আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজ্ঞাপনের গুষ্টি উদ্ধার... (পর্ব ৩)

একি আজব কারখানা........... বিজ্ঞাপনের গুষ্ঠি উদ্ধার (পর্ব ১) একটু ভাবনা.. বিজ্ঞাপনের গুষ্টি উদ্ধার - (পর্ব ২) কিছু স্ট্রাটেজি.. পর্ব ৪ - এডভার্টাইজিং এন্ড সেক্স আগের পোস্টে বিজ্ঞাপনের কমন কিছু স্ট্রাটেজি নিয়ে কথা বলেছিলাম। এবার আসি ভিতরের ব্যাপারে। বিজ্ঞাপনী সংস্থা কি, কিভাবে কাজ করে , কিভাবে টেলিভিশন এড বানায়, এইসব হাবিজাবি। এডভার্টাইজিং এজেন্সি দিয়ে শুরু করি। আগে বিভিন্ন কোম্পানি বিজ্ঞাপনের কাজ করাতো তাদের ক্রিয়েটিভ ডিপার্টমেন্ট অথবা ফ্রি ল্যান্সার দিয়ে।

মনে করেন আপনি একটা ফ্যাশন হাউজ দিলেন। এখন আপনার প্রোডাক্টের একটা বিলবোর্ড বানাবেন (আড়ং টাইপের), সে ক্ষেত্রে নিলখেতের একজন গ্রাফিক ডিজাইনার কে দিয়ে বানালেই তো হয়। কিন্ত সমস্যা হচ্ছে মডেলের ছবি আপ্নাকে দিতে হবে, নিলখেতের ডিজাইন আপনার পছন্দ হবেনা, প্রতিটা কাজে আপ্নার ডিরেকশন দেয়া লাগবে ইত্যাদি। মহা ঝামেলা। কিন্ত এখন কাস্টোমার রা অনেক সচেতন।

তারা ক্রিয়েটিভ জিনিস দেখতে চায়, যা তাদের আকর্ষন করবে। এই সৃষ্টিশীলতা নিলখেতের একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের কাছে আপনি পাবেন না। এভাবেই একদল সৃষ্টিশীল তরুন তরুনির হাত ধরে তৈরি হলো এড এজেন্সি। বাংলাদেশের সবচাইতে পুরাতন এড এজেন্সি হচ্ছে এশিয়াটিক। যার বর্কতমান পরিচালক আলী জাকের।

কয়েকদিন আগেই তারা ৪০ বছর পুর্তি করলো। যাই হোক, এজেন্সিগুলা আবার কয়েক টাইপের হতে পারে। যেমন- মেগা এড এজেন্সি- যারা ব্রান্ডিং প্লানিং থেকে শুরু করে টিভিতে এড সেল করা পর্যন্ত সব কাজ করে। এই ধরনের এজেন্সিকে ৩৬০ ডিগ্রী এড এজেন্সি ও বলে। যেমন গ্রে, এশিয়াটিক, এডকম ইত্যাদি।

এরা আপ্নাকে কোন চিন্তাই করতে দিবেনা। আপ্নার চাহিদা মত সব দেখবেন হাজির। একারনেই অনেক মাল্টিন্যাশ্নাল কোম্পানি তাদের ক্রিয়েটভ ডিপার্টমেন্ট কে দিয়ে এখন আর এড করায় না। ইন্ডিপেন্ডেন্ট এড ফার্ম - অনেক টা ফ্রি ল্যান্সিং এর মতই। এরা এডের শুধু এক্টা সাইড নিয়ে কাজ করে, হয় ভিজুয়াল এড( গ্রাফিক্স, পোস্টার, বিল্বোর্ড), না হয় অনলাইন এড, না হয় শুধু মাত্র টিভিসি ( টেলিভিশন এড)।

আপনি নিজেও কয়েকজন কে নিয়ে খুলে ফেলতে পারেন একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট এজেন্সি। তবে ক্লায়েন্ট আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে। নাইলে খাইবেন ধরা। ইভেন্টস ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি- প্রথম পোস্টে বলেছিলাম, ইভেন্টস ও এক ধরনের এডভার্টাইজিং, এতে স্পনসরের এড হয়। বাংলাদেশে ইভেন্টের কাজ সবচাইতে বড় কাজগুলা করে "মাত্রা"।

এশিয়াটিক ও তাদের ইভেন্টস এর দিক দিয়ে অনেক এফিয়ে গেছে। মিডিয়া বায়িং হাউজ- এড বানালেই তো শুধু হবেনা, সেগুলা তো সেল ও করা লাগবে। এইখানে মজার এক্টা ব্যাপার আছে। প্রতিটা টিভি চ্যানেল কিন্ত তাদের লাভের সিংহ ভাগ পায় এডের জন্য চাঙ্ক ( সময়) বিক্রি করে করে। বর্তমানে ৩০ সেকেন্ডের এক্টা এড দেখানোর জন্য টিভি চ্যানেলগুলা ১০,৫০০ টাকা করে নেয়।

১ ঘন্টার এক্টা প্রোগ্রামের জন্য ১৮০ সেকেন্ড সময় বিক্রি করে ৮০ হাজার থেকে- ১ লাখ টাকা। কি, মাথা ঘুরাচ্ছে না ? এই এড কিনা বেচার কাজ যারা করে , তারাই হচ্ছে মিডিয়া বায়িং এজেন্সি। বাংলাদেশের নামি দামি কিছু এড এজেন্সি মাত্রা- আফজাল হোসেন, (শাইনপুকুরের এডগুলার কথা মনে আছে ?) এশিয়াটিক জে ডব্লিউটি - আলী জাকের গ্রে- নির্ভিক সিং, শাওন এডকম- গিতিয়ারা চৌধুরি ব্রান্ডভেন্ট কমিউনিকেশন- মনিরুল আহসান ধানসিড়ি- শমি কায়সার বিটপি ক্যারট কমিউনিকেশন এক্সপ্রেশন- ত্রপা মজুমদার ইত্যাদি। আসেন দেখি কিভাবে কাজ করে এইসব এড এজেন্সি। তার আগে এক্টা এড দেখে আসি- এই এড টা বানিয়েছে শ্রদ্ধেয় অমিতাভ রেজা।

আমরা এইটুকুই জানি। কিন্ত তিনি তো শুধু ডিরেকশনে ছিলেন। তাহলে বাকি কাজ করলো কে ? বাকি কাজ করেছে ব্রান্ডভেন্ট কমিউনিকেশন নামে একটা এড এজেন্সি। খুলে বলি তাইলে ঘটনা। প্রথমে গ্রামীনের ডিজুস প্রজেক্ট ডিরেক্টরের সাথে কথা হয় মার্কেটিং ডিরেক্টরের।

তারা ঠিক করলো, এবার কাজ করাবে ব্রান্ডভেন্ট এজেন্সি কে দিয়ে। ডিল হলো ক্লায়েন্টের সাথে এজেন্সির। এখন এজেন্সি কিভাবে কাজ করে এটা জেনে রাখা দরকার। সাধারনত মেগা এজেন্সিগুলাতে কয়েকটা ডিপার্টমেন্ট থাকে। ১) একাউন্টস ডিপার্টমেন্টঃ একাউন্ট মানে কিন্ত হিসাব নিকাশ না, এডভার্টাইজিং এর ভাষায় একাউন্ট মানে হচ্ছে ক্লায়েন্ট।

আপ্নার একাউন্টস কারা জিজ্ঞেস করলে বুঝবেন জান্তে চাওয়া হচ্ছে আপ্নি কাদের কাদের এড বানান। যেমন- সাধারনত, গ্রামীনের এড বানায় গ্রে, বাংলালিঙ্ক হচ্ছে বিটপির একাউন্ট, এয়ারটেল হচ্ছে এশিয়াটিকের একাউন্ট, ইউনিলিভার হচ্ছে এশিয়াটিকের একাউন্ট। কাজেই একাউন্টস ডিপার্ট্মেন্টের কাজ হচ্ছে ক্লায়েন্টের সাথে সকল রকম লিয়াজো মেইন্টেইন করা এবং তাদের ডিমান্ড এজেন্সিতে জানিয়ে দেয়া। ২) প্লানিং এন্ড স্ট্রাটেজি ডিপার্ট্মেন্টঃ এদের কাজ হচ্ছে ক্রিয়েটিভ ডিপার্ট্মেন্ট আর ক্লায়েন্টের সাথে বসে কৌশল ঠিক করা। কাদের জন্য এড, টার্গেট গ্রুপ কারা, কোথায় দেখানো হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

যেমন উপরের এডের টার্গেট ক্লায়েন্ট হচ্ছে তরুন সমাজ। কাজেই তাদের কি আকর্ষন করতে পারে, কোন গায়ক কে রাখা যেতে পারে, থীম কোন টা হবে সব ঠিক করে দিলো প্লানিং ডিপার্টমেন্ট। ৩) ক্রিয়েটিভ ডিপার্টমেন্টঃ এটা হচ্ছে এজেন্সির প্রান। এরাই সকল রকম ক্রিয়েটিভ কাজ করে। প্লানিং হয়ে যাবার পর ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর একটা মিটিং করে আর্ট ডিরেক্টর আর কপিরাইটারের সাথে।

কপিরাইটারের কাজ হচ্ছে সমস্ত কিছু লিখে ফেলা। যেমন- উপরের এডে ডিজুসের যে স্লোগান- "বন্ধু , আড্ডা, গান, এখানেই- ডিজুস" । এইটাও কিন্ত কপিরাইটারের লেখা, তার আইডিয়া। মানে এক্টা এডে আমরা যা যা ডায়ালগ দেখি, স্লোগান দেখি ইত্যাদি সবি কপিরাইটারের কাজ। প্রথম আলোর "এত মা মা করে কি হবে " এইটাও কিন্ত ঝাক্কাস এক্টা কপি।

আর আর্ট ডিরেক্টরের কাজ হচ্ছে কপিরাইটারের কপিকে ভিজুয়ালাইজ করানো। তারই আন্ডারে থাকে গ্রাফিক ডিজাইনার, ইলাস্ট্রেটর, ফটোগ্রাফার, এনিমেটর , পেইন্টার ইত্যাদি। ৫) ইভেন্টস ডিপার্ট্মেন্টঃ মেগা এজেন্সি ছাড়া আর কারো ইভেন্টস ডিপার্ট্মেন্ট থাকেনা। থাক্লে তারা শুধুই ইভেন্টস এর কাজ করে। যেমন এশিয়াটেকের ইভেন্টস পুরা ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ কাভার করেছে।

"বাচতে হলে জানতে হবে" এইডসের এই ক্যাম্পেইনের কথা মনে আছে ? এটা করেছে আফজাল হোসেনের মাত্রা। ৪) প্রোডাকশনঃ এইটা সব এজেন্সির থাকেনা। উপরে ডিজুসের যে এড টা দেখলেন, সেটা বানিয়েছে বায়োস্কোপঅলা। এরা আবার ব্রান্ডভেন্ট এর ই সিস্টার কন্সার্ন। তবে যাদের নিজেদের প্রোডাকশন হাউজ নেই, তারা কোন প্রোডাকশন হাউজের সাথে ডিল করে নেয়।

কয়েক টা পরিচিত প্রোডাকশন হাউজ হচ্ছে, ছবিয়াল , ডিরেক্টর ফারুকি এবং তার ভাই কিবরিয়া ফারুকি। সাধারনত সিনেমাটোগ্রাফিতে থাকে গোলাম মাওলা নবী ছবিয়ালের করা রবির এক্টি এড দেখি চলেন, দারুন স্টোরি, স্লোগানের সাথে পারফেক্ট। এটার স্লোগান কিন্ত এশিয়াটিকের ক্রিয়েটভের ঠিক করে দেয়া। ফারুকি শুধুমাত্র এড টি বানিয়েছে। রেড ডট প্রোডাকশন, ডিরেক্টর গাজী শুভ্র, সিনেমাটোগ্রাফার সাধারনত খস্রু কে নেয়।

আসুন তাদের এক্টা কাজ দেখি। বাংলাদেশ নেভির জন্য বানানো এড। হাফ স্টপ ডাউন, ডিরেক্টর অমিতাভ রেজা, সিনেমাটোগ্রাফার সাধারনত রাশেদ জামান। বসের আর কি এড দেখবেন, সব ই তো সেইরকম। "গ্রে" এজেন্সির করা সেই বিখ্যাত এড টা দেখুন।

ইদানিং কেউ যদি অমিতাভ রেজার কাছাকাছি যাওয়ার মত থাকে সে হলো পিপলু আর খান। প্রোডাকশন হচ্ছে "এপেলবক্স ফিল্ম", মাঝে মাঝে ধ্রুব হাসান ও ডিরেকশন দেয়। আসেন দেখি তার করা প্রথম আলোর উটপাখির এড। কোন কোন ডিরেক্টর আছেন যাদের দিয়ে এজেন্সিগুলা ফ্রি লান্সিং করিয়ে নেয়। আমার পছন্দের একজন হলো গোলাম কিসলু।

সে কিন্ত আগে অমিতাভ রেজার এসিস্ট্যান্ট ছিলো। আমি তার ভক্ত হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। আসেন সেই রকম এক্টা এড দেখি। কালার টোন, জিঙ্গেল, শোট ডিভিশন, পুরাই অসাম। তবে সব চাইতে দুখের ব্যাপার হলো বাংলাদেসে কোন পোস্টপ্রোডাকশন ভালো হাইজ নেই।

সবাই তাদের শুটিং শেষ করে ইন্ডিয়া সিঙ্গাপুর নিয়ে যায় ভিজুয়াল এফেক্টের কাজ করানোর জন্য। ইন্ডিয়ার "পিক্সিয়ন মিডিয়া" সাধারনত সবচাইতে বেশি কাজ করে বাংলা বিজ্ঞাপনের। প্রোডাকশন নিয়ে আরেক দিন ডিটেইলস বলবো। তার আগে চলুন টাকা পয়সার কিছু ব্যাপার দেখে নেই। খানিক টা আগ্রহ বাড়তে পারে আপ্নাদের।

এক্টা ভালো এজেন্সি কর্পোরেট আইডেন্টিটি (লোগো,কালার,সিম্বল,সাইন) করতে মিনিমাম ২-৫ লাখ টাকা নিবে। এক্টা ভালো টিভি এড করতে মিনিমাম ১৫-২০ লাখ টাকা নিবে। মিনিমাম... যেমন- অমিতাভ রেজা ডিফেন্সের এই এড টা করতে নিয়েছে ৫০ লাখ টাকা। ভাবছেন এত টাকা কোথায় যায় ? সিনেমাটোগ্রাফার রাশেদ জামান পার ডে তার চার্জ নেয় ৩০ হাজার টাকা। তাইলে একটা এড বানাতে এক সপ্তাহের জন্য তাকে দিতে হয় ২ লাখ টাকার উপরে, এবার বুঝেন ঠেলা.. কিউবির প্লে টু ডিস্কোভার করতে খরচ হয়েছে ১.৫ কোটি টাকা।

এটাই মনে হয় বাংলাদেসের সবচাইতে ব্যায়বহুল। আসেন, সেইটাও দেখে ফেলি এক নজরে। ডিরেক্টর পিপ্লু আর খান। এইডস এর টোটাল ক্যাম্পেইনে "মাত্রা" নিয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এর অর্ধেক ই অবশ্য গেছে আফজাল হোসেন আর নাহিদ আনোয়ারার পকেটে।

সে আবার এক ভিন্ন ইতিহাস। যাই হোক শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ইহাই সত্যি। কাজেই আপ্নারা যারা মার্কেটিং নিয়ে পড়েছেন, তারা প্লানিং এন্ড স্ট্রাটেজিতে চেষ্টা করতে পারেন। যারা ভালো লেখেন,ছবি আকেন, গ্রাফিক্সের কাজ পারেন তারা ক্রিয়েটিভ এ চেষ্টা করতে পারেন। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচাইতে সম্ভাবনাময় এক্টা সেক্টর হচ্ছে এডভার্টাইজিং ইন্ডাস্ট্রি।

আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের এড কে বিশ্বমানের বলা যায়। শিল্প এবং অর্থ, দুইটাই আনতে পারবেন এই সেক্টর থেকে , যদি থাকে ডিভোশন। আর যারা লং টার্মে ফিল্ম নিয়ে কাজ করতে চান, তারাও হাত পাকিয়ে নিতে পারেন। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।