আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেওয়ানহাটে নগরীর তৃতীয় ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ আজ শুরু হচ্ছে/ চট্টগ্রামের বিভিন্ন মহাসড়কগুলোর সম্প্রসারণ ও সংস্কার এর কাজ একই সাথে করাতে "যানজট মুক্ত নয় যানজট যুক্ত" নগরীতে পরিণত হচ্ছে চট্টগ্রাম

প্রায় পঁচিশ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর তৃতীয় ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ আজ শুরু হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও দেওয়ানহাটে ঢাকা চট্টগ্রাম ট্রাংক রোডের এই ফ্লাইওভারটি নগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নগরীর দেওয়ানহাট মোড়ে ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দেওয়ানহাট বছর কয়েক আগেও ছিল নগরীর প্রবেশমুখ। কিন্তু দিনে দিনে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তাটি প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে ওঠে।

ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে স্থবির হয়ে থাকে পুরো এলাকা। রিক্সা টেক্সি এবং ঠেলাগাড়ির পাশাপাশি দণ্ডায়মান ট্রাকের দখলে চলে যায় পুরো রাস্তা। রাস্তাটিতে পারতপক্ষে কেউ গাড়ি নিয়ে যেতেন না। রাস্তাটির পাহাড়তলী চালের বাজার থেকে শুরু করে মনসুরাবাদ পর্যন্ত এলাকায় যান চলাচল অনেকটা অসম্ভব হয়ে উঠে। পাহাড়তলীর যন্ত্রণায় ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে যায়।

জাকির হোসেন রোড শহরের প্রবেশমুখ হয়ে উঠে। দিনে দিনে জাকির হোসেন রোডের অবস্থাও নাজুক হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় নতুন করে শহরে প্রবেশের পথ বাড়ানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়। ফলে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের অলংকার মোড় থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত এলাকাটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি গ্রহণ করে সরকারের কাছ থেকে টাকার সংস্থান করেছে।

ইতোমধ্যে ৮৬ কোটি চল্লিশ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তাটির সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয়েছে। গত বছরের ৬ মে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের এই অংশটিকে ৭২ ফুট প্রশস্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দোকানপাট, অফিস, বাসা-বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে রাস্তা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বর্তমানে রাস্তার উন্নয়ন কাজ চলছে।

২০১৪ সালের জুন মাসে রাস্তাটির সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের অলংকার মোড় থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত এলাকাটি ৭২ ফুট প্রশস্ত করার পর রাস্তাটি পুনরায় শহরের অন্যতম প্রবেশমুখ হয়ে উঠবে। জাকির হোসেন রোডের যান চলাচলের বেহাল দশার কারণে অনেকেই তখন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরেই শহরে প্রবেশ এবং শহর থেকে বেরিয়ে যাবে। এতে করে পুরো এলাকা আবারো প্রাণ ফিরে পাবে। কিন্তু দেওয়ানহাট মোড়ে এসে নতুন করে জটলায় পড়ার আশংকা ব্যক্ত করা হয়েছে।

এই অবস্থায় দেওয়ানহাট মোড়ের যান চলাচল কি করে স্বাভাবিক রাখা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হয়। এরই অংশ হিসেবে দেওয়ানহাটে একটি ওভারপাশ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে পাহাড়তলীর দিক থেকে আসা গাড়িগুলোকে দেওয়ানহাট পার করে দেয়া গেলে এশিয়ান হাইওয়েতে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে জ্যামে পড়তে হবে না। আবার যেসব গাড়ি দেওয়ানহাট হয়ে আগ্রাবাদ কিংবা টাইগারপাশ যাবে সেগুলো ওভারপাশের নিচ দিয়ে বিদ্যমান পথ ধরেই চলে যেতে পারবে। এই চিন্তা থেকে দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২৩ কোটি ৮৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প তৈরি করে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি সরকারের অনুমোদন লাভ করেছে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ডবলমুরিং থানার সন্নিকট থেকে দেওয়ানহাটের উপর দিয়ে ধনিয়ালাপাড়া পর্যন্ত ১৮৫০ ফুট বা ৫৬০ মিটার লম্বা ফ্লাইওভারটির প্রস্থ রাখা হয়েছে ২৮ ফুট বা সাড়ে আট মিটার। আজ সকাল দশটায় এই প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। এ ব্যাপারে গতকাল সিডিএ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুচ ছালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঢাকা চট্টগ্রাম ট্রাংক রোডের অলংকার মোড় থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত এলাকাটি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

এর সুফল যাতে পুরোপুরি পাওয়া যায় সেজন্য নতুন এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও এই ফ্লাইওভার কিংবা ওভারপাশটি নগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে টোলরোড পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি চট্টগ্রামের প্রথম ফ্লাইওভার হিসেবে ইতোমধ্যে যান চলাচল শুরু করেছে। বহদ্দারহাট মোড়ে নির্মিত প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতীয় ফ্লাইওভারটি চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। উক্ত দুইটি ফ্লাইওভারের তুলনায় দৈর্ঘ্যে কম হলেও দেওয়ানহাট ফ্লাইওভারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

আজ থেকে কাজ শুরু হওয়া এই ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ আগামী বছরের জুন নাগাদ সম্পন্ন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। পুরো চট্টগ্রাম জুড়েই চলছে একই সাথে ফ্লাইওভার ও রাস্তাগুলোর সম্প্রসারণ ও সংস্কারের কাজ চলছে। এর প্রভাবে পুরো নগর জুড়েই যানজট এখন নিত্যদিনের সমস্যা চট্টগ্রাম বাসীর কাছে। তার উপর চলছে আরো নতুন নতুন ফ্লাইওভারের কাজ শুরুর পরিকল্পনা। এখন মনে হচ্ছে চট্টগ্রামবাসীকে পুরো পুরি গৃহবন্দীর মত হয়ে থাকতে হবে এবং তা কতদিনের জন্য আমরা কেউ তার সঠিক সময় বা সাল জানি না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।