আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রগতিশীল মোল্লারা ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস দিয়ে কুরআনের আয়াত ধরে দেখাচ্ছেন যে ব্লাসফেমির জাগতিক শাস্তি কুরআনে লেখা নেই। দুটি জিনিস লক্ষ্যণীয়-- Asif Shibgat Bhuiyan

হাতুড়ি মারা উচিত প্রগতিশীল মোল্লারা ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস দিয়ে কুরআনের আয়াত ধরে দেখাচ্ছেন যে ব্লাসফেমির জাগতিক শাস্তি কুরআনে লেখা নেই। দুটি জিনিস লক্ষ্যণীয়। এক, তারা কুরআনে সরাসরি দ্যর্থহীন ভাষায় যেসব শাস্তি বিধৃত আছে (যেমন ব্যভিচারের শাস্তি) সেগুলোর ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করেন না, কুরআন তাদের কাছে একটি বিধান নয়, স্বার্থ সংরক্ষণের টিস্যু পেপার মাত্র। দুই, শরি'আ কি সেসম্বন্ধে তাদের ধারণা শিশুতোষ। তারা কি মনে করেন একটি লিগ্যাল সিস্টেম হিসেবে শরি'আ শুধুমাত্রই একটি প্রাসঙ্গিক ব্যাপারে আয়াত খোঁজার ক্যুইজ প্রোগ্রাম? যখন আমরা শরি'আকে একটি লিগ্যাল সিস্টেম হিসেবে দাবী করি তখন কি আমরা এটা বুঝাই যে, উদাহরণস্বরূপ, কপিরাইট লঙ্ঘনের আইন সরাসরি কুরআনের আয়াত থেকে খোঁজা হবে।

আমরা কি এটা বুঝাই যে কুরআনে সরাসরি হ্যাকিঙের ব্যাপারে আয়াত থাকবে? অবশ্যই না। আমরা বুঝাই যে শরি'আ হচ্ছে সেই লিগ্যাল সিস্টেম যার কাঠামো কুরআন-সুন্নাহ্‌র ভিত্তিতে গঠিত, যাতে ইসলামের একাডেমিশিয়ানরা প্রতিনিয়ত ইজতিহাদ করবেন নিত্যনতুন আবির্ভুত সমস্যা নিয়ে - কিন্তু এই ইজতিহাদের ভিত্তি হবে কুরআন সুন্নাহর পুরো কর্পাস থেকে ডিরাইভ করা মূলনীতি সমূহ। যে মূলনীতি নিয়ে ইমাম শাফি'ঈ প্রায় ১৩০০ বছর আগে তার "রিসালাহ" গ্রন্থটি লিখেছিলেন, যেখানে তিনি আলোচনা করেছিলেন ঐশী নির্দেশনার ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের কাজটি কীভাবে হবে। এই বিষয়ে ইমাম শাফি'ঈ-র পর থেকে আজ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ বই লেখা হচ্ছে শুধুমাত্র লিগ্যাল সিস্টেম নিয়ে - বিধান তৈরির পাশাপাশি। তাই যখন আমরা দাবী করি যে ইসলামি আইন ১৫০০ বছর পরও অ্যাপ্লিকেব্‌ল তখন আমরা এটা মিন করি না যে প্রতিটি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে এবং আমাদের কাজ হচ্ছে কেবল ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস নিয়ে বসার।

এই বিশ্বাস তো কোনো পাগলেও করবে না। আমাদের এই আস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে কুরআন-সুন্নাহ্‌র মৌলিক নির্দেশনার পাশাপাশি লিগ্যাল সিস্টেম হিসেবে শরি'আর ক্রমবিবর্তন যা স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী নতুন নতুন সমস্যার ব্যাখ্যা তৈরি করতে পারে, ঠিক যেমনটি লিগ্যাল সিস্টেম হিসেবে সিভিল ল এবং কমন ল করে। ইন ফ্যাক্ট ব্রিটিশ কমন ল, যার আদলে বাংলাদেশের আইন কাঠামো চলে, তার মূলভিত্তি বা ইন্সপিরেশন হিসেবে শরি'আকেই চিহ্নিত করেছেন অ্যামেরিকান ল প্রফেসর John Makdisi। John Makdisi ও Shariah গুগল করে দেখুন। শরি'আর পিনাল কোডে আসা যাক।

শরি'আর পিনাল কোডকে মূলত দু'ভাগে ভাগ করা যায়। ১. হুদুদ ও ২. তা'যির। হুদুদ হচ্ছে আল্লাহ্‌র নির্ধারিত শাস্তি যা কুরআনে বা সুন্নাহ্‌তে স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে - এজন্যই একে হুদুদ বলা হয়, হুদুদ শব্দটির অর্থ বাউন্ডারি বা সীমা। এই শাস্তিগুলো হচ্ছে আল্লাহ্‌র নির্ধারিত সীমা যা লঙ্ঘন করা নিষেধ। এই শাস্তিগুলোর জন্য সাধারণ অর্থে কুরআন ও হাদীসে ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস নিয়ে বসা যেতে পারে, কিন্তু সেজন্যও স্কিল্ড জুরিস্ট দরকার, আপামর জনসাধারণের জন্য নয় এ কাজ।

অপরদিকে তা'যির হচ্ছে সেসব অপরাধ যার শাস্তি নির্ধারণের দায়িত্ব আল্লাহ্‌ মুসলিম জাজ বা ক্বাদীর কাছে ডেলিগেট করে দিয়েছেন। ক্বাদী নিজের জ্ঞান (যা কুরআন সুন্নাহ্‌র মূলনীতি সমূহের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা, এবং ক্বাদীর লজিক্যাল ডিডাকশন ও সামাজিক কল্যাণের ধারণার প্রতিফলন) দিয়ে সেগুলো যাচাই করবেন এবং উপযুক্ত শাস্তি বা রায়ের বিধান করবেন। এখানে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য লিগ্যাল সিস্টেমের মতই তিনিও শাস্তির মাত্রা ঠিক করবেন এমনভাবে যাতে অপরাধের মাত্রানুযায়ী তা ডেটারেন্ট হিসেবে বা পুনঃসংঘটনের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। মুসলিম ক্বাদী কি তা'যির হিসেবে মৃত্যুদন্ড দিতে পারেন? আমি বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডঃ 'আবদুল করীম যায়দানের "উসূল আল-দা'ওয়াহ" থেকে অনুবাদ করছিঃ "তা'যিরের মাধ্যমে কি মৃতুদন্ড আরোপ বৈধ? ইমাম মালিক বৈধতার পক্ষেই মত দিয়েছেন এবং এব্যাপারে আহমাদ বিন হাম্ব্‌ল ও আল-শাফি'ঈর অনুসারীদের অনেকেই তার সাথে মোটা দাগে একমত হয়েছেন যদিও কিছু নির্দিষ্ট ব্যাপারে তারা মতভেদ করেন। তাদের কারও কারও কাছে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী ধর্মীয় ব্যাপারে নব্য উদ্ভাবনার দিকে যারা ডাকে তাদের মৃত্যুদন্ড দেয়া বৈধ।

তবে মুসলিম চর বা স্পাইকে মৃত্যুদন্ড দেওয়াটা মালিক ও হাম্বলী মাযহাবের কেউ কেউ বৈধ করেছেন, কিন্তু আল-শাফি'ঈ তাতে বাধ সেধেছেন। আবূ হানীফার মতে কোনো কোনো ঘটনায় বা জায়গায় মৃত্যুদন্ড দান বৈধ। যেমন এমন কোনো ব্যক্তি যার পাপাচার থেকে দেশকে মুক্ত রাখা যাবে না তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া ছাড়া, তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া বৈধ। যেমন যে ব্যক্তি মুসলিম সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে, যার কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায় এই হাদীস শরীফেঃ "যদি কেউ তোমাদের কাছে এসে নির্দেশ দেয় এমন এক মানুষের অনুসরণ করতে যা তোমাদের ঐক্যকে ভাঙতে চায়, তাকে হত্যা করো। " আরেক জায়গায় আল্লাহ্‌র রাসূলকে (সাঃ) জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো এমন ব্যক্তির ব্যাপারে যে মদ্যপান থেকে বিরত হচ্ছে না, তিনি বললেনঃ "যে বিরত হচ্ছে না এই কাজ থেকে তাকে হত্যা করো।

" এটিও তা'যিরের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড দানের বৈধতাকে প্রমাণ করে। " [পৃঃ ২৯৫, প্রঃ মুআস্‌সাসাতুর-রিসালাহ, লেবানন। ] পরিশেষে, সেক্যুলার মৌলবাদীদের কাছে অনুরোধ যে একটি লিগ্যাল সিস্টেম নিয়ে তামাশা করবেন না। ব্রিটিশ ল বা সিভিল ল-এর পিনাল কোড নিয়ে প্রশ্ন উঠলে যেমন আপনি বিশেষজ্ঞের মতামত না নিয়ে বই খুলে তামাশা করেন না, একই ব্যাপার শরি'আর ব্যাপারেও খাটে। শরি'আ বুঝতে বেশ কয়েকটি শাস্ত্রের জ্ঞান আপনার থাকা চাই।

এই প্রতিটি শাস্ত্রে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যে দুই জায়গাতেই বছরে হাজার খানেক রিসার্চ পেপার বের হয়। আপনার ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস নামাতে পারেন। হেফাযতে ইসলাম হুদুদ আর তা'যিরের পার্থক্য বুঝেই তাদের দাবী তুলেছে। তারা বলেনি যে কুরআনে ব্লাসফেমারদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কারণ তারা হুদুদ দাবী করছে না, তা'যীর দাবী করছে।

হুদুদ হলে কুরআনের আয়াত অনুসরণ করতে বললেই চলত, দফা তৈরি করা লাগত না। এখন তারা যে তা'যির দাবী করছে তা সঠিক কি না তা নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে, কিন্তু সেই বিতর্ক নিরসন করতে আপনাকে একজন শরি'আ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। আনাড়ির মত কুরআনের আয়াত খুঁজলে চলবে না. ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.