আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পেনড্রাইভ

লেখালেখির কারখানা কী যেন একটা শব্দ হলো? মুঈদ ল্যাপটপে তখনো তার কলেজের প্রশ্নপত্র তৈরি করছে। আবারো শব্দ, এবারো খেয়াল করে নি সে। ১০ মিনিট পার হয়ে গেছে। ঢাকার রাত যেন আরো বেশি জিগার আঠার মতো ঘুমের সাথে লেগে গেছে। এখন বাজে রাত প্রায় ৩টা।

রাত কি, ভোর হবে হয়তো। পাশের ঘরে মুঈদের স্ত্রী মাফু বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। এই মে মাসের গরমেও মাফুর ঘুম যেন বেহেস্তি ঘুম। কয়েক দিন হলো মুঈদ ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এসিটা কিনেছে। আবারো শব্দ, তবে এবারেরটা যেন আরো জোরে।

মূঈদ এবার ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে আশেপাশে তাকায়। নাহ্! মাফুর ঘর থেকে শব্দটি আসেনি। তাহলে কোত্থেকে এলো? সে শব্দের উৎস খোঁজার চেষ্টা না করে আবারো কাজে মনোযোগ দেয়। হাতের কাছেই ছিল, আলবালুপার বোতলে রাখা ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি। বোতলে গা বেয়ে বেয়ে পানি পড়ে টেবিলে রাখা রাফ প্রশ্নপত্রটি কথন ভিজে গেছে টের পায়নি মুঈদ।

পানি খেয়ে সে তার শেষ প্রশ্নটি লেখা শুরু করে। তখনই আবার সেই আওয়াজ। মুঈদ বুঝতে পারে শব্দটি আসছে বেড রুমের বারান্দা থেকে। ধপ করে উঠে, দৌঁড়ে যায় সে শব্দের উৎসের দিকে, কেননা মাফুর ঘুম ভাঙলেই সে পুরো সাত তলা ভবনই মাথায় তুলে বসবে রাতের এই শেষ প্রহরে। মূঈদ দেখে, বোঝার চেষ্টা করে, কিন্তু কই কী, পাশের ফাঁকা জায়গায় গত কয়েকদিনে যে নির্মাণাধীন অ্যাপার্টমেন্ট হচ্ছে, তার কার্নিশে একটি ১২-১৪ বছরের ছেলে অঘোরে ঘুমাচ্ছে, তার পাশেই রয়েছে এক ঢিবি ইটের টুকরা।

ছেলেটি আবারে পাশ ফিরলো। টুপ করে একটি ইটের টুকরা গিয়ে পড়েলো নিচের সেফ্টি ট্যাংকের ছাদে। রাতের নিস্তব্ধতায় সেই শব্দটাই বার বার ভেসে আসছে কী এক মায়াবী রূপ নিয়ে। মূঈদের মাথা হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারির মতো ফাঁকা হয়ে গেল। ছেলেটি কেন এখানে ঘুমাচ্ছে? মনে পড়ে গেল তার ১৫ বছর আগের কথা।

সৈয়দপুর থেকে এসে সে একদিন কমলাপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে, জানুয়ারির তীব্র শীতে একটি কুকুরের সাথে রাত পার করেছিল। যেন দুজনই দুজনকে ওম দিচ্ছিল। সকাল এগারোটা। কলেজের প্রিন্সিপাল মিটিং ডেকেছেন। মূঈদ আস্তে ধীরে মিটিং রুমে যাওয়ার আগে প্যান্টের বাম পকেটটি হাতরে দেখে নিল যে পেনড্রাইভটা আছে কি না।

এই পেনড্রাইভেই তো তার সব কাজ। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।