আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হইচই, মাইক বন্ধ, ওয়াকআউট

অশালীন ও অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করে সংসদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার প্রতিবাদে গতকাল রোববার সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছেন সরকারদলীয় সাংসদ এম আবদুল লতিফ। এ ঘটনাকে সংসদের বিরল ঘটনা বলে মনে করছেন সংসদ পরিচালনাকারীরা।
প্রধানমন্ত্রী, তাঁর ছেলে ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিএনপিদলীয় সাংসদ রেহানা আক্তারের দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে গতকাল সংসদে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রানুর বক্তব্যের পর সরকারদলীয় সাংসদ ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি বক্তব্য দিলে ১০ মিনিটের জন্য বিরোধী দল সংসদ থেকে ওয়াকআউট করে।
বাজেটের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে আবদুল লতিফ বলেন, কয়েকজন সাংসদের বক্তব্যের কারণে সংসদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

এর প্রতিবাদে তিনি কোনো বক্তব্য না দিয়ে ওয়াকআউট করেন। তিনি অধিবেশন থেকে বেরিয়ে না গিয়ে নির্ধারিত আসন ছেড়ে অন্য আসনে গিয়ে বসেন। ওই সাংসদ বক্তব্য দেওয়ার সময় বিএনপির সাংসদেরা হাততালি দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা হাততালি দিচ্ছেন কেন? কয়েকজন সাংসদের কারণে মহান সংসদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ’
রেহানার বক্তব্য ও সংসদে উত্তেজনা: রেহানার ১৭ মিনিটের বক্তব্যের মধ্যে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ছয়বার মাইক বন্ধ করে দেন।

তাঁর বক্তব্যের সময় বিরোধীদলীয় সাংসদদের অনেকেই টেবিল চাপড়ে স্বাগত জানান। সরকারদলীয় সাংসদেরা কখনো দাঁড়িয়ে আবার কখনো টেবিল চাপড়ে প্রতিবাদ জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী অধিবেশন কক্ষে চুপচাপ বসে ছিলেন।
স্পিকার রানুকে বাজেটের ওপর বক্তব্য দিতে বারবার অনুরোধ করেন। তিনি মাইক বন্ধ করলে বিএনপির সাংসদ সৈয়দা আসিফা আশরাফী ও শাম্মী আক্তার স্পিকারের দিকে আঙুল উঁচিয়ে ‘মাইক দে মাইক দে’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।

রানুর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর স্পিকার মাগরিবের নামাজের বিরতি দেন। কিন্তু তখনো দুই দলের সাংসদেরা অধিবেশন কক্ষে দাঁড়িয়ে থাকেন। অধিবেশন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিরোধী দলের সাংসদ শহীদ উদ্দীন চৌধুরী ও মাহবুবউদ্দিন খোকনের সঙ্গে বাগিবতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন সরকারদলীয় সাংসদ জয়নাল আবেদিন ও আসলামুল হক। তবে জাতীয় পার্টির সাংসদ ফজলে রাব্বির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সরকারদলীয় সাংসদ তারানা হালিম সামনের সারিতে বসা বিএনপির দুই সাংসদ মওদুদ আহমদ এবং এম কে আনোয়ারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে কি কেউ নেই যে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেন।

’ এ সময় ওই দুই নেতা চুপচাপ বসেছিলেন।
কী বলেছিলেন রানু: ‘রক্তপিপাসু এই সরকারের পতন চাই’ বলে রানু বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য কাতান শাড়ি পরে সেজেগুজে বসেছিলেন। তিনি অপেক্ষা করছিলেন আর বলছিলেন, ‘আয় সন্ত্রাসী, আয় বাকশালী খুন করিতে যাই। লাশের মালা গলায় দিয়ে শপথ নিতে যাই।


এ সময় স্পিকার তাঁকে বিধি মেনে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলেন। জবাবে রানু বলেন, ‘আমরা এখানে সরকারের গুণগান করতে আসিনি, রবীন্দ্রসংগীত করতে আসিনি। এই সরকার গত চার বছরে করেনি এমন কোনো অপকর্ম নেই। এরা কেবল নারীকে পুরুষ আর পুরুষকে নারী করেনি। সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪-০ তে হেরেছে।

তাদের জনপ্রিয়তা তলানিতে এসে ঠেকেছে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার চাচ্ছে বিরোধী দল যেন সংসদে না আসে। কিন্তু আমরা ওয়াকআউট করব, সংসদ ছাড়ব না। সরকারের দুর্নীতির যে তথ্য আছে তা প্রকাশ করব। দুর্নীতির এই কাগজপত্র দেখালে, মতিউর রহমান রিন্টুর লেখা বইটা পড়া শুরু করলে সরকারি দলের ওনারা বান্দরের মতো লাফালাফি করবেন, কিন্তু ওয়াকআউট করতে পারবেন না।


২০ জুন সংসদে সরকারদলীয় এক সাংসদের বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে রানু বলেন, ‘এই বক্তব্য অশ্লীল, অশোভন, অন্ধকার জগতের বক্তব্য। তিনি ফেনসিডিল ও ইয়াবা খেয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে কুৎসিত ও নোংরা বক্তব্য দিয়েছেন। আমাদের নেত্রী সম্পর্কে যে বইয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন সেই ধরনের কোনো বইয়ের অস্তিত্ব নেই। তিনি আরও বলেন, ‘সংসদের এক নম্বর ব্যক্তি ঠিক হলে আমরাও ঠিক হব। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি নামাজ পড়েন আর আমাদের নেত্রীর বাসায় নাকি মদ পাওয়া যায়।

আমাদের নেত্রীকে বাড়ি থেকে বের করা হয়েছে। অর্ধেক মদ প্রধানমন্ত্রী খেয়ে বাকি অর্ধেক ওই ফ্রিজে রেখে এসেছেন। ’ প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয় সম্পর্কেও অশালীন বক্তব্য রাখেন তিনি।
স্পিকার রানুকে বিধি অনুযায়ী বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানালে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি বক্তব্য দিতে না দেন তবে সবাই আপনাকে মাজাভাঙা স্পিকার বলবে। ’
কর্নেল তাহের হত্যার রায় প্রসঙ্গে রানু বলেন, ‘এটা থাবা বাবার রায়।

এই রায় মানি না, মানব না। উচ্চ আদালত তো বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে রং হেডেড বলেছেন। তাহলে তো তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারেন না। ’ এ সময় রানু প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর বাবার সম্পর্কে অশালীন বক্তব্য দেন।
রানু বলেন, ‘দুই পুলিশ কর্মকর্তা হারুন ও বিপ্লব বিরোধী দলের চিফ হুইপকে পিটিয়েছেন।

বিপ্লব বিরোধী দলের সাংসদদের শুয়োরের বাচ্চা বলেছেন। আমরা শুয়োরের বাচ্চা হলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কী?’
বিরোধী দলের ওয়াকআউট: ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী বলেন, বিরোধী দলের একজন সাংসদ সরকারি সাংসদদের মস্তিষ্ক বিকৃত বলেছেন। আসলে ওই সাংসদেরই বিকৃত মস্তিষ্ক। তাঁর মানসিক চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘জিয়া ছিলেন অবৈধ ক্ষমতাদখলকারী একজন খুনি।

তাঁর হাত রক্তে রঞ্জিত। এই খুনি কালো চশমায় চোখ ঢেকে রাখতেন। ’
বাপ্পীর বক্তৃতার সময় বিরোধী দল ওয়াকআউট করে। অবশ্য ১০ মিনিট পর বাপ্পীর বক্তৃতা শেষ হলে তারা আবার ফিরে আসে। স্পিকার দুবার তাঁর মাইক বন্ধ করে বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখার অনুরোধ করেন।


বাপ্পী বলেন, ‘খালেদা জিয়া স্বামী হত্যার বিচার চান না। স্বামীর মৃত্যুতে কাঁদেননি। কিন্তু বাগিয়ে নিয়েছেন বাড়িসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। আদালতের রায়ে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তিনি বাড়ির জন্য কেঁদেছেন। ’
বাপ্পী আরও বলেন, ‘গর্ব মোদের আলাদা ম্যাট্রিক ফেল ফালুদা।

’ খালেদা জিয়া ওমরাহ করতে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার পাঁচটি জন্মদিন, পিতৃ ও মাতৃপরিচয় নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তারেক রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মুচলেকা দিয়ে বিদেশ চলে যান বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারেক একটি আতঙ্কের নাম। দুবাইয়ে মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম ও ছোটা শাকিলের সঙ্গে বৈঠক করে দেশকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের স্বর্গরাজ্য বানাতে চেয়েছিলেন তিনি।
বাপ্পীর বক্তব্য চলাকালে সন্ধ্যা সাতটা ৪৫ থেকে সাতটা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত সংসদ থেকে ওয়াকআউট করে বিএনপি।


এদিকে সরকারদলীয় সাংসদ প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফছারুল আমীন বলেন, ‘জিয়ার লাশ ওই কবরে নেই। এ জন্য বিএনপি কবর জিয়ারত করে না। ’ তাঁর বক্তব্য নিয়ে সংসদে আবার উত্তেজনা সৃষ্টি করে বিএনপি।
আজ সোমবার সকাল ১০টায় সংসদের অধিবেশন আবার শুরু হবে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।