আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নই তো মোরা আত্মকেন্দ্রিক

তানভীর হায়দারের বন্ধুর দলটা অন্য রকম! তাঁর ভাষায়, ‘সবগুলো পাগল!’ কী করে এই পাগলগুলো? রাস্তার পাশের চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দেয়, কারণে-অকারণে হেসে লুটোপুটি খায়, আবার ইচ্ছা হলেই ব্যাগ গুছিয়ে চলে যায় বান্দরবান, কক্সবাজার। তানভীর হায়দারের মতে, তাঁরা একসঙ্গে হলে সব পারেন। এই যেমন গত শীতের কথা। সোয়েটার, মাফলার, হাতমোজা, পামোজা—এত শীতের কাপড় জড়িয়েও রিকশায় বসে কাঁপছিলেন ঠক-ঠক করে। হঠাৎই মনে হলো, যে মানুষগুলো ফুটপাতে গায়ে সাকল্যে একটা মাত্র কাপড় জড়িয়ে বসে আছেন, তাঁদের কেমন লাগছে? ভাবনাটা কিছুতেই মাথা থেকে দূর হচ্ছিল না।

বাসায় ফিরেই ফেসবুকে বন্ধুদের সবাইকে ট্যাগ করে একটা বার্তা পাঠালেন। বার্তার সারমর্ম, ‘একটা কিছু কি করা যায়?’ বন্ধুরাও যেন এমন একটা আহ্বানেরই অপেক্ষায় ছিলেন। পরদিনই পরিচিত-অপরিচিত সবার কাছে হানা দেওয়া। কথা একটাই, ‘একটা কিছু কি করা যায়?’
ফলাফল, এক দিনের মধ্যেই বেশ কিছু টাকা উঠে গেল। গভীর রাতে অর্ধশতাধিক কম্বল নিয়ে ঢাকার রাস্তায় নামলেন একদল তরুণ।

‘প্রচণ্ড শীতে কুণ্ডলী পাকিয়ে কাঁপতে থাকা একজন মানুষের গায়ে একটা কম্বল জড়িয়ে দিয়েই দে দৌড়! মানুষটা জানতেও পারলেন না, কে তাঁর এই উপকারটুকু করল। এই পাগলামির যে কী আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না!’ বলছিলেন সে দলেরই একজন, রিয়াজুল আমিন। বলতে বলতে তাঁর চোখ দুটো খুশিতে চকচক করছিল।
তানভীর হায়দারের কথা অনেকাংশেই ঠিক। তরুণেরা একসঙ্গে হলে সব পারেন! ভালো কিছু করে সমাজকে সুন্দর করে দিতে পারেন।

এ দেশে দুর্যোগ, দুর্ঘটনায় অসহায় মানুষগুলো সব সময়ই পাশে পেয়েছেন তরুণদের। নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে অনেক তরুণই কাজ করেন কেবল মানবতার টানে।
যেকোনো দুর্যোগে মানুষকে সাহায্য করতে এগিয়ে যান নীল পোশাকের একদল তরুণ, বাংলাদেশ স্কাউটস। সেবাই তাঁদের মূলমন্ত্র। কথা হলো, স্কাউট রেজওয়ানুর রহমানের সঙ্গে।

‘মানুষকে সাহায্য করতে ভালো লাগে। এমনকি একজন হয়তো কোনো ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছেন না, তাঁকে পথ দেখিয়ে দেওয়াটাও আমরা গুরুত্ব দিয়ে করি। ’
‘সমাজ আমাদের প্রতিনিয়তই প্রতিযোগিতা শেখায়। কানের কাছে বিড়বিড় করে বলতে থাকে, নিজের জন্য কিছু করো! আগে নিজের কথা ভাবো! এসবের মধ্যে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করার সময় কোথায়?’
প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্য নিশান জানালেন, ‘ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। দেশকে তো ভালোবাসতেই হয়।

যেকোনো সামাজিক কাজে সব সময় আমরা এগিয়ে যাই। এটাও তো আমাদের দায়িত্ব। ’ সন্ধানীর রক্তদান কর্মসূচিতে নিয়মিত যোগ দেন আফসানা জাহান। বললেন, ‘আমার ১০ মিনিট সময়ের বিনিময়ে যদি কারও জীবন বাঁচে, সে চেষ্টা কেন করব না?’
গত ২৪ এপ্রিল সাভারে ভবনধসের পর উদ্ধারকাজেও তরুণদের ভূমিকা ছিল অসামান্য। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে শুধু সাহায্যের আহ্বান জানিয়েই তাঁরা থেমে থাকেননি।

টর্চলাইট, অক্সিজেন বোতল, দরকারি ওষুধ, খাবার নিয়ে ছুটে গেছেন বারবার।
আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্যও কাজ করছে অনেকগুলো দল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মনে করেন, মানুষের জন্য কাজ করার এই মূল্যবোধটা শেখানো হয় পরিবার থেকেই। ‘আমার কাজটাই তরুণদের সঙ্গে। ৪০ বছর ধরেই দেখছি।

অনেক তরুণ যেমন ধ্বংসাত্মক কাজ করে, স্বার্থপরতায় ডুবে থাকে তেমনি অনেকে মানবতার জন্যও কাজ করে। আমাদের সৌভাগ্য, মানবতার জন্য যাঁরা কাজ করেন, তাঁরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। সিডরের পর আমার একদল ছাত্র এসেছিল আমার কাছে। বলল, স্যার, আমরা ওদের জন্য কিছু করতে চাই। আমি বললাম, তোমরা কীভাবে যাবে? ওরা বলল, কীভাবে যাব সেটা বড় কথা নয়।

প্রাণের ডাক এসেছে, যেতেই হবে!’ বিশ্বমাধ্যমের মন্দ নৈতিকতাবোধের ফাঁদে পা না দিয়ে তরুণদের নিজেদের ভেতরের ভালোত্বকে জাগিয়ে তুলতে হবে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।