আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রফউল ইয়াদাঈনের বিরুদ্ধে? পর্ব ২ (হানাফি মাযহাবের মতামত থেকে স্বীকারোক্তি )

পর্ব ১ পড়তে ক্লিক করুন। হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ সালাতে রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে ওঠার সময় রফ’উল ইয়াদাইন করে থাকেন না। অনেকেই বলে থাকেন,এটি নবী করিম(সাঃ) প্রথম দিকে করেছেন এবং শেষের দিকে বাদ দিয়েছেন অর্থাৎ মানসুখ হয়ে গেছে। আমরা সেই বিশ্বাসের কারণে আজ রফ’উল ইয়াদাইন করি না। যা অন্যান্য মাযহাব এবং আমাদের দেশে আহলে হাদীস বা সালাফীগণ করে থাকেন।

মসজিদের হুজুরকে জিজ্ঞেসা করলে উনারা বলেন, দুটোই সুন্নাত। চলুন তাহলে একটু আলোচনা করি? আসুন হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠ আলিমগণ মতামত দেখে নিইঃ ১। মোল্লা ‘আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ সালাতে রুকু’তে যাওয়ার সময় ও রুকু’ থেকে উঠার সময় দু’ হাত না তোলা সম্পর্কে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সবই বাতিল হাদীস। তন্মধ্যে একটিও সহীহ নয়। (মাওযু’আতে কাবীর, পৃ-১১০) ২।

হানাফী মুহাদ্দিস আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (রহঃ) রুকু’তে যাওয়ার পূর্বে রফ’উল ইয়াদাইন করার ব্যাপারে ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) সম্পর্কে লিখেছেনঃ ইমাম আবূ হানিফা সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তা ত্যাগ করলে গুনাহ হবে। (’উমদাতুল ক্বারী, ৫/২৭২) ৩। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ যে মুসল্লী রফ’উল ইয়াদাইন করে ঐ মুসল্লী আমার কাছে অধিক প্রিয় সেই মুসল্লীর চাইতে যে রফ’উল ইয়াদাইন করে না। কারন রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীসগুলো সংখ্যায় বেশি এবং অধিকতর মজবুত। (হুজ্জাতুল্লাহহিল বালিগাহ ২/১০) তিনি আরো বলেন, রফ’উল ইয়াদাইন হচ্ছে সম্মান সূচক কর্ম।

যা মুসল্লীকে আল্লাহর দিকে রুজু হওয়ার ব্যাপারে এবং সালাতে তন্ময় হওয়ার ব্যাপারে হুশিঁয়ার করে দেয়। (হুজ্জাতু্ল্লাহিল বালিগাহ ২/১০) ৪। আল্লামা আবুল হাসান সিন্ধী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ যারা এ কথা বলে যে, তাকবীরে তাহরীমাহ ছাড়া রুকু’তে যাওয়ার সময় এবং রুকু’ থেকে উঠার সময় দু’ হাত তোলার হাদীস মানসূখ ও রহিত, তাদের ঐ দাবী দলীলবিহীন এবং ভিত্তিহীন। (শারহু সুনানে ইবনে মাজাহ, মিসরের ছাপা ১ম খন্ড ১৪৬ পৃষ্ঠার টিকা) ৫। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমিরী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ এ কথা জানা উচিত যে, সালাতে রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীস সূত্র ও ‘আমালের দিক দিয়ে ****মুতাওয়াতির, এতে কোনই সন্দেহ নেই।

আর এটা মানসূখও নয় এবং এর একটি হরফও নাকচ নয়। (নাইলুল ফারকাদাইন, পৃ- ২২, রসূলে আকরাম কী নামায, পৃ-৬৯) ****মুতাওয়াতিরঃ মুতাওয়াতির বলা হয় সেই হাদীসকে যেটিকে এতো অধিক সংখ্যক বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন যে, তাদের পক্ষে সাধারণত মিথ্যার উপর একত্রিত হওয়া সম্ভব নয়। ৬। আল্লামা ‘আবদুল হাই লাখনৌভী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ নাবী (সাঃ)-এর সূত্রে রফ’উল ইয়াদাইন করার প্রমাণ বেশী এবং প্রাধান্যযোগ্য। আর এটা মানসূখ বা নাকচ হবার দাবী যা ত্বাহাভী, ইবনুল হুমাম ও আইনী প্রমূখ আমাদের দলের মনীষীদের পক্ষ থেকে প্রচারিত হয়েছে, তা এমনই প্রমাণহীন যে তদদ্বারা রোগী নিরোগ হয় না এবং পিপাসার্তও তৃপ্ত হয় না।

(আত-তা’লীকুল মুমাজ্জাদ, পৃ-৯১) ৭। ইমাম মুহাম্মাদের সাথী ও ইমাম আবূ ইউসূফের শিষ্য ইসাম ইবনু ইউসূফ আল বালাখী (রহঃ)-এর রফ’উল ইয়াদাইন করা সম্পর্কে আল্লামা ‘আবদুল হাই লাখনৌভী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ ইসাম ইবনু ইউসূফ ছিলেন ইমাম আবূ ইউসূফের শাগরিদ এবং হানাফী। তিনি রুকু’তে যাওয়ার সময় এবং রুকু’ থেকে উঠার সময় রাফ’উল ইয়াদাইন করতেন- (আল-ফাওয়ায়িদুল বাহিয়্যাহ ফী তারাজিমিল হানাফিয়্যাহ, পৃ-১১৬)। আবদুল্লাহ ইবনু মুবারক, সুফিয়ান সাওরী এবং শু’বাহ (রহঃ) বলেন, ইসাম ইবনু ইউসূফ মুহাদ্দিস ছিলেন। সেজন্য তিনি রফ’উল ইয়াদাইন করতেন।

(আল-ফাওয়ায়িদুল বাহিয়্যাহ, পৃ-১১৬) ৮। শায়খ আবূত ত্বালিব মাক্কী হানাফী (রহঃ) তার ‘কুতুল কুলূব’ গ্রন্থে সালাতের সুন্নাত সমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রুকু’তে যাওয়ার সময় রফ’উল ইয়াদাইন করা ও তাকবীর বলা সুন্নাত। তারপর ‘সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ’ বলে রফ’উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। (কুতুল কুলূব ৩/১৩৯) ৯। কাজী সানাউল্লাহ পানিপত্তি হানাফী (রহঃ) বলেনঃ বর্তমান সময়ের অধিকাংশ ‘আলিমের দৃষ্টিতে রফ’উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত।

অধিকাংশ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিসীনে কিরাম একে প্রমাণ করেছেন। (মালাবুদ্দাহ মিনহু, পৃ-৪২, ৪৪) ১০। শায়খ ‘আবদুল ক্বাদির জিলানী (রহঃ) সালাতের সুন্নাত সমূহের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ সালাত শুরু করার সময়, রুকু’তে যাওয়ার সময় এবং রুকু’ হতে উঠার সময় রফ’উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। (গুনিয়াতুত ত্বালিবীন, পৃ-১০) ১১। দ্বিতীয় আবূ হানিফা নামে খ্যাত আল্লামা ইবন নুজাইম (রহঃ) বলেনঃ রুকু’তে যাওয়ার সময় ও রুকু’ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ’উল ইয়াদাইন করলে সালাত বরবাদ হবার কথা যা মাকহুল নাসাফী ইমাম আবূ হানিফা থেকে বর্ণনা করেছেন তা বিরল বর্ণনা, যা রিওয়ায়াত ও দিরায়াত উভয়েরই পরিপন্থী অর্থাৎ সূত্রতঃ ও জ্ঞানত” ঠিক নয়।

(রাহরু রায়িক ১/৩১৫, যাহরাতু রিয়অযুল আবরার, পৃ-৮৯) ১২। দেওবন্দের শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমূদুল হাসান বলেনঃ রফ’উল ইয়াদাইন মানসূখ নয়। আর এর স্থায়িত্ব প্রমাণিত নয়- (ইযাহুল আদিল্লাহ)। ইতিপূর্বে ইমাম যায়লায়ী হানাফীর বরাত দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে যে, এর স্থায়িত্ব প্রমাণিত। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত আজীবন রাফ’উল ইয়াদাইন করেছিলেন।

(নাসবুর রায়াহ তাখরীজ আহাদীসিল হিদায়া ১/৪১০) ১৩। মুফতী আমিমুল ইহসান লিখেছেনঃ যারা রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীস মানসূখ-আমি বলি, তাদের একটি মাত্র দলীল (অর্থাঃ ইবনু মাস’উদের হাদীস), দ্বিতীয় কোন দলীল নাই। (ফিকহুস সুনার ওয়াল আসার, পৃ-৫৫) ১৪। হানাফী মাযহাবের ফিক্বাহ গ্রন্থাবলীতেও রাফ’উল ইয়াদাইনের পক্ষে বক্তব্য রয়েছে। তন্মধ্যকার কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ (ক) রুকু’র পূর্বে ও পরে রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীস প্রমাণিত আছে।

(আয়নুল হিদায়া ১/৩৮৪, নুরুল হিদায়া) (খ) রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীস, রফ’উল ইয়াদাইন না করার হাদীসের চাইতে শক্তিশালী ও মজবুত। (আয়নুল হিদায়া ১/৩৮৯) (গ) বায়হাক্বীর হাদীসে আছে, ইবনু উমার বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত সালাতের মধ্যে রফ’উল ইয়াদাইন করেছেন। (ইয়নুল হিদায়া ১/১৮৬) (ঘ) রফ’উল ইয়াদাইন না করার হাদীস দুর্বল। (নুরুল হিদায়া, ১০২) (ঙ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে রফ’উল ইয়াদাইন প্রমাণিত আছে এবং এটাই হাক্ব। (আয়নুল হিদায়অ ১/৩৮৬) পর্ব চলবে ইনশাল্লাহ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।