আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাইফেলস পাবলিকের সেই দিনগুলি

জীবনের স্রোতে নাও ভাসিয়ে ছুটছে নাবিক । নাওয়ের বুকে আঁছড়ে পড়ে স্মৃতির ঢেউ । সুখের স্মৃতি , বেদনার স্মৃতি । বেদনার অংশটুকু পথ চলায় ভূলে যেতে চাই । রেখে দিতে চাই শুধুই সুখ ।

অনাবিল , রাশি রাশি , মুঠোয় ভরা সুখ । এইতো সেদিন , প্রথম পা রাখা যৌবনে । গুটি গুটি পায়ে কৈশোরের স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে পা রাখা কলেজের আঙিনায় ! চোখে শুধু স্বপ্ন , মনে প্রজাপতির রঙ । স্বপ্নপূরনের পথে এক দীর্ঘযাত্রার শুভ সূচনা এই কলেজ থেকে । প্রথমত , প্রতিটা ছেলে স্বপ্ন এই রাইফেলস পাবলিক কলেজের চৌকাঠ ।

একরকম বায়না ধরে , জিদ করে ভর্তি হয়েছিলাম !দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিলাম কবে শুরু হবে প্রথম ক্লাস । ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির অংশ হবার এক বিশাল কর্মযজ্ঞ ! কলেজের পোশাক তৈরী থেকে মুজো কেনা , বাদ যায়নি কিছুই । অবশেষে প্রথম ক্লাসের দিন এলো । নুরুল ইসলাম স্যারের সেকশন পেয়েছিলাম । অসাধারন হিউমার এবং ভীষন রাগি ! প্রথমদিনেই টের পেয়েছিলাম মজার জায়গায় এসে পড়েছি ।

সেই শুরু । ছিলাম একবছর । অনাকাংখিতভাবেই বিদায় নিয়েছিলাম । সেই অংশটুকু থাক । একবছরের পথ চলায় টুকরো টুকরো করে জমেছে স্মৃতি ।

শোয়েব স্যারের ক্লাসে মুরগীর রিংটোন বাজানোর কারনে মার খেয়েছিলাম গাছের ডাল দিয়ে ! খিলখিল করে হেসেছিলাম । আমি নির্লজ্জ তো ভীষন ! তোফা ম্যাডামের বাংলা উচ্চারনের জ্বালায় আমাকে ক্লাসে খুঁজে পাওয়া যেতোনা । রওশন আরা ম্যাডাম আমার সিক্রেট ক্রাশ ! কাউকে বলবেন না যেনো ! সারবিন মুন্সী স্যারের ক্লাসে তার পিছে ''বাট'' বিষয়ক আলোচনায় হাসির তুবড়ি ফোটাতাম আমরা ব্যাকবেন্ঞ্চার ! টিফিন টাইমে ক্যান্টিনে কালিদাস স্যারের মার খাইনি এমন কোনোদিন ছিলোনা ! বিশাল হাত শার্টের কলারে টের পেলেই দৌড় শুরু ! তবে স্যারের শিশুদের প্রতি দূর্বলতা অতুলনীয় ! প্রায় সময় দেখতাম বাচ্চাদের সাথে খেলছেন ! উনি আমার কাছে বুড়ো বাবু । ভিপি স্যারের ক্লাসের সময় আমার প্রিয় পালানোর স্থান তৃতীয়তলার বাথরুম । সেখানেই কাটিয়ে দিতাম ঘন্টার পর ঘন্টা ।

আর ধরা পড়লে নিচে নামিয়ে কানে ধরে দাঁড়া করে দিতো ! প্রিফেক্টদের কাজে Ni স্যারের কাছ থেকে পারমিশান নিয়ে কলেজময় ঘুরে বেড়াতাম । পাঁচতলার বাথরুমে গিয়ে কি করতাম তা আর নাই বা বলি । লুকিয়ে লুকিয়ে এই সেকশন , ঐ সেকশনের মেয়েদের জ্বালিয়ে মারতাম । ক্রাশ যে কত খেয়েছি তার ইয়াত্তা নেই !কলেজের নিচে মাঠে দাঁড়িয়ে ব্রেকের টাইমে চোখাচোখি !চোখ যে মনের কথা বলে ! মোখলেস স্যারের খোঁচামারা কথার হাত থেকে রক্ষা পেতোনা মেয়েগুলা ! প্রতিদিন সকালে কলেজের বাইরে নেসক্যাফের সেই আড্ডা !প্রবল বৃষ্টিতেও আড্ডা থামতোনা ! সারা লেকের পাড় ভিজে ভিজে ঘুরে জুবুথুবু ! একটা একটা করে দিন চলে যাওয়া । কলেজ ফাঁকি দিয়ে থান্ডারবোল্টে পুলের স্টিক হাতে সারাদিন ।

NI স্যারের খোঁজাখুঁজি পর্ব । ধরা পড়লেই বাঁশ খাওয়া । তবে যাই হোক , বাঁশগুলোও এখন মধুর লাগে ! মনে পড়ে , ক্যাপ্টেন থাকার কারনে নিজের পারসেনটেজ কখনো কম ছিলোনা ! প্রতিটা সোশাল এবং কালচারাল একটিভিটিতে চুটিয়ে মজা করা এখানকার নিয়ম । অংশগ্রহন করেছিলাম । মনে আছে , সংগীতে প্রথম হবার পর আনন্দের সাগরে ভেসেছিলাম ।

বন্ধুদের সারাক্ষন পচানোর অপচেষ্টা এবং ক্লাসে বাঁদরামী করার জন্য দলবদ্ধভাবে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বাদ যায়নি কিছুই । কলেজের প্রতিটি অংশ রক্তের মধ্যে মিশে আছে এখনো । আজো যখন দেখি গেটের প্রহরায় থাকা দাড়োয়ান মামা কিংবা ক্লার্ক আমাকে দেখে একটা হাসি দিয়ে চিনতে পারার ভঙ্গিতে বলে কেমন আছো , বুক ভরে যায় ! এখনো মনে হয় ফিরে যাই কলেজের সেই প্রাঙ্গনে । ফিরে গিয়ে কালীদাস স্যারকে বলতে ইচ্ছে করে ''স্যার একবার মারুন না । '' Ni স্যারের সাথে মজা করতে খুব ইচ্ছা করে ।

উনার হিউমার এখনো মিস করি । তবে আমার বিদায়টুকু বাদে বাকী পুরোটো সময় সুখের স্মৃতিগুলোই আজো অমলিন । থাকবে চিরকাল অমলিন । এখনো গাই ''দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় , রইলোনা , রইলোনা , সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি..... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.