আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাতক্ষীরায় তিনদিন

তুই ভালো থাকিস, আমি সুন্দর থাকবো মার্চের ২২ তারিখ রাত এগারটায় বাস, প্রথমে চারজন যাবার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত যাচ্ছি ছয়জন। মহাখালী থেকে গাবতলী-র টেম্পুতে উঠলাম চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে, আফসোস করতে থাকলাম আমাদের বাস আরো কিছুক্ষন পরে হলে বাংলাদেশের খেলা পুরোটা দেখে-ই আসতে পারতাম। দুধের স্বাদ ঘোল দিয়ে মেটাবার ব্যার্থ চেষ্টা করতে লাগলাম রেডিওতে খেলা শুনে, সে ঘোলের স্বাদ-ও বিস্বাদ হয়ে গেল বাংলাদেশ হারাতে। কল্যানপুর কাউন্টারে এসে-ই জানতে পারলাম বাস আসতে ঘন্টাখানেক দেরি হবে। নিয়তি !!! অবশেষে বাস আসলো রাত ১২ টায়।

মাঝে একটা ছোট্ট গল্প বলে নেই। এক লোকের শ্বশুরবাড়ি খুলনায়, কোন এক বৃহস্পতিবার রাতে শ্বশুরবাড়ি যাবার জন্য বাসে উঠেই ভদ্রলোক ঘুমিয়ে পড়েন, খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখেন স্মৃতিসৌধ দেখা যায়। ভাই আমার বাস থেকে নেমে ফিরতি বাসে বাসায় চলে আসেন। না, বলছিনা আমাদের-ও একি অবস্থা হয়েছিল আমাদের বাস তো ভোর আটটার মধ্যেই পাটুরিয়া ফেরী পাড় হয়ে যায়। যশোর হয়ে সাতক্ষীরা-য় ঢুকতে প্রথমেই পড়ে কলারোয়া উপজেলা।

এই পর্যন্ত আসতে আসতেই আমাদের বারোটা বেজে গেছে, তাই (দুঃখিত আমাদের না, বেলা বারোটা বেজে গেছে) আর সাতক্ষীরা জেলা সদরে না গিয়ে প্ল্যান কিছুটা পরিবর্তন করে কলারোয়া শহরেই নেমে পড়লাম। শুভকাজে দেরী করতে নাই ( বিবাহ না ঘুরাঘুরি ) এই মন্ত্র জপ করতে করতে যখন সোনাবাড়ীয়া গ্রামে যাবার পথ খুজতে শুরু করলাম, তখন জামাল আর ফারুক জানাল শুভ কাজে একটু দেরি করলে-ও কোন সর্বনাশ হবে না, কিন্তু তারা যদি এখনই টাট্টিঘরে না যায় তাহলে সর্বনাশ ঘটে যাবার সমূহ সম্ভাবনা আছে। কাজেই আরো বিশ মিনিটের ব্রেক। (ওদের বিশ মিনিট কেন লাগলো সেটা আমি জানি না)। উপজেলা সদর থেকে ৮-১০ কিমি পশ্চিমা সোনাবাড়িয়া গ্রামে-র শ্যামসুন্দর মন্দির।

১৭৬৭ সালে নির্মিত তিনতলা এই মন্দিরের চারপাশ চলে গেছে বুনো গাছপালা-র দখলে। একটা ভাঙ্গা দেয়াল দেখে বুঝে নিতে হয় মন্দিরের সামনে একটা তোরন হয়তো কোন এককালে ছিল। ঘুটঘুটে অন্ধকার সিড়িঘর আর মাথা সোজা করে রাখলেই তাতে শিং গজানোর সম্ভাবনা নিয়ে দোতলায় উঠতে হয়। দোতালার বারান্দায় দাড়ালে সামনে-ই কিছু পিলার আর দেয়াল দেখে বোঝা যায় মন্দিরের ব্যাপ্তি আরো ছিল। শ্যামসুন্দর মন্দির মন্দির থেকে ফেরার পথে একটু ঘুরে চেড়াঘাট গ্রাম হয়ে আসলাম।

সবুজ রঙের একতলা চেড়াঘাট কায়েম মসজিদে বেশি সময় কাটাবার সুযোগ পেলাম না সি,এন,জি ড্রাইভারে তাড়াহুড়োর কারনে। এবার তালা উপজেলা। এলাকার লোকজনের ভাষ্যমতে কলারোয়া থেকে তালা যাবার সরাসরি কোন রাস্তা নাই, যেতে হবে সাতক্ষীরা হয়ে। (বেকুব বেকুব লাগতেছিল, অবশ্য সবসময় তাই লাগে )। আসলাম সাতক্ষীরা,লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে খুলনার বাসে চড়ে বসলাম পাটকেলঘাটা যাবার জন্য।

আমাদের পরবর্তি গন্তব্য তেতুলিয়া গ্রাম। তেতুলিয়া গ্রাম তালা উপজেলাতে হলেও উপজেলা সদর থেকে কিছুটা দুরে আর পাটকেলঘাটা থেকে কিছুদুর এসে যেতে হয় দুইরাস্তায়। ৪০০ টাকায় সি,এন, জি ভাড়া করলাম পাটকেলঘাটা থেকে তেতুলিয়া হয়ে সাতক্ষীরা সদর পর্যন্ত। ১২৭০ বঙ্গাব্দে জমিদার সালামতুল্লাহ খান নির্মিত তেতুলিয়া জামে মসজিদটি এখন বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের অধিনে আছে। ছয় গম্বুজ ওয়ালা মসজিদটির মিনারের সংখ্যা ২০ টি।

তেতুলিয়া জামে মসজিদ জামে মসজিদ থেকে সামান্য দুরে-ই হাতের বাম দিকে তেতুলিয়া শাহী মসজিদ। ইট পলেস্তার খসে পড়া ভগ্ন দেয়াল নিয়ে মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষি হয়ে। মসজিদটির কোন ইতিহাস জানা যায়নি। তেতুলিয়া শাহী মসজিদ পাটকেলঘাটা থেকে তেতুলিয়া আসতে খুলনা রোডের প্রায় ২ কিমি রাস্তার বর্ননা না দিয়ে পারছিনা। দুই কিমি সোজা রাস্তা, রাস্তা থেকে ২ পাশের জমি প্রায় ৭-৮ ফুট নিচে, যতদুর চোখ যায় ফসলের জমি।

রাস্তার ২ পাশের জমির চারাগুলো সব আবির রঙের। তবে এই আপার্থিব সৌন্দর্য বেশিক্ষণ দেখা যায়না, তার আগেই চোখ বন্ধ করে নিতে হয়। রাস্তাটা পার হবার পর স্বর্গীয় অনুভুতি হবে যখন দেখবেন একটুর জন্য আপনার কিডনি মাথায় আর হৃৎপিন্ড গলায় চলে আসেনি আর জামায় দেখতে পাবেন পোড়া ইট রঙের অপার্থিব নকশা। সন্ধার আগে আগে-ই সাতক্ষীরা শহরে চলে আসায় এসেই চলে গেলাম মোজাফফর গার্ডেনে। ৪০ একর জমির উপর নির্মিত এই বিনোদন পার্কটিতে শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে ভ্যান, রিকশা বা সি,এন,জি তে করে আসা যায়।

মোজাফফর গার্ডেন রাতের খাওয়া দাওয়া করে হোটেলে ফেরার আগে আগামীকাল সারাদিনের জন্য একটা সি,এন,জি ঠিক করে গেলাম ২০০০ টাকায়। হোটেলে রুম পেলাম ২ টা একটা ৪ তলায় একটা ৫ তলায়। আমি, জামাল ও মন্জু ৪ তলায় রয়ে গেলাম, কারণ আমাকে এক দরবেশ বলছিল বাধ্য না হলে কখনো ৫ তলায় থাকবানা, মন্জু-র পা ভাঙ্গা তাই ৫ তলায় উঠতে পারবেনা, আর জামালের হার্টের অবস্থা খারাপ তাই সেও ৪ তলায়। সকালে বের হবার কথা ৮ টায়। ৬ টায় উঠেই ফারুক গেল গোসল করতে।

গোসল করে দিগম্বর হয়ে বের হয়ে দেখে মেহেদী ঘুম ভাঙ্গা চোখে নিষ্পলক ভাবে তার হাটুর দিকে তাকিয়ে আছে (পড়ুন হাটুর একটু উপরে)। ফারুকের ভাবলেশহীন প্রশ্ন, কিরে তুই ঘুম থেকে উঠছিস আমাকে জানাবি না? সাড়ে আটটার মধ্যে আমরা রওয়ানা দিয়ে দিলাম। রুট ঠিক করলাম আশাশুনি হয়ে শ্যামনগর যাব। যাবার পথে শহরের মধ্যেই পড়ে মায়ের মন্দির। একি সাথে ৫ টি ভিন্ন ভিন্ন মন্দির (কালীমাতা, অন্নপূর্ণা, রাধা গোবিন্দ, শিব ও কালভৈরব) থাকায় একত্রে এরা সাতক্ষিরা পঞ্চমন্দির নামে ও পরিচিত।

অন্নপূর্ণা মন্দির আশাশুনিতে এসে প্রথমেই গেলাম বুধহাটা। বুধহাটা বাজারের পিছনে বেতনা নদীর পাড়েই দ্বাদশ শিবকালী মন্দির, যদিও ১২ টা মন্দিরের মধ্যে এখন টিকে আছে মাত্র ৬ টা। শিবকালী মন্দির বেতনা নদী মন্দির থেকে বের হয়ে বেতনা নদীর পাড়ে কিছুটা সময় কাটেয়ে একটু পিছিয়ে গেলাম গুনারকাটি গ্রামে হযরত শাহ আজিজ (রহঃ) এর রওজা শরীফে। শ্বেত পাথরে নির্মিত এক গম্বুজের মাজারটি কারুকার্যময়। মাজার প্রাঙ্গনে বিশাল খোলা জায়গায় এবং মাজারের পিছনে রয়েছে পীর বংশের আওলাদদের কবর।

প্রতি বছর ফাল্গুনের ৩ ও ৪ তারিখে এখানে ওরস হয়। আশাশুনি থেকে কালীগঞ্জ হয়ে গেলাম শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুর গ্রামে । এই রোডে সি,এন,জি চলার অনুমতি না থাকায় মাঝে ২ বার সি,এন,জি মালিক সমিতির লোকজন এসে ঝামেলা করে। ঈশ্বরীপুর গ্রামে নেমে প্রথমেই গেলাম যশোরেশ্বরী মন্দিরে। এক গম্বুজের এই মন্দিরের মাপ ৪৮ ফুট বাই ৩৮ ফুট।

মন্দিরের বাইরেই এক বিশাল বটগাছ তার ঢালপালা ছেড়ে গোটা এলাকাকে শীতল করে রেখেছে। আমরাও হাত পা ছড়িয়ে একটু শীতল হয়ে নিলাম। যশোরেশ্বরী মন্দির মন্দিরের ডান পাশ দিয়ে কিছুদুর গেলেই দেখা মিলবে এক হাম্মামখানা-র। আমি আর ফারুক ছাড়া কেও হাম্মামখানার ভিতরে ঢুকেনি পরে ছবি দেখে আফসোস করতেও কেউ বাকি রাখেনি। হাম্মামখানা এবার উল্টোদিকে, মানে মন্দিরের বাম পাশ দিয়ে ১০০ গজের মত গেলেই হরিহরন রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়ি।

পরিত্যাক্ত এই রাজবাড়ি-র ছাদে উঠাটা একটু বিপদজনক, যে কোন সময় ছাদ সহ সিড়ি ছাড়াই আপনি চলে আসতে পাড়েন নিচতলায়, এবং নিচে নেমে সাথে সাথে-ই হয়তো আবার উপরে চলে যাওয়া লাগতে পারে। হরিহরন রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়ি ঈশ্বরীপুর থেকে মুন্সীগঞ্জের বুড়ী গোয়ালিনী ঘাট (সাতক্ষীরা হয়ে সুন্দরবন যেতে চাইলে এই ঘাট থেকে ট্রলারে উঠতে হয়) হয়ে আবার উল্টাপথে যাত্রা শুরু করলাম, যাচ্ছি কালিগঞ্জের সামান্য আগের গ্রাম প্রবাজপুর। সাতক্ষীরা এসে যা যা দেখেছি তার মাঝে নির্মানশৈলী এবং নান্দনিকতায় শ্রেষ্ঠ মানতে হবে টেরাকোটা ইটে নির্মিত এক গম্বুগের প্রবাজপুর মসজিদকে। সঠিক ইতিহাস পাওয়া না গেলেও ধারনা করা হয় মসজিদটির নির্মানকাল ১৫ শতকের দিকে। মসজিদটির সামনে-ই রয়েছে পাড় বাধানো ঘাট সহ এক মাঝারি আকারের ছিমছাম পুকুর।

প্রবাজপুর মসজিদ প্রবাজপুর মসজিদ থেকে বের হয়ে মনে হল মোস্তাক কাকা-র তলপেটে চাপ দিচ্ছে। আমরা যাচ্ছিলাম বাইরে থেকে দেখতে সি,এন,জি-র মত, ভিতরে থেকে দেখতে টেম্পু-র মত এক আজব যানে চড়ে। সেই মুখখানি গোলাকার, কিম্ভুতকিমাকার যানটাকেই কাকা উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল আর ওভারটেক করছিল মোটরসাইকেল, পিক-আপ, বাস যে সামনে পড়ছিল তাকেই। টেম্পুতে চড়িয়া মর্দসকল উড়িয়া এসে পড়লাম নলতা গ্রামের নলতা শরীফে। সবাই নলতা শরীফ নামে চিনলেই এ হচ্ছে খান বাহাদুর আহসানউল্লাহের রওজা শরীফ।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি খান বাহাদুর উপাধি পান। তার উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয় “আহসানিয়া মিশন”। মাটি থেকে সামান্য উচুতে পাহাড়ী টিলা-র মত জায়গায় তার মাজার। সবদিক থেকেই টিলায় উঠার জন্য বাধানো পথ করে দেয়া, আর সারা বছর-ই ঢালের শোভা বাড়ায় মৌসুমী ফুলের গাছ। মাজারের সামনেই বিশাল আঙ্গিনা, আঙ্গিনা-র সামনে পুকুর আর ডানপাশে আঙ্গিনা-র প্রায় দ্বিগুন বড় খেলার মাঠ।

মাজারের পিছনে মসজিদ এবং মসজিদের সামনে চারপাশ বাধানো আরেকটা পুকুর। সব মিলিয়ে বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই নলতা শরীফ। নলতা শরীফের সামনে মেহেদী নলতা থেকে বেড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, ঘুম ভাঙ্গলো গাড়ির ছাদে বাড়ি খেয়ে মাথায় একটা আলু গজানোর পর। শেষ বিকেলে এসে নামলাম ভোমরা স্থলবন্দরে। সাতক্ষীরা শহরের পাশে-ই এই বন্দরে শহর থেকে আসতে পারবেন যে কোন যানবাহন নিয়ে শুধু আসার সময় শরীরের নাট বল্টু একটু ভালো মত টাইট দিয়ে আনতে হবে না হলে নিজের নাট-বল্টু তো হারাবেই অন্যের নাট-বল্টু ও নিজের পেটের মধ্যে চলে যেতে পারে।

ভোমরা বন্দরের পাশেই ইছামতি নদীর বাধানো পাড়। সন্ধাটা পার করলাম ইছামতির পাড়ে বসে সদ্য গাছ থেকে নামানো খেজুরের রস খেয়ে। ইছামতি নদী ফেরার পথে আরেক মজা। এখানকার বাজারে কলা বিক্রি করে পাল্লায় মেপে কেজি হিসেবে। এটা দেখার পর কি আর কলা না খেয়ে থাকা যায়? পরদিন, সাতক্ষীরা ভ্রমনের শেষ দিন।

ছয়ঘড়িয়া গ্রামের “ছয়ঘড়িয়ার জোড়া শিব মন্দির” আর লাবসা গ্রামের “মায়ের দরগা” (ইতিহাস প্রসিদ্ধ গাজীকালু-চম্পাবতী উপাখ্যানের চম্পাবতী-র মাজার, সবাই মায়ের দরগা বা চম্পা মায়ের দরগা বলে ডাকে) দেখতে দেখতে-ই দুপুর একটা বেজে গেল। ছয়ঘড়িয়ার জোড়া শিব মন্দির একটা-র দিকে আবার ডাক পড়লো মোস্তাক কাকার। জানামতে সাতক্ষীরাতে দেখার মতো আর কিছু না থাকাতে এবার রওয়ানা দিলাম মধু কবির বাড়ির দিকে। যশোরের কেশবপুরের সাগরদাড়িতে মধুসুদনের মধুপল্লী অবস্থিত। যশোর শহর থেকে অনেক দুরে হলেও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাশেই সাগরদাড়ি।

১৮৭৩ সালে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করা এই মহাকবি-র জন্ম ১৮২৪ সালে কপোতাক্ষের তীরের এই সাগরদাড়ি গ্রামে। মধুপল্লী তার মেঘনাদবদ মহাকাব্য একবার পড়তে শুরু করেছিলাম, কিছুদুর পড়ার পর মনে হলো মেঘনাদবদ মহাকাব্য পড়ার যে অনুভূতি সেটা যদি আমি লিখতে শুরু করি তাহলে সেটাও একটা মহাকাব্য হয়ে যাবে। মেঘনাদবদ এখনো শেষ করতে পারিনি বলে আমার মহাকাব্যটা এখনো লেখা হয়নি, মনে মনে মহাকাব্যের নামও ঠিক করে রেখেছি – “আর্তনাদবদ”। মধুপল্লী এখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে কাকাকে বললাম চুকনগর যাবার জন্য। প্রধান সড়ক দিয়ে অনেক ঘুরতে হবে বলে মোস্তাক কাকা এক গ্রামের ভিতর দিয়ে আমাদের নিয়ে চললো।

কিছুদুর যাবার পর কাচা রাস্তা এবং রাস্তা এতোটাই সরু যে টেম্পু যাবে না। ফিরতি পথ ধরতেও আমরা নারাজ কাজেই সবাই মিলে ধরে রাস্তা থেকে জমিতে নামিয়ে টেম্পু পার করতে হলো। হাতে ক্যামেরা থাকার একটা সুবিধা হলো টেম্পু ধরতে হয়না, ছবি তুললেই হয়। চুকনগর এসে প্রথমেই আব্বাসের খাশির মংস দিয়ে দুপুরের ভুরিভোজ। খুলনা রোডের ডুমিরিয়ার চুকনগর বাজারের আব্বাসের এই দোকানের খ্যাতি এখন অনেকের-ই জানা।

একটি দুঃখজনক অধ্যায় ও এই দোকানের সাথে জড়িত। এখান থেকে খেয়ে বাড়ী ফেরার পথেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার মানজারুল রানা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান। চুকনগর বাজার থেকে রওয়ানা দিলাম ভরতের দেওলের দিকে। এখানে আসার জন্য চুকনগর থেকে পাওয়া যাবে ভ্যান, রিক্সা, অটো। দেওলের সামনেই মাথা উচু করে আছে এক বিশাল বটগাছ।

ভরতের দেওল চুকনগর থেকে ফেরার পথে আমাদের আবারো পার করতে হলো সেই অপার্থিব ধুলিময় সৌন্দর্যের দুই কিমি রাস্তা। শহরে এসেই চলে গেলাম প্রেস ক্লাবের পুকুর ঘাটে। একেকজনের যে অবস্থা ছিলো গোসল না করলে বাসে উঠতে দিতো না এটা কনফার্ম। সবচেয়ে কষ্টকর সময় পার করলাম ফেরী ঘাটে এসে। ২/৩ ঘন্টা পার করে আমাদের বাস ফেরীর কাছাকাছি এমন সময় তলপেটে চাপ দেয়া শুরু করলো।

যে কোন সময় ফেরী চলে আসতে পারে তাই একটু কষ্ট করে হলেও চেপে রাখছিলাম। ১০ মিনিট পরে মনে হল ফেরী থাকুক নাই বা থাকুক, আমি ঢাকা যাই নাই বা যাই আমাকে এখন নামতেই হবে। সবুজকে নিয়ে বাস থেকে নেমে পড়লাম, আশে পাশে কিছু না পেয়ে এক দোকানের পিছনে গিয়ে আমি আর প্রকৃতি… … … ৫৯ সেকেন্ড পার হবার আগেই সবুজের ডাক ফেরী চলে আসছে তাড়াতাড়ি কর। মহা আনন্দ নিয়ে খেয়াল করলাম এসে তো পড়েছি, বসেও পড়েছি কিন্তু সাথে তো কিছু নাই। পাশে কিছু কচু গাছ ছিল কচু পাতা দিয়েই…………… চুলকানি আজো আছে।

বাসে উঠলাম এবং বাস ফেরীর মুখে গিয়ে আবারো আটকা পড়লো। এবার শান্ত ভাবে খোজ করে একটা পাবলিক টাট্টিঘর পেয়ে পানি নিয়ে আয়েশ করে তাতে গিয়ে বসলাম, আর আসার আগে বিসর্জন দিয়ে আসলাম এক টুকরো পরিধেয় বস্ত্র । পরবর্তী ভ্রমনের সম্ভাব্য স্থানঃ বাগেরহাট অথবা চুয়াডাঙ্গা + ঝিনাইদহ। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.