আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চটি চটি গন্ধ আছে।

স্মৃতিতে এখনো ভেসে উঠে স্কুল জীবনের দুরন্তময় সময়গুলো। জীবনের উত্তম সময়গুলো কি দারুনই না ছিল। আমার কিছু ইচড়ে পাকা বন্ধুদের কল্যানে সেই বয়সেই ছোট ছোট বই গুলোতে যে সাহিত্যে রচিত হয় তা পড়া হয়ে গেছে। তখনতো আর কম্পিউটার, ডিস এন্টেনা ছিলনা। বিনোদন বলতে ঐ টুকুই।

আমিও কম যাইনা, রস-কষ মিশিয়ে কত গল্প বলতাম বানিয়ে বানিয়ে, বলা যায় কৌতুক সম্রাট ছিলাম অশ্লীল বা ডার্টি জোকসের। শুধু তাইনা, সকল খেলাধুলা, স্কুল পালানো, ভিডিও গেইম খেলা সব গুলোতেই অংশগ্রহন করতাম। ক্যাপ্টেনের সাথে টিফিন আনতে গিয়ে আগেই খেয়ে নেওয়া, বন্ধু ক্যাপ্টেন এই সুবাদে বার বার বাথরুমে যাওয়া কোন কিছুই বাদ রাখিনি। আজ স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে ভিন্ন একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমি তখন অষ্টম শ্রেনিতে পড়ি, কেবল মাত্র আলাদা ঘরে থাকতে শুরু করেছি মাঝে মাঝে রাতবিরাতে সন্তর্পনে দরজা খুলে বাইরেও বের হই কিন্তু খুবই গোপনে।

আমার রুমের দুইটা দরজা, একটা দিয়ে খোলা বারান্দা হয়ে বাইরে বের হওয়া যায়। বারান্দার পরেই কলপাড়, তার পরেই সোজা রাস্তা পুকুর ঘাটে যাওয়ার। চারিদিকে পেয়ারা, বরই, আম, কাঠাল, জাম, লিচু, বেল, কদবেল, জলপাই সহ আরো নানা ফলের গাছ সবই আমার দাদার লাগানো। পুকুর ঘাটের দুই পাশে রজনীগন্ধা, জবা, কাঠগোলাপ, পাতাবাহার। পুকুরের পাড় ঘেঁষে নারিকেল গাছের সারি, জাম্বুরা গাছ, সুপারি গাছেরও কমতি নেই।

দুই পাশেই দেয়াল দিয়ে রেখেছে পাশের জমির মালিকেরা। দেয়াল ঘেঁষে রয়েছে সোনালু ফুল ও কামরাঙ্গা গাছ, তার কাছেই জলপাই গাছের ডাল গিয়ে পড়েছে পাশের দোতালা বাড়ির ছাদে। দোতালায় থাকে রিমনরা আর নিচ তলায় থাকে তাদের ভাড়াটিয়ারা। আমার দুরন্তপনা শুধুই স্কুলের বন্ধুবান্ধবদের মাঝেই সীমাবদ্ধ, বাসা ও এলাকাতে আমার চেয়ে ভাল ছেলে আর একটিও নেই। এই আমি কিনা রাতের বেলা পড়া শেষ করে পুকুর ঘাটে একা একা এসে মশার সাথে যুদ্ধ করতে করতে নীরবে কিছুটা সময় কাটিয়ে যাই।

আমার যে দুই চারজন বন্ধু আছে তাদের সাথে শুধু নামাজের সময়ই দেখা হয়। তখনই তাদের সাথে বিস্তর আলাপ আলোচনা হয়। আমাদের যে প্রতিবেলাতেই দেখা হয় তাও কিন্তু নয়। তখনই আলাপ চারিতায় জানতে পারলাম রিমনের নাকি ভাবের চোটে মাটিতে পা পড়েনা। জিজ্ঞেস করলাম কেন কেন? সাথে সাথেই উত্তর এলো কেন আবার, সে এগ্রি ভার্সিটিতে পড়ে আবার রাজনীতিও করে।

তবে যাই বলিস হালায় লুইচ্চার এক শেষ। সাথেই সাথেই জিজ্ঞেস করলাম কেন কেন কি করছে? ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিন-চারটা মেয়ের সাথে প্রেম করে তার মাঝে একজনকে নিয়ে এক বন্ধুর মেসে গিয়েছিল। তারপর এলাকার ছেলেরা তাদেরকে অসংলগ্ন অবস্থায় ধরে পিটুনি দেয়। পুলিশেও দিতে চাইছিল ঙ্কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব ও বাপের টাকা পয়সার বদৌলতে বেচে গেছে। শুনেছি রিমনদের বাসায় নাকি নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে।

সেখানে নাকি একটা সুন্দরী মেয়েও আছে যার নাম রীতা। রিমন নাকি প্রায়ই রীতাদের বাসায় গিয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য সাজেশন দিয়ে আসে। তাদেরকে নাকি ছাদেও দেখা গেছে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিতে। এই নিয়ে আমাদেরতো বটেই দাদাদের মহলেও ভালই আলোচনা হচ্ছে। এইভাবে দেখতে দেখতে কেটে গেল মাস দুয়েক।

কিন্তু অনেকের জন্যই এক শকিং নিউজটা জানা গেল যে রীতারা নাকি হিন্দু। অল্প কিছুদিনের মাঝেই পুজার সময় হয়ে এল ভাই ফোটা দেওয়ার। ওরা নাকি বেশ জাকজমক ভাবেই এই উৎসবটা পালন করে। তাদের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনও আসলো। ঘটা করে ভাই ফোটা দেওয়ার সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিমনকে রীতারা ভাই বানিয়ে নিল।

বন্ধুদের ভাষায় রিমনের লেজ কাটা যাওয়ায় রিমন এলাকার সবাইকে ডেকে নিয়ে রীতাদের ভাই বানিয়ে দিল। এই ঘটনার বেশ কিছুদিন পরে দেখা গেল রিমন-রিতা এক সাথে ভার্সিটিতে যাচ্ছে। ভাইবোনের মতই আচরন করচে দুজনেই। তারমানে রিতাও চান্সপেয়েছে ভার্সিটিতে। যাক এখন তাদেরকে আর কে পায়।

কিছুদিন পর জানতে পারলাম মেয়েটাও নাকি এক ছেলের সাথে প্রেম করে। তার নামে নানা রকম কথা শুনতে লাগলাম। তাকে নাকি দিনে দুপুরে নদীর পাড়ে গাছের তলে আবেগঘন অবস্থায় দেখা গেছে। মাঝে মাঝে নাকি নদীতে নৌকায় করে হারিয়ে যায়। রাজনৈতিক কারনে অধিক পরিচিতি থাকার ফলে আরও নানা কথা রিমনের কানে আসে।

এভাবে দেখতে দেখতে বছর অতিবাহিত হল। আসল বিপত্তি ঘটলো তারও মাস ছয়েক পরে। ডিপার্টমেন্ট থেকে সেণ্টমার্টিন ট্যুরে গিয়ে রিতা ও তার প্রেমিককে নাকি খুঁজে পাওয়া যায়নি দুইদিন। ফেরার পথে কক্সবাজারে তাদের সাথে আবার দেখা হয় ডিপার্টমেন্ট এর সবার সাথে। এই দুইদিন তারা প্রমোদ ভ্রমণে ছিল একান্তে দুইজনে।

আস্তে আস্তে তাদের আরো কীর্তি প্রকাশ হতে লাগলো। এমন সময়ই তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। ছেলেটা রিতাকে ছ্যাকা দিয়ে চলে গেল। রিতা এই অপমাণ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে গিয়ে রিমনের কাছে ধরা পরে। রিমনের কাছে আবেগাপ্লুত হয়ে প্রতিটি ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বর্ননা করে।

তাদের এক সাথে রাত্রি যাপনের কথাও বাদ যায়না। ঘটনার বর্ণনা দিতে দিতে রিমনে কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে। রিমন-রিতার সুদিন আবার ফিরে আসে, রিতা ক্লাসের সময়টুকু বাদ দিয়ে বাকি সময় রিমনের সাথেই থাকে। এক সাথে ঘুরে ফিরে, খাওয়া দাওয়া করে, আড্ডা দেয়, বাড়ি ফিরে। তাদের নিয়ে নানা কানঘুষা শোনা যায় কিন্তু কেউ কিছু বলতে সাহস পায়না।

যদি ভুল হয় তখন তো রোষানলে পড়তে হবে। হাজার হোক নেতা মানুষ। দেখতে দেখতে দূর্গাপূজা চলে আসলো। রিতারা পূজায় বাড়ি যাবে, সাথে করে রিমনকেও নিয়ে গেল। পুজার দিন গ্রামের বাড়িতে অনেক মজা করলো সবাই মিলে।

রাতের বেলা বেড়াতে বেড়াতে নদীর ধারে গেল। নৌকায় গুলুইতে দুজন দুজনের পিঠে পিঠে ঠেকিয়ে বসে আছে, উষ্ণতা ভালই টের পাচ্ছে একে অপরের। তার উপর আজ দুজনেই পূজা উপলক্ষে তাড়ি পান করেছে। রাত্রি বাড়ছে বাড়ি ফিরতে হবে, উঠে জড়াজড়ি করে ধরে পাট ক্ষেতের আল ধরে হেলেদুলে ফিরছে। এমন একটু আঁধারের জন্যই যেন দুজনেই অপেক্ষা করছিল।

তারপর কিছু সময় পরে আবারো বাড়ি ফেরার তাড়নায় চলতে শুরু করলো। পূজা শেষে সবাই শহরে ফিরে আসলো। আমিও রাতের বেলায় মাঝেই মাঝেই পুকুরের পাড়ে যাচ্ছি। একা একা সময় কাটাচ্ছি। শীতের ঠান্ডা হিম বাতাস কিছুটা উপভোগ করছি।

এমনি একদিন জলপাই গাছের নিচে এসেছি জলপাই কুড়াবো বলে। হঠাৎ কিছু একটা শব্দ শুনে সজাগ হয়ে গেলাম অনেকক্ষন পর বুঝতে পারলাম এটাতো স্বাভাবিক কোন শব্দ নয়। চটি সাহিত্যের সাথে ততদিনে পরিচিত হয়ে যাওয়াতে বুঝতে বাকি রইলোনা কিসের শব্দ এটা। কিছু সময় পর নীরবতা আমি আমার রুমে ফিরে গেলাম। পরের দিন আমি ক্লাসের বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করে বিষয়টা বলা মাত্র অনেকেই থাকতে রাজি হয়ে গেল।

কিন্তু আমি নিয়ে আস্তে চাইলামনা। পরেরদিন একই সময় আবার একই জায়গায় অপেক্ষা করে আছি। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটলনা। আমি রাতের অভিযান শেষ করে ঘরে ফিরে এলাম। পরেরদিন এলাকার বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়ার পর রিমন-রিতার কাহিনীর নতুন দিগন্ত আমার কাছে উন্মোচিত হল।

তারা নাকি ভাই-বোনের পরিচয়ের আড়ালে আবডালে গভীর মেলামেশা করছে। আমাদের গাছের জলপাই চুরি করতে গিয়ে কে যেন দেখেছে তারা ছাদে একে অপরের আলিঙ্গনে আবদ্ধ। অনেকক্ষন পর্যবেক্ষন শেষে ফিরে এসে দাদাদের বলে দিয়েছে। আজ দাদারা নিজেরাই পর্যবেক্ষণ করতে যাবে। আমি মনে মনে বলি, তাহলে এই ঘটনা আমি তাহলে ভুল শুনিনি।

আমার ভাবতেই গা ঘিন ঘিন করে উঠছে ওরা না ভাই-বোন। ছিঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ আমি ওদের অনেক স্বাধীনচেতা ভেবেছিলাম। ভার্সিটিতে পড়ে আর যাই হোক নোংরামি করবেনা। এভাবে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কেন, সাহসীদের মতো সামাজিক মর্যাদা দিয়ে দেও। কিন্তু শব্দটা এসেছে নীচতলা থেকে, হিসাব মিলেছেনা।

ঐদিনই আমাকে ফুপুর বাসায় চলে যেতে হলো। বাবা-মা, ফুপা, ফুপু নানুর বাড়ি গেছে তাই। আমি দিন কয়েক পরে এসে সবার সাথে দেখা করে জানতে পারলাম দাদারা নাকি পাহারা দিয়ে ধরেছিল। পরে তারা অস্বীকার করেছে তারা কসম কেটে বলেছে তারা ভাই-বোন। তাদের সেই রগরগে বর্ণনা আমি শুনেছি, আমার মনে হল এমন নোংরামি করার থেকে জাতি-বিভেদ, রাজনৈতিক ভবিষ্যত ভুলে সামাজিক ভাবেই মেশা উচিত।

আমি বাসার দিকে যাচ্ছি কাকা-কাকির সাথে দেখা করে ফুপুর বাসায় যাব। বাসায় গিয়ে দেখি কাকি সোনালু গাছে তলায় দারিয়ে রিতার মায়ের সাথে গল্প করছে, রিতার মায়ের অভিযোগ কারা যেন তাদের ডিস-এন্টেনার তার ছিড়ে রেখে গেছে। তার স্বামী দুবাই থাকে দুই বছর হলো দেশে আসেনা। সে থাকলে কি আর ঐ কুত্তার বাচ্চারা এত সাহস পেত। ওদের বাসায় ডিসএন্টেনা আছে? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।