আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যাদু

( একবার এক যাদুকর আড্ডা দিচ্ছেন তার কিছু ভক্তদের নিয়ে । হঠাৎ এক ভক্ত যাদু সম্পর্কে জানতে চাইলো । যাদুকর বর্ণনা দেয়ার সময় বার বার ধর্মকেই টানছিলেন । তখন আরেকজন বললেন, আপনি যাদুর কথা বলতে গিয়ে ধর্মকে টানছেন কেনো ? যাদু হচ্ছে মানুষের চোখের ফাঁকি । আর ধর্মতো ধর্ম ।

তখন যাদুকর বললেন, যাদুর কথা বলতে গেলে ধর্মকে আনতেই হবে । কারণ যেদিন থেকে ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে সেদিন থেকেই যাদুর উৎপত্তি হয়েছে । দুটোই এতো জটিল যে, ব্যাখ্যায় দাঁড় করানো যাবে না । লজিক যেখানে অসহায়। তাই ধর্ম ও যাদু দুটোই টিকতে পারে অন্ধ বিশ্বাস দিয়ে ।

) প্রকৃত সত্য এবং যাদু একে অপরের বিপরীত । যাদু মিথ্যা ও প্রতারণার উপরে প্রতিষ্ঠিত । যা মিথ্যা যা অশুভ তা প্রতারণার সাহায্যে নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে । কিন্তু তা কখনও স্থায়ী হতে পারে না । সত্য শেষ পর্যন্ত প্রকাশ হবেই ।

আপাতঃ দৃষ্টিতে মিথ্যাকে ন্যায় সঙ্গত মনে হলেও তার স্থায়ীত্ব ক্ষণস্থায়ী । সত্যের আলোয় মিথ্যার অন্ধকার দূরীভূত হতে বাধ্য । এ কথা পৃথিবীতে সর্বকালে সর্বযুগের জন্য সত্য । যখন যাদুকরেরা তাদের লাঠি ভূমিতে নিক্ষেপ করলো, তাদের যাদু বিদ্যার বলে, লাঠি সাপে পরিবর্তিত হয়ে গেলো । কিন্তু হযরত মুসার (আ) অলৌকিক ক্ষমতার কাছে তাদের যাদুর খেলা ছিলো ছেলে খেলার সামিল ।

কারণ মুসার (আ) ক্ষমতার পিছনে আল্লাহ্‌র ক্ষমতা নিহিত ছিল- যা ছিল প্রকৃত সত্য । বাংলাদেশে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে বহু ব্যক্তি নিজেকে দাবী করে- যারা নিজেকে পীররূপে প্রতিষ্ঠিত করে । এদের বহুভক্ত বা মুরীদ আছেন । পবিত্র কুরআনের শেষ দুটি সূরায় যাদুর প্রসঙ্গ এসেছে । কুরআনের শেষ সূরা নাসে খান্নাসের কু-মন্ত্রণা থেকে আল্লাহ পানাহ চাইতে বলা হয়েছে ।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, মানুষের সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয় সাতটি অপকর্ম, তন্মেধ্যে একটি হচ্ছে যাদু করা । ভারত বর্ষের বিখ্যাত জাদুকর পি. সি. সরকার ( প্রতুল চন্দ্র সরকার ) জন্ম: ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯১৩, মৃত্যু: ৬ জানুয়ারি ১৯৭১ । জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের অশোকপুর নামে ছোট্ট একটা গ্রামের কুঁড়ে ঘরে । প্রচণ্ড দারিদ্রের মধ্যে কাটে তার শৈশব । তিনি বলেন- আমি চিরজীবন শুধু ম্যাজিকের জগতেই বসবাস করেছি ।

স্বপ্নের রঙ গায়ে মেখে জীবন কাটিয়েছি । পৃথিবীর বহু দেশেই আমি গিয়েছি, সেখানকার মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেছি । যতই তাদের নৈকট্য বেড়েছে, আমি নিজের দেশকে আরো বেশি করে শ্রদ্ধা করতে, চিনতে পেরেছি । আমি পুরোপুরিভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি যে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দেশ ভারত । পিসি সরকার, নিজেই বলেছেন, ম্যাজিক একটা শিল্প ।

এতে বিজ্ঞান, টেকনোলজি, শারীরিক দক্ষতা আর শোম্যানশিপ সব-ই লাগে । কোনো অলৌকিক কিছুই নেই । বাপ-ছেলে দুজনেই বিখ্যাত যাদুকর । প্রতুলবাবুকে অনেক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বিখ্যাত যাদুকর হতে হয়েছে । তিনি একটি মেস বাড়িতে থাকতেন ।

ম্যাজিক দেখিয়ে সংসার চালান দুঃসহ হয়ে উঠেছিল । গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারতেন না তিনি । লোহালক্কড়ের তাঁর এক ব্যবসায়ী বন্ধু সহ্য করতে না পেরে গ্রামে একটি মাস্টারি চাকরির ব্যবস্থা করলেন । ঠিক সেই সময়ে আর একটি চিঠি এসে হাজির । চিঠিতে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের গভর্ণরের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে যাদুকর হিসেবে প্রতুলবাবুকে ।

আর চাকরি করা হল না তাঁর । ম্যাজিক সম্বন্ধেও জুনিয়র পি. সি. সরকারের কাছ থেকে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় । ‘ম্যাজাই’ থেকে ‘ম্যাজিক’ শব্দের উৎপত্তি । ম্যাজিকের অপর নাম পান্ডিত্য । বিশ্বকবির ভাষায়- “যেটা যা হয়েই থাকে, হয় না যা, তা-ই হল ম্যাজিক ট্রফি” ।

শিল্পকে তিনি দুভাগে ভাগ করেছেন । একদিকে কলকারখানা অর্থাৎ ইন্ডাসট্রিয়াল শিল্প ,অন্যদিকে আছে প্রতিভা শিল্প । অন্তর্জগতের বহিঃপ্রকাশই হল প্রতিভা শিল্প । কবিতা, গান, ছবি আঁকা প্রভৃতি প্রতিভাশিল্পের অন্তর্গত । উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনও একটি কলমের কালি দিয়ে একটি সুন্দর ছবি আঁকা হল ।

এর কৃতিত্ব কলমের নয়, যিনি ছবিটি এঁকেছেন কৃতিত্ব তাঁর । এই প্রতিভাশিল্পের চরম বিকাশ হল ম্যাজিক । যে খুব ভাল তবলা বাজায়, তাকে তবলার যাদুকর বলা যায় । এভাবে ফুটবলের যাদুকর, হকির যাদুকর প্রভৃতির উল্লেখ করা যায় । সবার জীবনের স্বপ্ন হল যাদুকর হবার, জগতের যাদুকর হবার ।

কিন্তু সবাই পারে না যাদুকর হতে । পৃথিবীর সেরা যাদুকর ঈশ্বর-প্রকৃতি । যিনি প্রকৃতি, তিনিই ঈশ্বর । তিনি মহাজাগতিক । তাঁকে আঁকাও যায় না, ভাবাও যায় না ।

শুধুমাত্র কল্পনা করা যায় । ম্যাজিক হল এক ধরনের বিজ্ঞান, বুদ্ধিসত্ত্বার পরিচয় বহনকারী ঘটনা । প্রদীপবাবুর মতে, একজন বিখ্যাত যাদুকর ছিলেন চীনদেশের কনফুসিয়াস । তাঁর কথাবার্তা শুনে সবাই ‘কনফিউস’ হয়ে যেতেন । মাথা চুলকে চিন্তা করতে হত সবাইকে ।

সব মনের কথা তালগোল পাকিয়ে যেত । তাঁর কথায়ই সবাইকে সায় দিতে হত । ম্যাজিক করতে গিয়ে বহু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি । কোনও পুরস্কারই তৃপ্তি দিতে পারেনি তাঁকে । যে ঘটনাটি আজও তাঁকে তৃপ্তি দেয় তা হল, ১৯৬৯সালে কলামন্দিরে তাঁর শো, প্রতুলবাবুর লুকিয়ে দেখা ।

ফিরে এসে মাকে বাবা বলেছিলেন, “এবার আমি নিশ্চিন্তে মরতে পারি”। বেদনাদায়ক এটাই তিনি ঘটনাটি জানতে পেরেছিলেন বাবার মৃত্যুর কয়েকমাস পর মায়ের মুখ থেকে । তাঁর তিন মেয়ে পরমা, পূর্বিতা ও প্রতীতী । শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধি বড় মেয়ের নাম দিয়েছিলেন মানেকা । মানেকা সংস্কৃত শব্দ, যার অর্থ মায়াবিনী ।

প্রদীপবাবুর প্রবল ইচ্ছা যেন এদের গর্ভেই জন্ম নেন তাঁর পিতা-মাতা । জুয়েল আইচ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত যাদুশিল্পী, বাঁশী বাদক ও চিত্রশিল্পী । দেশের শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি ইউনিসেফের অ্যাডভোকেট হিসেবে কাজ করছেন । জাদুর প্রতি তাঁর ভালোবাসাটা উন্মাদনায় পরিণত হয় সিরাজগঞ্জের জাদুকর আবদুর রশিদের জাদু দেখে, আর বন্দে আলী মিয়ার রূপকথা পড়ে । একটু একটু করে জাদু শিখতে লাগলেন তখন থেকেই, নানাজনের কাছে ।

তাঁর বিখ্যাত জাদু_কাগজ থেকে ডলার বানানো, চোখ বেধে গাড়ি চালানো, কাটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জোড়া লাগানো ইত্যাদি । MAGIC মানে যে “বুদ্ধিমান লোকের কাজ” । কালো ম্যাজিক(black magic)ব্যবহার করা হয় কারও অনিষ্ট করতে । ফসল নষ্ট,কারও রোগ বা মৃত্যুর জন্য এমন কাজে । ইন্দোনেশিয়ার সমুত্রা দ্বীপে একটা এমন একটা যাদু বিধান আছে-------কোন নারীর সন্তান হচ্ছে না, তখন করা হয় কি একটা কাঠের ছোট শিশু বানিয়ে নি:সন্তান রমনীটি কোলে বসিয়ে আদর করে ! এর ফলে তার সন্তান হবে এমন ভাবা হয় ! প্রাচীন হিন্দু সমাজে জন্ডিস (পান্ডুর) রোগের চিকিৎসার জন্য মন্ত্র পাঠ করে রোগীর চোখের হলুদ অংশ সূর্যের কাছে পাঠানো হত ! যাদুবিদ্যার প্রাচীন ইতিহাস যদি আমরা খুজে দেখতে চাই তাহলে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে সেই প্যালিওলিথিক যুগের গুহামানবদের গুহাচিত্রের দিকে ।

প্রাচীন ধর্ম গ্রন্থ গুলোতেোও নানা আঙ্গিকের যাদুবিদ্যা চর্চার প্রমাণ পাওয়া যায় সমসাময়িক ধর্মগুরু আর জনগনের ! হযরত মুহাম্মদ স এর নবুয়ৎ প্রাপ্তির আগ পর্যন্ত সেমেটিক জাতি গুলোর মধ্যে ব্যাপক ভাবে যাদুবিদ্যা চর্চার প্রমাণ পাওয়া যায় ! তবে যাদুবিদ্যায় যারা সবচাইতে বেশি ভূমিকা রেখেছে তারা হলো প্রাচীন মিশরীয়রা । যাদুবিদ্যার দেবী হেকেটি । শয়তানের প্রতিক হলো শিং। ব্লাক ম্যাজিক চর্চায় শিং অপরিহার্য ! যাদুর উৎপত্তি স্থল সম্পর্কে। বলা হয়, যাদুর উৎপত্তি বাবিল নামক স্থান থেকে ।

বাবিল হচ্ছে, ইরাকের একটি জায়গা । ইতিহাস এই শহরটিকে বেবিলন সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে স্বরণ করে । ধর্ম বা যে কোন কিছুকেই টিকিয়ে রাখা যায় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে । যাদুও টিকে যায় বিশ্বাসের উপর । হয়তো তা কুসংস্কার আবার হয়তো তার অস্তিত্ব আছে ।

ধর্মে বলা হচ্ছে অস্তিত্ব আছে । যুক্তি তর্কে ধর্ম বিশ্লেষণ করতে গেলে তা ধ্বসে পড়বে আর তাই ধর্মও টিকে আছে অন্ধ বিশ্বাসের উপর । আরজ আলী মাতুব্বর বলেছেন, বিজ্ঞান প্রত্যক্ষ ও অনুমানের উপর প্রতিষ্ঠিত, তাই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে আমাদের সন্দেহ নাই । বিজ্ঞান যাহা বলে, তাহা আমরা অকুন্ঠচিত্তে বিশ্বাস করতে পারি । কিন্তু অধিকাংশ ধর্ম ও ধর্মের অধিকাংশ তথ্য অন্ধ বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত ।

অতীতে অনাবৃষ্টি,মহামারী,সন্তানের মৃত্যু,রোগশোক এসব দূর্ঘটনাকে অলৌকিক শক্তির কাজ মনে করত । পানি ছিটিয়ে জমিতে নাচত-বৃষ্টির জন্য । বিভিন্ন আচার ও রীতি পালন করে অলৌকিক শক্তির কাছে চেয়ে নেয়াই ম্যাজিক বা যাদু । ছোট বেলায় আমিও উড়ার চেষ্টা করতাম কিন্তু আমি পারি নাই , মানুষ কি উড়তে পারে ???? একজন পারে বলুন ত কে ? এই ম্যাজিক টা দেখে আমি রীতিমতো অবাক কি ভাবে David Copperfield উড়তে পারেন !! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।