আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুবাই আয়ীর সবজি মার্কেট সবুজ সমারোহে যেন একখণ্ড বাংলাদেশ

সম্পাদনা করি আমিরাত-বাংলা মাসিক মুকুল। ভালবাসি মা, মাটি ও মানুষকে.. সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইস্থ আল আয়ীর সবজি ও ফল মার্কেটকে ঘিরে গড়ে ওঠেছে একখণ্ড সবুজ বাংলাদেশ। বাংলাদেশী ফল ও বাঙালি বিক্রেতাদের প্রাণবন্ত বিক্রয়ভঙি বুঝতেই কষ্ট হয় এটা বিদেশের মাটিতে কোন সবজি মার্কেট না দেশের হাট-বাজার। আয়ীর বাজারের শতকরা ৭০ জন বিক্রেতাই বাংলাদেশী। এর মধ্যে সিলেট ও চট্টগ্রামের অধিবাসী বেশিরভাগ।

বাংলাদেশ থেকে আসা ফলমুলগুলোর মধ্যে করোলা, ছিছিঙা ও মিষ্টি লাউসহ নানা ফল ও সবজির কদর অনেক। এটা স্থানীয় আরবী থেকে শুরু করে ভারত, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের লোকেদের কাছে খুব সুস্বাদু ফল হিসেবে কদর পেয়েছে এমনটি জানালেন মার্কেটের পুরনো ব্যবসায়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বানীগ্রাম ইউনিয়নের গড়াইগ্রামের বাসিন্দা জাহিদ হাসান নাসির। তিনি বলেন, আমরা এই ব্যবসার সাথে জড়িত আছি ১৯৯৯ সাল থেকে। সেই থেকে দেখছি বাংলাদেশী বিক্রেতাদের জন্য এ মার্কেট প্রাণবন্ত হয়ে ওঠেছে। বাংলাদেশ থেকে আসা ফলগুলো অন্যান্য ফলের চেয়ে বেশি দামে বিক্রয় করা যায়।

ব্যবসায়ী নাসিরের মতো একই মত পোষণ করেন অপর এক ব্যবসায়ি ফেনির ছেলে শাহজাহান। দুবাই শহর থেকে একটু দূরে আল আয়ীর এলাকায় ২০০৪ সালের ৩ জুলাই গড়ে ওঠে এই সবজি বাজার। এর আগে দুবাইয়ের হামরিয়াতে ছিলো বলে জানা যায়। আয়ীর মার্কেটে ঢুকলেই আপনি খটকায় পড়ে যাবেন। সিলেটীদের কথা শুনে বুঝবেন সিলেটের জিন্দাবাজার কিংবা চট্টগ্রামীদের কথা শুনে বুঝবেন চট্টগ্রাম বন্দরে আসছেন।

বাঙালিদের সাথে সাথে এই বাজারে পাকিস্তানী ও ভারতের কেরেলা প্রদেশের লোকেরাও ব্যবসা করে। দুবাই সময় ভোর ৪ টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্তু প্রথম শিফটে বসে মুল বাজার। আবার বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে দ্বিতীয় শিফটের সওদাপাতি। আরব আমিরাতের আবুধাবী, আল-আইন, শারজাহ, ফুুজিরা, রাস-আল খাইমা ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসে দোকানীরা। ভোরবেলা কেনাকাটা করে আপন গাড়ি ভরে চলে যান নিজ ঠিকানায়।

দুবাই সরকারের অনুমোদনে কেন্দ্রীয় সবজি বাজার হিসেবে অনুমোদিত এই সবজিবাজারের শ্রমবাজারেরও দাম অনেক। অন্যান্য জায়গায় একজন বাঙালি দেশ থেকে আসতে তার সর্বসাকুল্যে খরচ হয় ২ লাখ থেকে আড়াই লাখ। সেই জায়গায় আয়ীর মার্কেটের শ্রমিক হিসেবে আসতেও ৩ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ হয়। তার উপর কোন কোন দোকানে ৩ বছর আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখতে হয় বলে যানা যায়। তবে কেউ কেউ এসে কাজ না পেয়েও বেকায়দায় পড়ে রাস্তাঘাটে দিনযাপন করতে হয় এন অভিযোগ সচেতন ব্যবসায়ীদের।

এ বাজারে শ্রমবাজারের যেমন দাম ঠিক তেমনি খোলা একটা দোকানের ভাড়া দিতে হয় মাসিক ১০ হাজার দেরহাম যা বাংলাদেশী টাকায় ২ লাখ ২০ হাজারের সমান। অন্যান্য শহর এলাকায় দোকানকোটারও এতো ভাড়া নাই। তবে ক্রেতাদের নেই ভোগান্তি। আছে তরতাজা ফলমূল ও সস্তাদামে কেনার সুবিধা। বাজার করতে আসা এক বাঙালি ক্রেতা রেজাউল করিম রাজের সাথে কথা হলে তিনি জানানÑ এখানে সবজিগুলো তরতাজা থাকে এবং কম দামে কেনা যায়্ তাই সপ্তাহে একদিন হলেও আমরা এখানে আসি ভাল খাবার খেতে।

বাজার ঘুরে দেখা যায় এই চিত্রটিও ঠিক। টমেটো, আলু, কপি ও তরমুজ সহ পেঁযাজ, রসুন এমনকি আপেল, কলার দামও একবারে হাতের নাগালে। ওমান থেকে সবজিগুলো বেশি আসে। তবে সৌদি আরব সহ অন্যান্য দেশথেকেও আসে এ মৌসুমে। এই গরমে হাপিয়ে ওঠা মানুষগুলোর চোখ তরমুজের দিকেই।

আর এসব তরমুজ বেশিরভাগ আসে ইরান থেকে। বছরের ৮ মাস ইরান থেকে ও বাকি ৪ মাস ওমান, সৌদি আরব ও ইন্ডিয়া থেকে আসে। এখানে তরমুজগুলো বিক্রিও হয় মন হিসেবে। ৪ কেজিতে ১ মন হিসবে বিক্রি চলে দুবাইতে। আল আয়ীর সবজি বাজারে বাংলাদেশের শাক সবজি এনে দেশ অনেক ধূও এগিয়ে যেতো আর সে জন্য সরকারের পাশাপাশি সচেতন মানুষের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।