ভিনদেশি ডিগ্রি কি আর চাট্টিখানি ব্যাপার! কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করেই তবে বগলদাবা করা যায় একটি সনদ। তবে সবক্ষেত্রে এ কথা সত্যি নয়, এমন অনেক দেশ আছে টিউশন ফি ছাড়াই আছে উচ্চশিক্ষার সুযোগ। আর একটি স্কলারশিপ জুটিয়ে নিতে পারলে তো কথাই নেই। লিখেছেন হাবিবুর রহমান তারেক ও রহমান আসাদ
স্বপ্নটা উঁকি দিয়েছিল এইচএসসির পর। অংশ নিয়েছিলেন আইইএলটিএস পরীক্ষায়ও।
কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচের হিসাব দেখে তাঁর চোখ তো রীতিমতো ছানাবড়া! এত খরচ তাঁর পরিবারের পক্ষে বহন করা কঠিন। এর পরও হাল ছাড়েননি তিনি। একদিন নজরে এলো সুইডেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপের তথ্য। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সিলেটের আবদুল করিম মাসুদ আবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর। কিছুদিন পর তাঁর হাতে এসে পেঁৗছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার।
এভাবেই সুইডেনের হামস্টার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নেটওয়ার্ক ডিজাইন অ্যান্ড কম্পিউটার প্রোগ্রামিং’ বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে যান মাসুদ। শুধু মাসুদ নন, তাঁর মতো হাজার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন; যাঁদের অনেকেরই গুনতে হয়নি টিউশন ফি।
স্বপ্ন নয়, সত্যি
জার্মানির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কোনো টিউশন ফি নেই। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীই পড়ছেন এ দেশটিতে। জার্মানি, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সুইডেনসহ বেশ কিছু দেশের অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি গুনতে হয় না।
বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে পাড়ি জমান, এর কারণ হলো এখানকার অনেক দেশে টিউশন ফি নেই, আছে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ। এ ছাড়া বছরজুড়েই স্কলারশিপের ঘোষণা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের সরকার, সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বৃত্তিতে শুধু পড়াশোনার খরচই নয়, সংশ্লিষ্ট দেশে যাওয়ার বিমান ভাড়াও দিচ্ছে কোনো কোনো দেশের সরকার। স্কলারশিপ প্রোগ্রামের আওতায় টিউশন ফি, শিক্ষা উপকরণ, লাইব্রেরি ফি, বাসস্থান, যাতায়াত, মেডিক্যাল খরচও বহন করছে কর্তৃপক্ষ।
বিনা খরচায় পড়াশোনা
শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন সাইটে চোখ রাখলেই জানা যাবে, ফেলোশিপ, স্কলারশিপ বা বিভিন্ন প্রোগ্রামের আওতায় দরখাস্ত আহ্বান করে বিভিন্ন সংস্থা।
এর একটি বগলদাবা করতে পারলে টিউশন ফি থেকে রেহাই। সামান্য খরচেই মিলতে পারে বিদেশি ডিগ্রি। এসব প্রোগ্রামের আওতায় টিউশন ফি, শিক্ষা উপকরণ, এমনকি থাকা-খাওয়ার খরচও বহন করে কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য তুলনামূলক বেশি সুযোগ মেলে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জার্মানি ও সুইডেনে। সুযোগ করে দিচ্ছে ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড, বেলজিয়াম, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ব্রুনাই, মরক্কো, কুয়েত, সৌদি আরব, ভারতসহ বেশ কিছু দেশ।
ইউনেস্কো, ইউএনডিপি, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), কমনওয়েলথ, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), কোরিয়ান ফাউন্ডেশনসহ আরো কিছু সংস্থা উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের প্রথম সারির অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বৃত্তি দিচ্ছে। এ বিষয়ে খবর জানতে চোখ রাখতে হবে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইটে (http://www.moedu.gov.bd)। এ ছাড়া চোখ রাখুন বিভিন্ন দেশের সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ওয়েবসাইটে।
বিদেশি অর্থায়নে গবেষণা
বিদেশি অর্থায়নে গবেষণার সুযোগ আছে।
এ ছাড়া কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে ফান্ডের ব্যবস্থা। বিদেশি সরকার ও সংস্থা পরিচালিত অনেক প্রকল্পের আওতায় জীববৈচিত্র্য, স্বাস্থ্য, ভূমিকম্প ইত্যাদি বিষয়ে বিদেশি অর্থায়নে গবেষণা করার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ থাকে। আবেদনপত্র বাছাইয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ঠিকানায় ভর্তি এবং ফান্ডিংয়ের প্রস্তাবপত্র পাঠায়। পরবর্তী ধাপ ও করণীয়ও উল্লেখ থাকে ওই পত্রে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক সময় তুলনামূলক মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিমানভাড়া ও থাকার খরচ বহন করে থাকে। আবেদন করতে দরকার হবে স্টেটমেন্ট অব পারপাস (দুই পৃষ্ঠার রচনা), রিকমেন্ডেশন লেটার বা সুপারিশপত্র, টোফেল অথবা আইইএলটিএস স্কোর।
একাডেমিক ফল ভালো থাকা চাই
এসব দেশে শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠদান পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানের, যা সব দেশেই গ্রহণযোগ্য। চাহিদা আছে এমন সব বিষয়েই পড়ার সুযোগ আছে এসব দেশে। কম্পিউটার বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, বিবিএ, মার্কেটিং, ফিন্যান্স, ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্কিটেকচার, অ্যাগ্রিকালচার, মেডিসিন, মেডিক্যাল, নার্সিং, ফার্মেসি, ফরেস্ট্রি, ল, জার্নালিজম, মিডিয়া অ্যান্ড মিউজিকসহ পড়াশোনা করার সুযোগ আছে আরো অনেক বিষয়েই।
কেবল স্নাতক, স্নাতকোত্তরই নয়, মিলে এমফিল-পিএইচডি ডিগ্রিও।
বিদেশি বৃত্তি বা ফেলোশিপ বলুন আর টিউশন ফি ছাড়াই উচ্চশিক্ষা বলুন, বিদেশে পড়তে গেলে একাডেমিক ফলাফল ভালো থাকা চাই। ফল ভালো না হলে অনেক ক্ষেত্রে আবেদন করারই সুযোগ নেই। জাপানে স্কলারশিপ নিয়ে পড়ছেন ঢাকার রাশেদুল হক। তিনি জানান, সাধারণত মেধাবীরাই বিভিন্ন বৃত্তির আওতায় উন্নত দেশগুলোয় উচ্চশিক্ষার সুযোগ পান।
আর এসব দেশে মেধাবী না হলে টিকে থাকা কঠিন।
ভর্তি কবে-কিভাবে
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় দেশভেদে সাধারণত বছরে দুই থেকে তিনবার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারেন। ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু করতে হয় সেশন শুরু হওয়ার দুই থেকে তিন মাস আগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আবেদন ফরম সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-ফিসহ আবেদন করতে হয়।
আবেদন পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যোগ্য শিক্ষার্থীদের ঠিকানায় ‘অফার লেটার’ পাঠিয়ে থাকে।
এরপরই ভিসাপ্রক্রিয়া শুরু করতে হয়। ভর্তির ক্ষেত্রে একাডেমিক পরীক্ষায় ভালো ফল থাকতে হয়। পাশাপাশি অনেক দেশই ‘ইংরেজি ভাষা দক্ষতা’ পরীক্ষায় ভালো স্কোর দাবি করে।
দরকারি কাগজপত্র
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সঙ্গে সাধারণত যুক্ত করতে হয় পাসপোর্ট আকারের ছবি, সব পরীক্ষার সনদ, নম্বরপত্রের ফটোকপি (নোটারি করা কপি পাঠাতে হয় অনেক দেশের ক্ষেত্রে), সুপারিশপত্র, পারিবারিক আয়ের তথ্য, পাসপোর্ট, মেডিক্যাল সনদ ইত্যাদি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থাকতে হবে ইংরেজি ভাষা দক্ষতা কোর্সের সনদ।
আইইএলটিএস প্রযোজ্য হলে স্কোর থাকতে হবে ৬.০ থেকে ৭.০।
বৃত্তির ক্ষেত্রে সাধারণত সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস কিংবা কনস্যুলেটের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। বৃত্তির আবেদন অনলাইনে অথবা ডাকযোগে পাঠানো যায়। আন্তর্জাতিক সংস্থার বৃত্তির আবেদন করা যায় অনলাইনের পাশাপাশি আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমেও। আবেদনের আগে কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ভিজিট করে পুরো প্রক্রিয়া ভালোভাবে জেনে নিন।
কাগজপত্র কার মাধ্যমে সত্যায়িত বা যাচাই করে জমা দিতে হবে, তা নিশ্চিত হয়েই আবেদন করুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।