আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডেইলি প্যাসেঞ্জার -পর্ব ২

স্বপ্নের ক্যানভাসে এবার একটা প্রজাপতি কিংবা রংধনু চাই শাহবাগের শিশু পার্কের সামনে হইতে ন্যাদা সাইজের দুই পিচ্চি, তাহাদের মাতা সহ বিশাল গুম্ফ বিশিষ্ট এক ভদ্রলোক তড়িঘড়ি করিয়া বাসে উঠিলেন। বলাই বাহুল্য, উনিই বিচ্ছু ( সম্ভবত জমজ) শিশুদ্বয়ের পিতা। ভদ্রলোক যতই গাম্ভীর্য বজায় রাখার চেষ্টা করিতেছিলেন , শিশুদ্বয় তাহার ঢোলকের ন্যায় ভুঁড়িতে সুড়সুড়ি আর গুম্ফ ধরিয়া টানাটানিতে তাহাকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিতেছিল। তাহাদের মাতা বার দুয়েক বালকগণ কে মৃদু তিরস্কার করিয়াছিলেন বটে কিন্তু শিশুগণ বড়ই বেহায়া। হঠাত পিতার মুঠোফোনে একটা কল আসিল।

কথোপকথন বিস্তারিত কহিতে পারিব না,তবে সারমর্ম এই যে কোন আত্মীয় হয়ত বা তাহাদের বাড়িতে আসতে চাহিয়াছিলেন, অনিবার্য কারনবশত লোকটি হয়ত তাহা চান নাই দেখিয়া মিথ্যা করিয়া বলিয়াছিলেন, ছেলেদের নিয়া শিশু পার্কে বেড়াইতে যাইতেছি, ফিরিতে রাত্রি হইবে। একটি শিশু অমনি পাশে থেকে চিৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল, বাবা তখন যে বলিলে বাড়ি যাইতেছি। মিথ্যা বলিতেছ কেন? আরেকটি শিশু বলিল, আমরা কি এখন তবে আবার শিশু পার্কে যাইব? তাহাদের মাতা তৎক্ষণাৎ তাহাদিগের ইশারা করিলেন চুপ করিতে, কিন্ত ততক্ষনে পিতা বেচারি ঘটনার আকস্মিকতায় তোতলাইতেছেন আর বলিতেছেন, ননাআ, মানে,ইয়ে আরকি,হয়েছে কি আসলে , বাসে ও ততক্ষনে হাসির রোল পড়িয়াছে ! এই ঘটনা অবলোকন করিয়া আমি যখন হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিয়াছিলাম,বিধাতাও বুঝি তখন মুচকি হাসি দিয়াছিলেন । দিন দুয়েক পরে দুপুরবেলায় অফিস ফাঁকি মারিবার মনোবাসনায় গুলশান হইতে মতিঝিলের পথ না ধরিয়া মিরপুরের পথ ধরিলাম। কি একটা কাজে আমার স্যার কল দিয়া জিজ্ঞাসিলেন, কোথায় আপনি? আমি নির্বিকার মুখে মিথ্যা বলিলাম, স্যার এখনও গুলশান পৌছাইতে পারিনাই, কি যেএএএএএ জ্যাম না স্যার !!! আর হতভাগা বাস কন্ডাকটর তক্ষুনি বাস চাপড়াইয়া হাঁকাইয়া উঠিল, ওই শ্যামলী ,শ্যামলী, যারা নামবেন গেটে আসেন ।

আমার ততক্ষনে কর্ণ দিয়া ধোয়া বাহির হইতেছে। স্যার চিবিয়ে চিবিয়ে বলিলেন,কাল অফিসে আসুন,কথা আছে। আমি এবং আমার ছোট বোন খোশগল্প করিতে করিতে বাসে যাইতেছিলাম। কিছুদূর যাইবার পর খেয়াল করিলাম, গরম বেশি লাগিতেছে, কারণ অনুসন্ধান করিয়া বের করিলাম, সামনের সিটের যাত্রী জানালাটা পুরাই ঠেলিয়া পিছনের দিকে বন্ধ করিয়া তাহার পার্শ্ব উন্মুক্ত করিয়া হাওয়া খাইতেছে হা করিয়া। আমরা জানলাটা মাঝামাঝি রাখার বারকয়েক চেষ্টা করিতেই সেই ব্যক্তি বাংলা সিনেমার ইলিয়াস কাঞ্চনের ন্যায় নাক ফুলাইয়া ঝগড়া করিতে থাকিল।

আমরা ভদ্র বালিকার ইমেজ বজায় রাখিতে এক্কেবারে স্পিকটি নট হইয়া রাগে গরগর করিতে লাগিলাম। এর মাঝে দেখি আমার বোন ব্যাগ হইতে একখানি মার্কার বাহির করিয়া ছোট নোটবুকের পেজে কিসব হাজিবাজি লিখিতে লাগিল। লেখা শেষ হইলে তাহা একের লেজে এক জোড়া লাগাইয়া বিশালাকার লেজ বানাইল। সামনের ঝগড়ুটে লোকটির ঢুলুনির সুযোগে শার্টের পিছনে কলারের ঝুলন্ত অংশে সেফটিপিন দিয়া সাবধানে আটকাইয়া দিল। পরের স্টপেজে যখন লোকটি নামিল, বাসের অন্যান্য যাত্রীরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করিল, লোকটার পিছে মার্কার দিয়ে লেখা - " হাট্টিমাটিম টিম আমি বাসে পাড়ি ডিম এতক্ষন দিলাম তা, ফুটবে এবার ছা " ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.