আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অল্প স্বল্প ঘরোয়া রান্নার টিপস

এই টিপসগুলো মূলত তাদের জন্য যারা রান্নার জন্য সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করেন। তবে যারা গ্যাস লাইনের গ্যাস ব্যবহার করেন, তাদেরও টিপসগুলো কাজে লাগানো উচিৎ। গ্যাসের ব্যবহার আর দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে গ্যাসের সাশ্রয় করা অতি জরুরি। এবার আমি কিছু টিপস দিব যাতে গ্যাসের সাশ্রয় হয়, সবই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে। জঙ্গলে থাকি বহুদিন ধরে।

সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ বছর ধরে সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহার করছি। গত তিন বছরে মাত্র তিনবার সিলিন্ডার বদল করেছি। আমাকে কঞ্জুস বলুন বা যা-ই বলুন, টিপসগুলো কিন্তু কাজের। এবার দেখে নিন কী কী উপায়ে এই সাশ্রয়টুকু করি। ১. ভাত: প্রথমেই আসি ভেতো বাঙালীর ভাতের কথায়।

ভাত ফুটাতে এমনিতে যতটা সময় লাগে তার তিন ভাগের এক ভাগ সময় নিয়ে ফুটাতে পারেন যদি প্রেসার কুকার ব্যবহার করেন। শুধু চাল আর পানির পরিমাণটা ঠিক থাকলেই হল। সাধারণভাবে যেটুকু চাল তার দ্বিগুণ পানি নিলেই হবে। প্রেসার কুকারে তিনবার লম্বা সিটি বাজলেই ভাত সিদ্ধ হয়ে যাবে। এতে সময় নিবে পাঁচ থেকে সাত মিনিট।

যদি কারও কুকারে লম্বা সিটি না বাজে, ছোট ছোট সিটি বাজে, তাহলে তিনবারের বদলে ছয়বার সিটি গুণতে হবে। আর চুলা বন্ধ করার আরও ১৫-২০ মিনিট পর কুকারের ঢাকনি খুলতে হবে। তাহলে ভাত মোটামুটি ঝরঝরে হয়ে যাবে। এর আগে ভাপ বের করে খুলে ফেললে ভাত আঠালো থাকে। আর কেউ যদি ইলেকট্রিক রাইস কুকারে ভাত ফুটান, তাহলে তো ভাতের পিছনে কোন গ্যাসই খরচ হবে না।

২. ডাল: ভাতের পরই চলে আসে ডালের কথা। মসুরের ডাল সিদ্ধ হতে যে সময় লাগে একেও তিন ভাগের এক ভাগে কমিয়ে আনতে পারেন। শুধু একটা ছোট কাজ করতে হবে। ডাল সিদ্ধ বসানোর চার ঘন্টা আগে ডাল ধুয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। আমি যেটা করি, অফিসে যাওয়ার আগে ডাল ভিজিয়ে রেখে যাই, দুপুরে অফিস থেকে এসে রান্না করি।

দশ মিনিটের মধ্যে ডাল সিদ্ধ হয়ে যায়। এরপর পেঁয়াজ-মরিচ-রসুন তেলে ভেজে বাগার দিয়ে দিলেই হল। পনের মিনিটে ডাল রান্না শেষ। মনে করে ডাল সিদ্ধ করার সময় পানি কমিয়ে দিতে হবে। নয়তো পানি শুকাতেই সময় লেগে যাবে।

চার ঘন্টা ভিজানোর সময় না থাকলে প্রেসার কুকারেও ডাল সিদ্ধ করা যায়, তবে ওতে কেন যেন ডালের স্বাদটা ঠিক আসে না। ৩. গরু/খাসীর মাংস: গরু/খাসীর মাংসের জন্যও সেই প্রেসার কুকারই ভরসা। তবে দুইভাবে রান্না করা যায়। একটা হল মাংস আগে প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করে চর্বির পানিটুকু ফেলে দিয়ে এরপর মশলা কষিয়ে রান্না করা যায়। অথবা আগেই মশলা দিয়ে কষিয়ে নিয়ে এরপর পানি দিয়ে প্রেসার কুকারে বসিয়ে দেয়া যায়।

প্রথমটায় তেল-চর্বি কম থাকে, দ্বিতীয় পদ্ধতিতে কষানোটা ভালো হয়। আমি আগে প্রথম পদ্ধতিতে করতাম, এখন দ্বিতীয় পদ্ধতিতে মাংস রান্না করি। প্রেসার কুকারে মাংস ভালো মত সিদ্ধ হতে কমপক্ষে বারোটা লম্বা সিটি বাজতে হবে। কেউ কেউ মুরগীর মাংসও প্রেসার কুকারে করে। আমি এখনও চেষ্টা করে দেখিনি।

মুরগীটা একেবারে ভুনা না হলে আমার ভালো লাগে না, তাই কড়াইতেই করি। আজকাল তো রাইস কুকারের মত কারি কুকারও পাওয়া যায়। এমনটা হলে গ্যাস আরও অনেকখানি সাশ্রয় করা যায়। তবে আমাদের বিদ্যুতের এত সমারোহও নেই, আর তার উপর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পিছনেও সেই গ্যাসই লাগে। তাই আমি আসলে নিয়মিত কুকার ব্যবহারে খুব একটা আগ্রহী নই।

জরুরী ভিত্তিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। ৪. শাক-সবজী: এগুলো প্রেসার কুকারে ঠিক সুবিধা হয় না। তাই কড়াইতেই রান্না করি। তবে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রান্না করি, এতে তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়। শুধু আলুভর্তার জন্য আলু সিদ্ধ করতে প্রেসার কুকার খুব কাজে লাগে।

দুইটা লম্বা সিটিই আলু সুন্দরমত সিদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট। ৫. পোলাও/খিচুড়ি: প্রেসার কুকারে সাদা পোলাও করা যায়। এক্ষেত্রে চালের পরিমাণ যতটুকু, পানিও ঠিক ততটুকু নিতে হবে। আর খিচুড়ি যদি পোলাও-এর চাল দিয়ে করতে চান, তাহলে চাল-ডালের সমপরিমাণ থেকে একটু কম পানি দিতে হবে। ভাতের চাল দিয়ে খিচুড়ি করলে ডালের সমপরিমাণ পানি, আর চালের দ্বিগুণ পরিমাণ পানি যোগ করে দিলেই হবে।

সবজি-খিচুড়ি করলেও একই নিয়ম, শুধু সবজীর জন্য খুব সামান্য পরিমাণ পানি যোগ করে দিতে হবে। এবার সাধারণ কিছু টিপস। ৬. দেশলাই খরচ করতে কোন কার্পণ্য করা যাবে না। যতবার রান্না শেষ হবে, সাথে সাথে চুলার আগুন নিভিয়ে ফেলতে হবে। এমন কি দুই মিনিটের বিরতিতে পরবর্তী রান্না বসাতে চাইলেও।

৭. ফ্রিজে খাবার রেখে গরম করে খেতে যদি অরুচি না থাকে তো একবারে বেশি করে রান্না করে রেখে দিন। পরে শুধু গরম করে করে খাবেন। প্রতি বেলায় রান্না করা লাগবে না, গ্যাস খরচ কম হবে। এবার একটা ফাঁকিবাজি টিপস। ৯. গ্যাস বাঁচানোর একটা কার্যকর পদ্ধতি হল ডায়েট কন্ট্রোল করা , আর নয়তো রুচি বদলের নামে রেস্টুরেন্টে খাওয়া।

আরেকটা পদ্ধতি আছে, যত দাওয়াত পাওয়া যায়, কোনটাই মিস না করা। ইয়ে মানে, আমি আসলে এই পদ্ধতিতেই একটা সিলিন্ডার এক বছরের বেশি চালাই, নয় তো ছয় মাসেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। বোনাস টিপস। ১০. প্রেসার কুকার নিয়ে বেশ কিছু ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরিণতি দেখেছি। তাই এই জিনিস ব্যবহারে সাবধান হওয়া খুব জরুরি।

প্রতিবার ব্যবহারের পর প্রেসার কুকার ঠিকমত পরিষ্কার করলেই দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। শুধু প্রেসার কুকারের জন্যই হাতের কাছে একটা আলপিন/সেফটিপিন রেখে দিতে হবে। প্রতিবার ব্যবহারের পর যখন কুকার ধুবেন, আলপিন/সেফটিপিন দিয়ে ভালভের নিচের অংশটুকু যেটা ঢাকনির ভিতরের পাশে থাকে, তার ছিদ্রগুলো পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। আর সেফটি ভালভটাও ভালোমত পরিষ্কার করতে হবে। কালো রাবারের ব্যান্ডটা (নামটা ভুলে গিয়েছি) অনেকদিন ব্যবহারে ঢিলা হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে পাল্টে নিতে হবে।

ভালভ, সেফটি ভালভ-ও আলাদা করে কিনতে পাওয়া যায়, যে কোনটি নষ্ট হয়ে গেলে সেটা পাল্টে নিতে হবে। নষ্ট জিনিস দিয়ে পন্ডিতি করে রান্নার চেষ্টা না করাই নিরাপদ। অনেক জ্ঞান দিলাম। কেউ আরও কিছু যোগ করে দিলে খুশি হব। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।