৬.০২২ × ১০২৩ টি পানির অনু থাকে।

তাই যখন পানির গলনাঙ্ক নির্ণয় করা হয় তখন বিলিয়ন বিলিয়ন পানির গড় গলনাঙ্কটাই আমারা পরিমাপ করে থাকি। এবং আমারা ধরে নেই যে যেকোনো পরিমান পানির ক্ষেত্রেই আমরা একই পরিমাপ পাবো কিন্তু এটা সসময় টিক না। একই পদার্থের আকার যখন ন্যানো স্কেলে হয় তখন সম্পূর্ণ ভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। এর মুল কারন হচ্ছে ন্যানো স্কেলে পদার্থ নিউটনিয়ান পদার্থ বিজ্ঞান মেনে চলে না বরঞ্ছ কোয়ান্তুম মেকানিকসের নিয়ম মেনে চলে। তার মানে কিছু কিছু পদার্থের বৈশিষ্ট্য তার আঁকারের উপর নির্ভর করে।

এবার দেখা যাক ন্যানো আঁকারের কোন বস্তুর কি কি বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আসতে পারে। কোন বস্তুর আকার যখন অনেক সূক্ষ্ম হয় তার ভর অনেক কম থাকে, ফলে ন্যানো আঁকারের বস্তুগুলোর মধ্যে মহাকর্ষ বল উপেক্ষণীয়। অন্যদিকে তড়িৎচুম্বকীয় বল বেশী থাকায় তার উপর বস্তুর অনেক ধর্ম ন্যানো আঁকারের বস্তুর আরও একটা বৈশিষ্ট্য হল, একটি ন্যানো আঁকারের বস্তুকে যদি অন্য কোন বস্তুর সাথে ন্যানোমিটার দুরত্তে রাখা হয় তাহলে তাদের মধ্যে টানেলিং নামক একটি পরক্রিয়ার মাধ্যমে ইলেকট্রন পরিবাহিত হয়। এর এই বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে ন্যানো আঁকারের বস্তু দেখার জন্য একটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করা হয়েছে যার নাম হচ্ছে স্কানিং টানেলিং মাইক্রোস্কোপ। আরও একটি ব্যপার হচ্ছে বড় কোন বস্তুতে ইলেকট্রনগুলো যেমন অনেক জায়গা জুড়ে দৌড়াদৌড়ি করতে পারে কিন্তু ন্যানো আঁকারের বস্তুতে সেটা পারে না, যাকে বলা হয় কোয়ান্টাম কনফাইনমেন্ট।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল কোন বস্তুকে যদি ভেঙ্গে ন্যানো আঁকারের বানানো তাহলে তার পৃষ্টতলের ক্ষেত্রফল অনেক গুনে বেরে যায়। সেই সাথে বস্তুর মোট পরমানুর একটি বড় অংশ ন্যানো আঁকারের বস্তুর পৃষ্টে অবস্থান করে এবং কোয়ান্টাম প্রভাব দেখানো শুরু করে। আর কোয়ান্টাম কনফাইনমেন্টের জন্য বস্তুটির চুম্বকীয় বৈশিষ্ট্যে এক বড় ধরনের পরিবর্তন এসে, এবং এই পরিবর্তনকে বলা হয় giant magnetoresistance effect. কোয়ান্টাম কনফাইনমেন্ট বস্তুর চুম্বকীয় বৈশিষ্ট্যের সাথে সাথে তার তড়িৎ বৈশিষ্ট্যেরও পরিবর্তন করতে পারে। কোন বস্তুর তড়িৎ পরিবাহকত্ব নির্ভর করে তার ভালেঞ্চ ব্যান্ড এবং কন্ডাকশন ব্যান্ডের মধ্যে শক্তির পার্থক্যের উপর। এই শক্তির পার্থক্য যত কম বস্তুটি তত বেশী বিদ্যুৎ পরিবাহী।

বস্তুর আকার যখন অনেক ছোট হয় তখন কোয়ান্টাম কনফাইনমেন্টের কারনে এই শক্তির পার্থক্য বেড়ে যায় ফলে কোন বিদ্যুৎ পরিবাহী বস্তুও সেমিকন্ডাক্টরের মত আচরণ করে। আর ন্যানো আঁকারের পদার্থের মধ্যে এই ব্যান্ড গ্যাপের কারনে ন্যানো আঁকারের বস্তু যে আলো শোষণ করে তার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কম হয় আর যে আলো নির্গত করে তার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যও পরিবর্ততিত হয়। যেকারনে কোন পদার্থের ন্যানো আঁকারের বস্তুর রঙ একই পদার্থের বড় বস্তুর থেকে আলাদা হয়। মূল লেখকঃ বিপ্লব পাল উৎসঃ http://scienceforlife-b.blogspot.ca/ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।