আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রগতিশীল মানুষের শিক্ষাকাণ্ড মুক্তকলাশাস্ত্র

লেখালেখির কারখানা প্রগতিশীল মানুষের শিক্ষাকান্ড মুক্তকলাশাস্ত্র মুবিনুর রহমান পৃথিবীতে কত ধরনের শিক্ষাকান্ড আছে তা কি আমরা সবাই জানি? প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শিক্ষা-সংস্কৃতি-দর্শন ভিন্ন হলেও মানুষের শিক্ষা ও জ্ঞান লাভের পিয়াস একই রকম। সব দেশে সব ভাষায় মানুষ আসলে আবিস্কার করতে চায় মানুষের সত্তা। শিক্ষা মানুষকে মানুষ বানায়, বোধের চর্চায় এগিয়ে নেয় মসৃণ গতিতে। লিবারেল আর্টস একটি পাঠক্রম যা নিরপে সাধারণ জ্ঞানকে নির্দেশ করে এবং শির্থীদের যৌক্তিক চিমত্মাভাবনা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দÿতার উন্নয়ন ঘটায়। তুলনামূলক লিবারেল আর্টস সাহিত্য, ভাষা, দর্শন, ইতিহাস, গণিত এবং বিজ্ঞান সহযোগে একটি সম্মিলিত পাঠ।

পেশাদারী, কর্মমূখী এবং কারিগরী বিদ্যা যেখানে শুধুমাত্র বিশেষভাবে পারদর্শী করে তোলে সেখানে লিবারেল আর্টস মানুষের বোধের উন্মেষ ঘটায়। প্রাচীনকালের নিদর্শন থেকে জানা যায় যে লিবারেল আর্টস হচ্ছে মুক্ত মানুষের মূল্যবান শিÿক্ষা। মুক্তপ্রকাশ ও মুক্ত বিকাশের জন্য মানুষের দরকার স্বাধীনভাবে শিÿক্ষা গ্রহণ করা, যেখানে কোন কুসংস্কার, মিথ্যা, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা ও কূপমন্ডুকতা থাকবে না, সেখানে থাকবে একই সঙ্গে সাহিত্যের লালিত্য, ভাষার সৌকর্য, দর্শনের গভীরতা, ইতিহাসের সত্য, গণিতের যুক্তি এবং বিজ্ঞানের প্রামাণিকতা। এক কথায় আধুনিক, আলোর পথযাত্রী, মানবতাবাদী ও প্রগতিশীল মানুষের শিÿক্ষাকাণ্ড হলো লিবারেল আর্টস যাকে বাংলায় বলা যেতে পারে মুক্ত মানুষের বিদ্যা বা মুক্তকলাশাস্ত্র। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে ছেলেদের মতো মেয়েরাও এ শিÿক্ষা গ্রহণ করতে পারতো যেখানে সাধারণ মানুষ মেয়েদের শিক্ষাগ্রহণের বিষয়ে বিরোধী ছিল।

ছেলেরা সহজেই কারিগরী দÿতা অর্জন করতে পারতো যা ছিল আনুষ্ঠানিক কিন্তু লিবারেল আর্টসকে তথাকথিত অনানুষ্ঠানিক শিÿক্ষা হিসেবে রোমান সাম্রাজ্যে গণ্য করা হতো। মূলত মধ্যযুগের হেলেনিয় গ্রিসে বিদ্যাচক্রকে ভিত্তি করে লিবারেল আর্টস একটি আদর্শ মানদন্ডে উপনিত হয়। মূলত প্রাচীন রোমান ও গ্রিক দার্শনিকরা এই শিÿক্ষাকাণ্ডের প্রতিষ্ঠাতা। ৫ম খ্রিস্ট পূর্বাব্দে ম্যাট্রিনাস ক্যাপেলা নামের একজন বিদ্বান ৭টি লিবারেল আর্টসকে প্রথম চিহ্নিত করেন। সেগুলো হচ্ছে- ১. গ্রামার বা ব্যকরণশাস্ত্র ২. ডায়ালেকটিক বা লজিক বা ন্যায়শাস্ত্র বা যুক্তিবিদ্যা ৩. রিটোরিক বা অলঙ্কারশাস্ত্র ৪. আরিথম্যাটিক বা গণিতশাস্ত্র ৫. জিয়োমিট্রি বা জ্যামিতিশাস্ত্র ৬. মিউজিক বা সঙ্গীতশাস্ত্র এবং ৭. অ্যাস্ট্রনমি বা জ্যোতির্বিদ্যা বা আধুনিক মহাকাশবিজ্ঞান বা অ্যাস্ট্রলজি মধ্যযুগীয় পাশ্চাত্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এই লিবারেল আর্টসকে দুইভাগে বিভক্ত করা হয়েছে- ক. ট্রিভিয়াম বা শিÿক্ষা • ১. গ্রামার বা ব্যকরণ শাস্ত্র • ২. ডায়ালেকটিক বা লজিক বা ন্যায়শাস্ত্র বা যুক্তিবিদ্যা • ৩. রিটোরিক বা অলঙ্কারশাস্ত্র বা সাহিত্য খ. কোয়াড্রিভিয়াম বা চতুর্মূখী পথ •১. আরিথম্যাটিক বা গণিতশাস্ত্র •২. জিয়োমিট্রি বা জ্যামিতিশাস্ত্র •৩. মিউজিক বা সঙ্গীতশাস্ত্র এবং • ৪. অ্যাস্ট্রনমি বা জ্যোতির্বিদ্যা বা আধুনিক মহাকাশবিজ্ঞান বা অ্যাস্ট্রলজি এই বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে প্রাচীন গ্রিসের বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাকেন্দ্রে ৭টি স্তম্ভ সম্বলিত মঞ্চ বা আয়তন করা হতো।

যেখানে প্রতিটি স্তম্ভ এক একটি শাস্ত্র বা পাঠক্রমকে নির্দেশ করে। প্রাচীন গ্রিসে এমন একাধিক বিদ্যাচক্র ছিল যেখানে সাতটি সত্মম্ভ সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন ছিল এবং শিÿক্ষার্থীরা এসব স্তম্ভের নিচে বা সিঁড়িতে বসে তাদের জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা পরিচালিত করতো। আমি মনে করি যে যারা শিক্ষা অর্জন করছে তারা এক একজন আধুনিক মননশীল, যুক্তিবোধসম্পন্ন, প্রগতিশীল মুক্তমনের বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে তারা কোনো প্রশিÿÿত প্রাণীর মতো দÿ মিস্ত্রি কিংবা কারিগর হবে না, বরং সৃষ্টিশীল ও মনুষ্যত্ববোধ সম্পন্ন সংবেদনশীল নাগরিক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবে। আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকালে দেখি শিক্ষা এখানে একটি বাণিজ্যিক পণ্য আর যার অর্থ আছে সেই কেবল উৎকৃষ্ট শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়। অন্যদিকে শিক্ষার উদ্দেশ্য আমাদের দেশে পথ পরিবর্তন করে কল্যাণের বৈতরণী না হয়ে তা পরিণত হয়েছে ভাত কাপড়ের নিশ্চয়তা।

ফলে মানুষ হয়ে যাচ্ছে শুধু মানব চেহারার এক একটা যন্ত্র যার উৎপাদন দক্ষতা আছে কিন্তু কোন বোধ নেই, নেই কোন সংবেদনশীলতা। কিন্তু আমরা চাই মানুষ, মানব নামক কোন যন্ত্র না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.