আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিয়াং মাই, থাটন লং নেক ভিলেজ ভ্রমন ২০০৬

"প্রত্যেক সত্ত্বাকে মৃত্যু আস্বাদন করতে হবে। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, নিঃসন্দেহে সে হল সফল। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়। " আল ইমরান,আয়াত ১৮৫ আগের পোস্টের লিংকঃ ব্যাংকক, পাতায়া ভ্রমন ২০০৬ চিয়াং মাই যাবার ট্রেনটিতে মাত্র দু’টো বগি ছিল।

খুব মজা লাগল। রাতে ট্রেনে খাবার দিল। রান্না বেশ সুস্বাদু, আর স্টিকার মারা আছে “"Halal certification by Central Muslim Authority of Thailand"” ! বেশ স্বস্তিদায়ক একটা ব্যাপার। চিয়াং মাই থাইল্যান্ডের উত্তর পশ্চিম দিকের শহর, ব্যাংকক থেকে ৭০০ কিমি দূরে। সকালে চিয়াং মাই পৌছে হোটেলে চলে গেলাম, নতুন হোটেল, রুম এর অবস্থা বেশ ভাল।

নাশতা করে দুই সহকর্মী বেরিয়ে পড়লাম নিজেরাই একটু শহর ঘুরে দেখব বলে। হেটে বেড়ালাম অলিতে গলিতে। রাতে হোটেলেই বুফে খাবার খেলাম। দেখি এক গায়িকা গান গাইছে। রাতের বুফে খাবার... গান শুনতে শুনতে খাওয়া সেরে রওনা দিলাম “কালারে নাইট বাজার” এর উদ্দেশ্যে।

এটা চিয়াং মাই এর একটা আকর্ষনীয় স্থান বটে। এই বাজার রাতেই বসে, পর্যটকদের জন্য হরেক রকম জিনিসের পসরা নিয়ে। ছবিতেই দেখুন। রকমারি পণ্য সাজানো দোকান... বাতির দোকান... কালারে নাইট বাজারে এক শিল্পী ছবি থেকে অবিকল ছবি আকছে !! জীবন্ত চিংড়ি মাছ সাজিয়ে রাখা, চাইলেই রেধে দিবে... পরদিনই চিয়াং মাই এ আমাদের আসল ঘোরাঘুরি। প্যাকেজ আগে থেকেই নেয়া ছিল।

আমরা সাই নাম ফুং প্রজাপতি খামার এবং অর্কিড নার্সারি, চিয়াং দাও প্রাকৃতিক গুহা দেখে চলে যাব মিয়ানমার সীমান্তের কাছে “Thaton Long Neck Village” এ। অর্কিড নার্সারিটা আসলেই খুব সুন্দর। কত রঙ বেরং এর অর্কিড! সেসব অর্কিড থেকে আবার অলংকারও বানিয়েছে। ঢোকার মুখেই একজন থাই তরুণী প্রত্যেকের বুকে একটি করে অর্কিড ফুল লাগিয়ে দেয়। অর্কিড বাগান... রং বেরং এর অর্কিড... অর্কিড থেকে তৈরী অলংকার... আমাদের সাথে ঐ ট্যুর এ বাকী যারা ছিল সবাই ইউরোপিয়ান।

দু’জন মধ্য বয়সী ভদ্রলোক এয়ার ফ্রান্সের কর্মকর্তা, দু’জন সুইডিশ তরুণী এ লেভেল শেষ করে ঘুরতে বেরিয়েছে। এর মধ্যে একজন ছিল সুইজারল্যান্ড থেক, নাম এলেক্স। এই তরুণী মূলতঃ একজন নার্স। ঘোরাঘুরির প্রতি নেশা যে কি জিনিস সেটি বোঝানোর জন্য ওর কথা বলার লোভ সামলাতে পারলাম না। এলেক্স ঘুরতে বেরিয়েছে এক বছরের জন্য।

সুইজারল্যান্ডে সে হাসপাতালে নার্স হিসেবে ক্রমাগত রাতের পালায় কাজ করত, কারণ, রাতের পালায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিন গুণ বেশী পারিশ্রমিক। বেশ অনেক দিন কাজ করে এবার সে ঘুরতে বেরিয়েছে। প্রথমে সে সম্ভবত আমেরিকা ঘুরেছে এক মাস। এরপর সে ইউরোপ ঘুরে চলে এসেছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া (থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, প্রভৃতি) ঘুরতে। এরপর সে চীন এবং ভারতেও ঘুরবে।

আমার সাথে যখন দেখা হয় তখন ওর ঘোরাঘুরির সম্ভবত সপ্তম মাস চলছিল! শুনলাম আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম !! এলেক্স ও আমি... অর্কিড নার্সারী দেখে চলে এলাম চিয়াং দাও গুহা দেখতে। প্রাচীন রক ফর্মেশন মোড়ানো একটি প্রাকৃতিক গুহা। চিয়াং দাও গুহার অভ্যন্তরে... পুরনো ছবিগুলো দেখে আমার ফিলিপিনসের পুয়ের্তো প্রিন্সেসা ভূ-গর্ভস্থ নদীর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সেখানেও এ ধরণের Rock Formation দেখেছিলাম। যারা আমার ফিলিপিনস ভ্রমনের পোস্টগুলো পড়েন নি, তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, সম্প্রতি ঘোষিত প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যগুলোর মধ্যে একটি ঘুরে আসার সৌভাগ্য আমার হয়েছে।

সেটি হল, ফিলিপিনসের পুয়ের্তো প্রিন্সেসা ভূ-গর্ভস্থ নদী ! চিয়াং দাও গুহা ছেড়ে থাটন লম্বা গলা গ্রাম দেখতে যাওয়ার পথে একটি বিরাট বুদ্ধ মূর্তি মন্দির দেখে গেলাম। পথেই একটি রেস্টুরেন্টে আমরা দুপুরের খাওয়া সারলাম... থাটন লম্বা গলা গ্রাম, চিয়াং মাই থেকে ১৭৬ কিমি দূরে মিয়ানমারের সীমান্তে অবস্থিত। এই গ্রামে বসবাসরত কায়ান পাহাড়ী উপজাতিটি মূলতঃ মিয়ানমারেই থাকত, কিন্তু মিয়ানমারের সেনা শাসনজনিত সংঘর্ষের পর নব্বইয়ের দশকে এরা থাইল্যান্ডে চলে আসে শরণার্থী হিসেবে। কায়ান মেয়েদের গলায় পাচ বছর বয়স হলেই পিতলের কয়েল জড়িয়ে দেয়া হয়। এতে তাদের কলার বোন নীচে নেমে গিয়ে গলা লম্বা হয়ে যেতে থাকে।

নির্দিষ্ট সময় পর পর কয়েলের আকার পরিবর্তন করা হয়। এই কয়েলটি যথেষ্টই ভারী। মেয়েদেরকে বেশী আকর্ষনীয় এবং বাঘের আক্রমণ থেকে বাচতেই এই গলা লম্বা করা, এ ধরণের কিছু ধারণা সেখানে প্রচলিত। কায়ানরা থাইল্যান্ডে কোন কাজ করতে পারত না, যেহেতু তারা শরনার্থী। পর্যটকদের দেয়া ডলারেই এদের পেট চলত।

এদের কিছু হস্তশিল্প পণ্য আছে যেগুলো এরা বিক্রি করে। ছবিতেই দেখুন এদের জীবন। কায়ান নারী কাপড় বুনছেন... গলা লম্বা করার শুরুটা এভাবেই... এভাবেই ২০০৬ সালের আমাদের থাইল্যান্ড ভ্রমন শেষ হয়েছিল। লং নেক ভিলেজ দেখাটা আমার জন্য ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটা স্মৃতি। সময় হলো ঘরে ফেরার... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.