ক সুরাইয়া খানমের সময় এখন বড় আনন্দে কাটছে। তার দুই ছেলে স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে তার কাছে এসেছে। নাতি নাতনিরা দেখছে তাদের দাদা বাড়ি। বউমারা তাদের শাশুড়ির সেবা করছে। দুই ছেলে একদিন অন্তর বাজার করছে।
বাড়িতে একটা উৎসব উৎসব আমেজ। বউদের সেবার বহর দেখলে অবাক হতে হয়। বড় বউ পায়ের নখ কেটে দেয় তো ছোট জন মাথায় শ্যাম্পু করিয়ে দেয়। ছোটজন বেডটি খাওয়াচ্ছে তো বড় জন মাথা মুছে দিচ্ছে। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে এত আনন্দের সময় সুরাইয়ার আসেনি।
ছেলে দুইজন কখনো একসাথে বাড়ি আসে না। বউদের নিয়ে তো এভাবে কখনোই আসেনি। বিধবার এখন বড়ই সুসময়। ইলিশ মাছ খুব সস্তা যাচ্ছে আজকাল। সুরাইয়া ইলিশ খেতে পারেন না - অ্যালার্জি আছে।
তার দুই পুত্রই আবার ইলিশপ্রেমী। নাতি-নাতনি আর পুত্রবধূ মোট পাঁচজনের তিনজনই ইলিশপ্রেমী। পুত্ররা বাজার করলেও কিন্তু ইলিশ আনছে না। পুত্রবধূরাও বাজারে যাওয়ার আগে স্বামীদের সাবধান করে দিচ্ছে ইলিশের ব্যাপারে। শাশুড়িমাতা ইলিশ খেতে পারেন না।
তারাও তাই খাবে না।
খ গোমর ফাঁস হোল তিনদিন পর। পুত্ররা বিধবা মাকে নিঃস্বার্থ ভাবে 'সময়' দিতে আসেনি। তারা আলাদা হচ্ছে - সম্পত্তি ভাগাভাগি করছে। বিধবা মা থাকবে বড় ছেলের ভাগে।
তার খরচ এখন আর দুই পুত্র মিলিত ভাবে চালাবে না। সবারই খরচ বেড়েছে - তেলের দাম বাড়ছে। বিনিময়ে বসতভিটা থেকে বড় ছেলে কিছু বেশি পাবে। কিন্তু সুরাইয়া খানম আছেন অন্য চিন্তায়। তার গলায় আছে এক ভরির একটা হার।
স্বামীর দেওয়া গয়নাগাটির প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই। দুই ছেলের ঘরেই নাতনি আছে। কাকে তিনি নেকলেসটা দেবেন? ভাগ করে দুইজনকেই দেওয়া যায়। কিন্তু স্বামীর হাতের জিনিস নষ্ট করতে বিধবার ইচ্ছে হয় না। দোনোমনো করতে করতে ছোট ছেলের কন্যাকেই দিয়ে দেন।
ছোট ছেলের হোলেও এটা তার বড় নাতনি।
গ এক বছর পরের কথা। সুরাইয়া খানম এখন ঢাকায়। বড় ছেলের বাসায়। ঢাকায় সুরাইয়ার মন টেকে না।
কেমন ছোট ছোট ঘর! দুই নাতি-নাতনি স্কুলে যাওয়ার পর পুরো ফ্ল্যাট খালি খালি লাগে। গত পরশু এসেছেন তিনি। ঢাকার বাজারে এবারও ইলিশের দাম কম। সুরাইয়া কাল দুপুরে খেয়েছেন ইলিশ। রাতে ইলিশ ভাজা আর সর্ষে ইলিশ।
আজ দুপুরের জন্য ইলিশের ডিমের নতুন এক আইটেম রান্না করছে বৌমা। ইলিশে অ্যালার্জির জন্য সুরাইয়া কাল থেকে প্রায় না খেয়েই আছেন। ভাত না খেলে আবার খাওয়া হয় নাকি! ছেলে আর ছেলের বউ বোধহয় তার কথা ভুলেই গেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন সুরাইয়া খানম। আর কীইবা করার আছে? এবার যে তার গলা খালি!
২০০৬, রাজশাহী
(এই গল্পটা উন্মোচন ডটনেটে প্রকাশ করা হয়েছিল।
যদিও প্রথম প্রকাশিত হয় একটি কলেজ সাময়িকীতে। এই লেখা সামহোয়্যারে আবার টেনে আনার কারণ কয়েকটি। যেমন:
০১. এর পাঠকসংখ্যা বিপুল পরিমান। এর লোভ সামলানো মুশকিল। আবার পাঠক বিপুল সংখ্যক হবার কারণে নির্দিষ্ট কোন রঙ অন্তত এখনো গ্রহণ করেনি সামহোয়্যার।
অন্যান্য কমিউনিটি ব্লগগুলো নানা পন্থাবলম্বী।
০২. আমি যেহেতু নিয়মিত নই, আমাকে লিখতে গেলে একটি ব্লগে লেখাই ভালো। পড়া চলে সবই, কিন্তু লেখার জন্য একটাই ভালো। ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।