আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিতব্য হল 'বিজয় একাত্তর'-এর পরিবর্তে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের অসামান্য রাষ্ট্রনায়ক বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ- এর নামে হোক

স্বপ্নের নির্বোধ ফেরিওয়ালা... পূর্ববঙ্গের জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা-দীক্ষায়, জাতীয়তাবাদী চেতনায় ঐক্যবদ্দ করে একটি জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ইতিহাসে আজ অনন্য গৌরবে সুপ্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কিছু মানুষের রয়েছে অসামান্য ত্যাগ ও তিতীক্ষা। স্বাধীন বাংলাদেশ তাদের নানাভাবেই স্মরণ করেছে অসীম কৃতজ্ঞতায়। তাদের নামে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, কলেজ, বিমান বন্দর, স্টেডিয়াম, রণতরী, মহাকাশযান, আরো কত কি। এ সত্য আজ সর্বজনবিদিত (বিদিত হতে আরো একটু বাকি, বিটিভি দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস মানুষকে গিলানোর চেষ্ঠা করা যায়, কিন্ত কালের কাছে নির্ভীক, নির্মোহ সত্য প্রতিষ্ঠা করা যায় না) যে স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্তভাবে একটি জাতিগোষ্ঠীকে যে মানুষটি চরমভাবে উদ্দীপ্ত করে প্রস্তুত করেছিলেন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আর সে স্বাধীনতার স্বপ্ন তরীকে যিনি চূড়ান্ত মুহুর্তে ঝঞ্জা-বিক্ষুব্ধ উত্তাল সাগরে হাজার প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সুদক্ষ মাঝির ন্যায় বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বিশ্বস্থ সহচরের মতো অর্পিত দায়িত্ব হিসেবে মুক্তির বন্দরে পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি তাজউদ্দীন আহমদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র তাজউদ্দীন ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে পাকিস্থান মুসলিম লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ফকির আব্দুল মান্নান কে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে জানান দিয়েছিলেন রাজনীতির ময়দানে তার আবির্ভাব উজ্জল নক্ষত্রের মতো। তার মতো দেশপ্রেমিক, অসম্ভব সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন রাজনীতিবিদের বিনাশ নেই। বরং কালের কল্লোলে এরা অসত্য বর্ণচোরা তোষামোদকে মিইয়ে সত্যনিষ্ঠ ইতিহাসের প্রয়োজনে আরো আলোকপ্রভ হয়ে উঠেন। এবং উঠবেন। দেশকে মুক্তকরার উদগ্র বাসনা নিয়ে যিনি পরিবার পরিজনকে অনিরাপদ ফেলে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে একটি ছোট্র চিরকুটে শুধু লিখে গিয়েছিলেন, "যাবার সময় বলে আসতে পারিনি।

ক্ষমা করে দিও। তুমি ছেলে মেয়ে নিয়ে সাড়ে সাত কোটি মানুষের সাথে মিশে যেও। কবে দেখা হবে জানিনা...মুক্তির পর। "[/ তিনি তার কথা রেখেছিলেন। মুক্তির বন্দরে স্বাধীনতার নৌকাকে নোঙর করিয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নানা মত, আদর্শ, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, আন্তর্জাতিক বহুমুখী ষড়যন্ত্র, বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতা উপেক্ষা করে তার মেধা, শ্রম, সুদীর্ঘ দিনে গড়ে উঠা নেতৃত্ব ও দক্ষতা দিয়ে এসব মোকাবেলা করেছেন। একদিন কলকাতা ৮ নং থিয়েটার রোডের মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী কার্যালয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জ্বরে আক্রান্ত। পরদিন বিদেশী প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ আছে। রাত-দিন কর্মক্লান্ত, ঠিকমতো ঘুম নেই, খাওয়া নেই এই অবস্থার মাঝেও রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে নিজ হাতে পড়নের একমাত্র ভালো কাপড়টি ধুয়ে শুকাতে দিয়েছেন পরের দিন আবার পরবেন বলে। এরকম অনাড়ম্বর জীবন যাপন করে সততার প্রতি শতভাগ অটুট থেকে নিরিবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছেন বাঙালি জাতিকে তাঁর স্বপ্ন স্বাধীনতার লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য।

‘তাজউদ্দীন আহমদ আলোকের অনন্তধারা’ বইটি পড়লে তাঁর সহকর্মীদের স্মৃতিচারণে এমনসব বিস্ময়কর তথ্য জানা যায়। এদেশকে মুক্ত করার জন্য এই মানুষটি কি অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন ৭১ -এর মুজিবনগর সরকারের ইতিহাস পড়লেও জানা যায়। কিন্ত কি নির্মম, কি পীড়াদায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নামে আজ ঢাকায় একটি সরণির নামকরণ ছাড়া আর কিছুই হয় নি। মুক্তিযুদ্ধে তুচ্ছাতিচ্ছ (শব্দটির জন্য দুঃখিত) অবদান রাখা মানুষের নামে আজ আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে হলের নামকরণ হয় কিন্ত মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ অবদান রাখা এই মানুষটির নামে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে কোন ভবন নেই (ভবন/হল তাজউদ্দীনেকে বাঁচিয়ে রাখবে না; তার অবিসংবাদিত কীর্তিই কালের সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস তাকে সুমহান করে রাখবে) কিন্ত নতুন প্রজন্মকে একটি জাতির জন্মপ্রক্রিয়ার (মুক্তিসংগ্রামের) সঠিক ইতিহাস চেনানোর স্বার্থে প্রয়োজন) । অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে এ লজ্জা, অপমান, অপবাদ মোচনের সময় আজ এসেছে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার (শব্দটার উপর খুব নির্যাতন হচ্ছে!) পক্ষের সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও মাষ্টার দা সূর্যসেন হলের মধ্যবর্তী নির্মাণাধীন হলের নাম 'বিজয় একাত্তর' (বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কতৃক গৃহীত নাম) না করে বাংলাদেশের কঠিন সংগ্রামের সময়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক (Gaul of Bengal) বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ হল করা। কেননা তাজউদ্দীন আহমদের আরেক নাম বিজয় একাত্তর। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.