আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাতোশি কন: দ্যা ইউনিক মাস্টারমাইন্ড

© এই ব্লগের কোন লেখা আংশিক বা সম্পূর্ণ আকারে লেখকের অনুমতি ব্যতীত অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবে না। আমি জাপানীজ অ্যানিমি তেমন একটা দেখি না, আসলে খুব একটা হজম হয় না আরকি, টানা কয়েকটা দেখতে গেলে মাথার ভিতর একটু ঝামেলা বাঁধে। কারন গতবাঁধা পিক্সার কিংবা ড্রিমওয়ার্কসের অ্যানিমেশান দেখে অভ্যস্ত, সেই তুলনায় জাপানীজ অ্যানিমিগুলো টোটালি ডিফারেন্ট মেকিং প্লট, স্টাইল সবদিকেই। তবে অ্যানিমি যে একেবারেই দেখি না কিংবা পছন্দ করি না তা ঠিক নয়। খুব বেছে বেছে কিছু পপুলার মুভি দেখেছি।

আর সিরিজ বলতে খালি ডেথ নোট। আইএমডিবি টপ ২৫০ তালিকায় বেশ কয়েকটি অ্যানিমি মুভি রয়েছে। ঐগুলোই মূলত দেখা হয়েছে। আর সেগুলো দেখতে গিয়েই হায়াও মিয়াজাকি কিংবা সাতোশি কনের সাথে পরিচয়। আইএমডিবি লিস্ট কাভার করতে গিয়ে হায়াও মিয়াজাকির বেশ কয়েকটি দেখা হয়ে যায়।

Spirited Away , Princess Mononoke , Howl's Moving Castle আর Nausicaä of the Valley of the Wind সবগুলোই দেখা। হায়াও মিয়াজাকি একজন অস্থির লেভেলের ফিল্মমেকার। তার প্রত্যেকটি মুভিই একটার চেয়ে আরেকটা আলাদা এবং প্রত্যেকটি মুভির স্ট্যান্ডার্ড ভীষন ভীষন রকম ভালো। এতোবছর ধরে এইরকম মানের মুভি কনস্ট্যান্টলি আমাদেরকে দিয়ে যাওয়াটাও একটা বিশাল ক্রেডিটের ব্যাপার। তাইতো তাকে বলা হয় "Walt Disney of Japan" নামে।

মিয়াজাকির কথা আরে্কদিন হবে, আজকে বরং আমি আপনাদের এমন একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো, যিনি হয়তো হতে পারতেন জাপানীজ অ্যানিমেশানের আরেক দিকপাল,হয়তো হতে পারতেন মিয়াজাকির চেয়েও বড়ো কিছু। কিন্তু সময় তাকে সেই সুযোগ দেয় নি, ৪৬ বছর বয়সেই তাকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয়েছিলো। মাত্র ১০ বছরের ফিল্মমেকিং জীবনে তিনি দারুন কিছু মাস্টারপিস আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন, এর মধ্যে পাপরিকা অন্যতম। এই পাপরিকার থিম থেকে ইনস্পায়ারড হয়ে ক্রিস্টোফার নোলান ইনসেপশান মুভিটি বানিয়েছিলেন। সেই ফিল্মমেকারের নাম সাতোশি কন।

আজকে ওনার কথাই বলবো। প্রথমে সাতোশি কনের জীবনীটা ছোটোখাটোভাবে একটু বলে যাই। সাতোশি কন ১৯৬৩ সালের ১২ই অক্টোবর জাপানের হোকায়দোতে জন্মগ্রহন করেন। ছোটোবেলা থেকেই মনে মনে একজন অ্যানিমেটার হওয়ার বাসনা ছিলো। তাই পরবর্তীতে গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে গ্র্যাজুয়েশান শেষ করেন।

কলেজে থাকতেই manga artist (কমিকস আর্টিস্ট) হিসেবে যাত্রা শুরু করেন এবং সেইসময়েই Young Magazine আয়োজিত একটা আর্ট কম্পিটিশানে রানার-আপ হন। Manga artist হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করার পর একরি অ্যানিমেশান ফিল্মে অ্যানিমেটার এবং একজন লেআউট আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে যথাক্রমে সুপারভাইজার আর স্ক্রিপ্টরাইটার হিসেবে এমনকি আর্ট ডিরেক্টর হিসেবেও কিছুদিন কাজ করেন। এইভাবেই কেটে যায় তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলো। পরিচালক হিসেবে তার ডেব্যু হয় ১৯৯৭ সালে।

Yoshikazu Takeuchi এর নভেল Perfect Blue কে তিনি ফিল্মে রূপ দেন ঐ একই শিরোনামে। রিয়েল ওয়ার্ল্ড আর ইমাজিনেশানের একটি চমৎকার সংমিশ্রণ পাওয়া যায় সেই মুভিটিতে। মুভিটি মুক্তির পর ক্রিটিক্যালি বেশ অ্যাক্লেইমড হয় এবং বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরষ্কৃত এবং সমাদৃত হয়। এরপর সাতোশি কন Yasutaka Tsutsui এর জনপ্রিয় নভেল পাপরিকাকে নিয়ে মুভি বানাতে চান, কিন্তু ঐসময় Perfect Blue এর ডিস্ট্রিবিউশান কোম্পানি Rex Entertainment ব্যাঙ্করাপ্ট হয়ে যায়। তাই ঐ প্রজেক্টটি ভেস্তে যায়।

এরপর ২০০২ সালে মুক্তি পায় সাতোশি কনের দ্বিতীয় মুভি Millennium Actress, মুক্তির পরপরই এটি ক্রিটিক্যালি এবং ফিনানসি্য়ালি দুই ক্ষেত্রেই ব্যাপক সাফল্য পায়। ২০০৩ এ আসে Tokyo Godfathers, ২০০৪ সালে সাতোশি কন ১৩ পর্বের Paranoia Agent নামের একটি টেলিভিশান সিরিজ বের করেন। অবশেষে ২০০৬ সালে তিনি বের করেন তার খুব পছন্দের প্রজেক্ট পাপরিকা,যেটি তিনি অনেক বছর ধরেই নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। পাপরিকা ছিলো তার পরিচালিত সবচেয়ে বেশি ব্যবসাসফল এবং সবচেয়ে প্রশংসিত মুভি। ২০০৭ সালে চ্যানেল NHK এর আন্ডারে একটি টেলিভিশান সিরিজের জন্য কাজ করেন এবং সেই বছরই Japan Animation Creators Association (JAniCA) নামের একটি অ্যসোসিয়েশান তৈরি করেন।

তার পরবর্তী মুভি The Dream Machine এর কাজ করার সময় ২০১০ সালে টার্মিনাল pancreatic cancer এ আক্রান্ত হন। ডাক্তাররা তাকে জানান, মাত্র ছয় মাসের মতো সময় আছে, এরপরেই তিনি মারা যাবেন। এরপর কন তার বাকি জীবনটা নিজের বাসাতেই কাটিয়ে দেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি একটি মেসেজ কম্পোজ করে যান, যা মৃত্যুর সময় তার ব্যাক্তিগত ব্লগে আপলোড করা হয়। তার মৃত্যুর ব্যাপারটা সাধারন মানুষের কাছে খুবই শকিং এবং সারপ্রাইজিং ছিলো।

কারন রিসেন্ট পাবলিক ইভেন্টগুলোতে তাকে দেখে কেউ আঁচ করতে পারেন নি যে সাতোশি কন এতোটাই অসুস্থ। অবশেষে ২০১০ সালের ২৪ আগষ্ট মাত্র ৪৬ বছর বয়সে টোকিয়োতে মৃত্যুবরন করেন। তার মৃত্যুর পর তার নিজ আদেশে দ্যা ড্রিম মেশিনের স্ক্রিপ্ট আর কিছু ডিরেক্টোরিয়াল টেপগুলো Studio Madhouse এ দিয়ে দেওয়া হয় এবং মুভিটি এখনো নির্মাণাধীন রয়েছে,এই প্রজেক্টটি অর্থনৈতিক সমস্যায় বেশ কিছুটা বাধাগ্রস্থ হলেও এ পর্যন্ত ১৫০০ শটের মধ্যে ৬০০ টি শট অ্যানিমেটেড অবস্থায় রয়েছে। যারা সাতোশি কনের জীবনের শেষভাগের সেই কম্পোজড ম্যাসেজটি পড়তে চান, নীচের লিংকটি থেকে পড়ে নিতে পারেন, লিংক: Click This Link সাতোশি কনের সবকটি মুভিই আমি দেখেছি, খালি টিভি সিরিজ Paranoia Agent টি দেখা বাকি রয়েছে। এই পোস্টে তার পরিচালিত সবকটি মুভি নিয়েই ছোটোখাটো আলোচনা করবো, পোস্টের সুবিধার্থে রিলিজ ইয়ারের ক্রমানুসারেই দিলাম, ১।

Perfect Blue : নর্মালি সাতোশি কনের মুভিগুলোর জেনারের প্যাটার্ণটা কিছুটা এক ধাঁচের। মিস্ট্রি থাকবে, ফ্যান্টাসি থাকবে, আর গোটা মুভিটাতে অ্যাডভেন্চারের বেশ ভালো একটা টাচ থাকবে, আর কল্পনা আর বাস্তবের খেলাতো থাকবেই। Perfect Blue ঠিক ঐরকমই। আর কনের মুভিগুলোর রানিংটাইম খুব একটা বড়ো না। সবই ৯০ মিনিটের কাছাকাছি।

এই ছোট্ট টাইম স্প্যানের তুলনার কাহিনীটা বেশ ধোঁয়াটে। মুভিটাতে দেখবো, একজন জনপ্রিয় ইয়ং পপ স্টার মিমা তার গানের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে অভিনয়ের জগতে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইছে। কিন্তু সেই অভিনেত্রী হওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এক ক্ষ্যাপাটে ভক্ত। একদিকে অভিনয় ইন্ডাষ্ট্রির হাজারো বাঁধা,তার জন্য ডেসপারেশান, আরেকদিকে গানের ক্যারিয়ার ছেড়ে অভিনয় জগতে আসার পিছনে মনের ভিতর বাসা বাঁধা সীমাহীন দ্বন্দ, সেই সাথে অভিনয়ের সেটে ঘটে যাওয়া কিছু মর্মান্তিক দূর্ঘটনা----সবমিলিয়ে কল্পনা আর বাস্তব মিলেমিশে বেশ পীড়াদায়ক হয়ে উঠে মিমার জন্য। মাঝেমাঝে নিজের অস্তিত্বে নিজেই দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে মিমা।

মুভিটি ১৯৯৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রিলিজ পায়। গোটা মুভিটি বেশ কনফিউজিং। অবশ্য এই টাইপ কনফিউশান সাতোশি কনের ট্রেডমার্ক স্টাইল। রিয়েলিটি আর ইমাজিনেশানের দারুন কিছু মিক্সচার পাওয়া যায় তার প্রত্যেকটি মুভিতে। এই মুভিটিও কোনো অংশে কম নয়।

পুরো মুভিটিতে অনেক জায়গায় খটকা লাগতে পারে। আসলে পরিচালকের উদ্দেশ্যই ছিলো ঐরকমই। মিমার সাথে সাথে আপনি নিজেও কনফিউজ হয়ে যাবেন। violence and nudity, and for brief language এর জন্য মুভিটিতে Rated R এর ট্যাগলাইন রয়েছে। তাই কাউকে সাজেস্ট করার আগে একটু ভেবে দেখবেন।

মুভিটি রানিংটাইমের অনুপাতে যথেষ্ট স্মার্ট এবং বেশ ভাবনার উদ্রেক করে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, সাদামাটা প্লট দিয়ে শুরু হলেও মুভির কন্টিনিউটি খুব দ্রুতই সম্পূর্ণ অন্যদিকে মোড় নেয়। এই মুভিটির এক্সপ্ল্যানেশান নিয়েও বেশ ভালো বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই নিজের মতোন করে ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নেন। আশা করছি যারা মুভিটি দেখেছেন কমেন্ট সেকশানে তাদের সাথে বেশ ভালো একটা আলোচনা করা যাবে।

মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৭.৫/১০, আমার পার্সোনাল রেটিংও ৭.৫/১০। ডাউনলোড লিংক: স্টেজভ্যু :- http://stagevu.com/video/ggkovsffujny অথবা, http://rapid4me.com/?n=Perfect+Blue ২। Millennium Actress : এটি সাতোশি কনের নির্মিত দ্বিতীয় মুভি। এটি কনের আরেকটি মাস্টারপিস মুভি। ২০০২ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাপানে এটি মুক্তি পায়।

রানিংটাইম ১ ঘন্টা ২৫ মিনিটের মতো। মুভির কাহিনী গড়ে উঠে, একজন ৭০ বছর বয়সী অভিনেত্রী, (যিনি ছিলেন একসময়ের হার্টথ্রুব নায়িকা কিন্তু একটা সময় পর তিনি অভিনয় জগত থেকে অবসর নেন এবং টোটালি পর্দার অন্তরালে চলে যান, অনেকটা সুচিত্রা সেনের মতো ) যিনি দীর্ঘ ৩০ বছর পর এই প্রথম একজন টিভি ইন্টারভিউয়ার আর ক্যামেরাম্যানের কাছে তার ক্যারিয়ার নিয়ে স্মৃতিচারন করছেন। আর সেই স্মৃতিচারনের প্রকাশভঙ্গীটা খুবই অভিনব উপায়ে দেখিয়েছেন পরিচালক কন। সেইসব ঘটনার মেলবন্ধনের মূলে ছিলো অদ্ভূত একটি রোমান্টিক গল্প, যেটি মুভিটির মিস্ট্রিটাকে আরো জমিয়ে তুলে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি জায়গায় ছোটোখাটো হিউমার আর লাফটার ইন্সিডেন্ট মুভিটাকে আরো উপভোগ্য করে তোলে।

মুভিটির চালিকাশক্তি হলো, এর আউটস্ট্যান্ডিং স্টোরিটেলিং। স্মৃতিচারনের ঘটনাগুলোর একটির সাথে আরেকটির জোড়া লাগানোটা খুবই দুর্দান্ত লেভেলের। এইখানেও রিয়েলিটি আর ইলিউশানের আরেকটা চমকপ্রদ মিশ্রণ চোখে পড়ে। সেইসব ঘটনার মাঝে সেই ইন্টারভিউয়ার আর ক্যামেরাম্যানের উপস্থিতি সেটাতে আরেকটি মাত্রা যোগ করে। আর সবশেষে এন্ডিংয়ে দারুন একটা সিম্বলিক দৃশ্যের মাঝে মুভিটি শেষ হয়।

গোটা মুভিটি একটা দারুন এক্সপেরিয়েন্স। মুভির সাউন্ডট্র্যাকগুলো খুবই মানানসই। মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৭.৮/১০, আমার পার্সোনাল রেটিং ৮.৫/১০। স্টেজভ্যু ডাউনলোড লিংক: http://stagevu.com/video/xgmpbxfztexs ৩। Tokyo Godfathers : এটি সাতোশি কনের তৃতীয় ফিচারড মুভি।

এই মুভিটি তার অন্যান্য মুভিগুলোর চেয়ে বেশ খানিকটা আলাদা। কাহিনীটাও বেশ অন্যরকম। টোকিয়োর তিনজন উদ্বাস্তু মানুষ, যাদের জীবন কাটে রাস্তায় হঠাত একদিন একটি সদ্য জন্মানো একটি শিশুকে অ্যাবান্ডন অবস্থায় রাস্তায় কুড়িয়ে পায়। তারা ঠিক করে ঐ বাচ্চাটার মা-বাবাকে খুঁজে বের করবে এবং তাকে জিজ্ঞেস করবে কি কারণে ঐ নিষ্পাপ শিশুটিকে রাস্তায় ফেলে দেয়া হলো। কারন তারা নিজেরা ছন্নছাড়া জীবন যাপন করে, তারা জানে এই ধরণের জীবনের জ্বালা যন্ত্রণা।

ঐ শিশুটির মা-বাবাকে খুঁজতে যাওয়ার পথে আসে নানান বাধা, নানান বিপত্তি। আর এইসব নিয়েই গোটা মুভিটি সামনের দিকে এগিয়ে যায়। মুভিটি ২০০৩ সালের ৮ নভেম্বর জাপানে রিলিজ হয়। মুভিটির রানিংটাইম প্রায় দেড় ঘন্টার মতো। মুভিটির কাহিনীর বাঁকে বাঁকে মানবিকতার দারুন কিছু বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাই।

শুধুমাত্র ভিজ্যুয়ালীই দুর্দান্ত নয়, গোটা মুভিটি এককথায় খুবই শক্তিশালী। গোটা মুভিটির প্লট টুইস্টগুলোতে হয়তো অনেক নাটকীয়তা রয়েছে, বিভিন্ন ঘটনার ধারাবাহিকতা দেখলে মনে হতে পারে এটি শুধুমাত্র সিনেমাতেই সম্ভব, কিন্তু তারপরেও মানবীয় গুণাবলীগুলোর দারুন কিছু সমাবেশ আছে মুভিটিতে। দারুন কিছু মেসেজও রয়েছে। আর মুভির ফিনিশিংটাও চমৎকার। এই মুভিটির বিষয়বস্তু পারফেক্ট ব্লু কিংবা মিলেনিয়াল অ্যাক্টরেসের মতো সেমি-রিয়ালিস্টিক নয়, বেশ অনেকটাই বাস্তববাদী।

মানুষ হিসেবে নিজেকে অনেক স্ট্রং করে, পরিবার-ভালোবাসা-বন্ধুত্ব নিয়ে অনেক ভাবতে শেখায়। মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৭.৭/১০, আমার পার্সোনাল রেটিং ৭.৫/১০। স্টেজভ্যু ডাউনলোড লিংক: http://stagevu.com/video/tertqwrcesrt ৪। Paprika: এই মুভিটি নিয়ে অনেকদিন আগে সামুতেই লিখেছিলাম। ঐ পোস্টটাই খানিকটা এডিট করে এইখানে তুলে দিচ্ছি।

আপনারা যারা ইটারনাল সানশাইন অফ দ্যা স্পটলেস মাইন্ড কিংবা ইনসেপশান এর মতোন মুভিগুলো মুগ্ধ হয়ে দেখেছেন, তাদের জন্য Paprika (পাপরিকা) একটা মাস্ট সি মুভি। এটি একটি সাই-ফাই মুভি, যা রিলিজ হয়েছিলো ২০০৬ সালের ২৫ নভেম্বর। মুভিটির কাহিনী বেশ জটিল। রানিংটাইম দেড় ঘন্টার মতো হলেও মাথার উপর বেশ চাপ ফেলে। কাহিনী বুঝতে বেশ কষ্ট করতে হবে, প্রথমদিকে আমি বেশ অসহায় বোধ করেছিলাম,কাহিনীতে এতো প্যাঁচ, আর জটগুলো ভীষন কঠিন।

যেহেতু, ইনসেপশান কিংবা ইটারনাল সানশাইনের সাথে তুলনা দিয়েছি, সুতরাং বুঝতেই পারছেন,সিনেমার প্লটটা স্বপ্নকে ঘিরে। এইখানে দেখা যাবে,ভবিষ্যতের জাপানের সবচেয়ে বড়ো সাইকোলজিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সায়েন্টিস্টরা ডিসি-মিনি নামক একটি ডিভাইস আবিষ্কার করেছেন,যার মাধ্যমে অন্য কারো স্বপ্নের মাঝে ঢুকে পড়ে সেই স্বপ্নকে দেখা কিংবা ভিডিও করা যায়। এই ডিভাইসটি আবিষ্কার করার উদ্দেশ্যই ছিলো যাতে করে সাইকিয়াট্রিস্টরা তাদের পেশেন্টদের স্বপ্নের মধ্যে ঢুকে রোগীর মানসিক সমস্যা সঠিকভাবে অনুধাবন এবং তার সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু বিপত্তি বাধে তখনই যখন সেই রিসার্চ সেন্টার থেকে তিনটি ডিসি মিনি ডিভাইস চুরি যায়। আর যেহেতু, ঐ ডিভাইসটির ফাংশান কিংবা প্রোগ্রাম অসম্পূর্ণ ছিলো তাই ঐ খোয়া যাওয়া ডিভাইসগুলোকে ট্রেস করা কিংবা অকেজো করার কোনো অপশান সায়েন্টিস্টদের কাছে ছিলো না।

ক্রমেই ঝামেলার পর ঝামেলা বাড়তে থাকে। কারন যে চুরি করেছে, সে অন্যদের স্বপ্নে হানা দিয়ে তাদেরকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করতে থাকে। আর এভাবেই নানান নাটকীয়তায় এগুতে থাকে কাহিনী। মুভিটির ব্যাপারে প্রথমেই বলে রাখি, ভায়োলেন্ট আর সেক্সুয়াল ইমেজের জন্য এতে Rated R ট্যাগলাইন দেয়া হয়েছে। এছাড়াও মুভিটির প্লট খুবই জটিল এবং সেটা বাচ্চারা কেন, সাধারন দর্শকদেরকেও বিমুখ করতে পারে।

সিনেমার ফ্লোটা ধরতে একটু সময় লাগতে পারে, তবে তা ধরতে পারলে বেশ উপভোগ্য। আর শেষের দিকে কাহিনীর জটও বেশ পরিষ্কার হয়ে যায়। মুভিটির অ্যানিমেশান খুবই খুবই খুবই ভালো, আর অনেক সিকোয়েন্সের আইডিয়াগুলো আউটস্ট্যান্ডিং লেগেছে। আর তার সাথে দুর্দান্ত সাউন্ডট্র্যাকতো আছেই। মুভিটির মাধ্যমে ডিরেক্টর যেনো আমাদেরকে একটা মেসেজ দিতে চাইলেন, টেকনোলোজির এতো সুদূরব্যাপী প্রসার আর আমাদের জীবনে যেই পরিমান প্রভাব ফেলছে তা আসলেই খুবই স্পর্শকাতর হয়ে যাচ্ছে।

টেকনোলোজীর সবচেয়ে বড়ো অসুবিধা হলো, এইটা ভালো কিংবা মন্দ উভয়ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা যায়, ভালো কাজে যেমন আশীর্বাদ তেমনি খারাপ কাজেও তা অভিশাপ হয়ে আসতে পারে। আর তাছাড়া টেকনোলোজীর ব্যাপকতা আমাদের সংবেদনশীল জায়গাগুলোতে ঢুকে পড়ছে। একটা মানুষের একান্ত ব্যাক্তিগত জিনিস হতে পারে তার স্বপ্নগুলো,সেই স্বপ্নগুলোর প্রাইভেসী যখন টেকনোলজির হাতে নিয়ন্ত্রিত হয় ---এর চেয়ে দূর্ভাগ্যজনক আর কি হতে পারে? মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৭.৭, আমার পার্সোনাল রেটিং ৯/১০। স্টেজভ্যু ডাউনলোড লিংক: : http://stagevu.com/video/nprwhtzvgjaq সাতোশি কন একজন সত্যিকারের জিনিয়াস। একজন সত্যিকারের মাস্টারমাইন্ড।

তার নির্মিত মুভিগুলো নিয়ে লেখার চেষ্টা করাটা স্রেফ বোকামি। এতোটা বুদ্ধি-বিচার কিংবা ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু তার মুভিগুলো আমাকে এতোটাই উদ্বেলিত করে যে সামুতে দুইলাইন লেখার দুঃসাহস না দেখিয়ে পারলাম না। মাঝেমাঝে এই ইউনিভার্স তার মোস্ট গিফটেড ট্যালেন্টকে যাচাই করতে ব্যর্থ হয়। তাই সাতোশি কনের মতো ব্রিলিয়ান্ট মাস্টারমাইন্ডকে আমরা সুসময়ের আগেই হারিয়ে ফেলি।

সাতোশি কন আজ নেই, কিন্তু তার করে যাওয়া কাজগুলো প্রতিটি ক্ষণে আমাদের মনে করিয়ে দেয়, তার চলে যাওয়াটা আমাদের জন্য কতোটা বিষাদময়, কতোটা না পাওয়ার !!! স্যালুট সাতোশি কন !!!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.