আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশীয় শিল্প রক্ষায় - চাই পর্যাপ্ত সরকারি সহযোগিতা...কিন্তু!!!

সত্যেই হোক মোদের লক্ষ্য রেফ্রিজারেটর এবং মোটরসাইকেল উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এসব পণ্য বিশ্ববাজারে রফতানিও করছে। বর্তমানে দেশে ফ্রিজের চাহিদা বছরে ১০ লাখ। যেখানে বাংলাদেশের উৎপাদন ক্ষমতা ১৪ লাখ। তিন লাখ মোটরসাইকেলের চাহিদার পুরোটাই দেশের উৎপাদন সম্ভব।

অর্থাৎ উচ্চ প্রযুক্তির এসব পণ্য তৈরিতে বাংলাদেশে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। মাত্র চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ফ্রিজ, মোটরসাইকেল এবং ইলেক্ট্রনিক সেট তৈরিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু অবাধ আমদানির কারণে পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুতগতির দেশে পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ২০-এ জায়গা করে নিচ্ছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, কূটনীতিক ও শীর্ষ ব্যবসায়ীরা যখন রেফ্রিজারেটর ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ওয়ালটন তথা বাংলাদেশের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করছে; তখন দেশবাসী আশায় বুক বাঁধছেন। অন্যদিকে বিদেশে যেখানেই ওয়ালটন ব্র্যান্ডের পণ্য যাচ্ছে সেখানেই পণ্যের আউটলুক, মান নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শীর্ষ ব্র্যান্ডের সঙ্গে লড়াই করে বাংলাদেশ নিজের জায়গা করে নিচ্ছে। সফলতার সিঁড়ি বেয়ে বাংলাদেশ এ সেক্টরে যখন বিশ্বের সেনসেশন হয়ে উঠছে; তখনই দেশীয় কোম্পানির সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে দেশের ভেতর থেকেই আন্তর্জাতিক মদদপুষ্ট একটি দেশবিরোধী স্বার্থান্বেষী চক্র এই শিল্পের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা শুরু করেছে। ওই চক্রটি চায় বাংলাদেশে বিদেশী পণ্যের ডাম্পিং স্টেশন বানাতে।

যাতে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি আমদানির পাঁকচক্র থেকে বেরোতে না পারে। চিরকাল বিদেশী পণ্যের বাজারে পরিণিত হয়ে থাকে। ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে সরকারকে প্রভাবিত করতে তারা দেশীয় শিল্পের বিরুদ্ধে মিথ্যা, মনগড়া ও ষড়যন্ত্রমূলক তথ্য পরিবেশন করছে, প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। সরকার, জনগণ ও ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। দেশী শিল্প ও বিনিয়োগ বন্ধে চক্রান্ত ও গভীর ষড়যন্ত্র করছে।

যেখানে বিনিয়োগ বোর্ড বাংলাদেশের সফলতার মডেল হিসেবে ওয়ালটনকে চিহ্নিত করে, রোড শোসহ নানা প্রচার কাজ চালাচ্ছে, দেশ-বিদেশের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে; সেখানে এই চক্র বিনিয়োগের বিপক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। স্থানীয় এবং বিশ্ব মিডিয়া যেখানে বাংলাদেশকে নিয়ে, ওয়ালটনসহ অন্যান্য দেশীয় উৎপাদকদের নিয়ে অতি উচ্চাশা পোষণ করছে; সেখানে দেশের ভিতর থেকে আন্তর্জাতিক মদদপুষ্ট ওই চক্র স্থানীয় শিল্পবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। ওই চক্রটি আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেশীয় উৎপাদনকে ব্যাহত করার কুপরামর্শ দিচ্ছে। যাতে সরকার রাজস্ব হারাবে এবং দেশীয় শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে। তারা বলছে- ওয়ালটন বা দেশীয় উদ্যোক্তরা মাত্র ১৪ শতাংশ শুল্ক দেয়, কথাটি মোটেই সঠিক নয়।

আমদানিকারকরা বলছেন, তারা দেশের ৮৮ শতাংশ চাহিদা মেটান বিদেশী পণ্য দিয়ে। প্রকৃতপক্ষে দেশের চাহিদার সামান্যই আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়। ষড়যন্ত্রকারী ওই চক্রের হোতারা বলছে, তারা উৎপাদকের চেয়ে বেশি শুল্ক দিয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে ব্যাপক আন্ডার ইনভয়েসিং-এর মাধ্যমে তারা এনবিআর তথা সরকারকে ঠকাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে আন্ডার ইনভয়েসিং-এর ভয়াবহ চিত্র বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় উঠে এসেছে।

তারা একদিকে বলছেন, দেশীয় পণ্য বেশি দামে বিক্রি করছে; অন্যদিকে বলছেন, দেশীয় পণ্যের কারণে বাজারে টিকতে পারছেন না। বক্তব্যটি স্ববিরোধী, দ্বিমুখী। প্রকৃতপক্ষে দেশের উৎপাদিত পণ্যের দাম ক্ষেত্রবিশেষে তাদের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম। যার সুফল পাচ্ছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে দেশের এধরনের পণ্য উৎপাদন না হলে আমদানিকারকরা কত বেশি দামে বিক্রি করতেন সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ! দেশের ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ও অটোমোবাইলস সেক্টরে উৎপাদন বাজারজাতকরণে প্রায় ২০ লাখ লোক নিয়োজিত আছেন।

শুধু তাই নয়, এসব পণ্য উৎপাদনে দেশের সফলতা অন্য বিনিয়োগকারীদেরও আকৃষ্ট করছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের কম্প্রেসার, মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন, ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক্স মাদারবোর্ড, মোবাইল ফোন সেট ও গাড়ি তৈরির কারখানা করতে চাইছেন অনেকেই। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হলে এখাতে বিনিয়োগে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পাবে না। সেইসঙ্গে ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটি ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশাল জনসংখ্যার এই দেশকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে।

সেজন্য একমাত্র পথ বিনিয়োগ- শিল্প কারখানা কর্মসংস্থান এবং উৎপাদন। উদাহরণ হিসেবে তাইওয়ানের কথা বলা চলে। ২৩ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে ব্যাপক শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। তাদের রফতানির পরিমাণ প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার। আমাদের রফতানি মাত্র ২৩ বিলিয়ন।

এ মুহূর্তে আমাদেরও অবশ্যই ব্যাপক শিল্পায়নে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যাপক উৎপাদনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় এবং রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। কিন্তু এই চক্রের অপতৎপরতা সফল হলে কেউ বিনিয়োগের ঝুঁকি নেবেন না। দেশ পুরোপুরি আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে। বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য নষ্ট হবে।

অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে। বিশাল বিনিয়োগ করেও দেশীয় উদ্যোক্তারা আতঙ্কিত, অসহায়। বর্তমান সরকারের প্রদত্ত শিল্পবান্ধব সহায়তার এসআরও-২১৩ বাতিল হলে সরকারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হবে। কারণ ২০১৪ সাল পর্যন্ত সুবিধা ঘোষণা করে মাঝপথে তা বন্ধ হয়ে গেলে পুরো বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে। বিনিয়োগের দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা এবং প্রতিশ্রুত সুবিধা এভাবে অশুভ শক্তির প্রভাবে প্রত্যাহার করা হলে ভবিষ্যতে আর কেউ দেশীয় শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না।

তাই অচিরেই এক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ দরকার। মনে রাখতে হবে, শিল্পবিরোধী চক্রকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে না পারলে পর্যায়ক্রমে ষড়যন্ত্রকারীদের কালো ছোবলে পুরো উৎপাদন খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই অবশ্যই এই অপতৎরতার প্রতিকার করতে হবে। যাতে দেশবিরোধী অশুভ শক্তি দেশীয় বিনিয়োগের বিরুদ্ধে আর কোনদিন মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। উৎপাদিত দেশীয় পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ সুগম করেছে এবং দেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

এর ফলে প্রযুক্তি শিল্পে বিনিয়োগে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ এর সুফল পাচ্ছে। এটি অব্যাহত রাখতে হবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.