আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা কি দাইউস হয়ে যাচ্ছি ?

দাইউস কাকে বলে জানেন ? দাইউস হলো সে ব্যক্তি যে কিনা তার পরিবার পরিজনকে সঠিক রাস্তায় পরিচালনা করেন না এবং পরিবার পরিজন সঠিক ভাবে না চললেও ভালো মনে করেন বা প্রতিবাদ করেন না। যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-সন্তানদের বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার সুযোগ দেয় তাকেও দাইউস বলা হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যে, “আল্লাহ তিন ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম করেছেন। মাদকাসক্ত, পিতা-মাতার অবাধ্য এবং দাইউস, যে তার পরিবারের মধ্যে ব্যভিচারকে প্রশ্রয় দেয়” (মুসনাদে আহমাদ: ২/৬৯) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন : ‘দাইউস ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ’ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ)! দাইউস কে? উত্তরে রাসুলূল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার পরিবারে আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়নের ব্যাপারে কোন তৎপরতা অবলম্বন করে না বরং উপেক্ষা করে চলে।

’ অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, ‘দাইউস হল সে, যে তার পরিবারে বেহায়পনার বাস্তবায়নে সন্তষ্ট ও পরিতুষ্ট। ’ (আহমদ) কোরআনে আল্লাহ বলেন, “তোমরা নিজেরা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা কর এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর। যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর; যার উপর নিয়োজিত রয়েছেন কঠোর হৃদয় সম্পন্ন ফিরিশতাগণ, তারা আল্লাহ যা নির্দেশ করেন তা বাস্তবায়নে অবাধ্য হোন না, আর তাদের যা নির্দেশ প্রদান করা হয়, তা-ই তামিল করে’’। ( সূরা আত-তাহরীম: ৬) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, রাষ্ট্রনেতা তার প্রজাদের সম্পর্কে দায়িত্বশীল আর তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পুরুষ লোক তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

একজন মহিলা তার স্বামীর ঘরের সার্বিক ব্যাপারে দায়িত্বশীলা, তাকে সেটার পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পরিচারক তার মালিকের সম্পদের সংরক্ষক, আর তাকে সেটার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এক কথায় তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর সবাই জিজ্ঞাসিত হবে সে দায়িত্ব সম্পর্কে”। (বুখারী : ৭১৩৮; মুসলিম: ১৭০৫) আমি যদি নিজেকে মুসলমান হিসাবে দাবী করি তাহলে অবশ্যই কোরআন হাদীস মেনে চলবো। উপরের কোরআন ও হাদীস গুলো যদি নিজের সাথে মিলিয়ে নেই তাহলে কি দেখতে পাবো ? আমি কি সঠিক ভাবে আমার দায়িত্ব পালন করছি ? আমার পরিবার কে সঠিক নিয়মে পরিচালনা করছি ? আমি জোর গলায় বলতে পারি, বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কেউ আমরা নিজেরাতো সঠিক নিয়মে চলছি না বরং পরিবারকেও আমরা ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছি।

এ ব্যাপারে যদি কোন কথা বলতে যাই বা যুক্তি দেখাই তাহলে মুরুব্বিদের কাছে আমি হয়ে যাই ‘বেয়াদব’ আর সমবয়সীদের কাছে আমি হয়ে যাই ‘আতেল’। তাদের ভাষ্য মতে একটু লেখাপড়া করেই আমি বেশী বুঝি, বেশী জ্ঞানী হওয়ার চেষ্টা করি। আমার টাইটেল হয় মহিলা হুজুর, তালেবান, জামাতী, হিজবুত তাহরির ইত্যাদি। কিছু লোক তো বলেই ফেলেন, ‘শুনো, আমরা হলাম সাধারন মুসলিম, এত কিছু চিন্তা করলে আমাদের চলে না। এত কিছু মানতেও আমরা পারবো না।

নামায পড়ে, রোযা রেখে ঠিকমত (‘ঠিকমত’র ডেফিনেশন কি আল্লাহ মালুম) চলতে পারলেই হলো। ইসলাম নিয়ে এত কঠিন কেউ হতে বলেনি। আর সব কিছু পালন করা সম্ভব না। এগুলো নবী রাসুলরা পালন করবেন, ওলী আউলিয়ারা পালন করবেন’। আমার অবাক লাগে! একজন শিক্ষিত মানুষের মাথায় কিভাবে এই চিন্তা আসে ? তাহলে ইসলাম ধর্ম কি কিছু অংশ নবী রাসুলদের জন্য আর কিছু অংশ সাধারন মানুষের জন্য নির্ধারিত ? ‘বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ’- ছোটবেলা থেকে এই কথাটা জেনে এসেছি বিভিন্ন বইপত্র আর পত্রিকা থেকে।

এখানে রাষ্ট্রধর্ম নাকি ইসলাম। আসলে বলা উচিৎ ‘বাংলাদেশ একটি মুসলিম নামধারী দেশ’। এখানে আমার বাপ-দাদারা মুসলিম, আমি মুসলিম ঘরে জন্ম নিয়েছি, তাই আমার নামও মুসলিমদের সাথে মিলে যায়। কিন্তু আমার কর্মকাণ্ড মুসলিমদের মত নয়। কিভাবে বা কেনো , এই প্রশ্ন আপনার মনে আসতে পারে।

তাহলে খুলেই বলি। ধরা যাক, একটি পরিবারের কথা। বাবা-মা, ছেলে মেয়ে নিয়ে এই পরিবার। তো এই বাবা-মা নামায পড়েন ঠিকই, রোযাও রাখেন, মাঝে মাঝে আবার নানা ঝামেলায় নামাজ রোজা রাখাও হয় না, আবার একজন পড়েন তো আরেকজন পড়েন না, ইনকাম হালাল, কিন্তু আবার সঞ্চয় পত্রের সুদ খেয়ে যাচ্ছেন, ব্যাংকের সুদ খেয়ে যাচ্ছেন। ছেলে মেয়েকে হুজুরের কাছে আরবীও পড়ায়, গানের স্কুলে গানও শিখায়, নাচের স্কুলে নাচও শিখায়।

মা টাইট ফিটিং কাপড় পরে, পেট পিঠ দেখিয়ে শাড়ি পরে সবার সামনে ঘুরে বেড়ায় আর মেয়ে টাইট ফিটিংস টপস পরে ঘুরে বেড়ায়। যদি বুঝানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে বলবে, ‘আরে, বাচ্চা মেয়ে, এই বয়সে একটু পরবেই’। তাহলে মেয়ের মা ও কি বাচ্চা ! পর্দার কোন লেশ মাত্র নেই। (মেয়েরা লজ্জাহীন ভাবে শরীর দেখিয়ে বেড়ায় আর ছেলেরাও লজ্জাহীন ভাবে তা দেখে যায়। যদিও বলবো ছেলেরা মেয়েদের থেকে এক ডিগ্রী ভালো আছে।

তারা তো আর পেট পিঠ দেখিয়ে বেড়ায় না। কেউ চাইলেও দেখতে পারবে না। দেখতে চাইলে বলতে হবে, ভাই শার্ট টা খুলুন তো। ) আবার অনেক সময় মা পর্দা করে চললেও মেয়ে পর্দা করে না। ছেলে মেয়ে নামায পড়ে কিনা সেদিকে খেয়াল নেই, কিন্তু বিভিন্ন কম্পিটিশনে অংশগ্রহন না করলে জাত যায় অবস্থা।

রোযার সময় পরীক্ষা থাকলে, স্কুল থাকলে বাচ্চার কষ্ট হবে, তাই রোযা রাখতে দিতে দেওয়া হয় না। আবার পরীক্ষার সময় সারা রাত বাচ্চা লেখাপড়া করলো, তাই ফজরের সময় আর উঠতে পারলো না। বাবা-মাও ফজরের সময় ডেকে দেয় না। বেচারা সারারাত জেগেছে, এখন একটু ঘুমাক। এমনিভাবেই দুনিয়ার কাজগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বেশী।

অথচ কোরাআনে আল্লাহ বলেন আখিরাতই আসল জায়গা। “এ পার্থিব জীবন তো অর্থহীন খেল তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। নিশ্চয় আখেরাতের জীবন হচ্ছে সত্যিকারের জীবন। কত ভালো হতো যদি তারা (এ বিষয়টা) জানতো!”- সূরা আনকাবুত,৬৪। আশেপাশে তাকালে এখন এমন জগাখিচুরী চিত্রই দেখতে পাই।

একটা মেয়ে যখন ছোটবেলা থেকেই দেখে আসে যে তার মা নামায রোযা করে কিন্তু পর্দা করে না, তাহলে সে সেটাই শিখবে। এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ফরজ বাদ দিতে দিতে আর কোন ফরজ পালন করবে কিনা সন্দেহ। আবার দেখা যায় বাবা নামায রোযা করে , আবার মদও খায়। তাহলে সন্তান তো তাই শিখবে। আমি যখন কাউকে ফোন করবো তখন নির্দিষ্ট ডিজিটগুলো প্রেস করেই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে চাইবো।

যদি একটা ডিজিট ভুল হয় তাহলে কখনোই নির্দিষ্ট মানুষটার সাথে যোগাযোগ করতে পারবো না। আমাদের জীবনটাও এমন। অর্ধেক কোরাআন হাদীস মানলাম, অর্ধেক মানলাম না। তাহলে আমি আমার আল্লাহ কে কেমন করে পাবো? জীবনের উদ্দেশ্য তো দুনিয়া মাতানো নয়। জীবনের উদ্দেশ্য হবে, নিজের সব কাজ,সব ভাবনা, সব ভালোবাসা, সব ঘৃনা, সমস্ত কিছু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আল্লাহকে খুশী করার জন্য।

অথচ আমরা কি করছি ? নিজের সন্তান, ধন সম্পদ, স্ট্যাটাস নিয়ে ব্যস্ত, অন্যের কাছে নিজের ভালো হওয়া নিয়ে ব্যস্ত। কোন লাভ নেই এসব করে। “ জেনে রেখো, তোমাদের মাল-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি হচ্ছে পরীক্ষা মাত্র, (যে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ন হবে) তার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে মহা প্রতিদান রয়েছে”। - সূরা আনফাল,২৮। আমরা আমাদের পরিবারকে, নিজেকে আখেরাতের জন্য তৈরী করবো।

আর দুনিয়াতে চলতে গেলে তো দুনিয়ার কাজ করতেই হবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে সে কাজগুলো যেন আল্লাহ’র নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে না যায়। আমি যদি সত্যিকারের মুসলিম হই, তাহলে আমি কোরআনে যা আছে তার সবটুকুই মেনে নিব। নিজের ইচ্ছা মত, সুবিধা মত কোরআন মানবো না। মুসলিম মানেই তো আনুগত্যকারী।

কিন্তু আমরা কি সঠিক ভাবে আল্লাহর আনুগত্য করছি? ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.