আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নবী কারিম(সা) এর প্রতি ভালবাসার উচ্ছ্বাস দেখ!!!

নয়া যামানার নয়া পথিক,পথ হারিয়ে ছুটনা দিক্বিদিক সাহাবায়ে কিরাম আল্লাহর রাসূলকে তাদের নিজেদের জীবনের চেয়েও ভালবাসতেন। এরকম হাজারো ঘটনা ছড়িয়ে আছে হাদিস আর সিরাতের গ্রন্থগুলোতে। চলুন আজ দেখি সেরকম কয়েকটি ঘটনা- >>জাইদ ইবনে দাসিনা (রা) মক্কার কাফেরদের হাতে বন্দী হয়েছেন। তিনি বদরের যুদ্ধে কুরাইশ নেতা উমাইরকে হত্যা করেছিলেন। মক্কাবাসী তাদের নেতার হত্যার প্রতিশোধ নিতে জাইদ (রা) কে হত্যার উদ্দেশে মক্কার হারামের (রক্তপাত নিষিদ্ধ এলাকায়) বাইরে নিয়ে যায় যায়।

হত্যার আগে তাকে কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান বলল, হে জাইদ! আল্লাহর শপথ করে বলছি, এই মুহূর্তে তোমার স্থানে যদি মুহাম্মাদকে আনা হয় এবং আমরা তোমার পরিবর্তে তাকে হত্যা কোঁড়ই আর তুমি পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাও,তাহলে তুমি কি তা পছন্দ করবে? জাইদ (রা) বললেন, আল্লাহর কসম, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখন যেখানে আছেন, সেখানেও যদি তাঁর শরীরে একটা কাঁটা বিদ্ধ হয় আর তার বিনিময়ে আমি মৃত্যু থেকে রেহাই পেয়ে আমার পরিবারের সঙ্গে বসবাস করার সুযোগ পাই, তাও আমি সহ্য করব না। আবু সুফিয়ান বলল, মুহাম্মাদের অনুসারিরা তাঁকে যেমন ভালভাসে, এমন ভালবাসা এমি অন্য কোনো মানুষের মধ্যে দেখি নি। {আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াঃ ৪/৬৫} >>বদর যুদ্ধ কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে। শেষ নুহূর্তে প্রস্তুতি চলছে উভয় শিবিরে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম বাহিনীর ব্যূহবিন্যাস তদারক করছেন।

একটি তীর হাতে নিয়ে সেটির দ্বারা লাইন সোজা করছেন। সাহাবি সাউয়াদ ইবনে গাজিইয়া (রা) লাইনের একটু সামনে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের তীর দিয়ে সাউয়াদের পেটে মৃদু আঘাত করে বললেন, সাউয়াদ! লাইন সোজা কর। সাউয়াদ(রা) সবাইকে অবাক করে বলে ওঠলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে ব্যাথা দিয়েছেন। আল্লাহ আপনাকে ন্যায় ও সত্য দিয়ে পাঠিয়েছেন; তাই আমাকে আপনার থেকে বদলা নেওয়ার সুযোগ দিন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মোবারক পেটের কাপড় সরিয়ে দিয়ে বললেন, বদলা নাও। সাউয়াদ (রা) (বদলা নিতে গিয়ে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জড়িয়ে ধরলেন এবং তাঁর পেটে চুমু খেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এমন করলে কেন? সাউয়াদ (রা) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! দুই বাহিনী যুদ্ধের জন্য মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে; তাই আমার ইচ্ছে হলো যুদ্ধ শুর করার আগে শেষ নুহূর্তে আপনার শরীরের স্পর্শ পেয়ে যেন আমার শরীর ধন্য হয়। সাউয়াদের (রা) এমন হৃদয়স্পর্শী কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য দোয়া করলেন। {আল ইসাবাহ লি ইবনে হজরঃ ১/৯৫,মাজমা'উজ যাওয়াইদঃ ৬/২৮৯} >>আনাস (রা) বলেন, ওহুদের যুদ্ধের দিন লোকেরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ছেড়ে যেতে আরম্ভ করলেও আবু তালহা (তালহা) রাঃ ঢাল হাতে দাঁড়িয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আড়াল করে রাখলেন।

আবু তালহা রাঃ ছিলেন সুদক্ষ তীরন্দাজ, ধনুক খুব জোরে টেনে তিনি তীর ছুড়তেন। সেদিন তিনি দুটি অথবা তিনটি ধনুক ভেঙ্গেছিলেন। ঐ সময়ে যে কেউ ভরা তীরদানী নিয়ে অতিক্রম করেছে, তাকেই তিনি বলেছেন তীরগুলো খুলে আবু তালহার সামনে রেখে দাও। বর্ণনাকারী আনাস রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঁচু করে যখন শত্রুদের দিকে তাকাতেন, আবু তালহা রাঃ বলতেন, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক, আপনি মাথা উঁচু করবেন না। হঠাৎ তাদের নিক্ষিপ্ত তীর আপনার শরীরে লেগে যেতে পারে।

আপনার বুক রক্ষার জন্য আমার বুক রয়েছে। {সহীহ বুখারী ,হাদিস নং- ৩৮১১,৪০৬৪, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-১৮১১} কাসিম রাঃ বলেন, আমি তালহা রাঃ এর হাত অবশ দেখেছি। ওহুদ যুদ্ধে তিনি এই হাত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিরক্ষায় ব্যবহার করেছিলেন। {সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৩৭২৪,৪০৬৩} >>আবু বকর রাঃ বলেন, ওহুদের যুদ্ধের দিন লোকজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে আমিই প্রথম রাসূলের কাছে ফিরে যেতে সক্ষম হই।

(যাওয়ার সময় দূর থেকে) লক্ষ্য করলাম এক ব্যক্তি রাসূলের সামনে তুমূলভাবে লড়াই করছে। রাসূলকে রক্ষার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করছে। আমার মনে হল লোকটি নিশ্চয়ই তালহা হবে; তার জন্যে আমার পিতা-মাতা উতসর্গ হোক। এমন সময় আবু উবাইদা ইবনুল জারারাহ কোথা থেকে পাখির মত উড়াল দিয়ে আমার সঙ্গে মিলিত হল। আমরা রাসূলের কাছে পৌঁছলাম।

সেখানে পৌঁছে দেখলাম রাসূলের সমুখে লড়াইরত লোকটি আর কেউ নয়,তালহা; (অবিরাম লড়াই ও বহু আঘাত পাওয়ার ফলে) তিনি প্রায় ধরাশারী হয়ে পড়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের ভাইকে ধর, সে (নিজের জন্য জান্নাত) নির্ধারণ করে নিয়েছে। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথায় পরিধান করা শিরস্ত্রাণের দুটি লোহার আংটা তার চেয়ালে ঢুকে যায়। আমি তা বের করতে অগ্রসর হই, তখন আবু উবাইদা বলে উঠে, তোমাকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, আমাকে সুযোগ দাও। সে তার মুখে লোহার আংটা কামড়ে ধরে।

দাঁতে শক্ত করে কামড়ে ধরে তা ধীরে ধীরে নাড়তে থাকে, যেন রাসূলের কষ্ট কম হয়। এক পর্যায়ে আংটা বের করে আনে। কিন্তু এতে আবু উবাইদার সামনের একটি দাঁত ভেঙ্গে যায়। এরপর দ্বিতীয় আংটাটি বের করতে আমি আগ্রসর হই। এবারও সে বলল, হে আবু বকর! আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, আমাকে সুযোগ দাও।

এই বলে সে আগের মত আংটা বের করে আনল। কিন্তু এর জন্য তার আরও একটি দাঁত খোয়াতে হল। {যাদুল মা'আদ লি ইবনুল কায়্যিমঃ ২/৯৫, আল রাহিকুল মাখতুমঃ ২৬১-২৬২ পৃঃ} >>ওহুদের যুদ্ধের শেষের দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। মদিনা ও মদিনার আশেপাশে শোকের মাতম শুরু হয়ে যায়। শোকে কাতর এক আনসারি মহিলা রাসূলের খোঁজ নিতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে।

ইতোমধ্যে মহিলা সংবাদ পায় তার ছেলে,স্বামী, পিতা ও ভাই শহীদ হয়ে গেছে। মহিলা সেই সংবাদে মোটেও গুরুত্ব না দিয়ে করে, আল্লাহর রাসূল সাঃ এর কি খবর? লোকজন তাকে বলে, রাসূল সাঃ ভালো আছেন,তিনি আরো সামনে রয়েছেন। অবশেষে মহিলা রাসূল সাঃ এর কাছে এসে পৌঁছায়। রাসূলকে কাছে পেয়ে তাঁর কাপড়ের আঁচল ধরে মহিলা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক! আপনি যখন বেঁচে আছেন,তখন আমার কোন দুঃখ নেই। (অন্য বর্ণনায় আছে) আপনি বেঁচে থাকার পর যেকোন মুসিবত আমার কাছে তুচ্ছ।

(তবরানি,আল আউসাতঃ ৮/২৪৪, মাজমাউয যাওয়াইদঃ ৬/১১৫) ওহুদ যুদ্ধের শেষে রাসূল সাঃ মদিনার দিকে রওয়ানা করেছেন। সা'দ ইবনে মু'আয রা" রাসূলের ঘোড়ার লাগাম ধরে তাঁর সঙ্গে হাঁটছেন। এমন সময় সা'দ দেখলেন তার মা কাবশা ইবনে উবাইদ রাসূলের দিকে দৌঁড়ে আসছেন। সা'দ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমার মা আসছেন। রাসূল সাঃ বললেন, স্বাগতম, এই বলে তিনি ঘোড়া দাঁড় করালেন।

সাদের মা যখন কাছে আসলেন, রাসূল তাকে তার ছেলে আমর ইবনে মু'আয রাঃ শহীদ হওয়ার জন্য সান্ত্বনা দিলেন। সা'দের মা বললেন, আপনাকে যখন জীবিত দেখতে পেলাম, তখন পুত্র হারানোর শোক আমার কাছে গৌণ। {আল সিরাতু আল হালাবিয়্যাহঃ ২/৪৭} আল্লাহ্‌ তা'আলা আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহাবাদের মত ভালবাসার তাওফীক দান করুন। আমিন।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।