আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আরাকানের সেই নির্মমতার রিপোর্ট: ধর্ষণ থেকে রেহাই পেতে সেই নারীদের আত্মচিৎকার শুনছ কি?

প্লিজ কেউ এখানে কোন দলাদলী আনবেন না। আমি মানুষ, তাই মানবিকতাই আমার বড়ো পরিচয়। সেই উদ্দেশ্যেই লেখা। তবে এখানে কোন পর্যায়ের দায়িত্ববান কেউ তার দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিলে তার ক্ষেত্রে কোন ছাড় দিচ্ছি না। ঘটনা - ০১ কয়েক বছর আগের ঘটনা।

দু’মেয়ে রাস্তা দিয়ে ফুল হাতা শালীন পোশাক পরা অবস্থায় তাদের আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিল। গ্রামর এক মোড়ল দেখে তাদের পোশাক ছিড়ে ফেলে। এ ঘটনায় তাদের বাবা (৭০/৭৫ বয়সী আব্দুর রশিদ) প্রতিবাদ করে। মোড়ল তাকে এর জন্য শায়েস্তা করার হুমকি দেয়। এক ঘন্টার মাথায় তাকে সেনা ক্যাম্পে তলব করা হয়।

নানান মিথ্যা অজুহাতে তাকে অভিযুক্ত করা হলে সে সব অস্বীকার করে। এবার শুরু হয় কঠিন ও অমানুষিক নির্যাতন। পরে গ্রামের লোকজন অর্থদণ্ড দিয়ে তাকে মুক্ত করে আনে। কিছুদিন পর বৃদ্ধ তার এই দু’মেয়েকে বিয়ে দেয়ার প্রয়োজনে পাত্র দেখতে থাকেন, একদিন মগের দুই যুবক এসে তার মেয়েদের বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলে কিছুক্ষণের মধ্যে তাকে সেনা ক্যাম্পে ডাকা হয়।

ক্যাম্প প্রধান তাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি ঘটনা স্বীকার করে বলেন, আমাদের ধর্মে অমুসলমানদের সাথে বিয়ে-শাদির অনুমোদন নেই, প্রতি উত্তরে নাসাকার অফিসার তাকে বলেন, কুরানের যে পাতায় এ আইন আছে তা ছিড়ে ফেলে দিয়ে অতি সত্বর এই যুবকদের কাছে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দাও। মেয়েদের বাবা তা আবারও প্রত্যাখ্যান করলে সে উত্তেজিত হয়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। কিছুক্ষণ পর ঐ কুলাঙ্গার ঠাণ্ডা মাথার ভান করে মেয়ের বাবাকে বলে তবে এক শর্তে ঐ যুবকদ্বয়ের কাছে বিয়ে না দিতে পার। আর তাহলো তোমার একজন মেয়েকে আমার কাছে এক সপ্তাহের জন্য এখানে এনে রেখে যাবে। বৃদ্ধ আব্দুর রশিদের গায়ে একথা শুনামাত্র আগুন ধরে যায়, হাতের কাছে একটা পেপার ওয়েট পেয়ে সাথে সাথে তার গালে ছুড়ে মারে।

এতে তার সামনের দুটো দাঁত পরে যায়। এরপর সে চরম উত্তেজনাবশতঃ সৈন্য ডেকে বৃদ্ধ আব্দুর রাশিদকে তার মাদ্রাসায় নিয়ে পায়ের দিক থেকে উলটোভাবে লটকিয়ে পিটাতে থাকে এবং ক্ষতবিক্ষত করে। এক পর্যায় সে বেহুশ হয়ে যায়, অনেক পর হুশ আসলে সে দেখে আরও করুণ কাহিনী; তার আদরের দুই দুলালীকে মাঠে বিবস্ত্র অবস্থায় রেখে…। একেকবার মেয়েদের আত্মচিৎকারে আকাশ, বাতাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এক সময় বৃদ্ধ দেখতে পান তার আদরের কন্যারা সৃষ্টি কর্তার কাছে চলে গেছেন।

কলজেফাটা চিৎকার দিয়ে আরেকবার বেহুশ হলেন তিনি। দ্বিতীয়বার যখন হুশ আসে, তখন দেখেন বেলা যায় যায় অবস্থা। তাকে বলা হল, এবার তোমার ছুটি। বাড়ি যেতে পার। বাড়ি গিয়ে দেখেন, আগুনে পুরে ছাই হয়ে আছে তার পুরো বাড়ি।

সেই পোড়া বাড়ির সামনেই উপুড় হয়ে পরে আছে তার একমাত্র জীবন সঙ্গিনীর লাশ। প্রতিবেশীরা জানান, নাসাকার গুণ্ডারা মেয়েদের ধরে নিতে আসলে মেয়েদের মা তাদের বাধা দিলে তাকে গুলি করে তৎক্ষণাৎ মেরে ফেলা হয়। এভাবেই নিঃশেষ হয়ে যায় বৃদ্ধ আব্দুর রশিদের জীবনের সকল আশা আকাঙ্ক্ষা। ঘটনা - ০২ বিগত ২ সেপ্টেম্বর (২০০৭) শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রামাদান। আমাদের দেশের মত আরাকানেও শুরু হয়েছে ইবাদাত-বান্দেগীর এই বিশেষ মাস।

আমারা যথারীতি তারাবীহ ও সাহরীর মাধ্যমে রামাদানের সূচনা করলেও তা পারেনি মিয়ানমারের সামরিক জান্তার কবলে নিষ্পেষিত আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়। ৩ সেপ্টেম্বারের জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ, রামাদান শুরুর ৪ দিন আগে আরাকান রাজ্যের মংডু থানার রেঅংসুং গ্রামের সৈয়দ আমীনের পুত্র মুহাম্মাদ রিদ্‌ওয়ানকে নাসাকা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার করে ডেকিবুনিয়া ঘাঁটিতে নিয়ে সারারাত অমানুষিক নির্যাতন করে। তার চোখে মুখে গরম পানি ঢেলে তার মুখ ঝলসে দেয়। প্লাস দিয়ে নখ উপড়ে ফেলে এবং বার্মার বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করাতে ব্যর্থ হয়ে তার জিহবা কেটে ফেলে! বর্তমানে (২০০৭ এ এই রিপোর্ট প্রকাশের সময়) নির্যাতিত রিদ্‌ওয়ান হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। মানবাধিকার সংগঠন বার্মা সেন্ট্রাল লেদারল্যান্ড (বিসিএল) এর প্রকাশিত আরাকানের মানবাধিকার সংক্রান্ত একটি ম্যাগাজিন রিদ্‌ওয়ানের কাছে পাওয়া গেছে, এই ছিল তার অপরাধ।

উল্ল্যেখ্য, রিদ্ওয়ান মাদ্রাসা শিক্ষিত। এ কারণে নাসাকাদের সন্দেহের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। আলেম-ওলামা, ইমাম- মুয়াজ্জিন, এবং মাদ্রাসা শিক্ষিতরা এর ফলে গা ঢাকা দেয়। পাশাপাশি গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে সাধারণ মুসল্লিদের মাঝেও। আর এ কারণে আরকানস্থ রেওংচুং, ডেকিবুনিয়া, তুমব্রু, কুমিরখালি এবং নাকফুরা এলাকার মসজিদগুলো হয়ে পরে মুসল্লিশুন্য।

ঘটনা - ৩ অনুরূপ গত ২৫ জুলাই নাসাকার সদস্যরা স্থানীয় বুচিদং থানার জাদিটং গ্রামের দুই মহিলাকে ধর্শনের পর স্তন ও গুপ্তাঙ্গ ছোরা দিয়ে কেটে দেয়। একই দিন খান্দং গ্রামের রহিমুল্লাহ্র দুই মেয়েকে নিয়ে যায় এবং পরদিন সকালে বাড়ির উঠানে তার লাশ রেখে যায়। এই বিষয়গুলো জানার পর আমার পর্যবেক্ষন হল -দেশের বরেণ্য মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ার সহ অন্যান্যদের শীতনিদ্রায় জাতি লজ্জিত হলেও, তবে অবাক হয়নি! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।