আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চা-শ্রমিক দিবস ও তাদের ন্যায্য দাবি।

চোখে যা দেখি, কানে যা শুনি, তা নিয়ে কথা বলবোই ! ১৯২১ সালের ২০শে মে চা বাগান মালিকদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কাছাড় ও সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা শ্রমিক বিদ্রোহ করে নিজেদের জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে চা বাগানের মালিকদের সহায়তায় একদল ব্রিটিশ বোর্খা সেনারা নির্বিচারে গুলি করে বেশ কয়েকজন চা শ্রমিককে হত্যা করে। এর পর থেকে ওই দিনটি চা-শ্রমিকের "চা-শ্রমিক দিবস" হিসেবে পালন করে আসছে। ব্রিটিশ বোর্খা সেনার গুলিতে সিলেটের কোন বাগানে কত জন শ্রমিক মারা গিয়েছে তার হিসেব নেই। তাই তাঁরা অস্থায়ী শহিদ মিনার স্থাপন করে দিবস্টি পালন করে।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে বিগত ২০শে মে ২০১২ চা-শ্রমিক দিবস পালন করা হয়। সকাল সাতটায় সিলেটের সব চা বাগানের অস্থায়ী শহিদ মিনার স্থাপন করে পুষ্প স্তবক অর্পন করার মধ্য দিয়ে দিনের সূচনা করা হয়। বিকেলে মালনিছড়া চা বাগানের পূজা মন্ডপে আলোচোনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। আলোচোনা সভায় চা-শ্রমিকের নেতারা মালিক ও সরকারের প্রতি কয়েক দফা দাবি বাস্তবায়নের আহবান জানান। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ১) ২০শে মে রাষ্ট্রীয়ভাবে চা-শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন এবং ওইদিন চা-বাগান ছুটি ঘোষনা করা।

২) চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরী ২০০ টাকা নির্ধারণ করা। বিগত ৩১শে মে.২০১২ তারিখে বিভিন্ন চা বাগানে শ্রমিকেরা ধর্মঘটের ডাক দেয় । তাঁরা সকাল থেকেই মজুরী বৃদ্ধি, ছুটি, চুক্তি নবায়নসহ বিভিন্ন দাবী জানিয়ে বাগানে ধর্মঘট ও সবাবেশ করেছে । শ্রমিকদের বর্তমান দৈনিক ৪৮ টাকা মজুরী দেওয়া হয়। এছাড়াও তাঁদের দেয়া হচ্ছে রেশনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ।

কিন্তু শ্রমিকদের দাবি, এ মজুরী, রেশন এবং সুযোগ-সুবিধা বর্তমান উর্ধগতির বাজারে অপ্রতুল । ফলে শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরে মজুরী দৈনিক ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা করা, রেশন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবী জানিয়ে আসছে । তাঁরা ২১শে জুন.২০১২ মধ্যে দাবী না মানলে লাগাতার ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে । চা শ্রমিকেরা দিন দিন তাঁদের নিজস্ব পেশা হতে সরে যাচ্ছে। মেয়েরা শহরের বিভিন্ন বাসা বারীতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছে আর ছেলেরা মটর ড্রাইভার, মটর মেকানিক প্রভৃতী কাজ শিখে মূল পেশা থেকে বিচ্যুত।

চা শ্রমিকদের প্রতি চা বাগান মালিক ও সরকারের নিদারুণ অবহেলার জন্য অচিরেই চা শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দিতে বাধ্য। চা শিল্প রুগ্ন শিল্প হিসেবে চিহ্নিত হোক তা কারো কাম্য নয়। চা বাগানের মালিকেরা দিন দিন ফুলে ফেঁপে উঠবে আর শ্রমিকেরা দিনকে দিন রুগ্ন হয়ে থাকবে এটা শিল্পের ধর্ম নয়। গার্মেন্টস শিল্পের দিকে তাকান, অল্পতেই শ্রমিকেরা কিভাবে গর্জে উঠে। চা শ্রমিকরা গর্জে উঠার আগেই তাঁদের সাথে আলাপ আলোচোনা করুন।

এ সরকারের বড় একটা ভোট ব্যাংক বলে খ্যাত চা শ্রমিকেরা। সিলেটের অর্থমন্ত্রি, শ্রীমঙ্গলের চিফ হুইফ তার প্রমাণ। আপনাদের ভোটারদের বাঁচান। চা-শ্রমিক ইউনিয়ন দুটোকে একত্র করে মজুরী সহ অন্যান্য ন্যায্য দাবিগুলো সম্পর্কে আলোচোনা করুন। সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।