আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘সাবধানতার অপর নাম সুস্থতা’॥ রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা

মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে বসতে ভা্ল লাগে....। রাজধানীতে আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা। চলন্ত অবস্থায় প্রতিনিয়ত ঘটছে সিএনজি চালিত যানবাহনে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। বোমা বিস্ফোরন ঘটেছে মনে করে পথচারী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা আতংকিত হয়ে পড়ছেন।

সিএনজি চালিত যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও এসব গাড়িতে ব্যবহৃত সিলিন্ডারের মেয়াদ আছে কিনা সে ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা খোঁজ-খবরও রাখছেন না। চালক ও মালিকরা ইচ্ছা অনুযায়ী সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। গত তিনমাসের ব্যবধানে ঢাকায় ১৪টি যাত্রীবাহি বাসে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যানবাহন তল্লাশী করে গ্যাস সিলিন্ডারের কাগজপত্র পরীক্ষা করলে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা রোধ করা সম্ভব। রাজধানীতে চলাচল করা সিএনজি চালিত যানবাহনগুলো দিন দিন বিপদজনক হয়ে উঠছে।

যখন তখন মাঝপথে যানবাহনের সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হচ্ছে। আতঙ্ক আর সংশয় নিয়েই সিএনজি চালিত যানবাহনে চলাচল করছে মানুষ। পরিবেশ বান্ধব হিসেবে প্রথম রাজধানীর রাজপথে সিএনজি চালিত অটোরিকশা নামানো হয়। তেলের চেয়ে গ্যাসে খরচ কম হওয়ায় কিছু সরকারি পুরানো যানবাহন ছাড়া প্রায় ৯০ ভাগ যানবাহনেই সিএনজি সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। গত জোট সরকার ঢাকার রাস্তা থেকে পেট্রোল চালিত সব ধরনের অটোরিকশা তোলে নেয়।

পরে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালু করা হয়। অটোরিকশা থেকে কোন ধরনের কালো ঁেধায়া বের না হওয়ায় বাস ট্রাক ও প্রাইভেটকারে সিএনজি সিলিন্ডার ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয়। শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে সিএনজি চালিত যানবাহন চলছে। অকটেন বা পেট্রোলের চেয়ে খরচ কম হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা পেয়েছে ব্যাপক। কিন্তু এক শ্রেনীর দুর্নীতি পরায়ন লোকদের কারণে নিম্নমানের সিলিন্ডার তৈরী করা হচ্ছে।

পুরাণ ঢাকার ধোলাইখালে পাওয়া যাচ্ছে নিম্নমানের সিলিন্ডার। এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রো পলিট্রন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য ট্রাফিক বিভাগ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ করা দরকার। উন্নত মানের সিলিন্ডার কেনার জন্য মালিকদের প্রতি আহবান জানান সংশ্লিষ্টরা। এক সিলিন্ডার বিশেষজ্ঞ জানান, সিলিন্ডার কেনার আগে টেস্ট সার্টিফিকেট আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিতে হবে।

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সিলিন্ডার রি-টেস্ট না করার কারণে মাঝপথে বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। ঢাকার রাস্তায় যেসব যানবাহনে সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে তার ধারণ ক্ষমতা তিন হাজার পিএসআই। কিন্তু ফিলিং ষ্টেশনে গ্যাস ভরা হচ্ছে পাঁচ হাজার পিএসআই। ফলে সিলিন্ডারের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে এবং বিষ্ফোরণ ঘটছে। পাশাপাশি যানবাহনে নি¤œমানের সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে।

ওই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, পাঁচ বছর পরপর সিলিন্ডার রি-টেস্ট করার পাশাপাশি গুণগত মানসম্পন্ন সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হবে। ধোলাইখাল থেকে কেনা সিলিন্ডার ব্যবহার করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে বলে তিনি আশংকা করেন। রাজধানীতে প্রতিদিন যে পরিমাণ সিএনজি চালিত যানবাহন চলাচল করছে এর বেশীর ভাগ সিলিন্ডারই নিম্নমানের। ফলে দূর্ঘটনার ঘটনা বেশী ঘটছে। আবার এমনও আছে যে সিলিন্ডারের মেয়াদ পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে।

অথচ রি-টেস্ট করা হচ্ছে না। রাজধানীতে যে সব পরিবহন কোম্পানীর সিএনজি চালিত বাস চলাচল করছে তার মধ্যে রয়েছে-ট্রান্স সিলভা, মৈত্রী, ফাল্গুন, এলাইক, রংধনূ, বেভকো, মালঞ্চ, ট্রান্স মিলেনিয়াম, মেগাসিটি ও গ্রীণ সিটিসহ আরও কিছু পরিবহন। পরিবহন মালিকদের অনেকেই অবৈধভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নকল এবং মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে যাত্রীবাহী বাসে। ধোলাইখালে একটি বাসের সিলিন্ডার ২৫ হাজার টাকা থেতে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।

অথচ উন্নতমানের ফিলিং স্টেশনে বাসের সিলিন্ডার বিক্রি হয় এক লাখ ২০ হাজার টাকায়। ফাল্গ–ন পরিবহনের শ্রমিক আবদুর রহিম নবরাজকে জানান, লোকাল বাস মালিকরা ধোলাইখাল থেকে গ্যাস সিলিন্ডার কিনে থাকে। ধোলাইখালের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সিএনজি স্টেশন মালিকদের সঙ্গে আতাত রয়েছে। একটি যাত্রীবাহী বাসে পাঁচ-ছয়টি সিলিন্ডার লাগানো হয়। ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, নিম্নমান ও মেয়াদোত্তীর্ন সিলিন্ডার ব্যবহারের কারণেই বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটছে।

নি¤œমানের এসব সিলিন্ডার সিএনজি কনভারশন সেন্টারের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি হয়। তিনি আরও বলেন, গ্যাস ঢোকানোর আগে সিলিন্ডারের মেয়াদ এবং ধারণক্ষমতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা থাকলেও ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ তা মানছে না। এতে নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়না। আমরা একটু সচেতন হলেই কিন্তু এই ঝামেলার হাত থেকে রেহাই পেতে পারি। পরিবহন ব্যবসায়িরা একটু আন্তরিক হলে আর সমস্যাটা থাকে না।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস সংকটের কারণে বিশেষ জেলা শহরগুলোতে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে। তাই দোকান থেকে সিলিন্ডার আনার সময়, পরক করে নিন, সিলিন্ডারটি উন্নতমানের এবং নতুন কিনা। ‘সাবধানতার অপর নাম সুস্থতা’। এর কোনো বিকল্প নেই। হাসান মাহামুদ সংবাদকর্মী  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।