আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সহজ সরল কথাঃ আপনার দায়িত্ব আপনি পালন করছেন তো? অনেক হয়েছে এবার চলুন ফিরি মুল ইস্যূতে।

আমি একাই পৃথিবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম http://www.facebook.com/kalponikvalo অশিক্ষিত মানুষের দুইটা সুবিধা আছে। এক তাদেরকে ধর্মের দোহাই দিয়ে চুপ করিয়ে রাখা যায়, তেমনি তাদেরকে সহজে শাসন করা যায়। শিক্ষিত জনগনকে আর যাই হোক আবজাব বুঝান যায় না। এটা আমাদের দেশের শাসকরা ভালো করেই জানেন।

তাই আমাদের দেশে প্রকৃত শিক্ষার জাগরন এখনও আসে নি। তাই তো এই দেশে জনগনের একাংশ একজন কথিত ধর্মবীরকে চাঁদে দেখার গুজবে রাস্তায় নেমে আসে। হাস্যকর বিষয় হচ্ছে এইসব জনগনের অনেকেই আযানের সময় 'আল্লাহু আকবার' শুনে নামাজে যান না, তারা নায়রে তাকবীর শুনলে জিহাদী জোসে রাস্তায় নেমে আসেন। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে বাংগালী জাতি হচ্ছে শর্টকার্ট প্রিয় জাতি। তারা সব কিছুতেই শর্টকার্ট খুঁজে।

এই শিক্ষা ছাত্রজীবন থেকে শুরু হয়। স্যারের কাছে আবদার, স্যার সিলেবাস একটু শর্ট কইরা দেন না, এত পড়া কেমনে পড়ুম? চাকরী চান, সেখানেও মামা খালু ধরে শর্টকার্ট ব্যবস্থা খোঁজা হয়। বড়লোক হতে চান, শর্টকার্ট ব্যবস্থা সেখানেও আছে, হয় রাজনীতি করো নতুবা দুই নাম্বার জিনিসের ব্যবসা করেন। রাতারাতি আংগুল ফুলে কলা গাছ। এমনকি ধর্ম প্রান বাঙ্গালী ধর্মও পালন করে শর্টকাট স্টাইলে।

যেমন আপনার একটা মাসালা দরকার, একটা ধর্ম জিজ্ঞাসা দরকার, আপনি গিয়ে প্রথমেই জিজ্ঞেস করেন পাড়ার ঈমাম সাহেবকে, অথবা ধার্মিক পোষাকধারী কোন ব্যক্তিকে। এমন একটা ভাব যেন ধর্ম শিক্ষা বা ধর্ম ব্যখ্যা আপনাকে একমাত্র তারাই দিতে পারবেন, বাকি কারোটা বৈধ নয়। ঈমাম সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন, কোন সমস্যা নেই, যদি তিনি একজন হাক্কানী আলেম হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই তিনি ভালো জবাব দিবেন। সঠিক রাস্তা বলবেন। আমরা উপকৃত হব।

কিন্তু তিনি যদি ভালো না জানেন? তখন কি আপনি ভুল জিনিস শিখবেন না?? সেই ভুল শিক্ষা দেয়ার জন্য ঐ ঈমাম সাহেব না যতটা দোষী হবেন তার চেয়ে বেশী দোষী হবেন আপনি। কারন আপনি শিক্ষিত হয়েও সঠিক পদ্ধতি গ্রহন করেন নি। আপনার আমার এই ধর্মভীরুতা নিয়ে বা ধর্ম অজ্ঞতা নিয়ে এক শ্রেনীর লোক ধর্মীয় লেবাসে ধর্ম ব্যবসা করে। ফলাফলস্বরুপ সুযোগসন্ধানী ধর্ম বিদ্বেষীরা এই নিয়ে নানা প্রপাগান্ডা ছড়ায়, উল্টা পাল্টা কথা বলে ধর্মপ্রান মানুষের মনে আঘাত দেয়। যাদের সুযোগ নেই তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা মানা গেলেও যাদের সুযোগ থাকা স্বত্তেও সঠিক বই দেখেন না, সঠিক ইলেম চর্চা করেন না, তারা কিছুতেই ধর্ম নিয়ে অপপ্রচারের দায় এড়াতে পারেন না।

ধরুন একজন ছেলে যে কিনা বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছে, সেই ছেলের পড়াশুনার যে মান এবং কোন অখ্যাত প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ছেলের জ্ঞান এবং দর্শন কিন্তু এক হবে না। ভালো শিক্ষক, ভালো সিলেবাস ইত্যাদির একটা ব্যাপার আছে। যে শিশুরা নামহীন, অখ্যাত মাদ্রাসায় যায়, তাদের শিক্ষার মান যে খুব একটা ভালো হবে না, এই বিষয়ে অবাক হবার কিছু নেই। তাদেরকে যা শিখানো হবে, তারা তাই শিখবে। ফলে তারা অনেক সময় ভুল শিক্ষা পায় এবং হয়ে উঠে কট্টর পন্থি।

তারা তাদের এই কট্টর পন্থা, ভূল দর্শন, অপব্যখ্যা ছড়িয়ে দের আপনার আমার মত ধর্ম ভীরু মানুষের মাঝে। ক্ষতিগ্রস্ত হই আমরাই। তবে, এই নিয়ে তাদেরকে ঘৃনা করার কিছু নেই। তারা ভূল শিক্ষার শিকার। আপনার আমার যদি সুযোগ থাকে তাহলে তাদেরকে সঠিক পথে আনার জন্য কাজ করতে হবে।

ঘৃনা দিয়ে শুধু ঘৃনাই আসে, ভালো কিছু নয়। দেশ এখন আর আওয়ামীলীগ বিএনপিতে বিভক্ত নয়। দেশকে এখন বিভক্ত করা হয়েছে আস্তিক নাস্তিক এর ক্যাচাল তুলে। লক্ষ্য একটাই, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করা। তারা তাদের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে, তারা সফলও।

আপনি আমি কিন্তু অনেকটাই ব্যর্থের পথে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি আজকে সরে এসেছে আস্তিক নাস্তিক ক্যাচালে। হেফাজতে ইসলামকে প্রতিরোধের। এই ভাবে সরতে সরতে এক সময় আপনি আমি যারা এই দাবির প্রতি সমর্থনকারী ছিলাম, তারাও সরে যাব। ফলে একটি সত্যিকারের জাগরনের অপমৃত্য ঘটবে।

আমি হেফাজতের জাগরন নিয়ে মোটেই চিন্তিত নই। কারন কর্মী সভা আর জনসভার মধ্যে পার্থক্য আছে। একটিতে লাখো লাখো চেতনা ময় জনগন অংশ নিয়েছে, আর একটিতে লাখো লাখো কর্মী অন্ধ চেতনাতে অংশ নিয়েছে। তাদের সামনের শত্রুকে তারা জানে না। তারা শুধু জানে তাদের ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে।

কিভাবে করা হয়েছে, কারা করেছে এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে চিহ্নিত না করে গতবাধা একটা শ্রেনীকে চিহ্নিত করা হল। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দুই পক্ষই। ইমরান সরকার যেমন বির্তকিত হয়েছে, তেমনি আল্লামা সফিও বিতর্কিত হয়েছেন। হেফাজতীদের অবস্থা হইছে অল্প পানির মাছ গভীর পানিতে পড়ার মত। তারা নিজেরাও জানে না, তারা কি করবে।

তারা তাদের নিজের শহর চট্রগামেই ইসলামের সঠিক হেফাজত করতে পারে না। সমগ্র দেশের ইসলাম হেফাজত কিভাবে করবে? যেমন ধরুন চট্রগামেকে বলা হয় বার আউলিয়ার পূন্য ভূমি। এটা আপনিও জানেন, আমিও জানি। সেই সব পূন্যবান ব্যক্তিদের কল্যানেই কিন্তু আমরা আজকে মুসলিম হয়েছি। কিন্তু আপনি দেখেন তাদের মাজার গুলোতে আজকে বর্তমানে কি অবস্থা? তারা যে বলল মোমবাতি জ্বালানোর ভিনদেশী সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে, তারা কি সেটা সেখানে বিগত বছর গুলোতে করতে পেরেছে? পারে নি? মাজার গুলোকে কেন্দ্র করে যে রমরমা ব্যবসা হচ্ছে তারা কি সেটা বন্ধ করতে পেরেছে? পারে নাই।

এই অবস্থা সিলেটেও। এই দুটো শহরের দুটো বিখ্যাত মাজারে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী মাজার জিয়ারত করতে আসেন। এমনকি অন্য ধর্মের লোকও আসেন। সেখানে সবাই নির্বিশেষে ভক্তি ভরে মোমবাতি প্রজ্জলন করেন, দাগা বাঁধেন, ইত্যাদি অনেক কিছুই করেন যা ইসলামে নিষিদ্ধ করা আছে। তাহলে সেখানে আমরা তাদের কোন উচ্চবাচ্য শুনতে পেলাম না।

এটা কি স্ববিরোধিতা নয়? বড় কোন কাজ করার আগে ছোট ছোট কাজ দিয়ে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে হয়। তারা যদি এই কাজ গুলো করতে পারত, হয়ত মানুষের সমর্থন আরো পেত। তারা এতটা বিতর্কিত হতেন না। শাহাবাগ যেমন আওয়ামীকরন করা হয়েছে অধিক মুনাফার লোভে, তেমনি হেফাজতীও জামাতিকরন করা হয়েছে একঢিলে সব মারার লোভে। কিন্তু দেখতেই পাচ্ছেন অতি লোভে তাতী নষ্টের মত ঘটনা ঘটে গেছে।

বিএনপি একটি গভীর সংকটকালীন সময় পার করছে। এক সাথে এত নেতাকর্মীর জেলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই দলটির। সরকারী দমন এবং নিপীড়নে বিএনপি এখন অনেকটাই কোন ঠাসা। ফলে তারা হেফাজতিদের মত খড়কুটোর হাত ধরে বাঁচতে চায়। আমি বিশ্বাস করি, তাদের অবস্থা উদ্ধারের জন্য তাদের নিজেদের দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে।

কিন্তু লোকবলের অভাবে তারা সেটা করতে পারছে না। আমি মনে করি, এখন সময় এসেছে সচেতন হবার। একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে নিজের দায়িত্বপালন করার। আমরা যদি সচেতন না হতে পারি, নিজেদেরকে সঠিক জ্ঞানে দিক্ষা দিতে না পারি, আমাদের অবস্থান হবে ইতিহাসের আস্তা কুড়ে এবং আগামী ৫০ বছরেও কোন জাতীয় ইস্যুতে কাউকে হাতে পায়ে ধরে রাজপথে নামানো যাবে না। আমি বিশ্বাস করি আমরা ধর্মভীরু, আমরা আমাদের ধর্মকে ভালোবাসি, কিন্তু আমরা ধর্মান্ধ নই, আমরা উগ্রবাদি নই।

আমরা বাকস্বাধীনতার নামে ইচ্ছেমত বিদ্বেষী মত প্রকাশকে সমর্থন করি না। চলুন আমরা আমাদের মূল দাবিতে ফিরে যাই, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। কোন নির্দিষ্ট দলের না, সকল দলের যারা চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী আছেন, তাদের সকলের বিচার চাই। আমরা চাই না এই ইস্যূকে মুলার মত ঝুলিয়ে সরকার অন্যায় ফায়েদা নিক। যদিও তারা অনেক অন্যায় ফায়েদাই নিয়েছেন।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে অনেকেই সরকারের সৎ ইচ্ছার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। যত দিন যাবে তত এই সন্দেহ বৃদ্ধি পাবে। অনেকেই বলেছেন, সরকারের নানা রকম দূর্নীতির কথা আড়াল করতেই সরকার এই ইস্যূটি দীর্ঘয়িত করছে। সরকার জামাত শিবিরকে এখনই নিষিদ্ধ না করতে পারলে অন্তত তারা চাপ সৃষ্টি করতে পারত একাত্তরে তাদের ভুমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে। তারা ক্ষমা না চাইতে পারত কিন্তু সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন অনেক কম উঠত।

জাতীয় স্বার্থে আর একটি বিষয় আমরা যোগ করতে পারি, তা হল দেশের স্বার্থে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান চাই। বিএনপিকে দূর্বল করে দিয়ে এই সহাবস্থান সম্ভব নয় বলে অনেকেই মনে করেন। এটাই হয়ত বাস্তব। আমরা চাই না তাদের মারামারি সুযোগে দেশে জামাতের মত একটি উগ্রবাদি দল ক্ষমতায় আসুক। আমরা জানি আমাদের দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলই মুদ্রার এই পিঠ আর ঐ পিঠ।

এই দলগুলো নেত্রীরা ভালো হলেও তাদের চারপাশে থাকা মানুষগুলো সুবিধার না। নিলর্জ চাটুকারীতা এবং জনগনের সৎ আবেগকে সম্মান না দিতে পারার খেসারত দিতে হবে তাদেরকেই। আমরা মনে করি, আপনারা টু পাইস কামাবেন, ঠিক আছে- মেনেও নিচ্ছি, তবে কিছু জনগনের জন্যও কিছু কইরেন। আমরা সাধারন মানুষ, আমরা রাতারাতি সকল সুবিধা চাই না। আমরা জানি রাতারাতি আপনারা বদলে যাবেন না।

অল্প হোক কিন্তু শুরু তো করুন। প্রতিহিংসার রাজনীতি আমরা চাই না। আমাদেরকে অল্প একটু ভালো থাকতে দিন, শান্তিতে থাকতে দিন। আপনাদের ছাড়া কারো উপর আমাদের সমর্থন নেই। আর এই পোষ্ট হয়ত অনেক কিছুই অনেকে মানবেন না।

আমি সেটা আমার বুঝানোর দূর্বলতা হিসেবেই মেনে নিচ্ছি। আমি শেখার মনভাব নিয়ে এসেছি। অনেক কিছুই আমি জানিনা। আমি আশা করছি এই পোষ্টের মাধ্যমে হয়ত অনেক কিছুই আমি শিখতে পারব। হয়ত আপনিও কিছু শিখতে পারবেন।

ভিন্নমত হলেই গালাগালি নয়, বরং গঠনমূলক সমালোচনা করুন। আমরা কেউ কারো প্রতিপক্ষ নই। আলোচনা থেকে সত্য বের হয়ে আসবে। সেটা তিক্ত হলেও আমরা মেনে নিতে চাই। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।