আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইনসভার সার্বভৗমত্বের খাতিরেই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে ঐ বিচারপতিকে এখনই অপসারণ করতে হবে

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!! জনগণকে বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর কথা বলে জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল হামিদ এডভোকেট রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল অপরাধ করেছেন বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। হাইকোর্ট বলেছে এই অপরাধের জন্য তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হওয়া উচিত। একই সংগে বারের একজন সদস্য হিসেবে বিচার বিভাগ সম্পর্কে অপমানজনক মন্তব্য করায় আইনজীবী হিসেবে স্পিকারের সনদ থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট। এছাড়া তার আইনজীবী সনদ সাময়িক স্থগিত থাকায় তার নিজের নামের আগে এডভোকেট ব্যবহার করা সংগত কিনা সে প্রশ্নও উত্থাপন করেছে হাইকোর্ট। একই সংগে হাইকোর্ট স্পিকারকে অজ্ঞ ও বিচার কার্যক্রম সম্পর্কে তার না জেনে মন্তব্য করাকে “অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী বলে উল্লেখ করেছে।

২৯ মে জাতীয় সংসদে সুপ্রিম কোর্টের কাছে সড়ক ভবন হস্তান্তর করা নিয়ে একটি বিতর্ক হয়। এ বিতর্কে জাতীয় সংসদের স্পিকার ও অন্য দু’জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন। সূত্র: বাংলা নিউজ, স্থানীয় সময়: ১৫৪৫ ঘন্টা, ০৫ জুন ২০১২ বাংলা নিউজের সূত্রে পাওয়া এ খবরটি আমাদের গণতান্ত্রিক সিস্টেমের জন্য নিঃসন্দেহে একটি খারাপ সংকেত। এটা বিচার বিভাগের একনায়কতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার একটা প্রয়াসও হতে পারে। যে বিচারপতি এ রায়/পর্যব্ক্ষেণ প্রদান করেছেন তিনি নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অসন্মান করেছেন।

অসন্মান করেছেন এই কারণে বলা হলো যে, রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের সবচেয়ে শক্তিশালী স্তম্ভের অর্থাৎ আইনসভার প্রধানকে কে তিনি অপমান করেছেন। এটা তার আওতাধীন বিষয় নয়। যে হাইকোর্টের বিচারপতি এ পর্যবেক্ষণ/রায় দিয়েছেন তার পদমর্যাদা স্পিকারের তুলনায় অনেক নীচের। উপরন্তু বিচার বিভাগ সেই আইনই ফলো করবে যেটা আইন বিভাগ প্রণয়ন করবে। আইন বিভাগের প্রধানকে নিয়ে বিচার বিভাগের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের এ তুচ্ছ মন্তব্য দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি চূড়ান্ত তাচ্ছিল্যের শামিল।

রাষ্ট্রে তিনটি স্তম্ভ: আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ। তাত্ত্বিকভাবে সবাই স্বাধীন, কেউ কারো উপর নির্ভরশীল নয়। তবে বিচার বিভাগের সন্মানটা এ কারণে বেশি যে এটা জনগণের আশ্রয় গ্রহণের শেষ প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষার চূড়ান্ত ও শেষ অবলম্বন। তবে এর অর্থ এই নয় যে, ঐ ওছিলায় সে অন্য বিভাগের উপর যখন তখন ছড়ি ঘুড়াবে। শাসন বা নির্বাহী বিভাগের উপর খবরদারি মেনে নেয়া যায়।

কিন্তু জনগণের নির্বাচিত আইনসভার উপর এই খবরদারি এবং এর প্রধান-কে এমন তাচ্ছিল্য কোন অবস্থায়ই মেনে নেয়া যায়না। এটা জনগণের নির্বাচিত পরিষদের প্রতি চূড়ান্ত অবজ্ঞা। বিচার বিভাগ যদি জনগণের স্বার্থে এ রায়/পর্যবেক্ষণ দিত তাহলেও সেটা মেনে নেয়া যেত। বিচার বিভাগ এমন একটি বিষয়কে নিয়ে এ মন্তব্য করেছে যা এ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট। বিচার বিভাগের নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে (জায়গাটি সুপ্রিমকোর্ট-কে তড়িঘরি প্রদান করার কারণে) সরকারের (সড়ক ও জনপথ বিভাগের) অনেক প্রয়োজনীয় নথি নষ্ট হয়েছে।

অনেক প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে। এর আগেও বিচার বিভাগ জেলা জজদের তিন বাহিনীর প্রধান এবং ক্যাবিনেট সচিবের উপরে স্থান দেয়ার রায় দিয়ে দেশের প্রশাসন এবং প্রতিরক্ষা বিভাগে একটি হুলস্থুল অবস্থার সৃষ্টি করেছিল। এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল একমাত্র বিচার বিভাগের নিজস্ব স্বার্থ/শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষা করার চেষ্টার কারণে। দেশের আপামর জনসাধারণের কল্যাণের কোন বিষয়বস্তু সে রায়ে ছিলনা। অবশ্য এ অবস্থা সৃষ্টি করার জন্য সরকার এবং আইন বিভাগ নিজেই দায়ী।

সরকার নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে পূর্বের সংসদে পাশ হওয়া অনেক আইন বিচার বিভাগের মাধ্যমে বাতিল করেছে। সরকারের পার্লামেন্টে পরিস্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও তারা বিচার বিভাগের মাধ্যমে এগুলো বাতিল করেছে। এমন একটা ভাব দেখিয়েছে যে, বিচার বিভাগ চেয়েছে বলেই সংসদ/সরকার এটা করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু সংবিধানের ব্যাখ্যাকারী হিসেবে বিচার বিভাগ সংসদে পাশ হওয়া কোন বিষয়ে মতামত/পর্যবেক্ষণ দিতে পারে, বাতিল করতে পারেনা। এটা সংসদের মর্যাদার প্রশ্ন।

কিন্তু সরকার/সংসদ এসব আইন বাতিলের ক্ষেত্রে এমন একটা ভাব নিয়েছে যে, বিচার বিভাগ বলেছে তাই এগুলো বাতিল তাদের করতেই হবে। সরকারের এ দুর্বল আচরণের কারণে আজ বিচার বিভাগ এত উদ্ধত। সরকার যদি নিজে উদৌগী হয়ে বিচার বিভাগের রায়/পর্যবেক্ষণ ব্যতিরেকে বা এটাকে ধর্তব্যে না এনে আইনগুলো বাতিল করত তাহলে বিচার বিভাগ আইন সভার উপর ছড়ি ঘুরানোর এ সাহস পেতনা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সার্বভৌমত্ব একমাত্র পার্লামেন্টের। সে সার্বভৌত্বের প্রমাণ/প্রতিষ্ঠা পার্লামেন্টকেই করতে হবে।

আইনসভার সার্বভৌমত্ব/সন্মান প্রতিষ্ঠার স্বার্থে তাই যে বিচারপতি এমন উদ্ধত আচরণ করে আইনসভার স্পিকারকে অপমান করেছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সংসদের উচিত হবে এই বিচারপতিকে অপসারণের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের উদ্যোগ নিতে সরকারকে বাধ্য করতে। যদি আইনসভা নিজের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার দায়বদ্ধতা থেকে ঐ বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে বাধ্য করতে পারে তাহলে তা সংসদের মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যার যার সীমার মধ্য থেকে কাজ করতে বাধ্য/উৎসাহিত হবে। আর তা না করতে পারলে বিচার বিভাগ অন্য বিভাগগুলোর উপর তার ছড়ি ঘুরাতেই থাকবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।