আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্যাম্পাসে“প্রেম এসেছিল একবার নীরবে”

পৃথিবীতে প্রেমই শাশ্বত। মনের গহীনে বিন্দু বিন্দু স্বপ্নের সামিয়ানায় সাজানো সৌন্দর্য্যের নানান প্রতিচ্ছবি। পৃথিবীতে এমন দুষ্টকে খঁজে পাওয়া যাবেনা যার জীবনে একবারই প্রেম আসেনি । প্রেম অন্ধ মনকে করে আলোকিত। নির্জীব চেতনাকে করে প্রাণোচঞ্চল।

আলেয়ার আলোতে আঁকে চেতনার মহাসিন্ধু। উদাসী মনকে করে আরো ব্যাকুল। একমাত্র প্রেম নিয়ে যুগে যুগে কালের বুকে রচিত হয়েছে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। শিল্পীর তুলিতে নানান রঙে-টঙে অঙ্কিত হয়েছে প্রতিকৃতি, কবির লেখনিতে ফুটেছে গল্প কিংবা উপন্যাস। প্রেয়সীর চোখ, নাক, মুখ, শরীর নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনেক বিস্ময়কর প্রবাদ প্রবোচন।

প্রেম কাউকে ভাঁসিয়ে অপার সুখের স্রোতে, কাউকে বিরহের জলে আবার কাউকে ভবঘুরে, করেছে সিংহাসন চ্যুত। আগেরকার দিনে কবুতর এর নখে কিংবা মুখে করে উড়ো চিঠির মাধ্যমে প্রেমিক-প্রেমিকারা তাদের মনের আকুতিগুলো আদান প্রদান করত। আর প্রিয়তমার প্রতিত্তুরের প্রেমিককে অপেক্ষা জন্য করতে হয়েছে দিনের পর দিন ও রাত-বিরাত। অনেক মুহুর্তের ক্ষয় করে অবশেষে একটি ছড়া কিংবা ছত্র পেয়ে শীতল করতে হয়েছে অতৃপ্ত মনকে। সে প্রেম ও ভালবাসা ছিল চিরঞ্জীব ।

সময়ের পরিক্রমায় আধুনিক এ যুগে প্রেমের এখন হরেক রকম। হয়েছে আরো গতিশীল। মুহুর্তের মধ্যে প্রেমিক প্রেমিকারা তাদের মাঝে বিরহ খরা মেটাতে পারে। তেমনি আবার মুহুর্তের মাঝে প্রেম কেনা বেচা হয়। প্রিয়জনের সাথে বিরহ ব্যথা সহজে কাটিয়ে তোলার জন্য নতুন সঙ্গির সুযোগ কিন্তু এখন কম না বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বর্ণিল ও আনন্দচ্ছটা জীবন।

একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অপরিচিত মুখগুলো একসময় সবার কাছে হয়ে উঠে খুব চিরচেনা। দীর্ঘ সময়ের জন্য পরস্পরের মধ্যে গড়ে ওঠে নিবীড় বন্ধন। হাসি,ছন্দে আনন্দে,প্রেম বিরহে ভরপুর থাকে এ জীবন। তবে এখানে প্রেম বিষয়টি বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন রকম হয়। কেউ শুধু অনাবিল সুখকে পছন্দ করে বেচে নেন ঠিক একই ভাবে আবার ছ্যাঁকা নামক মানসিক যন্ত্রণার কাছেও হন পরিচিত।

এর মাধ্যমে অনেকের কাছে জীবন একটি বিভীষিকাময় অধ্যায় হিসেবে রচিত হয়। ফলে অনেকেই এর জ্বালা সইতে না পেরে দেন আত্মাহুতি। আবার কারো কাছে ছাত্রজীবনে প্রেমের চেয়ে বন্ধুত্বের মূল্য অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-শিক্ষার ফলে এখানে ছেলে কিংবা মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্বের কোন তফাৎ গড়ে উঠেনা। ফলে হাসি আড্ডা গানে সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে হেঁসে খেলে মুখরিত করেন আনন্দের হাটবাজার।

ঠিক এরকম সম্পর্কের সাথে আবদ্ধ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) বন্ধুরা। এখানে সেমিস্টার পদ্ধতি ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা কার্যক্রমের কারণে ক্লাসের বাইরে সময় পান খুবই কম। ক্লাসের বাইরে প্রিয় বন্ধুর সাথে একটু মুহুর্ত পার করার জন্য কেউ কখনো কার্পণ্যে করেন না। আর প্রেমিক প্রেমিকাদের জুটি তো সব সময়ই আলাদা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলোর বারান্দা, গ্রন্থাগার ভবন, উপাচার্য বাংলো এলাকা, কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম, বিভিন্ন দোকান, টঙ, ফুট কোর্ট, মুক্ত মঞ্চ, পোস্ট অফিসের বারান্দা, অর্জুন তলা, গোল চত্ত¡র, আবাসিক এলাকা, ছাত্রী হল এলাকা, শহীদ মিনার, টিলার পাদদেশে সকাল সন্ধ্যা এমনকি রাত্রিতেও বসে প্রেমিক যুগলদের আড্ডা।

এসব আড্ডায় ভেঁসে উঠে জীবনের সুখ ও মনের কোণে থাকা কান্নাগুলো। কেউ কেউ আবার প্রেমিকাকে নিয়ে ক্যাম্পাস চষে বেড়ান,কখনো রিক্সা, বাইক কিংবা অডো বাইকে করে। কথার ফাঁকে ফাঁকে এক চুমুক চা, ফুচকা কোল ড্রিংস, আমড়া কিংবা চটপটি খেতে ভূল করেন না। কেউ আবার মনের আনন্দে প্রেমিকার বাহু বন্ধনে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন কিংবা হারিয়ে যান অমীয় সুখের সন্ধানে। এসব সম্পর্ক কারো আপনা আপনি হয়ে যায় নি।

কাউকে দিনের পর দিন চষে বেড়াতে হয়েছে প্রেয়সির খুঁজে, কাউকে প্রিয়জনের মধুর কন্ঠ শুনার জন্য মোবাইলে খরচা করতে হয়েছে টাকার বোঝা সাথে অনর্থক সময়। আবার কাউকে হাঁসির বদলে চোখে ঝরাতে হয়েছে অনেক গঙ্গা যমুনার পানি। তাতেও শেষ হয়নি, কারো একাডেমিক ফলাফলের খাতায় এসেছে শুন্য। আর ফ্যানের সাথে বাদড় ঝোলাতো এখন হর হামেশাই হয়। কেউ প্রিয়জনকে না পেলেও নিজেকে জলাঞ্জলি দিয়ে হয়েছেন প্রাত:স্মরণীয়।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে প্রেমে পড়ার কাহিনী বললেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমিক প্রেমিকাদের মিলনস্থল ‘ই’ বিল্ডিং এর মার্স্টাসের শিক্ষার্থী আলোচিত জুটি আফসান ও নাজ। দুজনেই ইতিমধ্যে পারিবারিক সূত্রে বিয়ে নামক ‘দিল্লী কা লাড্ডু’র তৃপ্তি উপভোগ করে ফেলেছেন। এর মধ্যে নাজ’র এর সাহচর্য পেতে আফসানকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। ভর্তির দিন থেকে অনার্সের শেষ সেমিস্টার অর্থাৎ চতুর্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টারে এসে তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়। মানে নাজকে সামনা সামনি প্রোপোজ দেন আফসান।

তারই সূত্র ধরে চেনা চেনা তারপর ফ্যামিলিকে জানানো এবং বিয়ে। এর মধ্যে আফসান প্রতি মুহুর্তে চোখে চোখে রেখেছেন তার প্রিয়সিকে। একই ব্যাচে থাকাকালীন সুবাদে থাকে সবসময় অনুসরণ করতেন। ক্লাসের ভেতরে বাইরে, বাসে কিংবা ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা ফাঁকি দিয়ে কমন রুমেও নাজ এর জন্য দাঁড়িয়ে থেকে সময় পার করেছেন। কয়েকবার তার এ পাগলামি বন্ধুদের সামনে প্রকাশ পায়, ফলে অনেকেই তার সাথে রসিকতা করত।

তবে নাজ মেয়েটা দেখতে যেমন অসম্ভব সুন্দরী তেমনি আবার রাগি ও ধার্মিক। ক্লাসের কেউ তার সাথে প্রয়োজনের বাইরে কথা বলতে পারত না। যার কারণে অন্যরা এ বিষয়ে এড়িয়ে থাকত। কিন্তু বাদ জাগে আফসান। তাকে যেমন প্রথম দেখাতেই ভাল লেগেছিল ঠিক তেমনি অন্যরা হাঁসা হাঁসি করবে ভেবে কারো সাথে বিষয়টি শেয়ার করে নি।

এভাবেই একেক টা সেমিস্টার শুধু দেখে দেখে পার করেছে। তবে নাজের কাছেও আফসানের বিষয়টি বেশ কয়েকবার ধরা পড়ে। সাহসের অভাবে সরাসরি তাকে কিছু বলতে পারে নি। তবে অবশেষে আফসানেরই জয় হয়। রয়াসন বিভাগের মাস্টার্সের আরেক শিক্ষার্থী শিশির।

তার কাছে প্রেম থেকে বন্ধুত্বের মূল্যে অনেক। দেখতে শুনতে বেশ স্মার্ট ছেলে শিশির। হাসি আর গল্প গুজবে ক্লাস সবসময় ভরে রাখতো। একবার ভালবাসা দিবসে ক্লাসের সব পাজি ছেলেরা সিদ্ধান্ত নিল লটারী করে একজন ছেলে ও একজন মেয়ের নাম তোলা হবে। যার সাথে যার নাম উঠবে সে তাকে প্রোপোজ করবে।

দুর্ভাগ্যেক্রমে শিশিরের নামের সাথে বিন্দুর নাম উঠে। এখন কথামত বিন্দু শিশিরকে অফার দেয়। তবে শিশির মনে করেছিল এটি কেবল ফান। বান্ধবী হয়ত এমনি বলেছে। কিন্তু এরপর ঘটলো বিপত্তি।

ক্লাসে বাইরে,ফোনে বিন্দু কথা বলার ক্ষেত্রে প্রায়ই শিশিরকে তার প্রেমিক হিসেবে মনে করত। কিন্তু শিশির এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তাঁর কাছে অন্য বন্ধুর মত বিন্দুও। ফলে তাকে অতিরিক্ত সময় দিত না। একসময় বিন্ধুকে সে এড়িয়ে চলে।

বেচারি তখন থেকে তার চোখে চোখ রাখত না। ভয়ে সে বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে কথা বলার সাহসও হারিয়ে ফেলে। অর্থনীতি বিভাগের ৩য় বর্ষ ২য় সেমিস্টারের মাযহারের সাথে একই ব্যাচের বাংলা বিভাগের জ্যোতির প্রেম কাহিনী সব বন্ধুর কাছে প্রকাশ হয়ে যায়। তাদের বাসে রিকশা কিংবা অডো বাইকে এক সাথে আসা চাওয়াও সবার চোখে পড়ে। মাযহার জ্যোতির জন্যও ছিল ব্যাকুল।

তার বাসা ভাড়া কিংবা বাজার করা থেকে সব কাজই মাযহার করে দিত। সেই মেয়ে এখন মাযহারের চোখের বিষ। কারণ সে মাযহারের মনে অসম্ভব কষ্ট দিয়েছে। তার হৃদয়ে ছিল অন্য ছেলের বসতি। মাযহারকে শুধু ব্যবহার করেছে মাত্র।

বেচারা মাযহার এখন ধিক্কার দেয় সব জ্যোতিদের। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের জীবনে এভাবে সুখের সাথে মিশে আছে বিরহ ব্যথা। কেউ প্রেমিকার কাছে প্রিয় পাত্র কিংবা দরনা দিতে না পারায় ছ্যাকা নামক আজন্ম ব্যথার ট্যাবলেট খেয়ে দিকবেদ্বিক পঙ্গপালের মত ছোটাছুটি করছেন। আবার কেউ প্রিয়তমাকে কাছে পেয়ে সুখের অতই গভীরে ভবিষ্যত রচনা করছেন। অনেকেই আবার জীবনের কঠিন বাস্তবতা উপলব্ধি করে পড়াশুনায় আছেন ব্যস্ত।

নিজের ক্যারিয়ার,যোগ্যতা ও জাতিকে নেতৃত্ব দেবার মানসে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনকে বর্তমান দুনিয়ায় নিজের জীবনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ফলস্বরুপ একাডেমিক কার্যক্রম, খেলাধুলা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে নিজেদের তৈরি করছেন। আর অপেক্ষা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে পরিবার ও জাতির প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা পূরণের। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।