আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাকরির আবেদন ফি দিতে দিতে কত টাকা খুইয়েছেন...

Bangladesh: Dream বাংলাদেশে চাকরিটা সোনার হরিণ। চাকরিপ্রার্থী প্রত্যেক বেকার এ সোনার হরিণের পেছনে দৌড়ান। ফলে চাকরিদাতারা যাচ্ছেতাই করতে পারেন; ব্যাংক ড্রাফট তো বটেই। সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব চাকরির আবেদনেই ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার বাবদ প্রার্থীদের গুনতে হয় শত শত টাকা। বিসিএসসহ পিএসসির (সরকারি কর্ম-কমিশন) সব চাকরির আবেদনে ৩০০ থেকে ৫০০ এবং ব্যাংকের আবেদনেও সমপরিমাণ টাকা চাওয়া হয়।

এ ছাড়া বেসরকারি চাকরি, বিশেষ করে শিক্ষকতার জন্য ক্ষেত্রভেদে ৩০০ থেকে ৫ হাজার টাকাও চাওয়া হচ্ছে। চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই, ইন্টারভিউ কার্ড কিংবা লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র আসবে কি না তারও নিশ্চয়তা নেই অথচ আগেই আবেদনপত্রের সঙ্গে এ টাকা নেয়া হচ্ছে। আর এ টাকা নেয়া হচ্ছে বেকারদের কাছ থেকে, যাদের নির্দিষ্ট আয় নেই এবং একটা চাকরির জন্যই তারা চেষ্টা করছেন। ব্যাংক ড্রাফট কিংবা পে-অর্ডারে টাকা নেয়ার যৌক্তিকতা হিসেবে চাকরিদাতারা হয়তো নিয়োগের খরচ মেটানোর কথা বলবেন। বিশেষ করে যেসব নিয়োগে পরীক্ষা হয় সেখানে পরীক্ষা নেয়া, উত্তরপত্র মূল্যায়নসহ প্রভৃতি আনুষঙ্গিক কাজে খরচ হবে স্বাভাবিক।

কিন্তু এ খরচ কেন একজন চাকরিপ্রার্থী বেকারের ঘাড়ে পড়বে। ব্যাংক বা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। সুতরাং তার প্রক্রিয়াকরণের সব ব্যয়ও প্রতিষ্ঠান বহন করবে কিংবা প্রতিষ্ঠানটির সে বাজেটও থাকবে। চাকরিপ্রার্থীদের সেটি বহন করার কথা নয়। প্রতিষ্ঠান যদি সেটা বহন নাও করে সে ক্ষেত্রে ঠিক এমন একটা পরিমাণ ব্যাংক ড্রাফট হিসেবে ধরা উচিত, যেখানে নিয়োগসংক্রান্ত সব ব্যয় মিটে যায়।

বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, যে পরিমাণ টাকা চাকরিপ্রার্থীদের গুনতে হয় সেটা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার মাধ্যমও বটে। বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের তুলনায় যে পরিমাণ বেকার বাড়ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে সাধারণ চাকরিতেও ন্যূনতম লাখ খানেক আবেদন পড়ে। গত বছরের ৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করেছিলেন প্রায় ১ লাখ ৬৪ হাজার জন। এ রকম যেকোনো চাকরিতে যদি ৩০০ টাকা করেও নেয়া হয় ও প্রার্থী যদি ১ লাখও হয়, তাতে ৩ কোটি টাকা উঠছে। এত টাকা একটি নিয়োগকাজ সম্পন্ন করতে লাগার কথা নয়।

অনেকেই বলছেন, ব্যাংক ড্রাফট চাকরিদাতাদের আয়ের একটা অন্যতম উত্স হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর মাধ্যমে ব্যবসাও করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ক্যাটাগরি করে প্রত্যেকটি ক্যাটাগরিতে আবেদনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংক ড্রাফট করতে হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার ইচ্ছা করেই একবারে চাহিদামাফিক জনবল নিয়োগ না দিয়ে বারবার সার্কুলার দিচ্ছে, এতে একই প্রার্থী একই প্রতিষ্ঠানে বারবার ব্যাংক ড্রাফট করছেন। এভাবে একটার পর একটা চাকরিতে আবেদন করতে করতে চাকরিপ্রার্থীরা হতাশ হয়ে যাচ্ছেন। যেসব চাকরিতে ৩০০ টাকা দরকার, সেখানে আবেদন করা ও আবেদনপত্র পাঠানোসহ (অনলাইন কিংবা সরাসরি) আনুষঙ্গিক কাজে ন্যূনতম ৫০০ টাকা খরচ হয়ে যায় আর ৫০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট হলেও সব মিলিয়ে সেখানে ৮০০ টাকা লেগে যায়।

একজন বেকার এত টাকা কোত্থেকে দেবেন? চাকরিপ্রার্থী অনেকেই বলছেন, মনে হচ্ছে পড়াশোনার খরচের তুলনায় চাকরির আবেদনেই বেশি টাকা লেগে যাচ্ছে। বিশেষ করে যারা পাবলিক কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে আসেন তাদের পড়াশোনা বাবদ খুব অল্প টাকাই খরচ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে এখানকার শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলগুলোয়ও বলা চলে ফ্রিই থাকেন। সেখানে এসব শিক্ষার্থীর অনেকের জন্যই ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ করে চাকরির আবেদন করা কষ্টকর। তার ওপর যদি মাসের পর মাস কিংবা অনেকের ক্ষেত্রে বছরের পর বছর আবেদন করে যেতে হয়, সেটা কীভাবে সম্ভব? অর্থাত্ এখানেও চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে মেধার চেয়েও টাকাটা বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যার টাকা আছে তিনি যেকোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারছেন, যার টাকা নেই বা স্বল্প তিনি চাইলেও তা পারছেন না। এটাকেও বেকারত্ব বাড়ার অন্যতম কারণ বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না। বাংলাদেশে বেকারত্ব সমস্যার প্রকটতা নিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানে অনেক সময় চাইলেই কেউ কাঙ্ক্ষিত চাকরি পান না। অর্থনীতিবিদ পিগু যথার্থই বলেছেন, যখন কর্মক্ষম জনগণ তাদের যোগ্যতা অনুসারে প্রচলিত মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতে চায় অথচ কাজ পায় না সে অবস্থাকেই বলা হয় বেকারত্ব।

যে বেকারত্ব জাতির জন্য অভিশাপ। চাকরিদাতারা এ অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্য অবদান রাখছেন সন্দেহ নেই; এটা আরও কার্যকর হতো যদি ব্যাংক ড্রাফট ছাড়াই চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন করার সুযোগ মেলে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো কর্মসংস্থানের একটা বড় ক্ষেত্র। প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার এগুলোয় চাকরি পেয়ে থাকেন। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির আবেদনে কোনো ধরনের ফি দিতে হয় না।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালের শেষ দিকে দেশের সব তফসিলি ব্যাংককে এ রকম চাকরির আবেদনের সঙ্গে কোনো ফি না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিল, চাকরির আবেদনের সময় একজন বেকারের পক্ষে ব্যাংক ড্রাফট করা কষ্টসাধ্য। তারা কিছু বিদেশী ও বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদাহরণ দিয়েছিল, যারা চাকরির আবেদনপত্রের সঙ্গে কোনো ধরনের ফি নেয় না। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব ব্যাংক চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ফি আদায় করছে, সে বিষয়টিও বিবেচনা করার অনুরোধ করেছিল। বাস্তবতা হলো, ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ পরামর্শ আমলে নেয়নি।

এখনো ব্যাংকগুলোয় চাকরির আবেদনে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিতে হচ্ছে। করপোরেট জবগুলোয় সাধারণত ব্যাংক ড্রাফট কিংবা পে-অর্ডারের নামে কোনো ফি নেয়া হয় না। যেসব প্রতিষ্ঠানে ফি নেয়া হয়, সেখানে সাধারণত লিখিত পরীক্ষা হয়। ফলে এসব ফির একটা যৌক্তিকতা আছে। সে ক্ষেত্রেও ফি রাখা উচিত সহনীয় মাত্রায়।

এখন যেহেতু চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যাও বেশি, ফলে আগের মতো ৩০০ বা ৫০০ না নিয়ে ১০০ টাকা নেয়া যেতে পারে। একজন শিক্ষিত বেকার যখন তার বেকারত্ব ঘুচানোর চেষ্টা করছেন, সমাজেরও উচিত তার জন্য এগিয়ে আসা এবং প্রকৃত অর্থেই সমাজের দায়িত্ব; সরকারের তো বটেই। চাকরিপ্রার্থীর দৈনন্দিন জীবন চালানোর জন্যই একটা চাকরি দরকার। যেখানে তিনি দীর্ঘ ১৭ বা ১৮ বছর পড়াশোনা করে এসে চাকরি খুঁজছেন, পরিবার যখন তার দিকে তাকিয়ে থাকে এবং তার দিনগুলো কষ্টে অতিক্রম করতে হয়; সেখানে চাকরির জন্যই যদি তাকে বড় অঙ্কের টাকা গুনতে হয়, সেটা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ নয় কি? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।