আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সকল উন্নতির মুলে "ভাংগা সুটকেস"।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি বাংলাদেশে ভাংগা সুটকেস একটা বিরাট আলোচিত বিষয়। রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যে ভাংগা সুটকেসের নানাবিধ ব্যবহার আমরা লক্ষ্য করেছি। কিন্তু জাতির অলস বুদ্ধিজীবিগন ভাংগা সুটকেস কিভাবে উন্নতির মুলে অশেষ ভূমিকা রেখেছে তার বিষয়ে কোন গবেষনা না করায় এই অধমকেই তা নিয়ে কিছু বলতে হচ্ছে। অধমের জ্ঞান খুবই কম - তাই ভুলত্রুটির জন্যে অগ্রীম মাফ চেয়ে রাখছি। সূচনা - খুব ছোটকালে দেখেছি আমাদের বাসায় একটা সুটকেস ছিলো।

পিওর চামড়ার বাদামী রংগের সুটকেস। কিন্তু হাতলটা ভাংগা। মা সেই সুটকেসটাকে যত্নকরে আলমারীর উপরে রেখে বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে রাখতেন। মাঝে মধ্যে সুটকেসটা নামানো হতো - তখন আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়তাম সুটকেসে উপর। সেখানে কিছু শাড়ী, পাঞ্জাবী আর এলবাম ইত্যাদি ছিলো।

ধারনা করি এই সুটকেসটা ছিলো মা-বাবার বিয়ের সুটকেস। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা গ্রামে চলে গেলে বাসার সবকিছু লুট করে রাজাকার আর বিহারীরা। সাথে সুটকেসটাও। মুক্তিযুদ্ধে পর থেকে আমাদের পরিবার প্রচন্ড আর্থিক সংকটে পড়ে। জানি না হয়তো সেই ভাংগা সুটকেসটা থাকলে আমাদের পরিবারের জন্যে অলৌকিক কিছু বিত্ত বৈভবের ব্যবস্থা হতো।

এই বিষয়টি আগে ভাবিনি - ১৯৯১ সালের পর থেকে সুটকেসটার কথা মাঝে মধ্যেই মনে পড়ে। একটা সুটকেসের সন্ধানে - বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের শেষ দিকে হক কথা আর গনকন্ঠ নামে দুইটা পত্রিকা ছিলো। সেগুলোতে চমকদার খবর দিতো - তার মধ্যে ছিলো শেখ মুজিবের ছেলেরা ব্যাংক লুট করে কাড়ি কাড়ি টাকার পাহাড় তৈরী করছে - শেখ কামালের বিয়েতে কয়েক সের ওজনের সোনার মুকুট উপহার দেওয়া হয়েছে। তারপর ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব নিহত হলো সপরিবারে ( ভাগ্যগুনে বেঁচে গেলো দুই মেয়ে। যারা ১৯৮১ সালের আসে দেশে আসেনি) এবং রাষ্ট্র শেখ পরিবারের সকল সম্পদ বায়েজাপ্ত করলো।

ধারনা করি শেখ সাহেবের ছেলেদের ডাকাতির টাকা আর সোনার মুকুটও সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছিলো। পরে অনেক দেন দরবার করে শেখ সাহেবের মেয়ে বাড়ী ফেরত পেলেন আর সাথে সিজারলিস্টের সব মালামাল। কিন্তু আলোচিত টাকা আর স্বর্ন সিজার লিস্টে ছিলো না - আর পেলেনও না। তাইলে সেগুলো গেলো কই? ১৯৯৬ সালের পর বঙ্গবন্ধু যাদুঘর দেখতে গিয়ে সবগুলো রুমে খুঁজে দেখলাম কোন ভাংগা সুটকেস আছে কিনা - পাইনি। তাই মনে হয় - ভাংগাসুটকেসের অভাবে শেখ সাহেবের সম্পদ আমাদের চোখের আড়ালেই থেকে গেলো।

অলৌকিক ভাংগা সুটকেসের সন্ধান - ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে আরেক প্রেসিডেন্ট (সামরিক বাহিনী থেকে যিনি রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে একটা দল তৈরী করে ক্ষমতাশীন হয়েছিলেন) একদল সেনানদস্যের হাতে নিহত হয়েছিলেন। রাষ্ট্রের সম্পদ নিজেরমতো ব্যয় করে রাজনীতি করা এই প্রেসিডেন্টকে ব্যক্তিগত সততার প্রবাদ পুরুষ হিসাবে প্রচার করা হয়েছে। উনার ছিলো একটা ভাংগা সুটকেস। সেখানে উনি ছেড়া গেঞ্জি রাখতেন। আর উচ্চমূল্যের সাফারীগুলোর জন্যে নিশ্চয় দাবী ওয়্যারড্রোব ছিলো - কিন্তু আমরা তা জানি না - কারন সেনানিবাসের সুরক্ষিত প্রাসাদে উনি বাস করতেন - যেখানে সাধারনের প্রবেশাধিকার ছিলো না।

উনার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় টিভিতে সেই অলৌকিক ভাংগা সুটকেসের হৃদয় বিদারক কাহিনী আমরা দেখেছি। কিন্তু মাত্র ২০ বছরের মাথায় সেই ভাংগা সুটকেসটি থেকে সাড়ি সাড়ি জাহাজ, কাপড়ে কল, ডিস্ট্রিলারী বের হতে লাগলো। সেই ভাংগা সুটকেসের উছিলায় ২৭ টা টিভিতে সজ্জিত হলো বেগমের বাসস্থান। সেই দিন ভাংগা সুটকেসের কাহিনী যে টিভিতে দেখানো হলো - ৩০ বছর পর সেই টিভিতে দেখালো ভাংগা সুটকেস থেকে বের হয়ে আসা মালামাল বহনের জন্যে গঠিত একটা রাহনৈতিক দলের জাতীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে চার দিন ব্যাপি বিলাশবহুল মালামাল পরিবহনের দৃশ্য। সবই ভাংগা সুটকেসের উছিলা।

সুটকেসের মর্ম বুঝতে না পারার খেসারত - আওয়ামীলীগের বর্ষিয়ান নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ৭০ লক্ষ টাকা বিষয়ক জটিলতায় ফেঁসে গেছেন এবং ধারনা করি উনি হয় পদত্যা করবেন - অথবা পদ হারাবেন। এই জটিলতার ফলাফল যাই হোক - উনি যে ভাংগা সুটকেসের মর্যাদা বুঝতে অপারগ তা নিশ্চিত করে বলা যায়। উনার এপিএসএর উচিত ছিলো একটা ভাংগা সুটকেসে অর্থগুলো পরিবহন করা। সুটকেসে অর্থ পরিবহন এবং দেশের বাইরে পাচার যে কতটা নিরাপদ তা হাতে হাতে প্রমান দিয়েছে বিগত জোট সরকারের প্রিন্স। কিন্তু সুরঞ্জিত বাবুর এপিএস বস্তায় টাকা বহন করছিলেন।

এইটা যেমন টাকার জন্যে অপমানকর - তেমনি সুটকেসের অমর্যাদা বটে। আমার ব্যক্তিগত আফসোস - দেশের বাইরে আছি ম্যালা সময় ধরে। কয়েক বছর পর পর দেশে যাবার সময় সুটকেস কিনতে হয় - কারন দেশে গিয়ে ফেরত আসার পর সুটকেসগুলো কোন ভাবে না ভেংগে থাকতে পারে না। যেহেতু ভাংঘা সুটকেসের মর্ম বুঝতে অপারগ ছিলাম - তাই প্রতিবারই দেশ থেকে এসে সুটকেসগুলো গুডউইল (এনজিও - যারা পুরোনো জিনিসপত্র বিক্রি করে অর্থ সমাজকল্যানে ব্যয় করে) এ দিয়ে দিতাম। এবার দেশ থেকে আসার পর অধিকাংশ একটা ভাংগা সুটকেস রেখে দিয়েছি অলৌকিক কিছু আশায়।

কিন্তু তেমন কোন লক্ষন দেখতে পাচ্ছিলাম না - তাই ঠিক করেছি সেই সুটকেসে কয়েকটা ছেড়া গেঞ্জি ঢুকাবো - তাই এখন গেঞ্জি ছেড়ার জন্যে অপেক্ষা করছি। আশা করি এই সুটকেস - গেঞ্জির কম্বাইনড একশনে জাহাজের বহর না হোক একটা নতুন গাড়ী কেনার সুযোগ পাবো। কিন্তু এইটা লুকিয়ে রাখলে হবে না। প্রচার করতে হবে। উপসংহার - উপরের আলোচনা আর পর্যালোচনা থেকে নিম্চিত প্রতীয়মান হয় যে - ভাংগা সুটকেসের ভিতরে ছেঁড়া গেঞ্জি সংরক্ষন অলৌকিক সম্পদ প্রাপ্তির একটা নিম্চিত পন্থা।

পাঠক - আজই আপনি একটা ভাংগা সুটকেসের ভিতরে একটা গেঞ্জি ঢুকিয়ে - তা ভিডিও করুন। যেহেতু টিভিতে আপনার কাহিনী প্রচার করা হবে না - তাই এই ভিডিও ইউটিউব - ফেসবুক ইত্যাদিতে পোস্ট করুন এবং চুপ করে অপেক্ষা করুন। আশা করা যায় এই সুটকেস আপনার ভাগ্য খুলে দেবে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.