আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাতপরীর আর্তনাদ

চোখের দেখা , মনের কল্পনাঃ আমার লেখা −−−−−−−−−−−−−−−−−−− ( ১ ) −−−−−−−−−−−−−−−−−−−− -“না, না ... ৫০০ টেকায় কিছু অইবনা । এই ছেমড়ি নতুন আইছে। আপনেই পরথম কাস্টমার। এক্কেবারে কুমারী । ১০০০ হাজার টেকা দেওন লাগবো ।

” - “ বেশী হয়ে গেলো না?” -“ আপনে পুরান কাস্টমার হেল্লেইগা কমাইয়াই কইছি। নাইলে এমন মাইয়া ১২০০ র কমে ........................... , আইচ্ছা যান , ১০০ কমাইয়া দিলাম। ” -“ ঠিক আছে, জলদি আসতে বল। আমি রুমে গেলাম। ” মোটা থলথলে কুৎসিত-দর্শন রমিজা , যে কিনা পতিতা পল্লীর কত্রী হিসেবেই পরিচিত , তার সাথে দরদাম শেষ করে তপন সাহেব অপেক্ষা করতে লাগলেন কয়েক ঘণ্টার জন্য কিনে নেয়া মেয়েটিকে ভোগ করার লালসা নিয়ে।

বয়স বেশী হয়নি লোকটার, ৩০ এর কাছাকাছি। রঙের ব্যবসা করে হঠাৎ পয়সা করে নিজের মনে রঙ লাগাতে আনাগোনা শুরু করল পতিতাপল্লিতে । ইতমধ্যেই একজন চেনা ও নিয়মিত খরিদ্দার হয়ে উঠেছে এখানকার। কাঁচুমাচু করে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো মেয়েটি.........রজনী ......... । যেন এখনো ঘোরের মাঝে আছে আর বুঝতে পারছেনা কি হতে চলেছে ......।

। তপন সাহেব নিজে উঠে দরজা বন্ধ করার একটু পরেই ভেসে এল রজনীর আর্তচিৎকার ............ “ কাজ করবি আর খাবি ” – ধরনের কথা বলে রজনীকে নিয়ে আসা হয়েছিল গ্রাম থেকে...... সাধারণত যেভাবে এসব জায়গার মেয়েদের জোগাড় করা হয়। ক্ষুধা, দারিদ্র্যের কষ্টে অতো সাতপাঁচ না ভেবে চলে আসে গ্রাম থেকে। জীবনটা নরকে রূপান্তরিত হতে শুরু করল ঠিক ওই সন্ধ্যা থেকে ......... আস্তে আস্তে সেও নারকীয় জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেলো ...... অভ্যস্ত করানো হল...... কিন্তু ভুলটা প্রথমেই হয়ে গেলো। ওই রাতেই সৃষ্টি হল এক দুঃখিনীর গর্ভে আরেক দুঃখিনীর ভ্রূণ ......... তখনো সম্পূর্ণ পাথরে পরিণত হয়নি রজনী ,মায়াদয়া তখনো অবশিষ্ট ছিল মনে, তাই আরেকটি জীবনের সম্ভাবনাকে বুকে পাথর চেপে হত্যা করতে পারেনি ......... শুভ্রার জন্মের পরেই অন্ধকার গলিটা যেন আলোয় ভরে গেলো ...... আর এটাই ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ালো ওর মায়ের জন্য।

সুন্দর হয়ে জন্মানোর পরিণাম যে এখানে ভয়াবহ !!!! মনকে শক্ত করলো রজনী , এই অন্ধকার দুনিয়া থেকে শুভ্রাকে আড়াল করে রাখাই একটা চেলেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালো ওর জন্য ...... যেভাবেই হোক এই পেশা থেকে ওকে দূরে রাখতে হবে...... কাছাকাছি একটা স্কুলে যেতে শুরু করলো শুভ্রা ...... কিন্তু লোভাতুর দৃষ্টিগুলো ঘুরে ঘুরে যে ওর দিকেই স্থির হয় !!! অবস্থা বেগতিক দেখে ক্লাস সিক্সের পর পড়াশোনা স্থগিত রাখা হল ...... ঘর থেকে বের হতে দেয়না মেয়েকে রজনী। । এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল ......... −−−−−−−−−−−−−−−−−−−− ( ২ ) −−−−−−−−−−−−−−−−−−− রজনী পাড়ায় নেই । অন্যকোথাও গিয়েছে। ঘরের দরজাটা বাইরে থেকে খুলে গেলো , কিন্তু ভেতর থেকে বন্ধ...... - ওই মাইয়া , দরজা খোল !! - না , মায় না করসে , পারুম না ।

- আরে, তোর মায় আমারে পাডাইসে তোরে নিবার লাইগা , তোরে দেখবার লাগি পাত্রপক্ষ আইসে ... অনেকক্ষণ বুঝানোর পর শুভ্রা দরজা খুলল । কয়দিন আগে আসলেই ওর মা বিয়ের কথা বলছিল । তাই বিশ্বাস না করে পারলো না। একজন এসে ওকে সাজিয়ে দিতে লাগলো, তারপর নিয়ে যাওয়া হল ওখানকার সবচাইতে দামি ঘরটাতে । নামীদামী (!!!) লোকদেরকেই ওই ঘরটা দেয়া হয় ।

১৭ বছর আগের সেই আর্তচিৎকারটা আবার ভেসে উঠলো ...... রজনী ফিরে দেখে রমিজা বসে আছে ওদের ঘরে। - “ শুভ্রা কই ?!!” - ওরে বড়ঘরে পাডাইসি , মস্ত ব্যবসায়ী । কুমারী মাইয়া খুঁজতাসিল। আর কাউরে পসন্দ অয় নাই, শেষমেশ তোর মাইয়ারে পাডাইসি। .................. এইডা কি !!! এমন কইরা বইয়া পরলি যেন কত বড় অনর্থ অইয়া গেসে...... বেশ্যার মাইয়া বেশ্যাই হয় শেষমেশ ।

বুঝলি ? .....................আর ওদিকে পৈশাচিক তৃপ্তি নিয়ে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে ভোগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তপন সাহেব । ........................ পুরনো অভ্যাস টা ছাড়তে পারেননি তপন সাহেব । বিয়ে করেছেন, সন্তানের বাবা হয়েছেন। কিন্তু তারপরেও এখানে না এসে পারেননা। আজও এসেছিলেন......... কাছেই কোনোএকটা ঘরে বাজছিল সস্তা হিন্দিগান......... রজনী আর শুভ্রার বিলাপ চাপা পরে গেছে তার নিচে ......... ওরকম আর্তনাদ কতোই শোনা যায় , কারো কিছু যায়-আসেনা তাতে ...... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.