আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্যাটায়ারে আশ্চর্য চরিত্রশালা ফররুখ আহমদ

কবি ফররুখ আহমদের কবি প্রতিভা একমাত্রিক ছিল না। তিনি বহুমাত্রিক প্রতিভার সফল উন্মেষ ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। কবিতা, ছড়া, গান, কাব্য-গীতির শাখাগুলোতেও তার বিচরণ ছিল সমান তালে। এর পাশাপাশি ব্যঙ্গকবিতায় বিপুল ভাণ্ডার ফররুখ সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে। বাংলা সাহিত্যকেও তা সমৃদ্ধ করে বিপুলভাবে।

সেখানে তিনি স্বতস্ফূর্ত। সেখানে তিনি সাবলিল। তার পাঁচটি ব্যঙ্গকবিতা বই পাওয়া যায়। সেই পাঁচটি গ্রন্থ হলো: বিসর্গ, ঐতিহাসিক-অনৈতিহাসিক কাব্য, হাল্কা লেখা, তসবিরনামা, রসরঙ্গ। বিষয়বৈচিত্র্যে ভরপুর গ্রন্থগুলো।

সবগুলোতেই তার নিজস্ব চিন্তাচেতার প্রতিফলন পাওয়া যায়। বিশ্বাস প্রতিবিম্বিত হয়। কবি নিজে এই ধরনের স্যাটায়ার বা ব্যঙ্গকবিতাকে ধনতন্ত্র ও অন্যান্য সামাজিক বিস্ফোটকের পক্ষে মূল্যবান ওষুধ হতে পারে বলে মনে করতেন। কবি ফররুখ আহমদ বিশ্বাসে ছিলেন অটল। তার চেতনাবোধ ছিল প্রখর।

তিনি কোনো ভাসমান তত্ত্বে বা তথ্যে বিশ্বাস করতেন না। বিশ্বাসের প্রবল বোধ সচেতনতা ছিল তার ভিতর তীক্ষè। ফলে তিনি সহজেই ভাসমান সেওলার মতো ভাসতেন না। সমাজ বাস্তবতাকে সামনে রেখেই তিনি তার দৃষ্টিশক্তির প্রখরতার প্রমাণ রেখেছেন। তীক্ষè দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন।

স্বভাবতই এগুলো সবার কাছে ভালো না লাগারই কথা। তবু সমাজে ঘটে যাওয়া, দেখা ঘটনাগুলোকে তিনি ব্যাঙ্গাত্মক করে তুলেছেন তার তীর্যক শব্দবাণে। তিনি এসব কথাকে তার কাব্যে তুলে এনেছেন। কবির লেখা ‘হাল্কা লেখা’ থেকে সে সব সম্পর্কে জানা যায়। ‘হাল্কা লেখা’ ছোট ছোট কথামালার সমন্বয় হলেও এখানে আছে প্রখর দৃষ্টির বাক্য।

যে কথা সবাই জানে কিন্তু তা সহজে প্রকাশ করার ক্ষমতা যেমন সবার থাকে না আবার সবাই সেই কথা সুন্দর করে বলতেও পারে না। কিন্তু ফররুখ আহমদ এই কথাগুলোকেই নানা ভঙ্গিমায় সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। হাল্কা কথাগুলোকে কাব্যময় করেছেন। কাব্যর গুণে সেগুলো হয়ে উঠেছে সুন্দর বাস্তবতায়। ছোট ছোট বিষয়কে ছোট ছোট পঙক্তিমালার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।

অল্প কথায় অনেক কিছু বোঝাতে চেয়েছেন। তা হয়েও উঠেছে বিষয়বস্তু নির্ভর ও প্রায়শ ক্ষেত্রেই বাস্তব। তিনি যা বলতে চেয়েছেন যা বোঝাতে চেয়েছেন তা সমাজেই গণমানুষের কথা, গণমানুষেরই হৃদয়ের অব্যক্ত কথা। আমরা যা বলতে চাই বলতে পারি না, কিন্তু একজন কবি, ফররুখের মতো বিশাল মাপের কবির কলমে এমনভাবে উঠে আসে তা সত্যিই যেন আমারই বলার ছিল। আমারই মনের ভিতর লুকিয়ে ছিল বিষয়গুলো, অভিব্যক্তিগুলো।

আর তিনি বলতে পেরেছেন বলেই তো তিনি কবি। আর একজন বড় মাপের কবি বলেই তো তিনি চমৎকার ভাবে বলতে সক্ষম হয়েছেন। ফররুখ আহমদের কবিতায় উঠে এসেছে সরল বিশ্বাসের কথা। তিনি দুই কূলের শ্রেণিভুক্ত মানুষের আচরণকে অতি চালাকি বলে মনে করতেন। তিনি সুবিধাবাদিদের বিভাগ বিভাজনেও মিলিয়ে দেখেছেন তাদের চরিত্র।

তারা সমাজের কোন শ্রেণিভুক্ত সেই প্রশ্নও নিজেকে নিজেই করেছেন। অনেক প্রশ্নে উত্তরে তিনি তার সমাধানও পেয়েছেন। তিনি, যারা দুই নৌকায় পা দেয় তাদের এই হঠকারীতাকে মারাত্মক ভুল বলে মনে করেছেন। তিনি জানতেন এরা কোনো কূলেই স্থান পায় না প্রকৃতপক্ষে। ফলে এরা সব কূলই হারিয়ে ফেলে।

তবে এই শ্রেণিভুক্ত প্রাণী সব সমাজেই সব কালেই ছিল। এখনো আছে। তাদের সবার চরিত্রও সাধারণভাবে একই রকম। কবি তার একটি বর্ণনাতে সেই সুবিধা খোঁজা শ্রেণির মানুষের চিত্র এঁকেছেন বেশ সাবলিল ভাবেই। তিনি বলেছেন: দু’ নৌকায়া পা দিয়ে কে পেয়েছে এ দরিয়ার কূল, তবু দেখি অনেকেই করে যায় মারাত্মক ভুল! ‘কোন্ শ্রেণীভুক্ত এঁরা’ - হামেশাই করেছি সওয়াল; জওয়াব পেয়েছি ‘যারা অতি চালাকিতে বে-সামাল’ ॥ (দু’ নৌকায়) এরা কি আসলেই সফল ছিল।

এরা কি কূল পেয়েছে? অথচ সত্যিই আমরা দুই নৌকায় পা দিয়ে দিব্বি নিজেদের চালিয়ে নিচ্ছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তোষামোদে ডুবে থেকে বিসর্জন দিচ্ছি ব্যক্তি সত্ত্বা। কবির এই মারাত্মক ভুলকে আরা ভুলেই থাকছে কিংবা আমলে নেই না। অথচ নিজেরা ধারার বাইরি গিয়ে ধরা দেই লজ্জার কাছে, তবে টের পেলেও লজ্জা তাদেরকে লজ্জিত করতে পারে না। এরা পরজীবীর মতো জড়িয়ে থাকে।

নিজেরা থাকে অযোগ্য দলের ভীড়ে। তবে তৈল মর্দনের যোগ্যতা অবশ্য সবার থাকে না। তৈল মর্দনের ধারা প্রচলিত এখানে, কেননা এ মাঠে দেখেছি ঢের শ্রম-বিমুখের আনাগোনা। উপরন্তু এ অঞ্চলে ভাগ্যবান আছেন দেদার যাঁদের তৈলাক্ত মুগ্ধ করে যোগ্য, অযোগ্য বিচার ॥ (তৈল) আদর্শের নাম নিয়ে আদর্শকে ব্যবহার করতে দেখা যায় হরহামেশা। এটা কবির দৃষ্টিতে আরো প্রখর হয়ে ধরা দেয়াই স্বাভাবিক।

কেননা কবি নিজে কখনো আদর্শ বিচ্যুত হননি। আদর্শবিচ্যুতিকে প্রশ্রয় দেননি। তিনি কখনো আদর্শহীন ছিলেন না। বরং তার আদর্শ জ্ঞান ছিল বরাবর সোজা। ঠগবাজির দলে তিনি নিজেকে কখনো ভেড়াননি বলে কথিত মুনাফা জোটেনি তার ভাগে।

অথচ তবু তিনি কখনো নিজেকে এর দিকে মনোনিবেশ করাননি। তিনি আদর্শের নাম নিয়ে ঠগবাজি থেকে সব সময় দূরে থেকেছেন। কবির ভাষায় আদর্শের নামে যা হচ্ছে তা হলো: আদর্শের নাম নিয়ে মুনাফা ওঠীলে পায় পায়, আদর্শ নামে না মাঠে, ঘুরে মরে হাওয়ায় হাওয়ায় ॥ (আদর্শের নামে) আদর্শের নামে আসলে এসব হাওয়া সর্বস্বই। আমরা এ ক্ষেত্রে শুধু দেশেই নয় পাশ্চাত্য ভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে মিলিয়ে দেখতে পারি। দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী, পুঁজিবাদী শক্তি এই দুই নীতির নামে বিশ্ব ব্যবস্থাতে সব সময় ছড়ি ঘুড়িয়ে থাকে।

তারা যা বলে তা করে না। যা করে তা বলে না। অথচ গরীব ও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এরা সব সময় আদর্শ ফেরি করে বেড়ায়। প্রতি দিনে ঘন্টার পর ঘন্টা সভা সেমিনারের মাধ্যমে আদর্শকে বিক্রি করে গেলানোর চেষ্টা করে। গবেষণার নামে ডলার ছড়িয়ে দেয়া হয় তাদের কথাকে প্রচার প্রকাশ করার জন্য, গিলানোর জন্য।

আর এ সব কর্মকাণ্ড যখন চলে তখন পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয় নিরীহ সাধারণ মানুষগুলোকে। এগুলো নিয়ে তারা উচ্চবাক্য করে না। এরা আদর্শহীন আসলে। এদের সৎ কোনো আদর্শ নেই আধিপত্য বিস্তার ছাড়া। এদের সৎ সাহসও নেই বলেই এরা নির্বিচারে অন্যায় করে যায়, হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যায়।

সাম্রাজ্যবাদকে, আধিপত্যবাদকে ছড়িয়ে দেয় দেশে দেশে। কবি আবার বলছেন: প্রতিপক্ষ পেরেশান থাকতো যে আদর্শের জোরে কোথায় পাবে সে শক্তি আজ তাকে পাঠিয়ে কবরে? (শক্তির উৎস) সত্যিই সেই আদর্শকে আমরা আজ কবর দিয়েছি বলা যায়। মৃত অবস্থা থেকে উজ্জীবিত করার পথ থেকে আজ আমরা অনেক দূরে। যখন প্রাসাদের ভিতর যতই ঢুকেছে আদর্শের মহিমান্বিত উপাদানগুলো ততই ধুলিস্যাাৎ হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী, পুঁজিবাদী শক্তির দেশগুলোর গালভরা নীতি বাক্য আমাদের আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে আমরা গিলছি ঠিকই।

আজ মুসলমানরা যতটুকু হারিয়েছে, তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য পুনরুত্থানের জন্য সেভাবে শপথ নিতে দেখা যায় না এখনো। প্রাসাদের ভিতর উপবিষ্ট শাসক শ্রেণি তার প্রাসাদ-সামাজ্য রক্ষার জন্যই বেশি সজাগ। সব সময় সতর্ক। এখনো দেখা যায় দেশে দেশে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর পুতুল হয়ে আছে প্রাসাদগুলো। আর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোই তাদের সামনে সমানে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে নিরীহ সাধারণ মানুষগুলোর উপর।

আজ আমাদের সত্যিই এই মানসিকতা পেয়ে বসেছে, সঠিক কর্মপন্থার পথ থেকে দূরে সরে গিয়ে বাহাদুরের মতো বাহাদুরি দেখাতে বেশি ব্যস্ত থাকছি আমরা। পালিয়ে যে বেমালুম উজ্জতের পিঠে মারে ছুরি, সুখ্যাতি গাও না-গাও ; নিজে সে দেখাবে বাহাদুরি ॥ (পলাতকের কৃতিত্ব) কবি কথাগুলো কি মিথ্যা? না, মিথ্যা নয়। কিন্তু আমাদের পরিণতি যে ভয়াবহ তা আমরা এখনো উপলব্ধি করার চেষ্টা করছি না। আমাদের অস্তিত্বের সঙ্কট দেখা দিচ্ছে অথচ আমরা এখনো জেগে উঠছি না। আমাদের নিজস্ব যে ইতিহাস তাকে সমুন্নত করে তুলে ধরার চেষ্টা এখনো করছি না।

এটা সত্যি দুর্ভাগ্যজনক। এর জন্য আমাদের মূল্য দিতে হবে অনেক। সেই কবির দেখা সেদিনের রূপ আরো বৈচিত্র্যময় হয়েছে। কিন্তু আমরা সজাগ হইনি। আমরা দিন দিন আরো অবনতির দিকেই যাচ্ছি।

আদর্শ থেকে দূরে থাকছি। পলায়নপর মানসিকতা আমাদের গ্রাস করে ফেলছে। আর আমাদের সে দিকে কোনো দৃষ্টি নেই। তবে আমরা অনেক সজাগ নিজেদের নিয়ে। নিজের ভাগ্যকে ছলেবলে যেনতেন কৌশলে এগিয়ে নিতে বদ্ধ পরিকর।

ফলে ভালো-মন্দের বাছ বিচার আমরা করি না। আমাদের এখন এই বাছবিচারের সুযোগও নেই বলে মনে করি বস্তুবাদের করাল গ্রাসে আক্রান্ত হয়ে। বস্তুবাদ, পৃথিবীর মোহ আমাদের এমনভাবে ধরে বসেছে যে আমরা আসলে আমাদের আত্মপরিচয়ও ভুলতে বসেছি। আমাদের প্রতিদিন ছেলেভুলানো গানের সাথে সাথে ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে নিজেদের স্বকীয়তাকে। নিজের ইতিহাস, ঐতিহ্যকে ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে।

ফলে নিজেরাই আজ ভালো করে বুঝতে পারি না আমাদের করণীয় কি কোনটা। আমাদের কি করা উচিত আর কি কা উচিত না। আমাদের এখানে মনে হয় এখন অনেক কিছুই করার থাকে না। তবে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য আমরা অনেক কিছুই করতে পারি। করছিও।

এতে আমাদের লজ্জাবোধে আঘাত আসে না। অন্যকে ঠকিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে তাই আমরা ছলাকলার আশ্রয় প্রশ্রয় নেই। নীতিনৈতিকতার বালাই ধার ধারি না। মামার দৌলতে হোক আর যেভাবেই হোক কিস্তিমাত করতে পারলেই হলো। কে কি বলল আর ভাবল সেদিকে কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই।

নিজের বুঝ বুঝে এগিয়ে যাচ্ছি কিস্তিমাতে সহজেই। কবির ব্যঙ্গ রস এখানেও এসে আঘাত করে। কৌশলে তিনি এর চারিত্র পাঠে খুব সুন্দর ভাবে সাহায্য করেছেন আমাদের। মামার দৌলতে যদি কিস্তিমাত হয় সহজেই তবে বুঝে নাও কেন ভাগিনেয় অন্য পক্ষে নেই ॥ (মামার দৌলৎ) নিজের যোগ্যতা, নিজের বিবেকের কাছে দায়বোধ না রেখে অন্যের উপর ভরসা করে এগিয়ে যাই, তাও নিজের স্বার্থেই। কাজির গরুর কিতাবে অস্তিত্বের মতো আমাদের গোয়াল ভরা বুলি থেকে আমরা এখনো বেরিয়ে আসতে পারিনি।

কবি এই দিকেও ইঙ্গিত করেছেন তীব্র ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গিমায়। তুলে ধরেছেন এই ভুয়া বোধের অস্তিত্বকে। গোয়ালে অস্তিত্ব নাই (গ্রন্থে যদি শুধু নাম থাকে কে দিয়ে নগদ মূল্য কিনে নেবে ভুয়া প্রাণীটাকে)! (‘কাজীর গরু’) কিন্তু আমরা কি সচেতন হচ্ছি। আমরা কি যা করছি বুঝে শুনে করিছি। আমরা কি সঠিক পথকে চিহ্নিত করে এগিয়ে যাচ্ছি।

সত্যি আমরা আজ নগদ মূল্যে সেই ভুয়া প্রাণটাকে কেনারই পিছনে ছুটছি। প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা করছি। মিথ্যার পিছনে মরীচিকার পিছনে ছুটে ছুটে সময় অর্থ সামর্থ্য সব কিছু ব্যয় করছি। আমাদের কারোর কোনো সঠিক ভাবনাচিন্তা এ ব্যাপারে। কেন থাকবে এই ভাবনাচিন্তা যদি নিজের ভিতর সেই বোধের বাসাটি না থাকে।

আসলে আমরা আজকে এই বোধ শক্তিও হারিয়ে ফেলেছি। নিজেরই বাছবিচারের শক্তি হারাচ্ছি ক্রমে ক্রমে। ভালো-মন্দের পার্থক্যকেও নিজের তলিয়ে দেখি না। কওমী দায়িত্ব সেই বুঝ শক্তি মনে হয় কবেই হারিয়ে ফেলেছে কে রাখে তার খোঁজ। বর্তমান কওমের দায়িত্ব কি সেটাই অনির্ধারিত আজ সমাজে।

যারাও বা সচেতন দেশ-মাত্তৃকার সুখ সমৃদ্ধি কল্পনা করে তারাও কেন জানি ক্রমেই কওমের দায়িত্ব থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কেউ কেউ আগে পাছে ভাবনার অবকাশে নিজেকে গুটিয়ে রাখছে। এসবই তো ফররুখের স্যাটায়ারে উঠে এসেছে বলিষ্ঠভাবে। পঙক্তিতে ছোট হলেও বিষয়বস্তুতে ভারি ও গুরু গম্ভীর তার এই স্যাটায়ারগুলো। কওমী দায়িত্ব ছেড়ে সকলেই দেখে যদি দায় অগত্যা হ’তেই হবে দলবদ্ধভাবে নিরুপায়।

লুটের ময়দান ভেবে যদি পার্শ্ববর্তীর পকেট প্রত্যেকে লোপাট করে তবে কারো ভরবে না পেট ॥ (কওমী দায়িত্ব) কবি ফররুখ আহমদের এরকম অসংখ্য ব্যঙ্গকবিতা তার গ্রন্থে পাওয়া যায়। ছোট ছোট পঙক্তিতে ব্যঙ্গকবিতাগুলো বৈচিত্র্যময়। ভাব, ভাষা আর রচনাশৈলীতে ভরপুর। কবি হিসেবে এর প্রকাশকে ‘আশ্চর্য চরিত্রশালা’ই বলা যায়। তিনি বিভিন্ন ছদ্মনামে লিখতেন।

তার স্যাটায়ারের জন্য তাকে পালিয়ে থাকতেও হয়েছিল। আবদুল মান্নান সৈয়দ তার ফররুখ আহমদ : জীবন ও সাহিত্য গ্রন্থে ফররুখ আহমদের ব্যঙ্গকবিতা সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন: ‘‘ফররুখ আহমদের ব্যঙ্গকবিতা লেখার সূচনা বিভাগপূর্ব কালেই, কলকাতা পর্যায়ে। তবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তার যে-স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিলো, সমাজের সর্বত্র ও রাজনীতিতে যে-চতুর ধূর্ত ব্যক্তিদের তিনি দেখেছিলেন, অজস্র ব্যঙ্গকবিতায় তিনি তাদের ছবি ধ’রে রেখেছেন। এ এক বিশাল আশ্চর্য চরিত্রশালা। জীবদ্দশায় তাঁর কোনো ব্যঙ্গকবিতাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি, কিন্তু তাঁর অনেক ব্যঙ্গকবিতার পঙক্তি সাহিত্যামোদীদের মুখে আজো শোনা যায়, ‘‘তসবিরনামা’’, ‘‘ঐতিহাসিক-অনৈতিহাসিক কাব্যে’র উল্লেখ অনেকেই করেছেন।

ব্যঙ্গকবিতা পত্রিকায় প্রকাশকালে ফররুখ অনেকগুলো ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। সেগুলো এই: হায়াত দারাজ খান পাকিস্তানী, ইয়ারবাজ খান, মুনশী তেলেসমাত, কোরবান বয়াতী, গদাই পেটা হাজারী, আবদুল্লাহ বয়াতী, জাহেদ আলী ঘরামী, মানিক পীর, শাহ বেয়াড়া বাউল, ঘুঘুবাজ খান, সরফরাজ খান, মোহাম্মদ আবদুল জলিল, আহমদ আবদুল্লা, মাহবুব আবদুল্লা প্রভৃতি। ১৯৫৭ সালে তাঁর ব্যঙ্গকবিতা নিয়ে সরকারি উপর-মহলে একটি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, এমনকি তাঁকে গা-ঢাকা দিয়ে থাকতে হয়েছে কিছুুদিন, এজন্যে তিনি কয়েকদিন নিজ বাসা ছেড়ে কমলাপুরে মামার বাসায় থাকতে। ” (পৃষ্ঠা: ২১) এরকম অসংখ্য ব্যঙ্গকবিতা অল্প কথায় অর্থবহ করে রেখে গেছেন দেশ জাতি সমাজের জন্য। সমাজে এসব চরিত্র বিষয়াবলী আগেও ছিল এখনো আছে।

তবে এর প্রসারই হচ্ছে কেবল। বন্ধ হচ্ছে না। এই বন্ধ না হওয়া কালচার সত্যিই আমাদের জন্য ভয়াবহ হয়ে দেখা দিতে পারে যদি আমরা এ ব্যাপারে আরো বিলম্ব করি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.