আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মন খারাপ করো না বাংলাদেশ, অমিতাভ বচ্চন আর ব্রায়ান লারার মতো খ্যাতিমানরাও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আর জয়ী হয়েও মিসবাহ বাংলাদেশ দলের প্রতি ঈর্ষান্বিত।

ডাকে পাখি, খোলো আঁখি। দেখো সোনালী আকাশ, বহে ভোরেরো বাতাস। এশিয়া কাপ ক্রিকেট ২০১২ এর ফাইনালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বীরোচিত লড়াই ও উজ্জ্বল পারফরম্যান্স গোটা বিশ্বের নামী-দামী সব ব্যক্তিবর্গসহ কোটি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছে। ফাইনালে খেলার ফলাফল নিষ্পত্তি নিশ্চিত করার পরপরেই ফাইনাল সম্পর্কে নিজ নিজ অভিমত ব্যক্ত করে করে ফেইসবুক ও টুইটার সহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ক্ষুদে বার্তা আদান-প্রদান হতে থাকে। শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালটি শেষ হওয়া মাত্রই ভারতীয় চলচ্চিত্র কিংবদন্তি অমিতাভ বচ্চন তার টুইটার একাউন্টে তৎক্ষণাৎ বার্তা প্রকাশ করেন।

কয়েক লাইনের বার্তা পংক্তিতে বলিউডের এই আইকন অভিনেতা ফাইনালে বাংলাদেশের টাইগারদের বীরোচিত লড়াই দেখে মুগ্ধচিত্তে ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং নিজের উত্তেজনানুভূতি ব্যক্ত করেন এইভাবে: “পাকিস্তান এশিয়া কাপ জিতেছে....অভিনন্দন!! কিন্তু কি খেলাটাই না দেখালো বাংলাদেশ....সাবাশ!! নখ-কামড়ানো, প্রার্থনায় রত অবস্থায় যবনিকাপাত। ” “বাংলাদেশীরা, যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অন্যতম নবীনতর দল.....তোমরা অপরিসীম উত্কর্ষতা, সাহসিকতা আর মেধা দেখিয়েছো। ” “মাত্র দুটা রান!!....ম্যাচটা যেকোন দিকে হেলে যেতে পারতো.....কিন্তু শেষ পর্যন্ত একপক্ষই জয়ী হলো.....প্রচন্ড মর্মপীড়াদায়ক ব্যাপার বাংলাদেশের জন্য.....একটুও মন খারাপ করো না বাংলাদেশ, তোমরা তো বীরত্বখচিত বিজেতা। ” ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারা তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে ব্যক্ত করেন যে তিনি ফাইনাল শেষে বাংলাদেশী খেলোয়াড়দেরকে কাঁদতে দেখে নিজেও কিছুটা আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন: “বাংলাদেশের মানুষ এবং বাংলাদেশী খেলোয়াড়দেরকে কাঁদতে দেখে আমার অত্যন্ত খারাপ লাগছে। যে কোন পক্ষই জিতে যেতে পারতো।

শেষে পর্যন্ত বাংলাদেশ ম্যাচে হেরে গেলো, কিন্তু তার পরিবর্তে জিতে নিলো কোটি কোটি মানুষের হৃদয়। এমন কি তারা কেবলমাত্র শিরোপা বাদে সম্ভব আর সবকিছুই জিতে নিয়েছে। সাবধান গোটা বিশ্ব, বাংলাদেশ হচ্ছে তোমাদের নতুন আতঙ্ক। ” ক্রিকেটার ম্যাগাজিনের সম্পাদক এবং অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেট লেখক এন্ড্রু মিলার, যিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একজন স্ব-স্বীকৃত ভক্ত, ফাইনালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখেছেন এবং একটা মূহুর্তে এসে টুইটারে বার্তা প্রকাশ করেছেন: “আমার মনে হচ্ছে আমি যেন লং ইয়াটন স্টেশন থেকে মিরপুরকে শুনতে পাচ্ছি। ” (লং ইয়াটন স্টেশন ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারের একটা রেলওয়ে স্টেশন) ফাইনালে কি ঘটলো সেটা নিয়ে এইভাবে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন উইজডেন ইন্ডিয়ার প্রধান সম্পাদক দিলীপ প্রেমাচন্দ্রান: “পাকিস্তানকে অভিনন্দন।

স্টুয়ার্ট ল এবং তার শিষ্যদের জন্য গর্ব করার মতো অনেক কিছুই আছে.....ইশ, সাকিব যদি টিকে থাকতো......” এমন কি আইপিএল এর স্থপতি এবং স্বনামধন্য ভারতীয় ক্রিকেট সংগঠক ললিত মোদিও অনুভব করেছেন যে সর্বাধিক শুভাকাঙ্খাটা আসলে বাংলাদেশেরই প্রাপ্য: “বাংলাদেশের জন্য খুব দুঃখ হচ্ছে, সর্বাধিক অভিনন্দনটা তাদেরই প্রাপ্য। অসাধরণ ম্যাচ!” “শ্বাস-রুদ্ধকর ফাইনাল। দারুন খেলেছো!” তথ্যসূত্র: দ্যা ডেইলি স্টার পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ উল হকের উপলব্ধি: ফাইনালে বাংলাদেশকে পরাজিত করলেও এই পরাজিত দলটির প্রতিই এখন ঈর্ষাবোধ করছেন মিসবাহ। বাঘের মতো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে পরাজয় বরণ করার মধ্যে যে মহাত্ম্য, তার মতে সেটা তো জয়ের চেয়েও মহিমান্বিত। পরাজিত হয়েও আজ যেভাবে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের ভালোবাসা, সম্মান আর শ্রদ্ধা পাচ্ছে মুশফিক-বাহিনী সেটা দেখে নিজে জয়ী হওয়া সত্তেও নিজেকে দুর্ভাগা ও বঞ্চিত মনে হচ্ছে মিসবাহর।

“এশিয়া কাপ জিতে কি ভুল করলাম?” এশিয়া কাপ জিতে দেশে ফিরে পাকিস্তানি চ্যানেল জিও নিউজ কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে পাকিস্তান দলের অধিনায়ক মিসবাহ উল হক এমনটাই বলেন। তিনি আরো বলেন,”পাকিস্তান কাপ জিতেছে ঠিকই, কিন্তু বাংলাদেশ সবার হৃদয় জিতে নিয়েছে। ওরাই সবার চোখে আসল চ্যাম্পিয়ন। আমার মনে হয় না ক্রিকেটের ইতিহাসে কোনো দল হারার পরেও এতো জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছে। “বাংলাদেশের প্রতি সবার এতো ভালবাসা দেখে কাপ জিতে নিজেদের অপরাধী মনে হচ্ছে”।

“খেলায় জয় পরাজয় থাকেই, তবে সবাই জেতার জন্যই খেলে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে গতকাল বাংলাদেশের দিন ছিল না, ওরা ক্রিকেট কে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে, এ মুহুর্তে নিজেকে বাংলাদেশ দলের অংশ ভাবতে ইচ্ছা করছে”, বলে তিনি উল্লেখ করেন। তথ্যসূত্র: হ্যালো টুডে ডট কম তথ্যসূত্র: মুভ ফর ওয়ার্ল্ড ডট কম একজন গর্বিত বাংলাদেশীর আত্মকথন: গত পরশু রাতে একবিন্দু ঘুমাতে পারি নি আমি, কি এক শূন্যতা আর হাহাকারের অন্তর্দহনে প্রতিনিয়ত দগ্ধ হয়েছি। আমি জানি, বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আপামর সাধরণ মানুষও তীব্র মনোকষ্টে গতপরশু রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারে নি। টিভি স্ক্রিনে সাকিব-মুশফিক-নাসির-আনামুলদের অবুঝ কান্না দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে মা-বোন, ছেলে-বুড়োরা সবাই অঝোর ধারায় কেঁদেছে।

শুনেছি ভালোবাসা নাকি মানুষকে কাঁদায়, দেশের জন্য পবিত্র ভালোবাসায় ব্যাকুল হয়ে কে কবে আমাদেরকে এমন ব্যাথিতভাবে কাঁদতে শিখিয়েছিলো? প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয়নেত্রী কারো আমন্ত্রণ ছাড়াই একই স্থানে একই ছাদের নীচে কিসের টানে ছুটে এসেছিলো? সারা বাংলাদেশ সমস্ত ভেদাভেদ, ধর্ম, কর্ম, স্বার্থ সবকিছু ভুলে কায়মনোবাক্যে নিজের অন্তরাত্মার সবটুকু নিংড়ে দিয়ে দেশের জন্য জয় প্রার্থনা করেছে, আমাদের দেশের খেয়ালী মানুষগুলোকে কে বা কারা এর আগে এমন অদৃশ্য বাঁধনে এক সুতোয় বাঁধতে পেরেছিলো? আর কেঁদো বা সাকিব-মুশফিক-নাসির-আনামুলরা, আর দুঃখ করো না বাংলাদেশ। দেখো, সারা বিশ্ব কি করে আজ বাংলাদেশ দলের পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে। জয়বঞ্চিত হয়েও বিজয়ীর মতো এমন বিশ্বজুড়ে বন্দনা, সম্মান, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার নজির আজ পর্যন্ত দ্বিতীয়টি কোথায় আছে? ভাগ্য হয়তো তোমাদের জয়ের স্বীকৃতি দেয় নি, কিন্তু তোমাদের বীরত্বের স্বীকৃতি সারা পৃথিবী নুয়ে পড়ে দিচ্ছে। এটা কোন দিক থেকে আমাদের কম পাওয়া? তোমাদের নৈপুণ্য আর সার্থকতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে জয়ী দলের অধিনায়ক পর্যন্ত আজ নিজেদের অর্জিত জয়কে হেলা করে তোমাদের নিয়তি প্রদত্ত মহান পরাজয়কে বরণ করে নিতে চায়, ম্যাচের অধরা জয় কি আমাদেরকে এর থেকেও বড় গৌরব এনে দিতে পারতো? আর দুঃখ করো না বাংলাদেশ, এমন বীরত্বখচিত পরাজয়ের সুবাদে সারা বিশ্ব আজ তোমায় বন্দনার আলিঙ্গনে আলিঙ্গনাবদ্ধ করে রেখেছে, পৃথিবীজুড়ে কোটি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত এই তোমার কোথায় কিসে অগৌরব? মাথা উঁচু করো একবার, দেখো কতো অমিত সম্ভবনার উজ্জ্বল আলোকরশ্মি তোমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে, সেই আলোকবন্যায় অবগাহন করে ভাবী সাফল্যের আনন্দধারায় সিক্ত হও তুমি। জয় বাংলাদেশ।

জয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। জয় বাংলাদেশের মানুষ। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।