আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পলাশি, বেইমানি এবং আমাদের শিক্ষণীয়

অবিলম্বে আমাদের দেশের সংসদ কে ১৮+ ঘোষণা করা হোক ;) আজ ছিল ২৩ জুন ! ১৭৫৭ সালের আজকের এই দিনে কতিপয় বেঈমানের কারণে বাংলা হারিয়েছিল তার স্বাধীনতার সূর্য ! বাংলা বিজয়ের মাধ্যমেই ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশে তাদের দখলদারিত্ব শুরু করে ! কিন্তু, আপনি কি জানেন কোন ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই বাংলায় তাদের আসন গেঁড়েছিল ?? বাংলায় কিসের লোভে তারা এসেছিল ?? কি পরিণতি হয়েছিল পলাশীর বেঈমানদের ?? আজ আপনাদের সেই ইতিহাসই বলবো ?? দিল্লিতে সম্রাট শাহজাহান যখন মোগল সিংহাসনে অধিষ্ঠিত, তখন তার প্রিয় কন্যা জাহানারা মারাত্মকভাবে অগ্নিদগ্ধ হন। দিল্লির হাকিম ও কবিরাজেরা তার চিকিৎসায় ব্যর্থ। এক পারিষদ মুমূর্ষু জাহানারাকে একজন ইংরেজ ডাক্তার এনে দেখানোর পরামর্শ দিলেন। সুরাটে ইংরেজদের কাছে সম্রাট দূত পাঠালে ইংরেজরা সে সুযোগ হাতছাড়া না করে বিলাত থেকে সদ্য আগত এক জাহাজের প্রধান চিকিৎসক ডা: গাব্রিয়েল বাউটনকে দিল্লি পাঠায়। তার চিকিৎসায় সম্রাট দুহিতা সুস্থ হয়ে উঠলেন।

কৃতজ্ঞ সম্রাট বাউটনকে বললেন, তিনি যে পুরস্কার চান তাই পাবেন। দেশপ্রেমিক ইংরেজ ডাক্তার নিজের জন্য কিছু না চেয়ে বললেন, সম্রাট খুশি হয়ে যদি কিছু দিতে চান তবে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সুবে-বাংলায় বাণিজ্য করার অনুমতি দান করুন। সম্রাট ইংরেজ ডাক্তারের প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন। এই সিদ্ধান্ত ভারতবর্ষের সবচেয়ে সমৃদ্ধ অঞ্চল সুবে-বাংলা এবং কালক্রমে সমগ্র দেশের জন্য কী ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে, তিনি হয়তো ভাবতেও পারেননি। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলার প্রতি ইংরেজদের এত লোভ ছিল কেন ?? তাহলে দেখুন, ফরাসি পর্যটক বার্নিয়ের বাংলা সম্পর্কে কি বলেছিলেন ?! তিনি বলেছিলেন, "বাংলা এতই সম্পদশালী ছিল যে, এখানে একটি প্রবাদ চালু ছিল ।

আর তা ছিল, বাংলায় প্রবেশের দরজা অসংখ্য.. কিন্তু বের হওয়ার দরজা একটিও নেই" ! ঐতিহাসিক ও পর্যটক আলেকজান্ডার ডো লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দাঁড়িপাল্লা বাংলার অনুকূলেই ভারী ছিল এবং বাংলা একমাত্র পাত্র ছিল যেখানে সোনাদানা এসে শুধু জমত, তার কিছুই বের হতো না’। এমনকি, ১৭৩৫ সালের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নথিপত্রে বলা হয়েছে, সারা ভারত বর্ষের মধ্যে বাংলাই হচ্ছে একমাত্র সস্তা গণ্ডার প্রাচুর্যে ভরা দেশ। ঐ সম্পদের লোভেই ইংরেজেরা বাংলায় এসেছে, বাণিজ্যের নামে এসে কুঠি গেড়েছে, বন্দর নির্মাণ করেছে। ‘পণ্যের বিনিময়ে পণ্য কিংবা পণ্যের বিনিময়ে উপযুক্ত মূল্য’ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অর্থে, সৎ বাণিজ্য করতে এ দেশে আসেনি, এসেছিল নির্জলা লুণ্ঠনের জন্য। সম্পদ ও সম্পত্তি রক্ষার নামে ওরা গড়ে তুলেছে নিজস্ব সামরিক শক্তি।

এদেশীয় সরকারের প্রতি ছিল না তাদের কোনো আনুগত্য। তারা মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে স্থানীয় রাজশক্তির প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ! কোনো স্বাধীন দেশের সরকার এ অবস্থা মেনে নিতে পারে না। সুবে-বাংলার নবাবও তা মেনে নিতে পারেননি। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি সেনাবাহিনী গঠন করে নবাবের কর্তৃত্ব অস্বীকার করলে নবাবের সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশী প্রহসনের দিনে হয়েছিল একটি পাতানো যুদ্ধ।

কোম্পানির তিন হাজার ২০০ সৈন্যের ক্ষুদ্র বাহিনীর হাতে নবাবের ৬৫ হাজার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী না হয় পরাজয় বরণ করতে পারে না। ৬৫ হাজার নবাব বাহিনীর ৪৫ হাজারই ছিল বিশ্বাসঘাতক সেনানায়কদের অধীনে নিষ্ক্রিয়। মীরজাফর চক্রের ষড়যন্ত্রে সে দিন আমাদের জাতির ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। রবার্ট ক্লাইভ এ প্রসঙ্গে আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘সে দিন স্থানীয় অধিবাসীরা ইংরেজদের প্রতিরোধ করতে চাইলে লাঠিসোঁটা আর ইট মেরেই তাদের খতম করে দিতে পারত’ ! জানেন কি ?পলাশীর সেই বিশ্বাসঘাতকদের পরিণতি কি হয়েছিল ? মীরজাফরকে কুষ্ঠ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বিদায় নিতে হয়। তার ছেলে মীরণ, যে নবাবীর লোভে সিরাজউদ্দৌলার বংশের একটি ছেলেকেও জ্যান্ত রাখেনি, সে বজ্রাঘাতে প্রাণ হারায়।

দুর্লভরাম, মীরজাফর আর মীরণের হাতে নাস্তানাবুদ হয়ে পালিয়ে বেড়ায়। নন্দ কুমারকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে হয়। বারবার বিশ্বাসঘাতকতার জন্য নবাব মীর কাশেম কর্তৃক মুঙ্গের দুর্গের ওপর থেকে গঙ্গা নদীতে জীবন্ত নিক্ষিপ্ত হয়েছিল বিশ্বাসঘাতক শিরোমণি জগৎশেঠ ও রাজা রায়দুর্লভ। ওয়াটস কোম্পানির কাছ থেকে বরখাস্ত হয়ে বিলেতে পালিয়ে মনের দুঃখে সেখানে মারা গেলেন। স্ক্রাফটন জাহাজডুবি হয়ে মরলেন।

স্বয়ং রবার্ট ক্লাইভ ‘ব্যারন অব প্ল্যাসি’ হয়েও নিজের হাতে গলায় ক্ষুর চালিয়ে আত্মহত্যা করলেন। এভাবেই বেঈমানরা যুগে যুগে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত শাস্তি পেয়ে থাকে... আসুন, আমরা সবাই পলাশী থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজ দেশ, মাটি ও মানুষদের ভালোবাসি... নিজে জানুন , অন্যকেও ইতিহাস জানান সংগৃহীত ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।