আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাতকানা জামাই

জি, এম, নাজমুল হোসাইন এক বিধবা বুড়ির ছিল মোটে একটাই ছেলে। ভাগ্যের লিখনে সেও ছিল রাতকানা। তবে তার বিয়েভাগ্য ছিল খুব ভালো। ভালো ঘরের সুন্দরী দেখে একটা মেয়েকে সে বিয়ে করে। তো, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির নেমন্তন্ন এসেছে।

তিন দিন দুই রাত থাকতে হবে। মা মহা ভাবনায় পড়ে। ছেলেকে বলে, দিন ফুরোলেই কিন্তু তুমি বাছা চোখে দেখো না। তাই রাতে বেরোবে না। শ্বশুরবাড়ি তার দিন থাকতেই পৌঁছানোর কথা।

কিন্তু ফেরিঘাটে এসে দেখে ফেরি নষ্ট। তা ঠিক করতে দেরি হয়ে যায়। তাই শ্বশুরের গ্রামে পৌঁছাতে সাঁঝ পেরিয়ে যায়। চোখে তখন সে ঝাপসা দেখছে। মা যে সাবধান করে দিয়েছে সে কথা মনে করে, কী করা যায় তা-ই ভাবতে বসল।

কিন্তু চোখে তো দেখে না। তাই বসবি তো বস একেবারে শ্বশুরবাড়ির ময়লা ফেলার আস্তাকুঁড়ে। এমন সময় শাশুড়ি এক ঝাঁকা ময়লা নিয়ে এসে ফেলেছে জামাইয়ের মাথার ওপরে। শাশুড়ি তো জানে না যে নতুন জামাই এসে তাদের ছাই আর জঞ্জালের গাদার ওপর বসে আছে। জামাই হায় হায় করে উঠতেই শাশুড়ি বুঝে ফেলেছে: সব্বোনাশ, এ তো জামাই।

নতুন জামাইকে ঠাকুরপুজো করতে হয়—কিন্তু এ কী হলো? শাশুড়ি লজ্জায় মুখ ঢেকে বাড়ির দিকে ছুটল। পথে ছেলের সঙ্গে দেখা। সে মোষ চরিয়ে বাড়ি ফিরছিল। মা ছেলেকে বলে, বাছা! মোষ আমি নিয়ে যাচ্ছি। তোর জামাইবাবু এসেছে।

কেন জানি আমাদের ময়লার ঢিবিতে বসে আছে। পেচ্ছাপটেচ্ছাপ করতে বসেছিল বোধহয়। আমি না দেখে সব ময়লা জামাইয়ের মাথায় ঢেলে দিয়েছি। নিশ্চয়ই রাগ করেছে খুব। জলদি যা, বুঝিয়ে-ভাজিয়ে নিয়ে আয়।

ছেলে গিয়ে দেখে, জামাইবাবু তখনো গাদার ওপর গ্যাঁট হয়ে বসে আছে। ছেলে: জামাইবাবু, ওখানে কী করছেন? বাড়িতে আসুন। রাগটাগ নাকি? জামাইবাবু: আরে না। একটা হিসাব কষলাম। অনেকখানি জঞ্জাল।

এ দিয়ে কয় মণ সার হবে! জামাইবাবু শ্যালকের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির দিকে যাচ্ছে। সামনেই কালো কালো মোষ দেখে বলে: ইস্ কী ঘন অন্ধকার যে ওই দিকে! ছেলে: না, জামাইবাবু। ওগুলো আমাদের মোষ। জামাই: বেড়ে মোষ তো। যত্ন-আত্তিতে অন্ধকারের মতো কালো কুচকুচে হয়েছে।

জামাই ভাবে, একটা মোষের লেজ ধরি, তাহলেই মোষের পেছনে পেছনে বাড়িতে পৌঁছাব। মোষটা ছিল তেজি। জামাইকে এক ঝটকায় মাটি কাটা খাদায় ফেলে দেয়। ছেলে: কী হলো জামাইবাবু, চোখে কম দেখেন নাকি? জামাই: আরে না। খাদের গভীরতা দেখছিলাম।

বাড়িতে ওই রকম একটা খাদ বানাব কিনা। তো আমার হাতটা ধর তো, ওপরে উঠি। ওপরে উঠে সীমানা-দেয়াল ধরে এগোয় জামাই। শালা বলে, অমন করছেন কেন? কিছুই যেন ঠাহর করতে পারছেন না। চোখ তো আপনার যাচ্ছেতাই খারাপ মনে হচ্ছে।

আরে বোকা, এ কথা তোর বুদ্ধিতে এল। তোদের সদরের পাঁচিলটা কতখানি লম্বা তা-ই মেপে দেখছিলাম। সদর দরজার কাছে গিয়ে একটা শিংওয়ালা ভেড়ার ওপর পড়ল জামাইবাবু। ভেড়াটা এক গুঁতোয় জামাইবাবুকে পপাত ধরণিতল করে ছাড়ল। জামাইবাবুকে হাসতে হাসতে টেনে তুলে শালাবাবু বলে, ও ঠিকই চিনেছে আপনাকে, তাই একটু ঠাট্টা করল।

জামাইবাবু: ভেড়াটাকে একটু আদর করতে চাইলাম। ও কিনা আমাকে মারল গুঁতো। ভালোই শিখিয়েছিস দেখছি। রাতে খাবার আয়োজন। শাশুড়ি বেশ সেজেগুজে পরিবেশন করতে আসছে।

তার হাতের চুড়ি আর কোমরের বিছা ঝুমঝুম করে বাজছিল। জামাই ভাবে: ভেড়াটাই বুঝি আসছে। আবার না গুঁতোয়। হাতের কাছে একটা ধামা পড়েছিল। তাই দিয়ে এক বাড়ি মারে শাশুড়ির গায়ে।

শাশুড়ি ভাবে, ছাইয়ের গাদায় জামাইয়ের মাথায় জঞ্জাল ঢেলেছিলাম—তার জন্যই বুঝি জামাই এ কাণ্ড করল। শাশুড়ি পালায়। বউ এসে খাওয়ায়। আর বলে: ছি! ছি! কী কাণ্ড! এত রাগ! জামাই মনে করে আদরের ভেড়াকে মারার জন্যই এই ভর্ৎসনা। তাই বলে, ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হয়।

যেমন গুঁতিয়েছে, তেমনি প্রতিশোধ নিলাম। বউ ব্যাপার না বুঝে হাঁ হয়ে থাকে। জামাইবাবু মাঝরাতে উঠেছে প্রকৃতির ডাকে। হাতড়ে হাতড়ে কাজ সেরে পথ গুলিয়ে ফেলে শ্বশুর-শাশুড়ির ঘরে ঢুকে পড়েছে। হাত দিয়ে বউ কোথায় শুয়েছে খুঁজছে।

হাত গিয়ে পড়েছে শাশুড়ির পায়ে। সে ধড়ফড় করে উঠে বসে বলে, কে? কে? জামাই: আমি। আমি। তুমি এ ঘরে! এত রাতে! জামাই রাতকানা হলেও তাৎক্ষণিক বুদ্ধিতে সরস। নিজেকে সামলে নিয়ে তাই বলে, খাবার আগে আপনাকে ধামা ছুড়ে মেরেছিলাম।

এখন হুঁশ ফিরে এসেছে। তাই আপনার পা ধরে মাপ চাইতে এসেছি। আমায় মাপ করুন। সকালে উঠেই জামাই বলে, আমার বাড়িতে ভীষণ কাজ। এখনই না গেলে সর্বনাশ।

এভাবেই রাতকানা জামাই বুদ্ধির জোরে ধরা খেয়েও বেঁচে যায়। লিঙ্ক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.