আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা ... হৃদয় এর এই অনুভুতির আনুরণন সকলকে ছুয়ে যাক ...।

সীমাহীন পথে ছুটে চলা নদীতে সাঁতার কাটি আমার অবারিত স্বপ্নের বৈতরনি নিয়ে .......... বাঙালির বর্ষ বরন উৎসব পহেলা বৈশাখ । নতুন বছরের সূর্য উঠার সাথে নতুন দিন এর সূচনা লগ্নে যে উৎসব নিয়ে আমরা উদযাপনে মেতে উঠি । পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরের আগমনী বার্তার অপেক্ষায় থাকি আমরা সবাই । সবাই এক সঙ্গে মিলি প্রাণের উৎসবে । অনেক পরিচয়ে পরিচিত আমরা বাঙালিরা।

কখনো পরিচিত হয়েছে মাছে-ভাতে বাঙালি আবার কখনো সুজলা–সুফলা শ্যামল বাংলা, কখনো নদী মাতৃক দেশ । আবার কখনো বলা হয় হাজার রঙ্গিন উপাদানে সমৃদ্ধ আমাদের সংস্কৃতি ... এই আমাদের সকল বাঙালির প্রানের উৎসব বর্ষবরণ । দখিনা বাতাসে মন ঘুড়ি উড়াই আর বৈশাখী রোদ এ রিনি ঝিন কাচের চুড়ি বাজিয়ে হৃদয় এ ঝর তুলে আনন্দে মাতি আমরা সবাই । দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নেয়।

সে হিসেবে এটি বাঙালিদের সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ এর একাল সেকাল তোমার কাল আমার কাল শৈশব এর নববর্ষ শৈশব এ পুরনো ঢাকায় পহেলা বৈশাখ মানে ছিল , চৈত্র সংক্রান্তি র উৎসব , বছরের প্রথম দিন এর হাল খাতা আর মায়ের হাতের মজার রান্না । । চৈত্র সংক্রান্তি। বাংলা সনের শেষ দিন। শেষ দিন ঋতুরাজ বসন্তেরও।

বাংলা বছরের শেষ দিন হওয়ায় চৈত্র মাসের শেষ এ দিনটিকে চৈত্র সংক্রান্তি বলা হয় । চৈত্র সংক্রান্তি দিন বাসায় শুধু মাত্র সবজি রান্না হত ১২ প্রকার সবজি দিয়ে একটা নিরামিষ রান্না হত ,ছেলে বেলায় ভীষণ ভয় পেতাম যে করলা ,দেখা যেত খাবার সময় ঠিক সেটাই আমার মুখে , আব্বা র সাথে বসলে মা দেখবার আগেই সেটা উধাও হয়ে যেত আমার থালা থেকে । তবে সর্ষে দিয়ে রান্না ড্যারস , কলমি শাক , সজনে ডাটা র চর্চরী র স্বাদ এখন খুঁজে বেড়াই বিশ্ব জুরে ... বুঝতে পারি না , ঠিক কোন উপকরণ বাদ পরে যায়, টাটকা সব্জি ? পরিমিত মশলা ,মা এর হাত, নাকি আমার বিমুগ্ধতা ? আগের দিন এর নিরামিষ এর কয়েদ খানা থেকে মুক্তি মানেই পহেলা বৈশাখ এর দিন । ভাইয়া র কাছে শুনতে পেতাম, হাল খাতা র দিন কোন দোকানে গেলেই নাকি মিষ্টি খেতে দিত । . মাঝে মাঝে ভাইয়া বাদামি রঙ এর প্যাকেট নিয়ে আসত যার মাঝে থাকত , একটা সাদা মিষ্টি , কালোজাম ,আর ত্রিকোণ একটা নিমকি ।

বিকেলে ধুপখোলা মাঠের মেলায় , মাটির হাড়ি কলসি র সাথে থাকত এক মুঠো কাঁচ এর চুড়ি ...। কৈশোরে আমার নববর্ষ : বিক্রমপুর মুনশিগঞ্জ এ আমার পহেলা বৈশাখ এর রুপ ছিল ... খুব বেশি মাত্রায় চিরায়ত নিয়ম মাফিক , চৈত্র সংক্রান্তির দিন আমাদের বাসায় যে নিরামিষ রান্না হত সেটা আমাদের সংগ্রহ করতে হত আশে পাশে র বিভিন্ন ফসল এর মাঠ থেকে , সে এক মজার অভিজ্ঞতা ,সম বয়সী রা সব চলে যেতাম । প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা কাজ করত কার কাছে শাক -সব্জির প্রকার ভেদ বেশী তবে সবচাইতে প্রিয় বন্ধুর জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিতে পারতাম কোঁচড়ের শেষ ডুমুর এর ফল টা ও । হাল খাতায় মিলাদ এর মিষ্টি আর হালখাতা র পূজার প্রসাদ দুইটা তেই সমান উল্লাস ছিল , সকাল থেকে সঙ্গীত একাডেমী র সাথে অনিয়মিত সাহিত্য সংস্কৃতিক গোষ্ঠী সাথে সুরু হয়ে যেত আমাদের শোভা যাত্রা , হলুদ শাড়ি , লাল পেড়ে সাদা শাড়ি , ছেলে দের সাদা পাঞ্জাবী তে মনে হত প্রজাপতির ওরাউড়ি। ১ মাস আগে থেকে চলত নাটক এর মহড়া ,আর মঞ্চায়ন হত পহেলা বৈশাখ এর সন্ধ্যায় ।

। আলোকিত মঞ্চের রোমাঞ্চ , মঞ্চের পিছনের ব্যাস্ততা , ঘটে যাওয়া কিছু অলৌকিক মুহূর্ত , আর দলবন্ধতা র আস্বাদন যে করেছে, তার প্রান আমার এই সৃতি চারনে আলোড়িত হবেই হ্যাঁ আপনাকেই উৎসর্গ করলাম, আমার এই মুহূর্তের হৃদয়াবেগ মুনশিগঞ্জ মহিলা কলেজ এর দিন গুল ছিল আমার আমি হয়ে উঠার প্রাথমিক সোপান , কলেজ নববর্ষ উজ্জাপন কালিন সব কিছুর ব্যাবস্থাপনায় শিক্ষক দের ছায়ায় আমরা ছিলাম নকশাকারী , ব্যানার , ফেস্টুন , পোষ্টার মাইকিং চলত দুরন্ত গতিতে , ... সাদা কলেজ ড্রেস পরিহিত একঝাঁক বাধ ভাঙা কৈশোর পেরুনো প্রজাপতি , কারো হাতে এক বান্ডেল পোস্টার , কেউ বা তুলেছে এক বালতি হাতে বানানো গাম । শহরময় নিজেদের মহিলা কলেজ এর ব্যানার বেঁধে বেড়াচ্ছে , পোস্টার সাঁটছে দেয়ালে , ঘণ্টা খানিক পর হয়ত তাদের কাউকে দেখা গেল দুই তিন টি রিকশা নিয়ে হাতে তুলে নিয়েছে মাইক্রফোন অলি গলিতে পৌঁছে দিচ্ছে বার্তা ......... না আমাদের বর্ষ বরন অনুষ্ঠান এ সাহায্য কারী নয় একজন দর্শক হিসেবে আপনার সাদর সম্ভাষণ । পথ পেরুনো কারো বাবা , হয়ত কণ্ঠ শুনে ভাবতে বসলো , কোথায় শুনেছি এই পরিচিত কিন্নরী কণ্ঠ ? রান্না র অবসরে মা এসে দাঁড়াচ্ছেন প্রধান ফটকের সামনে ওদের রিকশা বহর আমাদের মহল্লা পেরিয়ে যায় নিত আবার ? আত্মজার স্বাধীনতা পুরটাই স্পর্শ করতে চাইতেন যেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর রোকেয়া হল এর পহেলা বৈশাখ[/sb] : রোকেয়া হল এ নববর্ষের ঊষা লগ্ন ও যেন এখানকার মেয়ে দের রঙিন সাঁজ এ লজ্জা পেত , শুরু হয়ে যেত লাল পেড়ে শাড়ি র ঢেউ খেলানো আবীর এর চঞ্চলতা রেশমি চুড়ি আর নূপুরের শিঞ্জন ,বেলি ফুল এর মাতাল অনুভূতি ।

যাদের সকালে বাইরে যাবার তারা নেই , তাদের ও ঘুম ভাঙত বন্ধু , বড় বোন কিংবা ছোট বোন এর কাতর আহবান এ । । এই একটু হেল্প কর না , খোপায় ফুল টা সেট করে দাও না । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এই জাতীয় উৎসব এর প্রতিটি স্পন্দন দেশ এর সমস্ত তরুন হৃদয় এ দোলা দেয় ... প্রথম বর্ষে চরুকলার বন্ধুদের সাথে শোভা যাত্রা র অংশ হিসেবে, সমুদ্র যাত্রার রোমাঞ্চ অনুভব করেছি প্রতিটি পদক্ষেপ এ ...। এর পর ডাকসু সংস্কৃতি দল এর সাথে রমনার বট মূল চষে বেড়ানো দিন গুল অনেকেই অনুভব করতে পারেন ... ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি র সাথে বৈশাখী বিতর্কে , প্রহর শেষ এ রাঙা আলোয় কারো চোখে সর্বনাশ দেখা শুরু ...।

দুজনে একলা হতে চাওয়ার প্রথম পহেলা বৈশাখ কেটেছিল ভুল বোঝার নিদারুণ অভিমানে । রোকেয়া হল এর বর্ষ বরনে আমাদের উচ্ছলতা হল এর বন্ধ করা ফটক ছাড়িয়ে খান খান করে দিত সমস্ত কলা ভবন টি এস সি র রাতের নিস্তব্ধতা বাইরে যে যে খানে যাই না কেন নিশ্চিত করতাম রুম মেট রা সবাই মিলে নিজেদের অখাদ্য রান্না র সুখাদ্য আনুভুতির সাধ নিতে । জীবনে প্রথম পরিবার ছেড়ে ,আকুল পাথারে আঁকড়ে ধরা হল বন্ধু গুল যেন আত্মার আত্মীয় হয়ে উঠে । পহেলা সংসার এ পহেলা বৈশাখ : খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে এক দৌড়ে ক্যাম্পাস এ চলে এসছিলাম , হাতে মেহেদী রাঙানো , সেই রঙ এ শাড়ি নষ্ট ,কান্না , কারো বিব্রত হওয়া ............................. এবং কাঁচা আম সর্ষে বাটার মাখা ভর্তায় ঝালে উহু আহা, করতে করতে বাড়ি ফেরা পেশা জীবনে নববর্ষ : আমার স্বল্প পেশগত জীবনের একটা বড় অংশ আমি কাটিয়েছি দেশ এর অজ পাড়া গাঁয়ে , চৈত্র মাসে দেখতাম গ্রামের সবাই বাড়ি ঘড় ঝাড় মোছা করছে আসছে পহেলা বৈশাখ এর প্রস্তুতি হিসেবে , মনে মনে ভাবতাম ওরে বাবা এত কষ্ট করতে হবে আমাকে ? আর ব্যাবসায়ি পরিবারের জন্য মনে হয় এক্কেবারে জীর্ণ সব কিছু ছুড়ে ফেলার প্রচেষ্টা . ঢাকা অবস্থান কালীন , হয়ত চৈত্র সংক্রান্তির দিন সকল সহ কর্মী রা মিলে বাসা থেকে এনে ভর্তা উৎসব করেছি । কর্পোরেট জীবনে পহেলা বৈশাখ আমার একমাত্র কর্পোরেট স্বামীর কল্যাণে মহা কর্পোরেটীয় কিছু পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ উদযাপন দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে ... চৈত্র সংক্রান্তির দিন দুপুরে , আমার নামে একটি পার্সেল আসলো , খুলে দেখি, আল্পনা আঁকা এক ডালায় , আমাকে বিভিন্ন রকমের পিঠে সাথে একটা শুভেচ্ছা পত্র পাঠিয়েছে এক কর্পোরেট কোম্পানি ।

শুভ নববর্ষের । সপ্তাহ খানিক আগেই পেয়েছিলাম, বাংলাদেশ এর একটি প্রথম শ্রেণীর ব্যাংক এর ঢাকা র‍্যাডিসন এ আয়োজিত নববর্ষ র আমন্ত্রণ ...। চমৎকার উপস্থাপন , আয়োজন এর জৌলুসতা , প্রিয় শিল্পীর গান , শত ব্যাঞ্জন এর ভুঁড়ি ভোজে র মোহনীয়তায় ভুলে গিয়েছিলাম, বাংলাদেশ এর সবচাইতে বড় একটি অংশ এখন ও পহেলা বৈশাখ বলতে (আমরা যে খাবার শখের বশে একদিন ১শত গুন বেশী মূল্যে খাই ) তাকেই বুঝতে বাধ্য হয় । অবশ্য ফিরে এসছিলাম, সঞ্চালক এর চমৎকার আহ্বান এ আজকে আমরা যারা এখানে ভিন্নপদ এর বিভিন্নতায় রসনা তৃপ্ত করছি, আমরা যেন বাইরে যেয়ে একজন বঞ্চিত কে হলে ও সেই টুকু দেবার চেষ্টা করি । আমার প্রবাস বর্ষ বরন প্রবাসে আমি বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে দূরে থাকি, নাকি বাংলাদেশী দূতাবাস আমার থেকে দূরে তা বুঝতে বুঝতে সাত বছর পার করে দিলাম ।

এই মুহূর্তে ব্লগে বসে বিগত বর্ষের চর্বিত চর্বণ আর আগামীকাল সকালে গুটি কয় বাংলাদেশী বন্ধু পরিবার এর সাথে ভর্তা উৎসব এ মিলনের সুখানুভূতি তে আছি । হ্যাঁ দেশ এর বর্তমান আগ্নিস্নাত পরিস্থিতি র আগ্নি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে আমরা যেন শুদ্ধতায় দিকে এগিয়ে যাই ......। নতুন বছরে এই আমার প্রার্থনা । সবাই কে শুভ নববর্ষ  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।