আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারীদের গল্প

মিলে মিশে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ! WISE (Women's Islamic Initiative in Spirituality and Equality) ৮ই মার্চ ১০১তম আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে দুইজন নারীকে হাইলাইট করেছে যারা অতীতে বা বর্তমানে সমাজের সংস্কার সাধনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। ১। নুসাইবা বিনতে কা'ব আল আনসারিয়াহ (৬৩০-৬৯০): তিনি ইসলামের প্রথম যুগেই মুসলিম হয়েছিলেন। তিনিই প্রথম নারী যিনি ইসলামের জন্য যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে যুদ্ধ করেছেন। প্রথমদিকে যুদ্ধরত সাহাবীদের সেবা-শুশ্রষা করলেও ওহুদের যুদ্ধে যখন পরিস্থিতি পরাজয়ের দিকে চলে যাচ্ছিল, এবং মহানবী (সা: )-এর চারপাশে কেউ ছিল না, তখন এই নুসাইবা (রা: )ই রাসূল (সা: )-কে ঘিরে ধরেন এবং বিপরীত পক্ষের তীরের আঘাত হতে নবীজিকে রক্ষা করেন।

এছাড়াও তিনি হুনায়নের যুদ্ধ, ইয়ামাহার যুদ্ধ, এবং হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনিই প্রথম মুসলিম নারীর অধিকার নিয়ে সোচ্চার হন। তিনিই সেই নারী যিনি রাসূল(সা: )কে প্রশ্ন করেছিলেন, কোরআনে কেন সবসময়ে পুরুষদের প্রতি আহবান করে কথা বলা হয়? নারীদেরকে কেন সম্বোধন করা হয় না? এরপরেই আল্লাহতাআলা নাজিল করেন সূরা আল আহযাবের ৩৬ নং আয়াত, "নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, , যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার। " ২। শারমীন ওবায়েদ চিনয় (১৯৭৮- ) : ইনি পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত আমেরিকান।

একজন ফিল্ম মেকার। ২০১২ সালের শর্ট ফিল্ম এবং ডকুমেন্টারী শাখায় 'Saving Face' শর্টফিল্মের জন্য একাডেমি পুরষ্কার (অস্কার) পেয়েছেন। এটা পাকিস্তানের এসিডদগ্ধ নারীদের উপজীব্য করে তৈরী হয়েছে। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানের সমাজে এসিদদগ্ধ নারীদের নিয়ে যেসব অনাহূত ট্যাবু আছে তা ভাঙ্গার চেষ্টা করেছেন। তার ডকুমেন্টারীগুলো মূলত মুসলিম বিশ্বের নানান সমাজের নানান বিষয় নিয়ে তৈরী।

যেমন, সৌদি আরবের নারীদের নিয়ে 'Women of the Holy Kingdom', আফগানিস্তানের নারীদের নিয়ে 'Unveiled'। পাকিস্তানের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও তার আরো কিছু ডকুমেন্টারী, শর্ট ফিল্ম আছে। এ নিয়ে মোট ১৫টি শর্টফিল্ম তিনি তৈরী করেছেন। তিনি তার অসাধারণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এর আগেও অনেক সম্মানজনক পুরষ্কার পেয়েছেন। যেমন: ২০১১ সালে আন্তার্জাতিক এমি পুরষ্কার, ২০০৭ সালে ব্রডকাস্ট সাংবাদিক হিসেবে ওয়ান ওয়ার্ল্ড মিডিয়া পুরষ্কার, ২০০৪ এবং ২০০৬ সালে দক্ষিণ এশিয় সাংবাদিক এসোসিয়েশান পুরষ্কার ইত্যাদি।

শারমীন TED (Technology, Entertainment and Design)-এর একজন ফেলো। সূত্রসমূহ: ১। http://www.wisemuslimwomen.org/ ২। Click This Link ৩। http://www.wisemuslimwomen.org/muslimwomen/bio/nusayba_bint_kab_al-ansariyah/ ৪।

http://www.wisemuslimwomen.org/muslimwomen/bio/sharmeen_obaid-chinoy/ যেহেতু পোস্টটি নারীদের নিয়ে, তাই নারীদের ৩৩ রকম বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি কৌতুকময় লেখার অনুবাদ থেকে কিছু অংশ তুলে দিতে ইচ্ছে করছে, আমি পড়ে খুব মজা পেয়েছি, আশা করি আপনাদেরও ভাল লাগবে। অনুবাদটি করেছেন আমাদের দেশীয় মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া। এটা বেগম রোকেয়ার 'নারী-সৃষ্টি' নামক একটি অনুবাদ কর্মের কিছু চুম্বক অংশ। " ... আদিকালে যখন পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য্য, তারকা আদি কিছুই ছিল না -- ছিল কেবল ঘোর অন্ধকার। ত্বস্তি নামক এক হিন্দু দেবতা এই বিশ্ব জগত সৃজন করিলেন।

সর্বশেষ যখন রমণীসৃষ্টির পালা, তখন বিশ্বস্রষ্টা ত্বস্তি দেখিলেন যে তিনি পুরুষ সৃজন কালেই সমুদয় মাল মসলা ব্যয় করিয়া ফেলিয়াছেন। আর ঘন কিংবা শক্ত কোন বস্তুই অবশিষ্ট নাই। ত্বস্তিদের নৈরাশ্যে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া, উপয়ান্তর না দেখিয়া ধ্যানমগ্ন হইলেন ধ্যান ভঙ্গের পর ত্বস্তি চক্ষু মর্দন করিয়া দাঁড়াইলেন এবং কতিপয় বিশেষ বিশেষ পদার্থের সারভাগ সংগ্রহ আরম্ভ করিলেন, যথা: ১) পূর্ণচন্দ্রের গোলত্ব, ২) সর্পের বক্রগতি, ৩) লতিকার তরুশাখা অবলম্বন, ৪) তৃণদলের মৃদু কম্পন, ৫) গোলাপ লতার ক্ষীণতা, ৬) কুসুমের সৌকুমার্য্য, ৭) কিশলয়ের লঘুত্ব, ৮) হরিণের কটাক্ষ, ৯) সূর্য্যরশ্মির ঔজ্জ্বল্য, ১০) কুয়াশার অশ্রু, ১১) সমীরণের চান্চল্য, ১২) শশকের ভীরুতা, ১৩) ময়ূরের বৃথা গর্ব, ১৪) তালচন্চু পক্ষীর পালকের কোমলতা, ১৫) হীরকের কাঠিন্য, ১৬) মধুর স্নিগ্ধ স্বাদ, ১৭) ব্যাঘ্রের নিষ্ঠুরতা, ১৮) অনলের উত্তাপ, ১৯) তুষারের শৈত্য, ২০) ঘুঘুর কাকলী, ২১) নীলকন্ঠের কিচিরমিচির গান, ২২) তেঁতুলের অম্লত্ব, ২৩) লবণের লাবণ্য, ২৪) মরিচের ঝাল, ২৫) ইক্ষুরসের মিষ্টতা, ২৬) কুইনাইনের তিক্ততা, ২৭) যুক্তিজ্ঞানহীনতার কূটতর্ক, ২৮) কলহপ্রিয়তার মুখরতা, ২৯) দার্শনিকের অন্যমনষ্কতা, ৩০) রাজনৈতিকের ভ্রান্তি, ৩১) পাষাণের সহিষ্ণুতা, ৩২) সলিলের তারল্য, ৩৩) নিদ্রার মোহ। ত্বস্তিদেব উপরোক্ত তেত্রিশ উপাদান একত্র মিশ্রিত করিয়া (Egg beater দ্বারা উত্তমরূপে ফেঁটিয়া!) ললনা রচনা করিলেন। বলা বাহুল্য রমণী সৃজন করিতে সৃষ্টিকর্তাকে অত্যধিক বেগ পাইতে হইয়াছিল।

তাঁহাকে অনেক গবেষণা, অনেক চিন্তা, গভীর ধ্যান ও অক্লান্ত পরিশ্রম করিটে হইয়াছিল। লোকে যে জিনিষটি প্রস্তুত করিতে অধিক মাথা ঘামায় তাহা নিশ্চয় সর্বাঙ্গসুন্দর হয়। ... অত:পর ত্বস্তি সেই অতি যত্নে নির্মিতা অঙ্গনা পুরুষকে উপহার দিলেন। অষ্টদিবস পরে পুরুষ তাঁহার নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল: হে প্রভু! আপনি যে জীবটি আমাকে উপঢৌকন দিয়াছেন, সে তো আমার জীবন বিষাক্ত করিয়া তুলিয়াছে। সে যে অবিরত বকবক, কচর কচর করে; সে আমাকে এক তিল অবকাশ দেয় না; সে যে বিনা কারণে বিলাপ করে; এক কথায় সে যারপোরনাই মন্দ।

ত্বস্তি অবলাকে ফিরাইয়া লইলেন। অষ্টাহ অতীত হইলে পর পুরুষ পুনর্বার দেবতা-সমীপে উপনীত হইয়া বলিল -- হে দেব! আপনার প্রদত্ত জীবটিকে প্রত্যাখান করা অবধি আমার জীবন অতিশয় নির্জন ও নীরস হইয়া পড়িয়াছে। আমার স্মরণ হয়, সে কি সুন্দর! আমার সম্মুখে নাচিত, গায়িত, খেলিত! মনে পড়ে তাহার সেই কটাক্ষ - - মরি মরি! সে কেমন করিয়া আড় নয়নে আমার দিকে চাহিত! সে আমার খেলার সহচরী ছিল; আমার জীবন-সঙ্গিনী ছিল! তাহার বিরহ আমার অসহ্য! ত্বস্তি বিনা বাক্যব্যয়ে তাহাকে পুনরায় সে রমণী প্রদান করিলেন। চতুর্থ দিবসে আবার ত্বস্তিদেব দেখিলেন যে পুরুষ বনিতাসমভিব্যাহারে তাঁহার নিকট আসিতেছে। ষাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত করিয়া পুরুষ বলিল, দেব! আমায় ক্ষমা করুন; আমি ঠিক বুঝিতে পারি না, নারী আমার আনন্দের কারণ, না বিরক্তির কারণ।

তাহাকে লইয়া আমার সুখ শান্তি অপেক্ষা কষ্টের ভাগই অধিক। অতএব প্রভু! আপনি কৃপাবশত: আমাকে ইহা হইতে মুক্তিদান করুন। এবার দেবতা ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন, যাও, তোমার যাহা ইচ্ছা কর গিয়া! পুরুষ উচ্চৈ:স্বরে কাঁদিয়া বলিল, এ যে আমার কালস্বরূপ, ইহার সহিত জীবন যাপন করা আমার পক্ষে অসম্ভব। আমি যে কিছুতেই ইহার সঙ্গে থাকিতে পারি না! ত্বস্তি উত্তর দিলেন, তুমি তো ইহাকে ছাড়িয়াও থাকিতে পার না! পুরুষ নিরুপায় হইয়া মনের দু:খে খেদ করিতে লাগিল, কি আপদ! আমি রমণীকে (এ ভূতের বোঝা? ) রাখিতেও চাহি না, ফেলিতেও পারি না!! " তদবধি নারী অভিশাপরূপে পুরুষের গলগ্রহ হইয়া রহিয়াছে!!! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.