আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভেবেছিলাম নায়ক আমিই কিন্তু এখন তো দেখছি মেইন নায়ক অন্য কেউ । আমিতো সাইড নায়কও না !!!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -প্রিতম ভাইয়া নাচবো তোমার সাথে ? আমি ঈশিতার দিকে চট করে তাকিয়ে নিলাম । পৃশিতার কথায় বেশ বিরক্ত মনে হল । আমি বললাম -আমি তো নাচি না । গিটার বাজাই । আর ডাক্তারী করি ।

- উহুহুহুন !! নাচবো !! ঈশিতা এবার বেশ বিরক্ত হল । বোনকে বলল -পৃশু খুব পেকেছিস না । বাসায় চল । তোর পাকামো বের করছি । আমি পৃশিতা কে বললাম -পৃশু তোমাদের বাসায় ফ্যান চলেতো সব ঘরে ? -কেন ভাইয়া এই কথা কেন বলছো ? -না মানে যা গরম পরেছে আর তোমার আপার মাথা যা গরম ! ফ্যান না চললে তো সমস্যা ।

গরমে গরমে না পৃথিবী গরম হয়ে যায় ! দেখবে উত্তর মেরুর সব বরফ গলে গেছে এই গরমের ঠ্যালায় । পৃশিতা খিল খিল করে উঠল । বলল -ঠিক বলেছ ভাইয়া । সারাক্ষন গরম থাকে ! আমার জান ঝালাপালা করে দেয় । -পৃশু একটা কাজ করা যেতে পারে ।

-কি ভাইয়া ? -এখনতো গ্যাস সংকট চলছে । গরম মাথার উপর যদি রান্না বসিয়ে দেওয়া হয় তাহলে কেমন হবে । -খুব ভাল হবে ভাইয়া ! ঈশিতা আসতে আসতে গরম হচ্ছে বুঝতে পারছিলাম । আমাদের সাথে আর না বসে উঠে চলে গেল । ছাদের ঐ পাশটাতে গিয়ে বসল ।

ঈশিতা যেখানে গিয়ে বসল এখান থেকে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে । আগে তো পৃশুর পাশে বসে ছিল । ওখে দেখতে হলে মাথা ঘুরাতে হচ্ছিল । এখন আর মাথা ঘুরাতে হচ্ছে না । ওকে এখান থেকে ভাল ভাবেই দেখা যাচ্ছে ।

ঈশিতা সব সময় খুব গম্ভীর থাকে । কদিন আগে আমার সাথে টুকটাক কথা বলতো । কথা বলত মানে কথা জানতে চাইলে উত্তর দিতো । ইদানিং তাও দেয় না । আমি পৃশুকে জিজ্ঞেস করলাম -তোমার অপুর কি হয়েছে ? -আপুর ? হঠাৎ পৃশুর মুখটা কেমন জানি কালো হয়ে গেল ।

-কই কিছু হয় নি । পৃশু যেভাবে বলল আমার মনে হল সত্যি সত্যি কিছু না কিছু হয়েছে । -ভাইয়া তোমাকে একটা কথা বলবো ? -বল । - প্রোমিজ কর আপুকে বলবা না । -আচ্ছা বলবো না ।

-আপু না তোমার গিটার বাজানো অনেক পছন্দ করে । তুমি যখন রাতের বেলা বারান্দায় বসে গিটার বাজাও আপু খুব মন দিয়ে শোনে । কথাটা শুনে কেন জানি খুব অবাক হলাম । খুব ভাল লাগল । পৃশু বলল -আপুর কাছে যাই ? আপু অনেক ক্ষন একা একা বসে আছে ।

বললাম -চল আমিও যাই । পৃশুকে নিয়েই ঈশিতার কাছে গেলাম । ও গম্ভীর মুখে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে । অন্য দিকে । -আচ্ছা পিশু তোমার আপা কি দাত ব্রাস করে না ? -করে তো ভাইয়া ।

-কেন বলছো ? -না আমি তো কখনও তাকে হাসতে দেখলাম না । ভাবলাম হয়তো দাতে কোন সমস্যা । -না ভাইয়া আপুর দাত অনেক সুন্দর । হাসিও অনেক সুন্দর । -পৃশু চাপ থাক ।

তুই কিন্তু বেশি কথা বলছিস ? আর আপনি ? ঈশিতা আমার দিকে তাকাল । -আমার পেছনে কেন লেগেছেন । -আরে আমি কখন লাগলাম আপনার পিছনে । আমি তো কেবল আপনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি । -কেন ? কেন চেষ্টা করছেন ? -আপনি বোঝেন না কেন চেষ্টা করছি ? ঈশিতা তীব্র চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন ।

আসতে আসতে লক্ষ্য করলাম চোখের দৃষ্টিটা নমনীয় হয়ে এল । ঈশিতা চোখের দৃষ্টি নামিয়ে নিল । এই মেয়ে গুলে এমন কেন হয় ? কখন যে কি করে বোঝা বড় মুশকিল ! পৃশু বলল -জানো ভাইয়া আপার শরীরটা না ভাল না । এই জন্য আপু সবার সাথে এমন করছে । তাছাড়া আপুটা এমন করে না ।

-পৃশু তোকে না বললাম চুপ থাকতে । এতো কথা কিসের ? -কি হয়েছে ? -আমি বলতে পারবো না । আমাকে বকবে । এবার আমি ঈশিতাকে বললাম -কি হয়েছে ? -কিছু হয় নি । -প্লিজ বলেন ।

বললাম না কিছু হয় হয় নি । আপনি কেন বার বার এমনটা করছেন ? দেখুন প্রিতম সাহেব আপনি যা চাচ্ছেন আর হবে না । হবে না মানে কি ? ঈশিতা আমার কথার জবাব না দিয়ে তাকিয়ে থাকল আমার দিকে । শেষ বিকেলের এই আলোতে ঈশিতাকে কেমন জানি বড় বিষন্ন মনে হল । রাতে পড়া শুনা করছিলাম হঠাত্ একটা এসএমএস আসলো মোবাইলে ।

পৃশু পাঠিযেছে । মেসেজে পৃশু লিখেছে ভাইয়া আপু ছাদে গেছে । এতো রাতে ঈশিতা ছাদে কি করছে ? আমিও ছাদে উঠে এলাম চুপিচুপি । দেখলাম ঈশিতা বিকেল বেলা যেখান টাতে বসে ছিল এখনও সেই খানে বসে আছে । ওর পাশে গিয়ে বসলাম ।

কিছুক্ষন চুপচাপই রইলাম দুজনে । হঠাৎ ঈশিতা বলল -কিছু বলছেন না যে ! -কি বলবো ! তোমার পাশে বসে থাকতেই ভাল লাগছে । ঈশিতা আমার দিকে ফিরে তাকাল । আমি ভেবেছিলাম আপনি থেকে তুমি বলাতে হয়তো ঈশিতা একটু আরগু করবে । কিন্তু দেখলাম কিছু বলল না ।

আরো কিছুক্ষন চুপ থাকার পর ও বলল -পৃশু আপনাকে এসএমএম পাঠিয়েছে তাই না ? -কই না তো । আমি এমনিই ছাদে এসেছি । হঠাৎ ঈশিতা হেসে উঠল । বলল -কেন মিথ্যা কথা বলছেন ? -না ও পাঠায় নি । ঈশিতা হাসতে হাসতে বলল -আপনি ঠিকই বলেছেন ও পাঠায় নি ।

এসএমএস টা আমি পাঠিয়েছি । -কি ? আমি খানিকটা অবাক হলাম । -সত্যি ? -হুম । -কেন জানি আপনার সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছা করছিল । -আচ্ছা ।

কথাটা শুনে কেন জানি খুব ভাল লাগল । -কাল রাতে আপনি গিটার বাজাচ্ছিলেন । শুনছিলাম । -তাই ? -হুম । আপনি খুব সুন্দর বাজান ।

বলেই ঈশিতা চুপ করে গেল । তারপর হঠাৎ বলল -আপনারা ডাক্তার রা খুব নির্দয় হন, তাই না ? কিসে মধ্যে কি ? অবাক না হয়ে পারলাম না । বললাম -এই কথা কেন বললেন ? -আপনারা কিভাবে একটা প্রানকে মেরে ফেলেন ! কাটাকুটি করেন । খেলা করেন । -ছি ! এমন কথা কেন বলছ ? ডাক্তাররা কখনই এমন হয় না ।

তারা সবসময় চেষ্টা করে মানুষকে বাঁচানোর জন্য । সর্বাত্তক চেষ্টা । -তাই .....না ? ঈশিতার কন্ঠ কেমন যেন লাগল ! -আমি যাই ! -মাত্রই তো এলে । -যাই । শরীরটা ভাল লাগছে না ।

-ঈশিতা তুমি কিন্তু বললে না তোমার কি হয়েছে ? ঈশিতা হাসল । বলল -আপনি না ডাক্তার । রোগীর রোগ ধরতে পারলেন না ? ঈশিতা আর দাড়াল না । আমি ঠিক বুঝলাম না ও হঠাৎ এমন অদ্ভুদ আচরন কেন করল । নিজেই আমাকে আসতে বলল ।

আবার কিছু না বলে চলে গেল । এতো হেয়ালীর কোন মানে হয় । মাঝে মাঝে মনে হয় ওর পেছনে আর ঘুরে লাভ নাই । নতুন কোন প্রোজেক্ট হাতে নেই । কিন্তু বেশ খানিকটা পছন্দ করি ।

আর পারিবারিক ভাবেও কথা বার্তা চলছে । তাই অন্য দিকে আর যেতে ইচ্ছা করে না । \ এভাবেই চলছিল । দুতিন দিন পর দুপুর বেলা । দুপুর বেলা শুয়ে ছিলাম ।

এমন সময় পৃশু ছুটতে ছুটতে আমার ঘরে এল । ওকে এভাবে হাপাতে দেখে বললাম -কি হয়েছে পৃশু এভাবে হাপাচ্ছ কেন ? -ভাইয়া জলদি চল । আপা না মাথা ঘুরে পড়ে গেছে । প্লিজ চল । প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে দৌড়ালাম পৃশুদের ফ্লাটের দিকে ।

গিয়ে দেখি ঈশিতা মেঝেতে কেমন ভাবে পড়ে আছে । ঈশিতার বাবা মা দুজনই চাকরি করে । তাই এসময় কেউ থাকে ওদের বাসায় । দুজন মিলে বিছানায় তুললাম ওকে । হাতের পালস দেখলাম ।

চোখ দেখলাম । সব কিছুই দেখলাম । আমার মনে কেন জানি সন্দেহ হল । পানি ছিটিয়ে ওর জ্ঞান ফেরালাম । বললাম -ঠিক আছেন আপনি ? -হুম ।

ঈশিতা আমার দিকে তাকাল না । কেমন জানি একটা লুকানো লুকানো ভাব দেখলাম । যেন আমার দিকে তাকালে আমি কিছু একটা বুঝে ফেলবো । -কি হয়েছিল ? -হঠাৎ মাথাটা ঘুরে উঠল । -কদিন থেকেই এমন হচ্ছে ? ঈশিতা কিছু বলল না ।

পৃশু বলল -হ্যা ভাইয়া কদিন থেকেই এমন হচ্ছে । আর আজ সকাল থেকে বেশ কয়েক বার বমিও হয়েছে । আমি ঈশিতার চোখের দিকে তাকালাম । ওর চোখ দুটো কেমন জানি অস্থির মনে হল । বারবার এদিক ওদিক নড়াচড়া করতে দেখলাম ।

আমি পৃশুকে বললাম -একটু পানি গরম করে নিয়ে আসো তো আপু । -আচ্ছা ! পৃশু চলে গেলে আমি ঈশিতার হাত ধরলাম । ও ঠিক তখনই আমার চোখের দিকে তাকাল । যাও একটু সন্দেহ ছিল ওর চোখের দিকে তাকিয়ে তাও দুর হয়ে গেল । আমি কিছুক্ষন কোন কথাই বলতে পারলাম না ।

এতো খারাপ লাগছিল নিজের কাছে । যে মেয়েটাকে এতো দিন ধরে পছন্দ করে আসছিলাম সে কোন দিন আমার ছিলই না । বললাম -কবে থেকে সিওর হলে ? আর লুকিয়ে লাভ নেই জেনে বলল -এই মাস খানেক । -এই জন্য সেদিন কথাটা বলেছিলে ! ডাক্তাররা কেন এতো নির্দয় হয় ? ঈশিতা কোন কথা বলল না । -ঈশিতা আমরা কখনও কোন প্রানকে মেরে ফেলতে চাই না ।

কখনই না । আর এই অনাগত প্রানটাকে কে মেরে ফেলছে ? তুমি নাকি ডাক্তাররা ? আমি হাসলাম । আবার বললাম -তা এবোশন করার ব্যাপার কেন আসছে ? -আসিফ এখন বাবা হতে প্রস্তুত না । -আসিফ ? তাহলে ভদ্রলোকের নাম আসিফ । আদোও সে ভদ্রলোক কি না ।

-বলেছিলে তাকে ? -হুম । আমি কি বলবো আর বুঝতে পারলাম না । একটু পর বললাম -কোথায় করাবে ঠিক করেছ ? -অসিফ ঠিক করেছে । -ও । আচ্ছা তাহলে আমি যাই ? আমি চলে যাবো এমন সময় ঈশিতা পেছন থেকে বলল -প্রিতম ।

আমি ঘুরে দাড়ালাম । -হুম । -আমি কি ঠিক করেছি জানেন ? -কি ? -আমি আমার সন্তানকে মেরে ফেলবো না । ওকে আমি এই পৃথিবীকে নিয়ে আসবো । আমি অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম ।

কি বলছে এই মেয়ে ? মাথা ঠিক আছে তো ? কিন্তু ওর চোখদুটো কেমন জানি খুব দৃঢ় মনে হল । আমি আর দাড়ালাম না । আমার আর দাড়ানোর কোন মানে নাই । কেন জানি কষ্ট বুকের ভিতর কেমন একটা চিনচিন ব্যাথা করতে লাগলো এখানে আছে গল্পটা ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।