আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুর্নীতি, তথ্য প্রযুক্তি ও ইয়েসদের সঙ্গে অনেকক্ষণ

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া! শুক্রবার, ৬ এপ্রিল। সকাল থেকে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ইনস্টিটিউটে ফ্রীল্যান্সিং-এর কর্মশালা শেষ হতে হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। আমি আর জাবেদ মোর্শেদ ইস্ট ওয়েস্ট ই্উনিভার্সিটি থেকে কামরুল হাসান স্যারকে তুলে নিয়ে রওনা দিলাম মানিকগঞ্জ কৈট্টার পথে। সেখানে ঢাকার ইয়েস ক্যাম্প ২০১২।

ইয়েস হলো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকদের গ্রুপ। ২০১০ সালের ইয়েস ক্যাম্পের একটি সেশনে গিয়েছিলাম । সেবার বলে এসেছিলাম যে পরেরবার আমি ক্যাম্পে থাকতে চাই। টিআইবি আমাকে সে সুযোগ দিয়েছে। এবার তাই আমার সেশন ছাড়াও গ্রুপ ওয়ার্কে ফ্যাসিলিটেটরের কাজও করার কথা।

রাতে যখন পৌছালাম তখন সবাই খেতে বসেছে। আমরাও বসে পড়লাম। খাবার টেবিলেই পাওয়া গেল উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাইরুল স্যারকে। আগেরবার পরিচয় হয়েছিল। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্যার।

খেতে খেতে আলাপ হলো কয়েকজন ইয়েসকর্মীর সঙ্গে। এর মধ্যে শান্তির নাম বলতে পারবো। (পরে দেখলাম শান্তি খুবই জনপ্রিয় ক্যাম্পে। ও প্রশ্ন করতে দাড়ালেই পুরো ক্যাম্প হই হই করে ওঠে!!!) আমি অনেক সেশন পরিচালনা করেছি। সারাদেশই আমাকে এসব করতে হয়।

শিক্ষার্থীদের সামনে যেমন আমাকে দাড়াতে হয় তেমনি সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাতের সামনেও। কিন্তু এর আগে কোন সেশন রাত সাড়ে ৯টায় শুরু করেছি বলে মনে পড়ে না!!! তাই সহজ রাস্তা নিলাম। প্রথমেই ক্যাম্পারদের বলে নিলাম, ওরা না চাইলে এই সেশন হবে না এবং ততক্ষনই চলবে যতক্ষণ তারা চাইবে। আমার বলার বিষয় ছিল দুর্নীতির মোকাবেলায় তথ্য প্রযুক্তি। রাতের বেলা বলে আমি প্রচলিত পথে গেলাম না।

যেহেতু ওরা দুর্নীতির ব্যাপারগুলো বোঝে তাই আমি শুরু করি সরকার কী তা নিয়ে। অবশ্য তার আগে ঠিক করে নিয়েছিলাম আমরা কেবল সরকারি দুর্নীতি নিয়ে কথা বলবো। সরকারের আলোচনায় আমরা শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম সরকার হচ্ছে কতগুলো প্রসেসের সমষ্টি যা কীনা কিছু ব্যক্তি মানুষ পরিচালনা করে। সরকারের দুর্নীতিতে তাই প্রসেস এবং মানুষ দুটো উপাদানই মুখ্য। অন্যদিকে দুর্নীতির কারণগুলোর মধ্যে চিহ্নিত কারণগুলো হল – মানুষের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া, প্রসেসের জটিলতা, তথ্যের অপ্রাপ্যতা এবং তথ্যের অভিগম্যতার অভাব।

কখনো কখনো সঠিক তথ্য জানা না থাকলে একশ্রেণীর মানুষ তার সুযোগ নিতে পারে। আবার অনেক সময় তথ্য প্রকাশিত হলেও সেটি সবার কাছে পৌছায় না। শেষ বিচারে সবই দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে। আর একটি হলো যখন সিস্টেম নিজে খুব কমপ্লেক্স হয় তখন সেখানে দুর্নীতির উদ্ভব ঘটে দুটি কারণ – একটি হলো কেও বাড়তি টাকা দিয়ে কমপ্লেক্স সিস্টেম এভয়েড করে। অন্যরা ভয়ে কারো শরণাপন্ন হয়।

পাসপোর্ট অফিসের আগেকার ব্যাপারটা বলা যেতে পারে। একবার ফরম কেনার জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দাও (মাত্র ১৫ টাকা), লাইনে দাড়িয়ে। তারপর সেই স্লিপ দেখিয়ে ফরম তোলা। তারপর বাড়ি গিয়ে সেটি ফিলআপ করা এবং সবশেষে আবার সেটি জমা দিতে আসা! প্রশ্ন হচ্ছে সিস্টেম লেবেলে আইসিটি কী করতে পারে। আলোচনার সুবিধার্থে আমরা বাংলাদেশের কয়েকটি আইসিটি সিস্টেম নিয়ে আলাপ করলাম।

আমি বেঁছে নিয়েছি সেই প্রকল্পগুলো যেগুলোর সঙ্গে আমি নিজে কোন না কোনভাবে জড়িত ছিলাম। এর প্রথমটি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার অটোমেশন। ১৯৯৪ সালের আগে দেশের এই পাবলিক পরীক্ষায় কয়েক প্রস্ত দুর্নীতির সুযোগ ছিল— ১. পরীক্ষার পর পর পরীক্ষা কেন্দ্রে কারো উত্তরপত্রের কভার পৃষ্ঠা ঠিক রেখে ভেতরের খাতা বদলে দেওয়া, ২. বোর্ড থেকে মূল্যায়নকারী শিক্ষকের নাম জেনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা, ৩. প্রধান মূল্যায়নকারীর সঙ্গে যোগসাজশে নম্বর বাড়ানো, ৪. টেবুলেশনের সময় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া। আবার টেবুলেশনের সময় আরো একটি ঘটনা হত। সে সময় অনেকে বোর্ডের আশেপাশে ভিড় জমাতো।

বোর্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একশ্রেণীর দালাল এ সময় কারো ফলাফল দেখে এসে বাইরে ভিন্নভাবে বিক্রি করতো। মানে হল হয়তো অংকে পেয়েছে ৩৩। বাইরে এসে বলতো ২ নম্বরের জন্য অংকে ফেল। টাকা দিলে পাশ করানো যাবে!!! যাহোক এসকল দুর্নীতির মূল হচ্ছে উত্তরপত্রে শিক্ষার্থীর পরিচিতি বা শনাক্তমূলক চিহ্ন (রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, কেন্দ্রের নাম ইত্যাদি)। ১৯৯৩ সালে আমরা যখন এসএসসি/এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে কাজ শুরু করি তখন আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল খাতা থেকে নাম ঠিকানা খেদানো।

সে সময় লাখ চারেক শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিত। এদের ১০টি পত্রের ৪০ লক্ষ খাতা ম্যানুয়ালি কোডিং করা সম্ভব নয়। কাজে আমরা আমদানী করলাম লিথোকোডের। খাতা থেকে নাম ঠিকানা বাদ!!! বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান। লিথোকোড মানে সেটা পড়ার জন্য ওএমআর আর কম্পিউটার।

কাজে তখন আমরা ভাবলাম রেজাল্ট প্রসেসিংটাও করা হোক। অনেকেই জানে না ঐ প্রকল্পের নাম ছিল, “এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র কোডভুক্ত করণ এবং ফলাফল প্রক্রিয়ার কম্পিউটারায়ন। ” মানে কোডিংটা ছিল আসল বাকীগুলো ফাউ! ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রেও এক ধরণের বৈসম্যের শিকার হতো গ্রামের শিক্ষার্থীরা কারণ তাদের কাছে ফলাফল পৌছাতো কয়েকদিন পরে। এখন মোবাইলে বা ইন্টারনেটে তাৎক্ষণিক ফলাফল জানা যাচ্ছে। এই উদাহরণ থেকে আমরা কয়েকটা বিষয় দেখতে পারলাম।

এর মধ্য আমরা দেখলাম অটোমেশনের ফলে প্রসেসের মধ্যে দুর্নীতির যো সুযোগ থাকে সেটা বন্ধ করা যায়। এবং কাজটাকে এফিসিয়েন্টও করা যায়। খাতা থেকে নাম রোল নম্বর বাদ দিতে গিয়ে যা হলো তা হচ্ছে কম্পিউটারের আমদানী আর তা থেকে অটোমেশন। এখন তো আমরা দেখি ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল দেওয়া যাচ্ছে। আরো দুইটি উদাহরণ দেখলাম।

একটি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অটোমেশন আর একটি মোবাইলে ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ! চিনিকলের পূর্জির কথাও বলেছিলাম। কাস্টম হাউসের অটোমেশনের সময় দেখা হল একটি আমদানী দলিলে মাত্র ৪২টি স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়। এনালিসিস করে দেখা গেল এর মধ্যে ৩৭টি ফাউ!!! কাজে বাদ। স্বাক্ষর কমে গেলেই মিথস্ক্রিয়া কম, দুর্নীতি কম! ফাঁকে ফাঁকে আমি অবশ্য বলছিলাম আমার এসব কাজের অভিজ্ঞতার কথাও। কুমিল্লা বোর্ডের সামনের ফটকে দিনভর দাড়িয়ে থাকা, হজ্ব সিস্টেম অটোমেশনের সময ৫% লাকের কথা এসব।

আইসিটির প্রয়োগ সিস্টেমকে কতোখানি করাপশন ফ্রি করতে পারে তার কয়েকটি নমুনা দেখে আমরা এই ব্যাপারে আমাদের করণীয় নিয়ে আলাপ করলাম। আমরা যা বুঝতে পারলাম এই ক্ষেত্রে কাজ হবে দুইটি ক. আইসিটি ভিত্তিক সিস্টেমের জন্য দাবী জানানো, এই কাজটাই আসলে মুখ্য। কারণ সিস্টেমের অটোমেশন হলে তা দুর্নীতি রোধ করে অনেকখালি। এবং সেটা না হওয়া পর্যন্ত খ. জনমত সংগঠিত করা এবং বিদ্যমান সিস্টেম ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের দুর্নীতি সম্পর্কে জানানো। ক দাবী পূরণ করার জন্য আন্দোলন সংগ্রামের প্রয়োজন এবং সেখানে আইসিটি কী করতে পারে সেটি আমরা পরের ধাপে দেখার চেষ্টা করেছি।

এই আলোচনার শুরুতে আমরা আইসিটির ব্যপ্তিটা বুঝে নিয়েছি। রেডিও, টিভির মতো প্রচলিত আইসিটি মাধ্যমের পাশাপাশি ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, ভিডিও, ফেসবুক, ব্লগ সবই আমরা দেখার চেষ্টা করেছি। আবার কোন একটি কাজে যে অনেকগুলোকে একত্রিত বা সমন্বয় করা যায় সেটিও বলেছি। দুইটি উদাহরণ দিযেছি। একটি শ্রীলংকার একটি কৃষি ভিত্তিক রেডিও অনুষ্ঠান।

এখানে কৃষকরা টেলিফোনে বা এসএমএসে প্রশ্ন করতে পারে। এক্সপার্টরা ইচ্ছে করলে নিজেরা জবাব দিতে পারে। অথবা তারা উত্তর দেওয়ার জন্য ইন্টারনেটে শরণাপন্ন হোন। আর উত্তরটাও দেওয়া হয় রেডিওতে। আমাদের দেশেও ফোন ইন প্রোগ্রাম বিশেষ করে ডাক্তারদের বেশ জনপ্রিয়।

আইসিটির একটি বড় অবদান হলো তথ্যের অপ্রাপ্যতার ব্যাপারটিকে পরাস্ত করতে পারা। ইন্টারনেট, মোবাইল এসবের মাধ্যমে সহজে তথ্যের আদান প্রদান যমন হতে পারে তেমনি এর সামেশনও করা যায়। উইকিপিডিয়া হচ্ছে এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। বিন্দু বিন্দু জল যেমন মহাসাগর গড়তে পারে, একলাইন একলাইন তথ্য গড়ে তুলতে পারে তথ্যের বিশ্বকোষ। ইচ্ছে করলেই এমন সব ব্যবস্থা করা যায় যাতে ইন্টারনেটে কোন একটি ব্যবস্থার তথ্য নিজেরাই প্রকাশ করা যায়।

এ ব্যাপারে উদাহরণ হিসাবে আমরা ইউকের ফিক্স মাই স্ট্রিট উদাহরণটা দেখলাম। এই ওয়েবসাইটে যে কেও তার এলাকার একটি ভাঙ্গা রাস্তার ছবি প্রকাশ করে এবং কৃতপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে। এমন ওয়েবসাইট মূলত সংবাদপত্রের দৃষ্ট আকর্ষনী ফিচারের সম্পূরক। আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকরা এখনো ফেসবুক, ইন্টারনেট দেখতে শুরু করেনি সে অর্থে। তবে, করবো।

কারণ কোন উপায় নেই। এছাড়া আমরা দেখলাম সিএনএনের আইবিপোর্টের ব্যাপারটিও। এটি সিটিজেন জার্নালিজমের অংশ। বাংলাদেশে এখন অনেক পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে পাঠকের মত প্রকাশের ব্যবস্থঅ রয়েছে। তবে, এখনো সেটি মোটামুটি লেখককে ধন্যবাদ দেওয়া, উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে গালি দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

যখন আমরা তথ্য পেয়ে যাবো তখন সেটি ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা যেমন করা যায় তেমনি সেটিকে কেন্দ্র করে সংগঠিতও হওয়া যায়। তথ্য প্রযুক্তি কীভাবে সংগঠিত করার কাজে সাহায্য করতে পারে তার উদাহরণ হিসাবে আমরা সাম্প্রতিক আরব বসন্ত এবং ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট এসত্রাদার পতনের গল্প শুনলাম। তিউনিশিয়ায় বেনআলির পতনের শেষ ঘন্টা বাজায় আলি বাওয়াজিজি নামে এক তরুণ। যে কীনা তার তুতো ভাই-এর আত্মহননের প্রতিবাদে তার ফুফুর একক প্রতিবাদ ভিডিও করে সেটি ইউ টিউবে আপলোড করে। সেখান থেকে সেটি আল জাজীরা টেলিভিশন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সবখানে।

তবে, এ্টি আন্দোলনরত তরুনদের প্রতীকে পরিণত হয় কেননা আগে থেকেই তাদের ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে। অন্যদিকে মিশরের উই আর অল খালিদ সাইদ নামে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে গড়ে ওঠে তাহরীরর স্কোয়ারের প্রতিবাদ। এসত্রাদাকে উৎখাতের জন্য ১০ লক্ষ লোককে এসএমএস করা হয়! এসবই সম্ভব হয়েছে তথ্য প্রযুক্তির সুচিন্তিত প্রয়োগের মাধ্যমে। উইকিপিডিয়ার মতো ‘জনগণের জন্য জনগণের তথ্য ভান্ডার’ অনায়াসে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। ব্লগ, ফেসবুকে দুর্নীতিবাজদের লিস্টিং করা যায়।

সেটি নিয়ে কাজ করা যায়। একটি বড় ঝামেলা, আমাদের দেশে দেখা যায়, যে অনেকে তাড়াতাড়ি সফল না হলে কাজটি ছেড়ে দেন। লেগে থাকতে চান না। কিন্ত লেগে থাকতে পারলেই কিন্তু কাজ এগিয়ে নেওয়া যায়। আমি গণিত অলিম্পিয়াডের শুরুর দিকের কষ্টের কথা বলেছি।

বলেছি কেমন করে মায়েদের কাছ থেকে তাদের সন্তানদের আমি চেয়ে আনতাম। আর ১০ বছর পরে এখন আমরা গণিত অলিম্পিয়াডকে একটি ভেন্যু থেকে ১৮টি ভেন্যুতে সম্প্রসারিত করেও জায়গার অভাবে আগ্রহী সকলকে যুক্ত করতে পারি না। এরকম উদাহরণ আরো আছে। শেষ আমারা ইয়েসের সদস্যরা কী ধরণের কাজে যুক্ত হতে পারে, পরেরদিনের গ্রুপ আলোচনায় কী করবে সেটা নিয়ে আলাপ করেছি। পরের দিনের আলোচনার থিম ছিল ৭টি।

দুর্নীতি মোকাবেলায় তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক ক্যাম্পেইন, প্রোগ্রাম, নেতৃত্বের বিকাশ, ইনোভেশন, জেন্ডার, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি। আমি বলার চেষ্টা করলাম সবটাতে কীভাবে তথ্য প্রযুক্তি সাহায্য করতে পারে। তবে, এটাও বললাম এবং গুরুত্ব দিলাম এই বলে যে, তথ্য প্রযুক্তি কিন্ত কেবল একটি হাতিয়ার, গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার। কেবল সেটির যথাযথ প্রয়োগেই এ ক্ষেত্রে সফল হতে পারে। রাতে থাওয়া দাওয়ার পর এরকম একটি আলোচনা চালিয়ে নেওয়া কঠিন।

কিন্তু ইয়েসরা এতো কোঅপারেটিভ ছিল যে, কখন রাত সাড়ে বা্রোটা বেজেছে আমরা টের পাইনি। আলোচনার ফাকে ফাকে আমরা কিছু ভিডিও দেখেছি, গান শুনেছি। বব মার্লে আর বব ডিলানের গান। মার্টিন লুথার কিং, মহাত্মা গান্ধীর ভিডিও। ছিল চিনের তিয়ানআনমেন স্কোয়ারের ট্যাংকের সামনে দাড়ানো সেই ‘চিত্ত যেথা ভয় মূল্য , উচ্চ যেথা শির’-এর যুবক।

শুনেছি ভারতে বক্সাইট ফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে আদিবাসীদের আন্দোলন সংগ্রামের গান “লড়াই ছোড়বো নেহি”। আল জাজীরা টিভিতে মুহামেদ বাওয়াজিজির মায়ের ইন্টারভিউ। সেখানে ছিল মোবাইল ফোনে রেকর্ড করা ভিডিও! এই সবই কোন না কোনভাবে আলোচনার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। আবার বুশ-রাইসের কথোপকথনের একটি মজার ভিডিও দেখেছি। পরে রাত সাড়ে বারোটায় দিকে আমাদের বলা হল সেশন শেষ করতে কারণ ইয়েসদের পরের দিনও সেশন রয়েছে।

আমরা মাঠে চলে আসি। তথক্ষণে মঙ্গলগ্রহ সিংহরাশির ভেতরে মধ্যগগণ থেকে একটু হেলে পড়েছে। মাঠে আমরা নানান বিষয়ে আড্ডা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। পরে সাজ্জাদ ভাই এসে আড্ডা ভেঙ্গে দিযেছেন। আরো পরে যথন দারোয়ানরা আমি, মোর্শেদ আর সাজ্জাদ ভাইকে রুমে পাঠিয়ে দেয় ততক্ষণে রাত দুপুর গড়িয়ে শেষ ধাপে পৌছে গেছে।

পরেরদিন দুপুর পর্যন্ত ইয়েসদের সঙ্গে অনেক আড্ডা হয়েছে কাজের ফাঁকে ফাঁকে। ওদের উদ্দিপ্ত চেহারা আমাদের নির্ভয় করে। আর আমি তো জানি ওরাই আমাদের দিন বদলে দেওযার কারিগর হয়ে উঠবে প্রত্যেকে। দুপুরে চলে আমার সময় মনে করিয়ে দিয়ে এসেছি আগের রাতের শেষ গানের কথা। কাজী নজরুলের “কারার ঐ লৌহ কপাট, ভেঙ্গে ফেল করলে লোপাট’ কোরাস গেয়ে আমরা আগের রাতের সেশন শেষ করেছিলাম।

আর সেটির শেষে ছিল আমাদের ট্যাগ লাইন, বাংলাদেশ ওপেন সোর্সের ট্যাগ লাইন! স্বাধীনতার জন্য ইতিহাসে সকল প্রজন্মকে রুখে দাঁড়াতে হয়েছে। এখন আমাদের পালা। সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.