আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ ক'টা দিন

কালের সীমারেখায় আকালের চিহ্ন দেখি, ভয় পেয়ে নিজের কূয়োর কাদায় লুকোই আবার। সময় বহমান, অদম্য এবং নিষ্ঠুর। দিন, মাস, সিমেস্টার পেরিয়ে পাঁচটা বছর কেটে গেছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হয়ে গেল। বলতে গেলে সমস্ত শিক্ষাজীবনেরই সমাপ্তি হল এখানে।

এখনও "তোমার জীবনের লক্ষ্য কী?"-কেউ একথা জিজ্ঞেস করলে বরাবরের মতই অপ্রস্তুত হই। এখনও, এই সাড়ে তেইশ বছর বয়সেও আমি কোন লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে বা প্রস্তুতিতে সামিল হতে পারিনি। তবুও আজকের বড় কষ্ট সেই লক্ষ্যহীনতা নয়। ক্যাম্পাসটা ছেড়ে যাওয়ার কষ্টটা আজ বড্ড পোড়াচ্ছে। আমি ছয়টা স্কুলে পড়েছি।

সেই সুবাদে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিন বছর কাটানোটাই ছিল সর্বোচ্চ রেকর্ড। পুরনো বাসা অথবা পুরনো স্কুল ছেড়ে আসার কষ্টটা বেশ গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। তাই ২০০৭ সালে যখন প্রথম ক্যাম্পাসে পা রেখেছিলাম, তখনো বুঝিনি একে ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে কখনো। আজ হঠাৎ মনে হচ্ছে, যে প্রতিষ্ঠানের সাথে সবচাইতে বেশিদিন যুক্ত থেকেছি তার ওপর থেকে সব অধিকার একেবারে ছেড়ে যাওয়াটা খুব অন্যরকম কষ্টের। এই হতাশা হয়তোবা অনেকেরই হয়না।

হয়তো যারা এই ক্যাম্পাসের গন্ডি পেরোলেই আরও উন্নত ভবিষ্যতের হাতছানি দেখে তাদের কথা আলাদা। কিন্তু আমার মত অনেক অনেক শিক্ষার্থীর জন্যই এই কটা বছরের আবেদন বাকিটা জীবনের চাইতে অনেক বেশি। যারা ঘিঞ্জি সব ফ্ল্যাটবাড়িতে বড় হয়েছে, নিজের বলতে যাদের আপন দেহখানা বাদে আর কিছুই স্থাবর নয়, যাদের শৈশবে কোন ছোটাছুটি, লাফ-ঝাঁপ আর সাঁতরে বেড়ানোর স্মৃতি নেই- তাদের সবার জন্য নিশ্চই এই পাঁচটা বছর পরম আরাধ্য। বাসের ভীড়ে চিড়ে-চ্যাপ্টা হবার পরও শহরের সবচে সবুজ, সবচে উদার জায়গাটাকে নিজের বলে দাবি করতে পারার বিশেষত্বটুকু বুঝি হাজার লক্ষ টাকা বিলাস ব্যসনেও নেই। এই বিদ্যাপীঠে এসে কত মানুষের জীবন বদলে যেতে দেখেছি।

কেউ রাজনীতির পাঠ নিয়েছে, দুচোখ ভরে দেখেছে বিপ্লবের স্বপ্ন। চোখ ধাঁধানো ফলাফল করে দেশ আর পরিবারের গৌরব ডেকে এনেছে অনেকে। কত শত বন্ধুরা বিতর্ক, নাটক, ফিল্ম সোসাইটি, আবৃত্তি, ফটোগ্রাফির মত অজস্র ক্ষেত্রে সদম্ভে ঘোষণা করেছে নিজেদের নাম। কেউ কেউ যে আবার অন্ধকারের পথে পা বাড়ায়নি, সে দাবিও করছিনা। তবে আমি এখানে এমন কিছুই করিনি।

না ভালো, না খারাপ-কোন বিশেষণ দাবি করার মত, চোখে পড়ার মত কোন মানুষ হতে পারিনি। আমি চলে গেলে কেউ একবারও আমাকে মনে করবেনা, তাও জানি। কিন্তু মল চত্ত্বরের ঘাস আর জারুলের সারি, আগুনলাল কৃষ্ণচূড়া, এখানে সেখানে লকলকিয়ে ছাওয়া মাধবীলতার ঝোপ, বৃষ্টি ধোয়া দিনে আমার নতুন চারা খোঁজার অভিযান, গাছের সবুজ অথবা ঝরা পাতা, কাঁঠালচাপার ঘ্রাণ, অলস দুপুরের ক্লাসে মন কেমন করা কোকিলের ডাক, অগুনতি কাকের সভা আর সব ছাপিয়ে ময়লা-নোংরা তবু ভীষণ আকর্ষনীয় এই ক্যাম্পাসটাকে আমি কতটা মিস করবো তা কেউ বুঝবেনা। আর কোন প্রতিষ্ঠান, কোন স্মৃতি ছেড়ে যেতে আমার এতটা কষ্ট হয়নি। জানি, আর কোনদিনও হবেনা।

সময়ের সাথে সাথে আমার মনটাও নিশ্চয়ই ততদিনে নির্লিপ্ত হয়ে যাবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.