আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই ছবিটি এখনো অম্লান!

উদাসিন রাস্তা ধরে দ্রুত হেঁটে চলেছে বিভিন্ন বয়সী পাঁচ শিশু। মাঝের শিশুটির গায়ে জামা-কাপড় নেই। সবার চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। ভয় আর আতঙ্কে কাঁদছে সবাই। শিশুদের পেছনে কয়েকজন সশস্ত্র সেনাসদস্য।

বার্তা সংস্থা এপির আলোকচিত্র সাংবাদিক হুন কং উটের ছবিটি তুলতে সময় লেগেছিল মাত্র কয়েক সেকেন্ড। কিন্তু সাদা-কালো ছবিটি অম্লান হয়ে আছে ৪০ বছর পরও। ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতার এটা একটা দৃশ্য মাত্র। তবে এই একটা ছবিই নাড়িয়ে দিয়েছিল বিশ্ব বিবেককে। যুদ্ধ বন্ধের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল ছবিটি।

ছবিটি ক্যামেরায় ধারণ করে পুলিত্জার পুরস্কার জেতেন আলোকচিত্রী উট। ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরতে গেলেই ছবিটি সবার সামনে চলে আসে। এই দৃশ্যের পেছনের ইতিহাসটা কিন্তু বেশ করুণ। অথচ সেটা প্রায়ই থেকে যায় অগোচরে। ছবির মাঝে থাকা বস্ত্রহীন শিশুটির বয়স তখন ছিল নয় বছর।

নাম—কিম ফুক। সেদিনের সেই শিশুটি প্রাণে বেঁচে যায়। ওর বয়স এখন ৪৯ বছর। যুক্তরাজ্যের মেইল অনলাইনকে কিম বলেছেন, ‘আমি সত্যি সেদিনের সেই মেয়েটিকে ভুলে থাকতে চাই। কিন্তু পারি না।

বারবার ছবিটা আমার চোখে ভেসে উঠে। ’ ঘটনার বর্ণনায় কিম বলেন, ‘দিনটি ছিল ৮ জুন, ১৯৭২। সেনাদের তীক্ষ চিত্কার শুনতে পাই আমি। সেনারা সবাইকে জায়গাটা ছাড়তে বলছে। ওরা এখানে বোমাবর্ষণ করবে।

আমাদেরকে হত্যা করা হবে!’ কয়েক সেকেন্ড পরই চারদিকে কালো ধোঁয়া দেখতে পায় কিম। সেনারা বোমাবর্ষণ করছে। কিমের পরিবারও তিন দিন ধরে ওখানেই আছে। গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিতে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের সেনারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাণভয়ে ছুটতে থাকে কিম।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানের গর্জন শুনতে পায় ছোট্ট কিম। দক্ষিণ ভিয়েতনামের বিমানটি যেন ওর দিকেই তেড়ে আসছে! বিমান থেকে বোমাবর্ষণ চলতে থাকে। আগুনের শিখা এসে কিমের বাঁ-হাতে লাগে। গায়ে জড়ানো সুতি কাপড়ে লেগে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ত্বক ও পেশিতে তীব্র ব্যথা অনুভব করে শিশুটি।

এ অবস্থায় গায়ের জামা-কাপড় খুলে চিত্কার করতে করতে হাইওয়ে ধরে হাঁটতে থাকে কিম। সামনেই ছিল ওর বড় ভাই। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে কিম পড়ে যায় রাস্তায়। সেদিন ২১ বছর বয়সী ভিয়েতনামের তরুণ আলোকচিত্রীই কিমকে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিত্সকেরা শিশুটির চিকিত্সা করাতে শুরুতে রাজি হচ্ছিলেন না।

এ পর্যায়ে সাংবাদিক উট তাঁর মার্কিন বার্তা সংস্থার ব্যাজ দেখালে মেয়েটির চিকিত্সা করেন চিকিত্সকেরা। সেদিনের স্মৃতি স্মরণ করে উট বলেন, ‘ওর দৌড় দেখে আমি কাঁদছিলাম। যদি আমি ওকে সহায়তা করতে না পারতাম এবং সে মারা যেত, তাহলে আমিও নিজেকে মেরে ফেলতাম। ’ কিমের ছোট্ট শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে যায়। তবে ওর মুখমণ্ডল অক্ষত থাকে।

কিমের স্মৃতিচারণা, ‘কোথায় ছিলাম, কী ঘটেছিল, কিছুই মনে করতে পারছিলাম না। ঘুম থেকে জেগে দেখি, আমি হাসপাতালে। সারা শরীরে ব্যথা। আমার চারদিকে সেবিকারা ছিলেন। আমি চিত্কার করে কাঁদছিলাম।

’ কিম বলেন, ‘শরীরের পুড়ে যাওয়া অংশ পরিষ্কার করতে প্রতিদিন সকাল আটটায় সেবিকারা আমাকে গোসল করাতে নিয়ে যেতেন। আমি শুধু কাঁদতাম। ’ কয়েক দফা অস্ত্রোপচার শেষে বোমা হামলার ১৩ মাস পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান কিম। তত দিনে ছবিটির জন্য পুলিত্জার পুরস্কার জিতেছেন উট। ছবিটির কারণে কিমও দ্রুত বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পান।

এখন কানাডায় আছেন কিম। বিয়ে করেছেন, সন্তানও আছে। ৬১ বছর বয়সী উট আছেন এপির সাংবাদিক হিসেবেই। শত ব্যস্ততার মধ্যেও এখনো দুজনের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। ২০০০ সালে একসঙ্গে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা।

উট বলেছেন, ‘আমি সত্যি সুখী। কিমকে সহায়তা করতে পেরেছিলাম আমি। আমি ওকে মেয়ে বলে ডাকি। ’ সূত্র: প্রথম আলো.....http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-06-02/news/262654 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।